নদীপথ সংস্কারে ড্রেজিং নিয়ে সরকারের নানা প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন নেই। ড্রেজিংয়ের নানা প্রকল্প সরকারীভাবে গ্রহণ করা হলেও সেগুলো দুর্নীতিতে পর্যদুস্থ। নদীপথের বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা প্রতিশ্রুতির বিপরীতে চাই যথাযথ পূরণ।

সংখ্যা: ২৭০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছে “ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে নদী খনন অনেক গুরুত্বপূর্ণ”। কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ নদী উজান থেকে পলি নিয়ে আসে। ওই পলিতে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়লে নদী নাব্যতা সংকটে পড়ে। কাজেই ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নদী খনন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী কলেছে- তার সরকার নৌপথগুলো সক্রিয় করে সড়কের উপর চাপ কমাতে চায়।’

নদীকে পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়াই নদীর মুখে মাটি কেটে পরীক্ষামূলক নদী খননের কাজ উদ্বোধন করেছিল। কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টির পানিতে মাটি ও বালুতে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই কাজে আর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ওই সময় কয়েক শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছিল। কাজের কাজ কোনো কিছুই হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আর সরকারদলীয় নেতাদের পকেটেই পুরো টাকা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তদন্তে সব দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। কিন্তু সবাই পার পেয়ে যায়। পরের বছর ১৯৯৮ সালে এ নদী পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। কিন্তু এটাও লুটপাটের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চার বছর মেয়াদি বৃহত্তর আকারের ড্রেজিং করতে ‘গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প-২’ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪২ কোটি টাকা। কিন্তু কাজের কাজ তো হয়নিই উল্টো এই বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার অনিয়মের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। কিন্তু হাতে নেয়ার খবরই শোনা গেছে তার বাস্তবায়ন দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেনি। উল্টো মহালুটপাট হয়েছে এই ১২ হাজার কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্পে। এই প্রকল্প শুরুর পর ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার কারনে দুর্নীতি দমনে কমিটি গঠন করেছিলো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই প্রকল্পকে বন্ধ করা হয়নি। উল্টো সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এই প্রকল্পে আরো ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যার কোনো হিসাব দিতে পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। খোদ পানিসম্পদমন্ত্রী স্বীকার করেছে যে, ড্রেজিং প্রকল্পগুলোতে মহাদুর্নীতি হচ্ছে। কিন্তু এর বিরূদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এই লুটপাটেরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে সাড়ে ৪ শত কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিংয়ের জন্য ৭ টি ড্রেজার কেনা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় যে, এই ৭ টি ড্রেজার অনেক নিম্নমানের। কম দামে ড্রেজার সরবরাহ করে এর অধিকাংশ টাকাই ঠিকাদার কোম্পানি লোপাট করেছে। সর্বশেষ সরকার ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ টি নৌপথ খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, এই প্রকল্পটি কালক্ষেপনের চক্রবৃত্তে ঘুরছে। ফলে এটিতেই অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও নদী খনন বা ড্রেজিং নিয়ে অনেক আশাব্যঞ্জক বক্তব্য প্রদান করেছিলো এবং বেশ কয়েকটি ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলো- ‘নদী ড্রেজিং করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’। সেইসাথে রাষ্ট্রপতিও বলেছিলো- ‘আকস্মিক প্লাবন থেকে বাঁচতে নদী ড্রেজিং জরুরী’। কিন্তু তাদের বক্তব্যের পরও ড্রেজিং নিয়ে সরকার নানা পরিকল্পনা এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছে। কিন্তু সবই ব্যর্থতা আর দুর্নীতির করাল গ্রাসে পরিণত হয়েছে এবং নদ-নদীর নাব্যতা যে তিমিরে ছিলো তার চেয়ে আরো লাজুক পরিস্থিতিতে পৌছেছে।

অথচ, নদ-নদী মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বাংলাদেশবাসীর প্রতি অপার করুনার নিদর্শন। নদ-নদীর সুফল অনেক। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, সড়ক মহাসড়ক পথে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ যেকোনো ধরনের পণ্যসামগ্রী পরিবহন বাবদ ‘প্রতি মেট্রিক টনে প্রতি কিলোমিটার’ হারে খরচ পড়ছে গড়ে সোয়া ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। রেলপথে সেক্ষেত্রে খরচ হয় আড়াই টাকা থেকে ৩ টাকা ২৫ পয়সা। অন্যদিকে নৌপথে পণ্যসামগ্রী কিংবা যাত্রী পরিবহনে ব্যয় হয় গড়ে মাত্র এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত।

দৈনিক আল ইহসান শরীফের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতির গতিপথ বদলে দিতে পারে। সমুদ্র উপকূলীয় নৌ-পথগুলো সচল করা হলে পণ্য ট্রানজিট ব্যবস্থায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিবেষ্টিত (ল্যান্ডলকড) এ অঞ্চলে প্রথমদিকে সম্ভাব্য পরিমাণ হতে পারে পর্যায়ক্রমে বার্ষিক ৫শ’ থেকে ৮শ’ জাহাজ ও ১ থেকে ৪ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং ৪০-৫০ লাখ মেট্রিক টন থেকে ১ কোটি মেট্রিক টন মালামালের ডেলিভারি পরিবহন। শিপিং ও পরিবহন সেক্টরে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের দিগন্ত খুলে যাবে। পাশপাশি নদ-নদীর মৎস্য সম্পদ থেকেও জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হবে।

সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, নদ-নদী  ড্রেজিং ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত সব কাজকেই যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি শুধু ড্রেজিং করলেই হবে না। দেশের সার্বিক নদীপ্রবাহ নিয়ে পরিকল্পনা করে তারপর ড্রেজিং করলে ভালো। তা না হলে পরবর্তী বছরেই ড্রেজিং করা স্থানগুলো আবারো ভরাট হয়ে যাবে। আর সেচের পানি ভূ-উপরিস্থিত ভাগ থেকে যোগান নিতে হবে। সর্বোপরি নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বাড়াতে ও সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ! আর প্রতিশ্রুতি বা কথার ফুলঝুড়ি অথবা দুর্নীতি এবং অনিয়ম নয়। যথাযথ ড্রেজিং স্বচ্ছভাবে ও সক্রিয়ভাবে হোক এটাই এখন জনগণের জোরদার দাবী।

-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের  দাঁতভাঙ্গা জবাব- ৪৮

চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৭

বাতিল-ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র াল কাউসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১১ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভুমিকা-৪৮

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিলআলুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৪৯