উল্লেখ্য, দেশে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ১৫৯টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিবন্ধন রয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫০৭ জন। এর মধ্যে ‘ও’ লেভেলের স্কুল ৬৪টি, ‘এ’ লেভেলের ৫৪টি এবং জুনিয়র লেভেলের স্কুল ৪১টি। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড নিবন্ধন দিয়েছে ১০২টি স্কুলের। বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩৫০টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখের উপরে। তবে বাস্তবে এমন স্কুলের সংখ্যা আরো বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
জানা গেছে, অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কোনো অনুমোদনই নেই। তবু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নীতিমালা ও শিক্ষা আইন নেই। ইদানীং অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর প্রবণতাও বেড়েছে। সেই সুযোগে যত্রতত্র ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠছে। তাদের বেশির ভাগই ব্যবসা করছে। এছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকলেও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল নিয়ে দায়সারা ভাব রয়েছে। এমনকি ২০১৩ সালে হাইকোর্ট নতুনভাবে নীতিমালা করার নির্দেশ দিলেও এখনো তা করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইসলামবিরোধীর পাশাপাশি সংবিধান ও দেশ বিরোধী পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আদলে গড়ে উঠা এসব স্কুলের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো নীতিমালা না থাকায় নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করছে তারা। অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধেও নেই কোনো উদ্যোগ।
এছাড়া নিয়ম ভাঙ্গার অভিযোগে বছরে অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। বহিষ্কারের কারণ হিসেবে জানা যায়, বহিষ্কারের পর আসন খালি হলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে আবেদন করলেও কোনো কাজে আসছে না। এক্ষেত্রে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলগুলোতে ইচ্ছেমতো বেতন, বছরজুড়ে নানা অজুহাতে ফি, ক্যান্টিনে গলাকাটা দাম, রয়েছে নির্ধারিত টেইলর। অথচ লেখা-পড়ার মান নেই, নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। বিদেশী শিক্ষক দেখিয়ে কোথাও ভর্তি করালেও পরে আর দেখা যায় না। শিক্ষকদের টিস্যু পেপার পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কিনে দিতে হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করেও কাঙ্খিত কোনো ফল পাচ্ছে না। সরকার এসব স্কুল মনিটরিংয়ে উদাসীন।
অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছামতো বেতন ও ফি বৃদ্ধি করছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হলেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ভাড়া বাড়িতে এ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার সুযোগ না থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই চলছে ভাড়া করা জায়গায়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে পড়াতে গিয়ে অভিভাবকরা নানা বাধার সম্মুখীন হলেও শিক্ষাপ্রশাসন কোনো দায়িত্ব না নেয়ায় তারা প্রতিকারও চাইতে পারছে না।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর পরিচালনার নীতিমালা না থাকায় নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে নামে মাত্র রেজিস্ট্রেশন করে পরিচালিত হয়। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাতে চলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা, পাঠ্যবই ইত্যাদি নির্ধারণ। অথচ ক্যামব্রিজ, এডেক্সেল ও অস্ট্রেলিয়ানসহ আন্তর্জাতিক মানের স্কুলগুলোর নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাক্রম পরিচালিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা হচ্ছে না।
ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের কার্যক্রম এবং শিক্ষাক্রম পরীক্ষা ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে নেয়া হলেও সত্যিকার অর্থে কোন্ বই পড়ানো হচ্ছে, কি পড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশের কিছু পাঠ্য আছে কিনা, শিক্ষার্থীদের বেতন কাঠামো কেমন তা খতিয়ে দেখার কেউ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরী।
উল্লেখ্য, এসব স্কুলগুলোর সিলেবাসে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কোনো নাম-নিশানা তো দূরের কথা, বরং বাংলাদেশ বিষয়ও চরম উপেক্ষিত থাকে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভুল ইংরেজি শিক্ষা দেয়া হয়। এখানে শিক্ষা প্রদান এবং গ্রহণের প্রক্রিয়া দুটোই ত্রুটিপূর্ণ। সরকার এখনই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, দেশের জাতীয় সংস্কৃতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে- বলা যাবে না; বরং বলতে হবে- ক্রমশঃই মারাত্মক কুপ্রভাব পড়ছে।
-আল্লমা মুহম্মদ মাহবূবে ইলাহী, ঢাকা
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫