হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- “সব কাফিরের ধর্ম এক।”
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- “কাফিররা মুখে যতটুকু প্রকাশ করে অন্তরে তার চেয়ে অনেক বেশি বিদ্বেষ রয়েছে।”
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, কাফিররা শুধু মুসলমানদের দেশ দখল করতে চায় তাই নয় বরং মুসলমান যাতে মুসলমান না থাকে সেটাই ওদের মূল উদ্দেশ্য।
এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- “কাফিররা চায় মুসলমানরা ইসলাম আনার পর পুনরায় কুফরী করুক।”
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা আছে। আর তার সবটুকুই মিলে যায় কলকাতার সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে।
দেখা যায় নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বাদ দিয়ে ওরা প্রায়ই মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও গরল ঢালে।
যেসব নামধারী মুসলমান ইসলাম থেকে দূরে আছে ওদেরকে ওরা বাহবা দেয়। উৎসাহ দেয়। ইসলামের বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতে বলে।
সর্বোপরি ওরা ইসলাম ধর্মই মানতে রাজি নয়। মুসলমান ইসলাম ধর্ম মানুক এটা ওরা বরদাশত করতে পারেনা। বরং স্পর্ধা ও শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করে ওরা বলতে চায় মুসলমান ইসলাম ছেড়ে ওদের মতো অশ্লীল হোক তথা কথিত যুগধর্ম পালন করুক।
দৈনিক আনন্দবাজার ২৯শে সেপ্টেম্বর/২০১১
অধিকার ও বেত্রাঘাত
সংস্কার করিতে চাহিলে এক পা আগাইয়া দুই পা পিছাইলে চলে না, এই কথাটা সউদী আরবের শাসক রাজা আবদুল্লাহ ভুলিয়াছেন। তাই তাহার দেশে মহিলাদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচনের অধিকার ঘোষণা করিবার দুই দিন পরেই গাড়ি চালাইবার অপরাধে এক মহিলার বেত্রাঘাতের শাস্তি ঘোষণা করা হইয়াছে। একবিংশ শতাব্দীর এক দশক পার করিবার পর সউদী আরব মহিলাদের ভোটাধিকার দিয়াছে। বিশ্বের বহু দেশে যখন মহিলারা রাজনীতির মূলস্রোতে আসিয়াছেন, ভোটে লড়াই করিয়া রাষ্ট্রনায়কের পদ অধিকার করিতেছেন, তখনও সউদী আরবের নারীসমাজ পূর্ণ নাগরিকত্ব লাভ করে নাই। গোটা মধ্যপ্রাচ্যই নারী অধিকারের বিষয়ে অত্যন্ত সংরক্ষণশীল, কিন্তু তাহাদের মধ্যেও সউদী আরব যেন অতিমাত্রায় নারী অধিকারের বিরোধিতা করিয়া আসিয়াছে বরাবর। ধর্মের দোহাই দিয়া মহিলাদের একরূপ গৃহবন্দি করিয়া রাখা হইয়াছে। পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাহিরে প্রায় কোনও কাজ করা নিষিদ্ধ। মহিলাদের গাড়ি চালাইবার বিষয়ে প্রবল নিষেধাজ্ঞা।
সউদী মহিলারা কিন্তু নীরব নাই, দীর্ঘ দিন ভোটাধিকারের জন্য, গাড়ি চালনা ও অপরাপর অধিকারের জন্য সওয়াল করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু তাহাদের কণ্ঠ সহজেই উপেক্ষা করা সম্ভব হইয়াছে, কারণ সউদী আরবে ক্ষমতা রাজপরিবারের হাতে, যাহার প্রধান উপদেষ্টা হইলে ওয়াহাবী ধর্মমতের অতি রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতারা। উপদেষ্টা সমিতির সদস্যদের নির্বাচন করিবার প্রস্তাব অনেক বার উঠিয়াছে, গ্রাহ্য হয় নাই। পুরসভার স্তরে নির্বাচন শুরু হইয়াছে বটে, কিন্তু যাহারা আশা করিয়াছিলেন যে, গণতন্ত্রের ক্রমবিস্তার হইবে তাহারা অনেকে হতাশ হইয়াছেন। এই অবস্থায় মহিলাদের ভোটাধিকার দান বিস্মিত করে। হয়তো ইহার পিছনে ‘আরব বসন্ত’-র পরোক্ষ চাপ আছে। দেশের মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য দাবিও তীব্র হইতেছে। এমন নানা দিক মিলিয়া মহিলাদের ভোটাধিকারের ঘোষণাটিই নিরাপদ বলিয়া দেখা দিয়াছে রাজা আবদুল্লাহর নিকট। তিনি অবশ্য বলিয়াছেন যে, ইসলামের ইতিহাস মহিলাদের যুক্তিবাদী মন এবং সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতাকে স্বীকার করিয়াছে। তাহাদের মতামত এবং উপদেশ যে যথাযথ হইতে পারে তাহার অনেক দৃষ্টান্ত রহিয়াছে ইতিহাসে, অতএব মহিলাদের এক পাশে ঠেলিয়া রাখা উচিত হইবে না, ইহাই আবদুল্লাহর মত।
কিন্তু তিনি যে খুব উদার, এমনও বলা চলে না। ভোট দিবার অধিকার এবং ভোটে দাঁড়াইবার অধিকার মহিলারা ২০১৫ সালের পূর্বে প্রয়োগ করিতে পারিবে না, তখনও কী শর্তে, কতটা প্রয়োগ করিতে পারিবেন তাহা নিশ্চিত নহে। কিন্তু সউদী আরব যে সামাজিক অন্যায়ের পথ হইতে সরিয়া আসিয়াছে, ইহা অনেককে আশ্বস্ত করিয়াছিল। সেই নূতন আশা মাথা তুলিয়া বিকশিত হইবার পূর্বেই মারাত্মক আঘাত পাইল বেত্রাঘাতের আদেশে। মহিলার গাড়ি চালনা কী কারণে অপরাধ হইতে পারে? যে কোনও ভূখ-ের, জাতির অথবা ধর্মের নিজস্ব ইতিহাস অনুসারে তাহার নানা রীতিনীতি ভিন্ন হইবে। কিন্তু ঐতিহাসিক রীতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হইবে, বাকি বিশ্বের বর্তমান মূল্যবোধকে তুচ্ছ করা হইবে, ইহা প্রার্থনীয় নহে। প্রতিটি দেশই তাহার নিজস্বতা লইয়া এক সামগ্রিক বিশ্বের অংশ। যুগধর্ম, কালধর্মকে অস্বীকার করা চলিবে না।
আনন্দবাজার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
‘পরিবর্তনে’ও সংশয় কাটছে না সউদী মেয়েদের
দীর্ঘ লড়াইয়ে ভোটাধিকার মিলল। দাঁড়ানো যাবে পুরভোটেও। কিন্তু যেখানে পুরুষের সম্মতি ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পা বেরোতে পারেন না মহিলারা, সেখানে এই অধিকার সত্যিই কতটা পরিবর্তন আনবে দৈনন্দিন জীবনে? ভোটাধিকার পাওয়ার পরও এই প্রশ্ন থেকে বেরোতে পারছেন না সউদী আরবের মেয়েরা। কারণ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লক্ষ্মণরেখা তো পদে পদে। মাস খানেক আগেরই ঘটনা। আল-খোবার শহরে গাড়ি চালিয়ে সেই ছবি টুইটারে দিয়েছিলেন বছর তিরিশের মানাল আল শরিফ। সেই ‘অপরাধে’ বেশ কিছুটা সময় সংশোধনাগারে কাটাতে হয় ওই সউদী মহিলাকে। কারণ, সে দেশে মহিলাদের গাড়ি চালানোর কোনও অধিকার নেই।
এ হেন ‘রক্ষণশীল’ সউদী আরবেই মেয়েদের ভোটদানের অধিকার ঘোষণা করেছেন রাজা আবদুল্লাহ। সউদী আরবে অবশ্য শুধুমাত্র পুর-নির্বাচনই হয়। এবং রাজার ঘোষণা অনুযায়ী, পুর-নির্বাচনে ভোট দিতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন সউদী মহিলারা। শুধু তাই নয়, ‘মাজিস-আল-শুরা’ বা উপদেষ্টা পরিষদেও (সদস্যরা মনোনীত) যোগ দিতে পারবেন তারা। আবদুল্লাহর প্রতিশ্রুতি, “সমাজে মহিলাদের আর একঘরে করে রাখা হবে না।” তাই ঘোষণা হলেও মেয়েরা ভোট কিন্তু দিতে পারবেন চার বছর পরের ভোটে। সউদী আরবের মহিলাদের মৌলিক অধিকারের দাবিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে এসেছেন, তাঁরা এই ঘোষণাকে প্রাথমিকভাবে ‘তাৎপর্যপূণ জয়’ হিসেবেই দেখছেন। ইতিহাসের শিক্ষক হাতুন-আল-ফাসি যেমন বললেন, “সউদী মহিলারা আর নীরব নেই। এই ঘোষণা তার প্রমাণ।” দেশের ভিতরে মহিলাদের অধিকার নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়ছিল। তার উপরে গত কয়েক মাস ধরে আরব দুনিয়ায় শাসক বদলের লক্ষ্যে যে গণআন্দোলন চলছে, তার জেরেই রাজা এই অধিকার দিতে বাধ্য হয়েছেন বলেই আন্দোলনকারীরদের ধারণা। তবে তাঁদের সংশয়ও আছে। কারণ, সউদীতে মহিলারা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারেন না। কোনও কাজ করতে পারেন না। আইনজীবী হতে পারেন না। পারেন না গাড়ি চালাতে। এমনকি, পছন্দের জামা-কাপড়ও পরতে পারেন না। তাই ওয়াজিবা-আল-ভুয়েদের নামে এক মহিলা আন্দোলনকারীর মতে, “পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তো একজন মহিলা স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতে পারেন না এ দেশে। তাই এখনও অনেক লড়াই-ই বাকি।” তাই সেখানে মহিলারা কতটা নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারবেন বা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আবার যে উপদেষ্টা পরিষদে মহিলারা যোগ দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন, সেই পরিষদেরই তেমন কোনও বিশেষ তাৎপর্য নেই। উপদেষ্টা পরিষদ সরকারী নীতির বিষয়ে রাজাকে উপদেশ দিতে পারলেও রাজার বিশেষ অধিকারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
আবদুল্লাহর এই ঘোষণায় আবার তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই শুরার ১৫০ জন সদস্যকেই নির্বাচিত করার দাবি উঠেছে। অনেকেরই ধারণা, মহিলাদের শুরায় যোগদানের অধিকার দেওয়ার ‘অজুহাতে’ আবদুল্লাহ আসলে এই দাবি এড়াতে চাইছেন। আবার একাংশের আশঙ্কা, অতীতে বহুবার রক্ষণশীল ওয়াহাবী নেতাদের চাপে পড়ে মেয়েদের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্তই কার্যকর করা যায়নি। ২০০১ সালেই মহিলারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকার পেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৯১ সাল থেকেই অবশ্য মেয়েদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়ার দাবিতে দেশের মহিলারা আন্দোলন করছেন। এই বছরের গোড়ায় এক সউদী মহিলা সর্বপ্রথম মহিলাদের ভোটাধিকার না দেওয়ার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন। এমনকি, ভোটাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ারও চেষ্টা করেন বেশ কিছু মহিলা। সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের একটা স্বীকৃতি গত ৩রা অক্টোবর-২০১১ তারিখে তাঁরা পেলেন। রিয়াদের মহিলা অধ্যাপক ফাওয়াজিয়াহ বাকরের কথায়, “এতে হয়তো মহিলাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আরব দুনিয়ায় বিপ্লব এসেছে। সাধারণ মানুষের কথা শুনছে রাজনৈতিক শাসকরা। তাই এ বার বোধহয় নতুন সূচনার আশা করা যায়।” (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০