সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং আরো ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করছি আমাদের প্রাণের আক্বা সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি।
গত ৯ মার্চ ২০১৪ ঈসায়ী তারিখে ‘প্রথম আলো’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিচের সংবাদটি পত্রস্থ হয়েছে।
“সরকার প্রধান নারীর ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সমতাভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্মের যিকির করে নারীদের আটকে রাখা যাবে না।” ————-
“আন্তর্জাতিক নারী দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘অগ্রগতির মূল কথা, নারী-পুরুষ সমতা।’
“সরকার প্রধান বলেন, ‘যারা নারীবিদ্বেষী অপপ্রচার করেন, তারা কেন ভুলে যান রসূলুল্লাহ ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ধরে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী অপর কেউ নন, একজন নারী, হযরত বিবি খাদিজা। তারা কেন ভুলে যান যে- বিবি খাদিজা নিজে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। হযরত বিবি আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”
“সরকার প্রধান নারীকে গৃহবন্দী করে রাখার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং নারীবিদ্বেষী অপপ্রচার বন্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।”
এখন সরকার প্রধানের এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আমরা ৯৭% মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মুসলিম জাতি সম্মিলিতভাবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে-
১) আমরা এখনো মুসলমান থেকে জুদা হইনি।
২) আমরা আমাদের মুসলমানিত্ব বাদ দেইনি।
৩) আমরা আমাদের দ্বীন ইসলাম উনার রীতি-নীতি, আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি।
৪) আমরা এখনো বিশ্বাস করি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নিয়ে এসেছেন এবং যা আদেশ-নিষেধ করেছেন তা এখন পর্যন্ত বলবৎ আছে এবং থাকবে।
৫) ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোনো মানুষ দ্বীন ইসলাম উনার বিকৃতসাধন করতে পারবে না।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন- “এই কিতাবে কোনো কিছুই বর্ণনা করতে বাদ দেই নি।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত ৩৮)
আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই যা এই কিতাবে উল্লেখ করা হয়নি।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
এবং আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ ۚ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ۚ
অর্থ: আপনার নিকট সত্য আসার পর বা সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের (কাফিরদের) প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না অর্থাৎ কোন মুসলমানের জন্য সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনুসরণ ব্যতীত কোন কাফির-মুশরিকদের মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ নিষিদ্ধ। আমি প্রত্যেকের (উম্মতের) জন্যে সম্মানিত শরীয়ত এবং সম্মানিত তরীক্বত নির্দিষ্ট করে দিয়েছি।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ৪৮)
সুতরাং সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়বলীর মধ্যে ‘নারী অধিকার’, ‘নারী মর্যাদা’ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নারীর মর্যাদা বেমেছাল যেমন- ১) পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে একমাত্র নারীদের মূল্যায়ন করা হয়; যা অন্য কোন ধর্মে করা হয় না।
২) ফরয পর্দা করার মধ্য দিয়েই নারীদের মর্যাদা শতগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একজন নারী ঘরে অবস্থান করবে। এবং যখন প্রয়োজনীয় কাজে বের হবে তখন পর্দার সাথে বের হবে অর্থাৎ আপাদমস্তক ঢেকে বের হবে। এমন পর্দানশীন মহিলাদেরকে বলা হয়েছে ‘স্বাধীনা মহিলা’, কেননা পর্দা করার কারণে কেউ তাদেরকে উত্ত্যক্ত করে না। যা পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৩৩নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে- “তোমরা তোমাদের বাড়ির ভিতরে অবস্থান করো। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেপর্দা হয়ে চলা-ফেরা করো না। ঘুরে বেড়িও না।”
আর যখন মেয়েরা বেপর্দা অবস্থায় বের হয় তখন নিজেদের কারণে রাস্তায়, অফিসে, আদালতে, শিক্ষাঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবলিলায় অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে- “মহিলারা পর্দায় থাকবে। যখন তারা বেপর্দা হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুঁকি দেয়।”
অর্থাৎ ইবলিস, জিন শয়তান এবং মানুষ শয়তান দ্বারা উত্যক্তকারীদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। ফলে তারা বেপর্দা মহিলাদেরকে বিরক্ত করে। নাউযুবিল্লাহ !
৩) সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহ পাক তিনি নারীদের প্রতি ইনছাফ করেছেন। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। অন্য ধর্মে সেটা নেই।
৪) একজন নারী তার পরিবারের বিভিন্ন দিক থেকে অগ্রণীভূমিকা পালন করে থাকেন যা অন্য ধর্মে দেখা যায় না।
কিন্তু সরকারপ্রধান বেপর্দা হয়ে, সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমা অতিক্রম করে ছেলেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিভাবে নারীদের সমতা বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, তা আমাদের বোধ গম্য নয়। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোথাও নেই নারীদেরকে ঘরে বন্দি করে বা আটকে রাখার কথা। যে সব উলামায়ে ‘সূ’ নারীদেরকে ঘরে আবদ্ধ রাখতে চায়, তাদের কথা তো শুধু গুমরাহ মানুষই শুনে থাকে।
যারা সত্যিকারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করেন, উনার আদেশ-নিষেধ উনাদেরকে মুহব্বত করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ উনাদেরকে মুহব্বত করেন তারা কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। তারা তো পর্দার খিলাফ কাজও করবেন না; বরং পর্দার মধ্য থেকে ফরয পরিমাণ ইলম অর্জনের জন্য, বিভিন্ন জরুরতের জন্য বাইরে বের হয়ে কাজ করে থাকেন। কিন্তু সম্মানিত শরীয়য়ত উনার সীমালঙ্ঘন করেন না এবং ছেলেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেহায়া বেলাল্লাপনার মতো চলা-ফেরা করেন না। (অসমাপ্ত)
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০