ينوح انه ليس من اهلك انه عمل غير صالح
অর্থ: “হে হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম! নিশ্চয়ই (ঐ কিনান) সে আপনার আহল তথা পরিবারভুক্ত নয়। কেননা সে দুরাচার-পাপাচার।” (সূরা হুদ-৪৬)
মহান আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে উনার দীনে পরিচালিত করার লক্ষ্যে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার অথবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোকই আল্লাহ পাক ও উনার নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের কঠোর দ্রোহিতা করে কাফির মুশরিক বেদীন, বদদীনে পরিণত হলো। এমনকি কেউ কেউ নবী ও রসূল উনাদের আওলাদ তথা পরিবার পরিজন হওয়া সত্ত্বেও তাওহীদ ও রিসালতকে অস্বীকার করে নবী ও রসূল উনাদের আহল তথা পরিবারের মহান মর্যাদা অর্থাৎ সাইয়্যিদী ও নুবুওওয়াতী খানদান হারিয়ে ফেলে কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকে পরিণত হয়।
যেমন, হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনার পুত্র কিনান। এই ‘কিনান’ দুরাচার-পাপাচার খোদাদ্রোহী এবং কাফিরদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে তার মহান পিতা হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে কষ্ট দিতো ও উনার বিরোধিতা করতো। এক পর্যায়ে কাফিরদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার এক ভয়ানক গযব তথা মহাপ্লাবন নেমে আসলো। মহান আল্লাহ পাক হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামকে কিশতি তথা এক বিশাল নৌকা তৈরী করে তথায় উনার আহল ও ইয়াল তথা পরিবার-পরিজনসহ মাখ্লুকের থেকে পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় একজোড়া করে তুলে নেয়ার মহান নির্দেশ দিলেন। মহাপ্লাবন শুরু হলো। হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম কিনানকে কুফরী পরিত্যাগ করে ঈমানে দিক্ষিত হওয়ার শর্তে নৌকাতে উঠতে বললেন। কিন্তু হতভাগ্য কিনান বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে তা থেকে বিরত থাকলো। মহাপ্লাবনে যখন সে হাবুডুবু খাচ্ছিলো, তখন হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম বললেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি তো আমার ‘আহল’ তথা পরিবার-পরিজনকে কিশতিতে উঠাতে বলেছেন। কিনান সেতো আমার ছেলে, পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তখন মহান আল্লাহ পাক উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
কাজেই যারা কাফির, মুশরিক, মুনাফিক তারা যদি নবী পরিবার ও পরিবারের আত্মীয়ও হয় তবুও তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। বরং তারাই ঈমানগত দিক থেকে পর। কেননা তারা কুফরী করার কারণে নবীর আহল ও ইয়াল থেকে খারিজ হয়ে গেছে। এতো গেলো কাফির মুশরিকদের কথা।
আল্লাহ পাক মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।” (সূরা নিসা-১৪৫)
কেননা, মুনাফিকরা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সাথে মিশে গিয়ে মৌখিক মিল রেখে ভিতরে চরম ক্ষতি সাধনে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। যাকে প্রকাশ্যভাবে ধরা ও যার পরিচয় লাভ করা খুবই দূরূহ। যা কাফিরদের চেয়েও মারাত্মক। কাফির থেকে সাবধান হওয়া যায় কিন্তু মুনাফিক থেকে সাবধান হওয়া খুবই কঠিন। একটি প্রকাশ্য রূপ, অপরটি গোপনীয় রূপ। এই কারণে তাফসীরে ‘ইঁদুরকেও মুনাফিক’ বলা হয়েছে। যেহেতু সে যখন গর্ত খুড়ে মাটি তুলতে থাকে তখন বাইরে একটি মুখ রেখে তা দিয়ে মাটি ফেলতে থাকে। বাহ্যিকভাবে মানুষকে দেখায় সে এই গর্তে আছে। বাস্তবিকভাবে যখন ঐ গর্তে তাকে তালাশ করা হয় তখন কিন্তু তাকে ঐ গর্তে পাওয়া যায়না। বরং ভিতরে তার অনেক গর্ত বা খাল থাকে সেই গর্ত বা খাল দিয়ে অন্য কোন গর্তে বা স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যারা উলামায়ে হক্বানী-রব্বানী তথা মুজাদ্দিদে যামান-উনার বিরোধিতায়, দুশমনীতে ও ক্ষতিসাধনে সর্বদায় চিন্তা ফিকিরে থাকে তাদেরকেও মুনাফিক বলে। আর এই মুখোশধারী মুনাফিক যদি নিজেকে মহাপ-িত, ধর্মীয় গুরু, বড় ফক্বীহ, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত্ তাফসীর, মুফাস্সিরে কুরআন, বড় মসজিদের খতীব, পীর-মাশায়িখ, বুযুর্গের সন্তান, সম্ভ্রান্ত বংশীয় এমনকি সাইয়্যিদ তথা নবী বংশের ও পরিবারের পরিচয় দিলেও তাকে অনুসরণ অনুকরণ করা যাবে না। এবং সাইয়্যিদ তথা নবী পরিবারের হলেও তাকে সাইয়্যিদ তথা নবী পরিবার বা নবীর আহল বলা যাবে না। যার অকাট্য দলীল আমরা সূরা হুদের ৪৬নং আয়াত শরীফ থেকে পূর্বেই জেনেছি।
শুধু তাই নয়, বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাব “মিশকাত শরীফের” কিতাবুল আদব বাবুল আসামী’র মধ্যে উল্লেখ আছে-
عن حذيفة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لا تقولوا للمنافق سيد فانه ان يك سيدا فقد اسخطتم ربكم
অর্থ: “হযরত হুয়াইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মুনাফিককে সাইয়্যিদ বলিও না। কেননা, যদি তোমরা তাকে সাইয়্যিদ হিসেবে মেনে চলো তাহলে তোমরা তোমাদের রবকে অসস্তুষ্ট করলে। (আবূ দাউদ, মিশকাত)
পক্ষান্তরে, আওলাদে রসূল বা সাইয়্যিদ বলে সম্বোধন করার জন্য শর্ত হচ্ছে মু’মিন হওয়া। অর্থাৎ সাইয়্যিদ হওয়া সত্বেও মু’মিন না হলে তাকে সাইয়্যিদ বলা জায়িয নেই। আর মু’মিন হলেই তাকে সাইয়্যিদ বলতে হবে তা নয়। বরং সাইয়্যিদ হওয়ার পর মু’মিন হলেই তখন তাকে সাইয়্যিদ বলতে হবে। যেমন, “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ আছে-
يجوز ان يقال للمؤمن سيد
অর্থ: “মু’মিনকেই সাইয়্যিদ বলা জায়িয।” অর্থাৎ মু’মিন হলেই সাইয়্যিদ হবে তা নয়। বরং সাইয়্যিদ হওয়ার পর মু’মিন হলেই তখন তাকে সাইয়্যিদ বলা জায়িয। আর যারা প্রকৃত সাইয়্যিদ নয় তারা মু’মিন হলেও সাইয়্যিদ দাবী করতে পারবে না।
কাজেই, যারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মনে প্রাণে গ্রহণ না করে অন্তরে অন্তরে নেফাকী রেখে ক্ষতি সাধনে লিপ্ত থাকে তারা মুনাফিক। শুধু তাই নয়, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যারা মুহাক্কিক্ব, মুদাক্কিক্ব হক্কানী ওলীআল্লাহ উনাদের হাতে বাইয়াত হওয়ার পর স্বীয় মুর্শিদের আদেশ-নির্দেশগুলোকে মনেপ্রাণে গ্রহণ না করে তাকেও মুনাফিক বলে।
মহান আল্লাহ পাক উনার মহান দরবারে আরজ, আয় আল্লাহ পাক! যাবতীয় কুফরী, শিরকী, বিদ্য়াত এবং মুনাফিকী থেকে পানাহ দান করুন এবং আপনাকে পাওয়ার জন্য এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার জন্য বর্তমান যামানার তথা পনের শতকের মহান মুজাদ্দিদ- মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, ইমামে আ’যম, সাইয়্যিদুনা প্রাণের আঁকা ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার হাক্বীক্বী মুরীদ হওয়ার ও খাছ সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
মাওলানা মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন