১০ জানুয়ারি ২০১১ সোমবার, ‘কালের কন্ঠে’ ‘নারী শিক্ষার জন্য কাজ করছি’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এই রিপোর্টটির কিছু কিছু উদ্ধৃতি আমরা নিম্নে উল্লেখ করছি এবং সাথে সাথে আমাদের কিছু মতামত তুলে ধরছি। যাতে পাঠক সমাজ চোখ কান খোলা রেখে হাক্বীক্বী মতটা উপলব্ধি করতে পারেন। পত্রিকার রিপোর্ট- ‘সবাইকে ভাবতে হবে একটা শরীরের ছেলেরা এক অংশ, মেয়েরা আর এক অংশ; তাই এক অংশকে অবশ রেখে শান্তি বা উন্নতি আসে না। আর শিক্ষা বা চাকরি সব জায়গায় মেয়েদের নিজেকে সুযোগ করে নিতে হবে। আমরা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের বলি এবং তাদের মা-বাবাদেরও বলি যেন এমন কোনো আচরণ তারা না শেখে, যেটা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে।’
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে মানুষ জাতি! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের পরিচয় লাভ করতে পার; নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ওই ব্যক্তি, যে বেশি মুত্তাকী।” (সূরা হুজুরাত : আয়াত শরীফ ১৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন- “তারা (মহিলারা) তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা (পুরুষরা) তাদের পরিষদ।” (সূরা বাকারা : আয়াত শরীফ ১৮৭)
উক্ত আয়াত শরীফ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক স্বরূপ এবং পরিপূরক। এবং স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একটি পরিবারের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকবে। যার যার স্বামীর সম্পূরক বা পরিপূরক হচ্ছে যার যার স্ত্রী। অন্য পুরুষের পরিপূরক অন্য পুরুষের স্ত্রী এটা বুঝানো হয়নি। যেখানে স্বামী তার স্ত্রীর পোশাক (এখানে বোঝানো হয়েছে শুধুমাত্র স্বামীর কাছেই স্ত্রী সম্পূরক বা পরিপূরক (যার স্ত্রী সে ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের কাছে নয়)। স্ত্রীর ক্ষেত্রেইও অনুরূপ। সেখানে স্বামী বাদ দিয়ে অন্যান্য ‘পরপুরুষের শরীরের একটা অংশ তাদের, আরেকটা অংশ মেয়েদের’- এটা কি করে ভাবা যেতে পারে? এটা কি শরীয়তসম্মত হলো? একজন স্ত্রী কি তার স্বামী ছাড়া অন্য পরপুরুষকে ভাববে সে তার অংশ? আর আরেক দিকে পিতা-ভাইরাতো রয়ে গেছে।
পরিস্থিতিটা কতখানি নাজুক এবং লজ্জাজনক কেউ চিন্তা করেছেন কি? ‘লজ্জা হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক।’ যেখানে লজ্জাই নেই, সেখানে ঈমানের অংশ থাকার প্রশ্নই আসে না। আর যেখানে ঈমান নেই সেখানে একটি মুসলিম সমাজে একটা ছেলে বা মেয়ের জীবনে শান্তি বা উন্নতি কিভাবে আসবে- সেটা চিন্তার বিষয়। মুসলিম মহিলাকে ঘরেও মাহরাম ব্যতীত অন্য সবার সামনেও পর্দা করতে হবে। ঠিক তেমনি পুরুষদেরও ঘরে-বাইরে সর্ব অবস্থায় নজরের (দৃষ্টির) পর্দা করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আহযাবের ৫৯নং আয়াত শরীফ-এ মহিলাদেরকে জিলবাব পরিধান করে প্রয়োজনে বের হতে বলেছেন এবং সূরা নূরের ৩০, ৩১নং আয়াত শরীফ-এ মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন মহিলাগণকে বলেছেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখতে। আর হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, “প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। পরের প্রতিটা দৃষ্টিতে একটা করে কবীরাহ গুনাহ লেখা হবে।”
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিধি-বিধান না মানলে, পর্দার বিপরীতে ছেলে-মেয়ে মিলে মিশে কর্মরত থাকলে তাদের উপর কি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থাকবে? উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইহসান থাকবে?
মূলত, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত না থাকার কারণেই বেপর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষ মিলে-মিশে থাকাতেই তাদের উপর নেমে এসেছে লা’নত আর গযব। আর তথাকথিত নারীবাদীদের কাছে মনে হচ্ছে তারা বৈষম্যের শিকার।
পুরুষরা দৈহিক গঠনে, চাল-চলনে, কণ্ঠে, কথা বার্তা, মন-মানসিকতায় আরেক রকম। এতো মহান আল্লাহ পাক উনারই সৃষ্টি। এখানেও কি তথাকথিত নারীবাদীরা বলবে ‘তারা বৈষম্যের শিকার’? (নাঊযুবিল্লাহ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন- “আর পুরুষেরা মহিলাদের মহর দিয়ে বিবাহ করে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে থাকে, এজন্য পুরুষদের তত্ত্বাবধানে থাকা মহিলাদের কল্যাণকর, যা শরীয়তে আবশ্যক।” (সূরা হুজুরাত : আয়াত শরীফ ৪৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন, “পুরুষদেরকে নারীদের উপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি একের উপর অন্যের মর্যাদা দান করেছেন এজন্য যে তারা (পুরুষরা) তাদের অর্থ ব্যয় করেন।” (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ ৩৪)
এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “পুরুষ তত্ত্বাবধায়ক তার পরিবারের। আর মহিলা তত্ত্বাবধায়ক তার স্বামীর ঘরের ও সন্তানের।” (বুখারী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুরুষ জাতির কর্মের পরিধি মহিলা জাতির কর্মের পরিধি থেকে পৃথক করে দিয়েছেন। সে মুতাবিক মহিলারা বাড়ির ভেতরের জন্য দায়িত্বশীল এবং পুরুষেরা বাইরের জন্য দায়িত্বশীল।
এসব আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ জানার পরও কি উক্ত নারীবাদীরা বলবে- তারা বৈষম্যের শিকার? (নাঊযুবিল্লাহ)
‘চিলে কান নিয়ে গিয়েছে, তাই সবাই ছুটলো চিলের পেছনে’ আমরা অন্তত এই নীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা যেহেতু মুসলমান, তাই আমরা বিশ্বাস করি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস। সুতরাং আমরা শরীয়তের হুকুমটাই মানব ইনশাআল্লাহ! শরীয়তে পর্দার বিধান অবশ্যই শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে শালীনতা শেখায়। আর এই পর্দা নারী-পুরুষ সবাই ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রে নিরাপদ রাখে এবং ঈমান হেফাজত করে। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের প্রাণের আক্বা, প্রাণপ্রিয় শায়েখ, মুজাদ্দিদুয যামান, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এবং এ যামানার নারী জাতির মুক্তির দিশারী, মু’মিনা নারীগণের রাহবার নারী জাতির খাছ লক্ষ্যস্থল, সাইয়্যিদাতুন নিসা, নূরে জাহান, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার খাছ দোয়ায় আমরা মহিলারা যেন শরীয়তের হাক্বীক্বী পর্দার উপলব্ধি করতে পারি এবং সাথে সাথে নিজে, পরিবারে এবং সমাজে তা বাস্তবায়ন করতে পারি সেই আরজি পেশ করছি। আমীন!
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০