বিষয়টি হতবিহ্বল, হতবাক, হঠকারিতার মাত্রা ছাড়ালেও- এটাই সত্য যে, আমেরিকা অবিশ্বাস্য নীতিহীনতার পরিচয় দিয়ে ইরাক আক্রমন করেছে। ইরাকের জ্ঞানগরিমা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। লুটের পর লুট করে যাচ্ছে। শুধু তেলই নয় নগদ পেট্রো ডলারও বাদ যাচ্ছে না।
তেল সমৃদ্ধ ইরাকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে চাপ প্রয়োগে ইরাক সরকারকে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করার জন্য বুশ প্রশাসন ৫০ বিলিয়ন ডলার ইরাকী অর্থ আটক করে রেখেছে।
ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য মতে ইরাকের বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের রায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিক ইরাকী ২০ বিলিয়ন ডলার মজুদটিকে মার্কিন আলোচক সামরিক চুক্তি সম্পাদনে বাগদাদকে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগের খুটি হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে ইরাকের বৈদেশিক তহবিল আদালতের এখতিয়ার বহির্ভুত অবস্থায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত রয়েছে।
কিন্তু সংলাপে মার্কিন পক্ষে স্মরন করিয়ে দেয়া হয় জাতিসংঘ সনদ সমাপ্ত হয়ে গেলে এমন নতুন চুক্তি সম্পাদিত না হলে ইরাকী তহবিল আদালতের এখতিয়ার বহির্ভুত থাকার অধিকার হারাবে। ফলে ২০ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিকভাবে ইরাকের হাতছাড়া হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সনদের আওতায় ইরাকী অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে আটক রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা তহবিলের ৪০ শতাংশ হারানোর ভয় ইরাককে দেখানোর সুযোগ ওয়াশিংটনের এখনো রয়েছে কেননা ১৯৯১ সালে কুয়েতে ইরাকী আগ্রাসানের পর থেকে জাতিসংঘ আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় ইরাকী স্বাধীনতা এখনো সীমাবদ্ধ।
এর অর্থ হচ্ছে জাতিসংঘ চার্টারের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ইরাক কখনো হুমকি হিসেবে বিবেচিত। মার্কিন আলোচক বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন রণকৌশলগত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ চার্টারের সপ্তম অনুচ্ছেদের আওতা থেকে ইরাক নিজেকে মুক্ত করতে পারে।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ইরাকী প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকী আগামী জুলাইয়ের শেষ নাগাদ স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা) স্বাক্ষর করার প্রশ্নে গত নভেম্বরে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন।
প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী ইরাকী সরকারের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই মার্কিন সেনাবাহিনী ইরাকী নাগরিকদের গ্রেফতার করতে ও সামরিক অভিযান চালানোর অধিকার অর্জন করবে। প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় মার্কিন সৈন্য ও ঠিকাদারেরা ইরাকে আইনী এখতিয়ার বহির্ভুত থাকার অধিকার ভোগ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, মার্কিন সৈন্যদের মর্যাদা জ্ঞাপক জাতিসংঘ সনদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে মার্কিন সৈন্যরা সে অধিকার আবার ফিরে পেতে পারবে। ইরাকীরা বলছেন, প্রস্তাবিত চুক্তিটি তাদের দেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০য়ের বেশি সামরিক ঘাঁটি ইরাকে মোতায়েন রাখতে পারবে।
উল্লেখ্য, এই যে আমেরিকা একের পর এক এভাবে মুসলিম দেশ লুন্ঠন করে যাচ্ছে, হত্যা, যৌন নিপীড়িন চালিয়ে যাচ্ছে, মুসলমান মা-বোনদের সম্ভ্রম হরণ করছে, চলছে তারপরে নির্বিকার গোটা মুসলিম বিশ্ব।
অথচ এর প্রতিকার প্রতিটি মুসলমানেরই জানা। বিদায় হজ্জের মশহুর হাদীছ শরীফ-এ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবেনা যতক্ষণ তোমরা কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে থাকবে। আর যখনই তোমরা কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত হবে তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে।“
কাজেই আজ মুসলমানকেই তাদের অস্তিত্বের খাতিরে বিবেচনা করতে হবে যে, তারা কি এভাবে কাফিরদের হাতে পড়ে পড়ে মার খাবে, না- কুরআন-সুন্নাহ্র দিকে ফিরে গিয়ে তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে, খোদায়ী রহমতের স্বাদ নিবে। -মুহম্মদ আলম মৃধা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০