সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা। শুধু ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটি ২০০৫ সাল থেকে অর্থ পাচারের হিসাব দিয়েছে। টিআইবি’র দাবি, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারে যে তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রকাশ করছে, সেটি আংশিক। বাস্তবে পরিমাণ আরো অনেক বেশি। কারণ বর্তমানে এমন অনেক খাতে অর্থ পাচার হচ্ছে, যা জিএফআই আমলে নেয় না।
মূলত; চারটি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসায়। এই চার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে চলে গেলেও আইনি জটিলতা, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, আদালতে আসামি পক্ষের সময়ক্ষেপণ, সমন্বয়ের অভাবসহ নানা জটিলতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যাচ্ছে না। অর্থ পাচারের ৯৫% মামলাই নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার তিন-চতুর্থাংশই পারেনি নিম্ন আদালতের গণ্ডিত পেরোতে। উচ্চ আদালত ও দুদকের তথ্য বলছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলার সংখ্যা ৪০৮টি। পাচারের অভিযোগে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে বিচারাধীন।
বর্তমানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীলরা মাঝে মধ্যে জোরালো বক্তব্য দিলেও তা ওই পর্যন্তই। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার সংক্রান্ত যেকোনো প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রকাশ করলে চার দিকে শোরগোল পড়ে। জাতীয় সংসদও এ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। তর্ক-বিতর্কে একে অন্যকে দোষারোপ করতে দেখা যায়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সব স্তিমিত হয়ে আসে। চলতেই থাকে অর্থ পাচার।
দীর্ঘদিন ধরে অর্থপাচারের পেছনে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও অনেকাংশেই দায়ী। অর্থমন্ত্রী অর্থ পাচার রোধে বড় বড় বক্তৃতা দিলেও অর্থপাচার রোধে অর্থমন্ত্রী আন্তরিক নয়। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছে ‘কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। নামগুলো যদি আপনারা জানেন যে এঁরা এঁরা অর্থ পাচার করেন, আমাদের দিন।’ অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমেই প্রমাণ হয় যে অর্থপাচার নিয়ে সরকার দায়সারা আচরণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে কয়েক দফায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, দুদক ও সিআইডির কাছে পুঁজি পাচারকারীদের নামধাম সরবরাহ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
সবচেয়ে জ্বলন্ত প্রশ্ন হলো, তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর, সাংসদেরা কেন তাঁকে নাম দেবে? সাম্প্রতিক কালে সাড়া জাগানো পুঁজি পাচারকারী পি কে হালদারের কাহিনী কিংবা পাপুলের কাহিনী সম্পর্কে কিংবা ২০১৮ সালে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে ৮২ জন বাংলাদেশি পুঁজি পাচারকারীর নাম প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো নিয়ে তো দেশের একজন অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার অজানা থাকার কথা নয়। অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকার অর্থপাচার রোধে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
প্রসঙ্গত, প্রতিনিয়ত লাগামহানী অর্থ পাচারে ফোকলা হয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। পূর্বে যেভাবে এদেশকে লুণ্ঠন করেছিলো ব্রিটিশরা তার ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে অর্থ পাচারের মাধ্যমে।
১৭৫৭ সালের পর বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে কাঠের জাহাজে পুঁজি পাচার এত বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল যে ওই জাহাজগুলো লন্ডন বন্দরে মাল খালাস করার জন্য প্রায় ৩ মাস অপেক্ষা করতে হতো। ঠিক একই কায়দায় জাহাজের পরিবর্তে এখন দেশের অর্থ পাচার হচ্ছে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের ঝুলিতে।
গত ১৬ বছরে যে পরিমাণ অর্থ পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তা সর্বশেষ দুই অর্থবছরের মোট বাজেটের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরের বাজেট ৬ লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি এবং আগের অর্থবছরে বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া পাচারের অর্থ দেশের বর্তমান জিডিপির ৩১%। বর্তমানে জিডিপি ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার না হলে দেশে বর্তমানে জিডিপির আকার ছাড়িয়ে যেত ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এখন একটি শিল্পসমৃদ্ধ দেশেই পরিণত হত। দেশেই অবারিত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। বেকারত্ব হ্রাস পেতো। এসব অর্থ পাচার না হলে, তথাকথিত উন্নত দেশগুলোয় এত শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা হতো না। ওইসব দেশে এত কর্মসংস্থান হতো না। তাদের রফতানী আয় কমতো। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ব্যবধান কমতো। তারা বাংলাদেশের উপর এত খবরদারি করতে পারতো না। বাংলাদেশই বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব প্রদান করতে পারতো।
সঙ্গতকারণেই তাই আমরা মনে করি, অর্থ পাচার বন্ধ করতে হলে এবং সেই অর্থ দেশে বিনিয়োগ করাতে হলে সবার আগে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ এবং সহনশীলতা সৃষ্টি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের নির্বিঘেœ ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে টাকা পাচার বন্ধ হবে না। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ‘দুর্নীতির মা’ ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ বা ‘গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’ পরিহার করে ‘সম্মানিত ইসলামী অনুশাসন’ বা ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ’ গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রের কুফল সম্পর্কে সবাইকে সম্যক সচেতন হতে হবে। গণতন্ত্র পরিহারে সক্রিয় হতে হবে।
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আল ওয়াসীলাতু ইলাল্লাহ, আল ওয়াসীলাতু ইলা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুলত্বানুন নাছীর, আল ক্বউইউল আউওয়াল, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বইয়ুমুয্যামান, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
মুহম্মদ আরীফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০