সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের একটি কূপ থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যায়- এটা বিশেষজ্ঞদের মত। এর বেশি গ্যাস উত্তোলন করলে ওই কূপের অকালমৃত্যু হতে পারে। প্রতি টিসিএফে সর্বোচ্চ গ্যাস উত্তোলনের এটা বটমলাইন। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সর্বশেষ প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ৫ দশমিক ৬ টিসিএফ। এ হিসাবে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু নিয়ম ভেঙে শেভরন এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের প্রায় সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে। চলতি ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেশি উত্তোলন করার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন।
কূপের ক্ষতি করে স্বাভাবিকের অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ার অজুহাতে পেট্রোবাংলাও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতির সুযোগ নিয়েই অতিরিক্ত এ গ্যাস উত্তোলন করছে কোম্পানিটি। গত ৭ মে ২০১৪ ঈসায়ী বুধবারও তারা অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করে ৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট।
বিশেষজ্ঞরা বলেছে যে, কূপ থেকে সক্ষমতার অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করা হলে ভূ-অভ্যন্তরে গ্যাসস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গ্যাস উত্তোলনের স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়। ফলে গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন মেয়াদ কমে যায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এমনকি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে। আর ঘাটতি মোকাবেলার অজুহাতে বাড়তি সরবরাহ পেয়ে নিশ্চুপ থাকছে পেট্রোবাংলা। আর সে সুযোগটাই নিচ্ছে শেভরন।
এদিকে শুধু সক্ষমতার চেয়ে বেশি উৎপাদন করেই থেমে থাকছে না শেভরন। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে উত্তোলন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন বাড়াতে ৪ হাজার কোটি টাকা বা ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে শেভরন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিবিয়ানায় প্রতিদিন উত্তোলন হবে প্রায় ১ হাজার ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এতে দেশের গ্যাস খাতে শেভরনের একচ্ছত্র আধিপত্য আরো বাড়বে। এরই মধ্যে এ খাতে নিয়ন্ত্রণ তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এককভাবে প্রায় ৫০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে মার্কিন এ কোম্পানি।
শেভরনের সঙ্গে পেট্রোবাংলার প্রডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট (পিএসসি) অনুযায়ী, মোট গ্যাসের ৫৫ শতাংশ খরচ উসুল (কস্ট রিকভারি) হিসেবে শেভরন পাবে। বাকিটা প্রফিট গ্যাস হিসেবে পেট্রাবাংলা ও শেভরনের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। অর্থাৎ ২০ শতাংশের মতো গ্যাস সরকারের পাওয়ার কথা। যখন শেভরনের বিনিয়োগ উঠে আসবে, তখন মোট গ্যাসের ৮০ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ। বাকি ২০ শতাংশ পাবে শেভরন। কিন্তু বিদেশী কোম্পানিগুলো বরাবরই গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেখায়। ফলে কস্ট রিকভারির অজুহাত শেষ হয় না তাদের।
জানা গেছে, বিবিয়ানার ক্ষেত্রেও কস্ট রিকভারির মুলো ঝুলে আছে। এ ক্ষেত্রটিতে শেভরন নতুন করে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কস্ট রিকভারি শেষ না হয়ে বরং বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়লো। ফলে কস্ট রিকভারির সময়ও বাড়বে। যদি বিবিয়ানায় শেভরনের বিনিয়োগের অর্থ উঠে আসার আগেই কূপের গ্যাস শেষ হয়ে যায়, তাহলে কস্ট রিকভারি শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের যে ৮০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার কথা ছিল, তা আর পাবে না।
বিনিয়োগের পরিমাণও বিদেশী কোম্পানিগুলো বেশি দেখিয়ে থাকে। একটি সাধারণ ৫০০ মিলিলিটার পানির বোতলের দাম বাজারে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। অথচ শেভরন তাদের খরচ দেখিয়ে থাকে ৩০ টাকা। শুধু পানির বোতল বা দৈনন্দিন সাধারণ খরচেই বিনিয়োগ বেশি দেখানো হয় না, কোম্পানিটি বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে থাকে স্থানীয়দের জন্য। এসব খাতে খরচ হওয়া কোটি কোটি টাকাও বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো হয়।
জানা গেছে, শেভরন বিবিয়ানা ও লাউয়াছড়ার গ্যাসক্ষেত্রগুলোর আশপাশে হাসপাতাল স্থাপন করে সেখানে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া সেখানকার কৃষি, কুটির শিল্প, শিক্ষাঋণের মতো বেশ কিছু খাতে অর্থ প্রদান করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য। সারা পৃথিবীতে কোম্পানির ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করার জন্য এসব বিষয়ে শেভরন তথ্যচিত্র নির্মাণ করে প্রচার করে থাকে। বিনিয়োগের নামে এ অর্থও কস্ট রিকভারির গ্যাস থেকে মেটানো হয়। অর্থাৎ অর্থ ব্যয় হয় বাংলাদেশের জনগণের, নাম হয় শেভরনের।
বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না, এটাই সাধারণ কথা। এ কারণে তারা বেশি বেশি গ্যাস উত্তোলন করে দ্রুত মুনাফা ঘরে নিয়ে যেতে চায়।
যেমন মাত্রার চেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করে দ্রুত মুনাফা লুটে নিচ্ছে শেভরন। কিন্তু কূপের গ্যাস দ্রুত নিঃশেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ তার লভ্যাংশের গ্যাস (প্রফিট গ্যাস) থেকেও বঞ্চিত হবে। এর আগে কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসি সাগরবক্ষের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের একমাত্র কূপ থেকে অতিরিক্ত উৎপাদন শুরু করলে ২০১৩ সালে অকালমৃত্যু ঘটে ক্ষেত্রটির।
বিবিয়ানাও সাঙ্গুর পথে হাঁটছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছে যে, অতিরিক্ত উৎপাদন বিপজ্জনক। পেট্রোবাংলার উচিত তাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। যদি শেভরন বিবিয়ানা থেকে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন করার চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বলাবাহুল্য, বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে দ্রুত মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা সবসময়ই কাজ করে। সমস্যা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে। তারা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে শেভরনের মতো কোম্পানিকে যা খুশি তা করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে চরম এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে দেশের। এক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতির বিপরীতে জনগণকেই জনস্বার্থে জেগে উঠতে হবে। শেভরনের লুটপাট সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে শেভরনকে প্রতিহত করে জনসম্পদ ও জনস্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা