নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছুবহে ছাদিকের সময় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তৎক্ষণাত হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আবূ লাহাবকে এ সুসংবাদ প্রদান করেন। আবূ লাহাব এ সুসংবাদ শুনে তৎক্ষণাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দেয়ার জন্য হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়। এ বিষয়টি ছহীহ বুখারী শরীফসহ অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। যা আমরা দৈনিক আল ইহসান শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের মধ্যে বহুবার উল্লেখ করেছি।
সম্প্রতি বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা “আবূ লাহাব কর্তৃক হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করা সম্পর্কিত বর্ণনার ব্যাপারে বেশকিছু মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যাচারপূর্ণ আপত্তি উত্থাপন করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা অত্র প্রবন্ধে তাদের উক্ত মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যাচারপূর্ণ আপত্তিসমূহের খ-মূলক ছহীহ জবাব তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ!
প্রথমে আমরা দেখে নিব এ সম্পর্কে কোন কিতাবে কি বক্তব্য উল্লেখ আছে –
যেমন এ প্রসঙ্গে ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-উনার দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قَالَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُوْ لَهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْبَةٍ قَالَ لَه مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُوْ لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ أَنِّيْ سُقِيْتُ فِيْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِيْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ মুবারক পান করান। আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি সাক্ষাত করেছ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, তোমাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত করিনি। তবে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।” সুবহানাল্লাহ!
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ছহীহ বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী’ কিতাবের ৯ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
وَذَكَرَ السُّهَيْلِىُّ رَحْمَةُ اللهُ عَلَيْهِ اَنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ رَاَيْتُه فِيْ مَنَامِيْ بَعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَقَالَ مَا لَقِيْتَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـى كُلَّ يَوْمِ اِثْنَيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْتَقَهَا.
অর্থ: “হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত (কঠিন) দুরাবস্থায় রয়েছে। সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম!) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোনো শান্তির মুখ দেখিনি। তবে হ্যাঁ, প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার যখন আগমন করেন তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। (হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,) আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারণ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার দিন ছিলো ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। সেই দিনেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ নিয়ে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব উক্ত পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার খুশির সংবাদ শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয়।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ বর্ণনা, আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী’-উনার ২০তম খণ্ড ৯৫ পৃষ্ঠা ও কিরমানী ছহীহ আল বুখারীতেও উল্লেখ আছে।
দেওবন্দী মৌলবী ইদরীস কাসেমী রচিত “কাশফুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী” এর ২০তম খ- ১৩৮-১৪০ পৃষ্ঠার বর্ণনাটি নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো।
“পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের পূর্বেকার ঘটনা:
حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّاَبِـىْ لَـهَبٍ
হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ মাতা। আবূ লাহাবের বাঁদী। উনার পুত্র ছিলেন হযরত মাসরূহ আলাইহিস সালাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গে দুধ মুবারক পান করেছিলেন। এটা সে সময়ের কথা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হালিমা আলাইহাস সালাম উনার কাছে যাননি। হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত হামযা আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দুজনকেও দুধ মুবারক পান করান। যার দ্বারা উনারা উভয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই হলেন। সুবহানাল্লাহ! (হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এটাই ছহীহ মত)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বড়ই সম্মান করতেন। পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর উনার জন্য উপঢৌকানাদি পবিত্র মক্কা শরীফে পাঠাতেন। …
وَكَانَ اَبُوْ لَـهَبٍ اَعْتَقَهَا فَاَرْضَعَتِ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এ বাক্য দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, আবূ লাহাব প্রথমে হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করলেন। অতঃপর হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ পান করান। কিন্তু সীরাতের কিতাবগুলোতে এর বিপরীত রয়েছে। অবশ্য আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, উনার মুক্তি পাওয়াটা ছিল দুধপানের পূর্বে।
اُرِىَ: اُرِيَه بَعْضُ اَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْبَةٍ
এটি হচ্ছে কর্মবাচ্যের শব্দরূপ। দু’টি কর্মপদ যোগে সকর্মক ক্রিয়া।
اَىْ رَاٰي اَبَا لَـهَبٍ بَعْضُ اَهْلِهٖ فِـى الْـمَنَامِ
এখানে দর্শন দ্বারা স্বপ্নযোগে দর্শন উদ্দেশ্য। حِيْبَةٍ (হায়ে যের আর ইয়া সুকুনযোগে পঠিত) অবস্থা, অভাব ও নিঃস্বতাকে বলে। بَابُ الرَّجُلِ بِـحِيْبَةِ سُوْءٍ অর্থাৎ মানুষ করা অবস্থা حِيْبَةٍ আছে। আর মুস্তামিলী কপিতে بِـخِيْبَةٍ নুকতাবিশিষ্ট খা যোগে আছে।
اَىْ فِـىْ حَالَةٍ خَائِبَةٍ مِنْ كُلِّ خَيْرٍ
মৃত্যুর পর কে আবূ লাহাবকে স্বপ্নে দেখেছিল? আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম এ স্বপ্ন মুবারক দেখেছিলেন। যেমন- আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
إِنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ رَاَيْتُه فِيْ مَنَامِيْ بَعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَقَالَ مَا لَقِيْتُ بَعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـىْ كُلَّ يَوْمِ اِثْنَيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ فَأَعْتَقَهَا.
لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرِ أَنِّـىْ:
বর্ণনাটিতে لَـمْ اَلْقَ এর উল্লেখ করেননি। ইবনে বাত্তাল বলেন, বুখারী শরীফ উনার বর্ণনায় مَفْعُوْلٌ بِهٖ কে উল্লেখ করেননি। অথচ এতদ্ব্যতীত অর্থ শুদ্ধ হয় না। ইসমাঈলীর বর্ণনায় আছে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً হযরত আব্দুর রযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً অর্থাৎ তোমাদের পরে আমি কোন শান্তি পাইনি। কাস্তালানীর কপিতে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً আছে।
غَيْرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ فِـىْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِـىْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ
سُقِيْتُ : এটি ضَرَبَ বাব থেকে একবচন উত্তমপুরুষ কর্তৃবাচ্যের শব্দরূপ فِـىْ هٰذِهٖ উনার অঙ্কৃত বিষয়টি এখানে উল্লেখ নেই।
হযরত আব্দুর রযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে-
وَاَشَارَ اِلَى النُّقْرَةِ الَّتِـىْ بَيْنَ الْاِبْهَامِ الَّتِـىْ تَلِيْهَا مِنَ الْاَصَابِعِ
এবং ইসমাঈলী উনার রেওয়ায়েত দ্বারা জানা গেল যে, هٰذِهٖ এর ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে نُقْرَةٌ অর্থাৎ, ইবহাম ও শাহাদাত আঙ্গুলের মধ্যবর্তী যে ছোট ধরনের গর্ত থাকে, সেদিকে ইঙ্গিত ছিল। অর্থ হচ্ছে এই যে, এই দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে যে নগণ্য ধরনের স্থান শুন্য আছে, এতটুকু পরিমাণ সামান্যটুকু পানি আমাকে পান করানো হয়। এর কারণ হচ্ছে এই যে, আমি হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করেছিলাম। আবূ লাহাব হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ শোনানোর প্রেক্ষিতে আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করেছিলো। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে আঙ্গুলের মাঝের শূন্যস্থানের পরিমাণ পানি পান করিয়ে শান্তি পৌছালেন।
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফেই যার উল্লেখ আছে। এর বর্ণনা اَلرُّؤْيَا পর্বে পূনরায় বিস্তারিতভাবে আসছে। ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে এটাকে নানাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি প্রশ্ন ও তার জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, আখিরাতে কাফিরকেও তার সৎকর্ম উপকার দেবে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُوْرًا
এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, কাফিরদের আমল তাদের পরকালে কোনো উপকারে আসবেনা। (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ ২৩) দৃশ্যত উভয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
১। তার একটা জাওয়াব এই যে, বর্ণনাটিতে غَيْرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ এর অংশটি উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসালরূপে উদ্ধৃত করেছেন। মাওসূলরূপে উদ্ধৃত করেননি। সুতরাং এর গুরুত্ব নেই। আর সঠিক কথা হচ্ছে সেটিই, যার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফখানি নির্দেশ করছে। তাহলো এই যে, কাফিরদের সৎকর্ম তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
২। যদি এটাকে মাওসুল হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তখনো এটি একটি স্বপ্ন যা প্রামান্য বস্তু নয়।
৩। এটাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র আখ্যাও দেয়া যেতে পারে। কেননা এ ঘটনাটির সম্পর্ক ছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যার প্রেক্ষিতে আবূ লাহাবের সাথে এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিবেচনা করা হলো। যেমন আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
“…. وَقَالَ الْقَاضِىْ عِيَاضٍ اِنْعَقَدَ الْاِجْمَاعُ عَلٰى اَنَّ الْكُفَّارَ لَاتَنْفَعُهُمْ اَعْمَالَـهُمْ وَلَا يُثَابُوْنَ عَلَيْهَا بِنَعِيْمٍ وَلَا تَـخْفِيْفِ عَذَابٍ وَلٰكِنَّ بَعْضَهُمْ اَشَدُّ عَذَابًا بِـحَسْبِ جَرَائِمِهِمْ وَقَالَ الْكِرْمَانِـىْ لَا يَنْفَعُ الْكَافِرُ الْعَمَلَ الصَّالِحَ اِذِ الرُّؤْيَا لَيْسَتْ بِدَلِيْلٍ وَعَلٰى تَقْدِيْرِ التَّسْلِيْمِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَّكُوْنَ الْعَمَلُ الصَّالِحُ وَالْـخَيْرُ الَّذِيْ يَتَعَلَّقُ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا كَمَا أَنَّ أَبَا طَالِبٍ أَيْضًا يَنْتَفِعُ بِتَخْفِيْفِ الْعَذَابِ”.
অর্থ: “… হযরত ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ ব্যপারে ইজমা হয়েছে যে, কাফিররা তাদের আমলের ফায়দা ও ছাওয়াব লাভ করবে না। আর তাদের আযাবও লাঘব করা হবে না। বরং কারো কারো আযাব গুনাহ অনুযায়ী তীব্রতর করা হবে। হযরত কিরমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাফিররা নেক আমলের ফায়দা পাবে না। স্বপ্ন দলীল নয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত নেক ও উত্তম আমলের বদলা অবশ্যই পাবে। যেমন আবূ তালিবের আযাব লাঘব করা হয়।” (কাশফুল বারী)
আল্লামা হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
زَادَ الْبُخَارِىْ قَالَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُوْ لَهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْبَةٍ قَالَ لَه مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُوْ لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ خَيْرًا غَيْرَ أَنِّيْ سُقِيْتُ فِيْ هَذِهٖ بِعَتَاقَتِيْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَاَشَارَ اِلَى النُّقْرَةِ الَّتِـىْ بَيْنَ الْاِبْـهَامِ الَّتِـىْ تَلِيْهَا مِنَ الْاَصَابِعِ. وَذَكَرَ السُّهَيْلِىْ وَغَيْرُه اَنَّ الرَّائِىَ لَه هُوَ اَخُوْهُ الْعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ. وَكَانَ ذٰلِكَ بَعْدَ سَنَةٍ مِّنْ وَفَاةِ اَبِـىْ لَـهَبِ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ وَفِيْهِ اَنَّ اَبَا لَـهَبٍ قَالَ لِلْعَبَّاسِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّه لَيُخَفَّفُ عَلَىَّ فِـىْ مَثَلِ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ قَالُوْا لِاَنَّه لـَمَّا بَشَّرَتْهُ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِـمِيْلَادِ ابْنِ اَخِيْهِ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْتَقَهَا مِنْ سَاعَتِهٖ فَجُوْزِىَ بِذٰلِكَ لِذٰلِكَ.
অর্থ: “ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ মুবারক পান করান। আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি সাক্ষাত করেছ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, তোমাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত করিনি। তবে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।” সুবহানাল্লাহ!
আর আবূ লাহাব তার বৃদ্ধাঙ্গুলীর মধ্যবর্তী গর্তের দিকে ইশারা করলো। হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্যান্য মুহাদ্দিছ উনারা উল্লেখ করেন, নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি হচ্ছেন আবূ লাহাবের ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি। আর সময়টা ছিল বদরের জিহাদের ঘটনার পর আবূ লাহাবের মৃত্যুর ১ বছর পর। নিশ্চয়ই আবূ লাহাব স্বপ্নে হযরত আব্বাস আলাইহাস সালাম উনাকে বললো, ‘(হে ভাই!) অবশ্যই এ কঠিন আযাব ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার উনার দিন লাঘব করা হয়, আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যরা বলেন, হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে তার ভাতিজা হযরত খাজা যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার “নূরী আওলাদ” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ দেন তৎক্ষণাৎ সে খুশিতে উনাকে মুক্ত করে দেয়। এই কারণেই আযাব লাঘব হয়ে থাকে।” সুবহানাল্লাহ!
বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা আহমদ ইবনে আবী ইয়া’কুব ইবনে জা’ফর ইবনে ওহাব ইবনে ওয়াদ্বিহিলি কাতিবিল আব্বাসী আল মা’রূফ বিল ইয়া’কূবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তারিখুল ইয়াকুবী’ নামক গ্রন্থের ১ম খ-, ৩৩০ পৃষ্ঠায় লিখেন-
فَكَانَ اَوَّلُ لَبَنٍ شَرِبَه بعْدَ اُمِّهٖ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةُ اَبِـىْ لَـهَبٍ وَشَدَّ اَرْضَعَتْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ هٰذِهٖ حَمْزَةَ بْنَ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
وَجَعْفَرَ بْنَ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَأَبَا سَلَمَةَ بْنَ عَبْدِ الْأَسَدِ الْـمَخْزُوْمِىَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ مَا بَعْثَهُ اللهَ رَأَيْتُ اَبَا لَـهَبٍ فِيْ النَّارِ يَصِيْحُ الْعَطَشَ الْعَطَشَ فَيُسْقٰي مِنَ الْـمَاءِ فِيْ نُقْرِ إِبْـهَامِهٖ فَقُلْتُ بِـمَ هٰذَا فَقَالَ بِعَتَقِىْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لِأَنَّهَا أَرْضَعَتْكَ.
অর্থ: “উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর যিনি সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ মুবারক পান করান তিনি হলেন, আবূ লাহাবের বাঁদি হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম। হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে, হযরত জা’ফর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত আবূ সালামা ইবনে আব্দুল আসাদ আল মাখযূমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি লাহাবের মৃত্যুর পর আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও! পানি দাও!! অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে তাকে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারণে এ পানি পাচ্ছো? আবু লাহাব বললো, (আপনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে) হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে মুক্ত করার কারণে এই ফায়দা পাচ্ছি। কেননা তিনি আপনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে ‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া’ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ ‘শরহুয্ যারকানী’ কিতাবের ১ম খ-ের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَدْ رُوِىَ أَبُوْ لَـهَبٍ بَعْدَ مَوْتِهٖ فِي النَّوْمِ فَقِيْلَ لَه مَا حَالُكَ؟ قَالَ: فِي النَّارِ. اِلَّا أَنَّه خُفِّفَ عَنِّـىْ كُلَّ لَيْلَةِ اثْنَيْنِ وَأَمْصِ مِنْ بَيْنِ اِصْبَعِيْ هَاتَيْنِ مَاءً. وَأَشَارَ بِرَأْسِ اِصْبَعِهٖ وَاَنَّ ذَالِكَ بِاِعْتَاقِىْ لِثُوْيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ عِنْدَ مَا بَشَّرَتْنِي بِوِلَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِإِرْضَاعِهَا لَه.
قَالَ اِبْنُ الْـجَزْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَإِذَا كَانَ هٰذَا الْكَافِرُ الَّذِيْ نُزِلَ الْقُرْانُ بِذَمِّهٖ جُوْزِيَ فِي النَّارِ بِفَرْحِهٖ لَيْلَةَ مَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهٖ فَمَا حَالُ الْـمُسْلِمِ الْـمُوَحِّدِ مِنْ أُمَّتِهٖ عَلَيْهِ السَلَامُ يَسُرُّ بِـمَوْلِدِهٖ وَيَبْذُلُ مَا تَصِلُ إِلَيْهِ قُدْرَتُه فِيْ مُـحَبَّتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِىَّ اَنَّـمَا يَكُوْنُ جَزَاؤُه مِنَ اللهِ الْكَرِيـْمِ أَنْ يَّدْخُلَ بِفَضْلِهِ الْعَمِيْمِ جَنَّاتِ النَّعِيْمٍ.
অর্থ: “বর্ণিত আছে যে, আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর কেউ তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার কি অবস্থা? আবূ লাহাব বলে, জাহান্নামে আছি, তবে প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) আমার আযাব লাঘব করা হয়। আমার দু আঙ্গুলীর মাঝখান থেকে সুমিষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। আবূ লাহাব তার আঙ্গুলের অগ্রভাগের দিকে ইশারা করে (আবূ লাহাব বলে) আর এটা মূলত যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সূসংবাদ হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে দিয়েছেন তখন উনাকে আযাদ করে দেয়ার কারণে। কেননা তিনি উনাকে দুধ পান করান। সুবহানাল্লাহ!
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইবনুল জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির যার নিন্দায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা শরীফ পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার রাত্রিতে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারণে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোনো মুসলমান ব্যক্তি যদি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ফযল ও করমে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ বর্ণনা রঈসুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা শাইখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘মা-ছাবাতা-বিস সুন্নাহ ৩২ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে।
আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া উনার উর্দূ তরজমা ‘সীরতে মুহম্মদিয়া উনার ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ আছে-
رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کو ابولہب کی آزاد کی ہوئی لونڈی ثویبہ علیہا السلام نے دودھ پلایا ہے جس وقت ثویبہ علیہا السلام نے آپکی ولادت کی بشارت ابو لہب کو دی تھی ابولہب نے اس خوشی میں ثویبہ علیہا السلام کو آزاد کر دیا تھا. ابو لہب کو مرنے بعد کسی نے خواب میں دیکھا. اس سے پوچھا تیرا کیا حال ہے. حضرت عباس علیہ السلام نے ابولہب کو خواب میں دیکھا یہ خواب جنگ بدر کی بعد واقع ہوا، ابو لہب سے پوچھا تیرا کیا حال ہے اس نے کہا دوزخ میں ہوں، مگر دوشنبہ کی ہر رات کو مجھ سے عذاب کی تخفیف کردی جاتی ہے، اور میں اپنی دو انگلیوں کی گھڑے کی مقدار سے پانی پیتا ہوں (دو انگلییں ایک سبابہ دوسری ابہام جب ان کو کشادہ کیا جائے تو ان کے درمیان ایک گرھا پیدا ہو جاتا ہے وہ مقدار مراد ہے) اور ابو لہب نے اپنی انگلی کے سرے سے اس گڑھے کی طرف اشارہ کر کے مقدار بتائی اور کہا کہ اتنا پانی اس لئے پلایا جاتا ہے کہ ثویبہ علیہا السلام نے آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی ولادت کی مجھ کو بشارت دی تھی میں نے آپ کی ولادت کی خوشی سے ثویبہ کو آزاد کردیا تھا اور اس وجہ سے مجھ کو اتنا پانی پلایا جاتا ہے کہ ثویبہ علیہا السلام نے آپ کو دودھ پیلایا ہے.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবূ লাহাব কর্তৃক আযাদকৃত হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি দুধ মুবারক পান করান। যে সময় হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ আবূ লাহাবকে দেন তখন আবূ লাহাব সেই খুশিতে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়। আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করেন তোমার কি অবস্থা? আর এ স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন বদর জিহাদ উনার পরে। আবূ লাহাব বলে জাহান্নামে আছি। তবে প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতে আমার দু আঙ্গুলীর গভীরতা পরিমাণ পানি পান করি। (শাহাদাত আঙ্গুলী ও বৃদ্ধাঙ্গুলী যখন প্রশস্থ করা হয় তখন যে পরিমাণ গভীরতা সৃষ্টি হয় সে পরিমাণই উদ্দেশ্য) আবূ লাহাব তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা ইশারা করে সেই গভীরতার পরিমাপ বর্ণনা করে। সে আরো বলে যে, হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ যখন আমাকে দেন তখন আমি সেই খুশিতে উনাকে আযাদ করে দেই। আর একারণেই আমাকে এতটুকু পানি পান করানো হয়। যতটুকু হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ পান করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এছাড়া ‘তবাক্বাতুল কুবরা লি ইনে সা’দ’, সীরাতুল হালবীয়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আদদিমিয়াত্বিসহ অসংখ্য নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে উল্লিখিত বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
উপরোল্লিখিত কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সুসংবাদ শুনে আবূ লাহাব তৎক্ষণাত অর্থাৎ ঐসময়ই হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়।
যেমন উপরে বর্ণিত বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফতহুল বারী ও উমদাতুল ক্বারীর ইবারতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে-
وَكَانَتْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بِـمَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَعْتَقَهَا
অর্থাৎ হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম যখন আবূ লাহাবকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুসংবাদ দিলেন তখন সে উনাকে আযাদ করে দিল। সুবহানাল্লাহ!
আর বিখ্যাত ‘বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবের ইবারতেও উল্লেখ আছে-
لَـمَّا بَشَّرَتْهُ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِـمِيْلَادِ ابْنِ اَخِيْهِ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْتَقَهَا مِنْ سَاعَتِهٖ
অর্থাৎ, যখন হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আবূ লাহাবের ভাতিজা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সুসংবাদ আবূ লাহাবকে দিলেন, আবূ লাহাব ঐ সময়ই উনাকে আযাদ করে দেয়। সুবহানাল্লাহ!
অথচ বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা লিখেছে, “আবূ লাহাব হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করেছে একথা সত্য। কিন্তু রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (বিলাদত) জন্মের সুসংবাদ শুনে আযাদ করেছে একথা বানোয়াট।” নাউযুবিল্লাহ!
পাঠক! এখন আপনারাই বলুন কার কথা বানোয়াট?
আল্লামা হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা?
আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা?
আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা?
না, প্রতারক, মিথ্যাবাদী বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের কথা? অবশ্যই ওহাবীদের কথাটিই মিথ্যা ও বানোয়াট।
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের প্রতারণা এখানেই শেষ নয়। তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে ছহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে ঠিকই; কিন্তু এখানেও তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করেছে।
যেমন তারা লিখেছে-
قَالَ عُرْوَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلاَةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُوْ لَـهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ أُرِيَه بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْبَةٍ قَالَ لَه مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُوْ لَـهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْـرَ أَنِّـي سُقِيْتُ فِـيْ هَذِهٖ بِعَتَاقَتِـيْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অর্থ করেছে এভাবে- “উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছুয়াইবিয়াহ আলাইহাস সালাম ছিলেন আবূ লাহাবের দাসি। আবূ লাহাব উনাকে আযাদ করেছিলো। হযরত ছুয়াইবিয়া আলাইহাস সালাম রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ পান করিয়েছিল। যখন আবূ লাহাব মারা গেলো তার পরিবারের কোনো একজনকে তাকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখানো হলো। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সাক্ষাত করেছো? সে বললো আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত করিনি। তবে আমি ছুয়াইবিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করার কারণে এ আঙ্গুল দ্বারা পানি পাই।”
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা-
كَانَ أَبُوْ لَـهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এ অংশটুকুর যে অর্থ করেছে সেটি নিয়েই আমাদের প্রশ্ন-
তারা অর্থ করেছে, “আবূ লাহাব তাকে আযাদ করেছিল। ছুয়াইবিয়া আলাইহাস সালাম রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ পান করিয়েছিল”
অর্থাৎ তাদেরকৃত অর্থের দ্বারা তারা এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, আযাদ করার ঘটনা আর দুধ পান করানোর ঘটনা দুটি ভিন্ন ঘটনা। অথচ ঘটনা দুটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা নয়। বরং একই সময়ের ঘটনা। অর্থাৎ যখন হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সুসংবাদ পায় তখনই আবূ লাহাব উনাকে আযাদ করে দেয়। আর তখনই তিনি দুধ পান করান।
তাছাড়া উক্ত বাক্যাংশে প্রথমে আযাদ করার কথা উল্লেখ আছে এরপর দুধ পান করানোর কথা উল্লেখ আছে। অর্থাৎ আযাদ করে দেয়ার উদ্দেশ্যই ছিল দুধ পান করানো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আবূ লাহাব পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সুসংবাদ নাই শুনতো তাহলে দুধ পানের জন্য আযাদ করলো কেন? আর আযাদ করে দেয়ার কারণেই উক্ত পুরস্কার পাচ্ছে একথা পবিত্র হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ করা হলো কেন?
মূলত বুখারী শরীফে বর্ণিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে কিছু বিষয় উহ্য রয়ে গেছে। যে বিষয়গুলো হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম উনারা উনাদের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাই যে কোনো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা জানতে ও বুঝতে হলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহ দেখতে হবে। বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা যদি বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলো একটু ভালোভাবে পড়তো তাহলে হয়তো তারা এরূপ বিভ্রান্তিতে পড়তো না। আর অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতো না।
বুখারী শরীফ উনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী ও উমদাতুল ক্বারীতেও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় একথা স্পস্টভাবে উল্লেখ আছে যে-
وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرْتُ اَبَا لَـهَبٍ بِـمَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَعْتَقَهَا
অর্থাৎ “হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন আবূ লাহাবকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুসংবাদ দিলেন তখন সে উনাকে আযাদ করে দিল।”
এরপরও যারা বলবে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুসংবাদ শুনে আবূ লাহাব হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করেছেন একথা বানোয়াট, একথা হাদীছে নেই” তারা যে কত বড় মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও গোমরাহ তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা এরপর লিখেছে, “রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা হিজরতের পর আবূ লাহাব ছুওয়াইবিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করেছিলো।” এ ব্যাপারে সে আত তাবাক্বাতুল কুবরা লি ইবনে সা’দ, ‘আল ইসতিয়াব ও আল জামি’ লিল ফাতাওয়া নামক কিতাব থেকে কয়েকটি ইবারত উল্লেখ করেছে।
হ্যাঁ, উক্ত কিতাবসমূহে ইবরাতগুলো উল্লেখ আছে বটে। কিন্তু উল্লিখিত কিতাবসমূহের উক্ত মতটি ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইমাম কুসত্বলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “শরহু আল্লামাতুয যারক্বানী ১ম খ-, ২৫৯ পৃষ্ঠায়” লিখেন-
(اَعْتَقَهَا) أَبُوْ لَهَبٍ (حِيْنَ بَشَّرَتْهُ بِوِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى صَحِيْحٍ فَقَالَتْ لَه أَشْعَرْتَ أَنَّ حَضْرَتْ اٰمِنَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَدْ وَلَدَتْ غُلَامًا لِأَخِيْكَ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ لَهَا اِذْهَبِيْ فَأَنْتِ حُرَّةٌ كَمَا فِي الرَّوْضِ. وَقِيْلَ إِنَّمَا أَعْتَقَهَا بَعْدَ الْـهِجْرَةِ قَالَ الشَّامِيْ وَهُوَ ضَعِيْفٌ وَالْـجَمْعُ بِأَنَّه أَعْتَقَهَا حِيْنَئِذٍ وَلَمْ يُظْهَرْهُ اِلَّا بَعْدَ الْـهِجْرَةِ مِـمَّا لَا يَسْمَعُ بِأَنَّه لَهَا هَاجَرَ كَانَ عَدُوَّا فَلَايَتَأْتِىْ مِنْهُ اِظْهَارًا أَنَّه كَانَ فَرِحَ بِوِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন আবূ লাহাবকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ দিলেন। তখনই আবূ লাহাব উনাকে আযাদ করে দেয়। ‘হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আবূ লাহাবকে বললেন, আপনি অবগত হোন যে, আপনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের একজন সম্মানিত আওলাদ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।’ আবূ লাহাব হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে বললো, আপনি এখনই উনার খিদমত মুবারকে যান, আজ থেকে আপনি আযাদ। অনুরূপ ‘আর রওদ্বুল উন্ফ’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে। কেউ কেউ বলে, ‘হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে হিজরতের পর আযাদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ মতটি জঈফ বা দূর্বল। মূলকথা হলো, আবূ লাহাব তখনই উনাকে আযাদ করেছিলো। আর উক্ত ঘটনাটি হিজরতের পরে প্রকাশিত হয়েছে যে কারণে কেউ শুনেনি। আর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করেন, তখন আবূ লাহাব ছিল উনার শত্রু। এ অবস্থায় আবূ লাহাবের থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে খুশি প্রকাশ হওয়া কখনোই কল্পনা করা যায় না।”
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত কিতাব ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীারাতি খইরিল ইরাদ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-
قَالَ فِـى الْغُرَرِ: وَاخْتَلَفُوْا مَتٰى اَعْتَقَهَا؟ فَقِيْلً اَعْتَقَهَا حِيْنَ بَشَّرَتْهُ بِوِلَادَةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِىَ الصَّحِيْحُ. وَقِيْلَ: فَلَمَّا هَاجَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَى الْـمَدِيْنَةِ اَعْتَقَهَا اَبُوْ لَـهَبٍ وَهُوَ ضَعِيْفٌ
অর্থ: “গুরার নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে কখন আযাদ করা হয়েছিল সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক উনার সুসংবাদ শুনে আবূ লাহাব উনাকে আযাদ করে দেয়, এ কথাটি ছহীহ বা বিশুদ্ধ। আর হিজরতের পর আযাদ করার বর্ণনাটি দ্বঈফ বা দূর্বল।”
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হিজরতের পর আযাদ করার মতটি জঈফ বা দূর্বল। ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, আবূ লাহাব যখন হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ শুনে তখনই সে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়। আর তখনই তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ মুবারক পান করান। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতা করতে গিয়ে একটি জঈফ বা দূর্বল মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে আবারো নিজেদেরকে চরম জালিয়াত হিসেবে সাব্যস্ত করলো। নাউযুবিল্লাহ!
স্মর্তব্য যে, বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা কিছুদিন পূর্বে সনদ নেই এই অজুহাতে “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” নামক কিতাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহকে অস্বীকার করেছে। অথচ হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়া সম্পর্কিত দ্বঈফ বা দূর্বল বক্তব্যকে ঠিকই দলীল হিসেবে পেশ করেছে। এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, তাদের স্বপক্ষের বক্তব্য দ্বঈফ বা দূর্বল হলেও তা তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য আর বিপক্ষের বর্ণনা ছহীহ হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। নাউযুবিল্লাহ!
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা অতঃপর লিখেছে, “হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করার কারণে জাহান্নামে আবূ লাহাবের শাস্তি ঐ দিন কমে” এ বক্তব্যটির উপর মুহাদ্দিছ উনারা আপত্তি করেছেন। অনেকেই বলেছেন যে, একথা ঠিক নয়।”
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা এ ব্যাপারে “বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী ৯ম খ- ১৪৫ পৃষ্ঠা থেকে একখানা ইবারত উল্লেখ করেছে। নিম্নে তা তাদেরকৃত অর্থসহ হুবহু উল্লেখ করা হলো-
وَفِى الْـحَدِيْثِ دَلَالَةٌ عَلٰى أَنَّ الْكَافِرِيْنَ قَدْ يَنْفَعُهُ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِي الْاٰخِرَةِ لٰكِنَّه مُـخَالِفٌ لِّظَاهِرِ اْلقُرْانِ قَالَ اللهُ تَعَالٰى (وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءًا مَّنثُوْرًا) وَأُجِيْبُ أَوَّلًا بِأَنَّ الْـخَبْرَ مُرْسَلٌ أَرْسَلَه عُرْوَةُ وَلَـمْ يَذْكُرْ مِنْ حَدِثِهٖ بِهٖ وَعَلٰى تَقْدِيْرٍ أَنْ يَّكُوْنَ مَوْصُوْلًا فَالَّذِىْ فِي الْـخَبْرِ رُؤْيَا مَنَامٍ فَلَا حُجَّةٌ فِيْهِ وَلَعَلَّ الَّذِيْ راٰهَا لَـمْ يَكُنْ اِذَا ذَاكَ اَسْلَمَ بَعْدَ فَلَا يـَحْتَجُّ بِهٖ. وَثَانِيًا عَلٰى تَقْدِيْرِ الْقُبُوْلِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَكُوْنَ مَا يُتَعَلَّقُ بِالنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا مِّنْ ذَالِكَ بِدَلِيْلٍ قِصَّةَ أَبِـىْ طَالِبٍ كَمَا تَقَدَّمَ أَنَّه خُفِّفَ عَنْهُ فَنَقَلَ مِنَ الْغَمَرَاتِ إِلَى الضَّحْضَاحِ.
অর্থাৎ আবূ লাহাবের আযাদ করার শাস্তি লাঘব হওয়ার বিষয়টি কুরআনের স্পষ্ট নছের বিপরীত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, কাফেরদের ভালো কাজ আখেরাতে বিক্ষিপ্ত বালুর মত উড়ে যাবে। এছাড়া খবরটি মুরসাল। এছাড়া মাওসুল ধরে নিলে বিষয়টি স্বপ্নের। আর স্বপ্ন শরীয়তের দলীল নয়। এজন্য স্বপ্ন দ্বারা দলিল দেয়া যাবে না।”
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের করা অর্থ এ পর্যন্তই শেষ।
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা তাদের উক্ত বক্তব্যে অনেকগুলো জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। যেমন প্রথমতঃ তারা লিখেছে যে, “মুহাদ্দিছরা আপত্তি করেছেন, অনেকেই বলেছেন, একথা ঠিক নয়।” এখানে তারা ‘মুহাদ্দিছরা’ এ শব্দ দ্বারা বুঝাতে চেয়েছে যে, সকল মুহাদ্দিছ এ ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! অথচ তা ডাহা মিথ্যা। আর ‘অনেকেই’ শব্দ দ্বারা বুঝাতে চেয়েছে যে, অধিকাংশ মুহাদ্দিছ এ ব্যাপারে আপত্তি করেছে। মুলত তাদের একথাটিও বানোয়াট। কারণ দু একজন ব্যতীত কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি করেননি।
দ্বিতীয়ত: বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে ‘ফাতহুল বারী’ থেকে যে ইবারত উল্লেখ করেছে তাতেও একাধিক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। যেমন-
১। তারা যে ইবারতটি উল্লেখ করেছে তার পূর্ণ অর্থ করেনি। বরং আংশিক বা প্রয়োজন মত অর্থ করেছে।
২। তারা যে ইবারতটি সে উল্লেখ করেছে ঠিক তার উপরের ইবারতেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবূ লাহাব পবিত্র বিলাদত শরীফের সুসংবাদ শুনে সাথে সাথে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করেছিল। বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা তা গোপন রেখেছে বা কারচুপি করেছে।
এবার আসুন বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের জালিয়াতির জবাবে-
… বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের প্রথম জালিয়াতি হচ্ছে, তারা ‘ফাতহুল বারী’ থেকে যে ইবারতটি উল্লেখ করেছে তার কিছু অংশের অর্থ করেছে আর কিছু অংশের অর্থ করেনি। কারণ পরিপূর্ণ অর্থ করলে ফাতহুল বারীর উক্ত বক্তব্যটি তাদের বিপক্ষে ও আমাদের পক্ষে চলে যাবে। তাই তারা এরূপ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। নিম্নে উক্ত ইবারতটি পূর্ণ অর্থ সহ তুলে ধরা হলো-
وَفِى الْـحَدِيْثِ دَلَالَةٌ عَلٰى أَنَّ الْكَافِرِيْنَ قَدْ يَنْفَعُهُ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِي الْاٰخِرَةِ لٰكِنَّه مُـخَالِفٌ لِّظَاهِرِ اْلقُرْانِ قَالَ اللهُ تَعَالٰى (وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءًا مَّنثُوْرًا) وَأُجِيْبُ أَوَّلًا بِأَنَّ الْـخَبْرَ مُرْسَلٌ أَرْسَلَه عُرْوَةُ وَلَـمْ يَذْكُرْ مِنْ حَدِثِهٖ بِهٖ وَعَلٰى تَقْدِيْرٍ أَنْ يَّكُوْنَ مَوْصُوْلًا فَالَّذِىْ فِي الْـخَبْرِ رُؤْيَا مَنَامٍ فَلَا حُجَّةٌ فِيْهِ وَلَعَلَّ الَّذِيْ راٰهَا لَـمْ يَكُنْ اِذَا ذَاكَ اَسْلَمَ بَعْدَ فَلَا يـَحْتَجُّ بِهٖ. وَثَانِيًا عَلٰى تَقْدِيْرِ الْقُبُوْلِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَكُوْنَ مَا يُتَعَلَّقُ بِالنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا مِّنْ ذَالِكَ بِدَلِيْلٍ قِصَّةَ أَبِـىْ طَالِبٍ كَمَا تَقَدَّمَ أَنَّه خُفِّفَ عَنْهُ فَنَقَلَ مِنَ الْغَمَرَاتِ إِلَى الضَّحْضَاحِ.
অর্থ: বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে, কাফিরদের নেক কাজ পরকালে ফায়দা দিবে। তবে উক্ত পবিত্র হাদীছখানা প্রকাশ্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার খিলাফ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (“আমি তাদের আমলসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করবো এবং তা উৎক্ষিপ্ত ধুনিলকণায় পরিণত করে দিব।”) প্রথমতঃ আমি জাওয়াব দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মুরসাল যা হযরত উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি কার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন উনার নাম তিনি উল্লেখ করেননি। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা স্বপ্নে দেখা বিষয় হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। আর তা দলীল হতে পারে না। আর যার ব্যাপারে স্বপ্নে দেখা হয়েছে সে ইসলাম গ্রহণ করেনি, তাই তা দলীল হতে পারে না। আর দ্বিতীয় জাওয়াব হচ্ছে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে যেহেতু তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে দলীল হচ্ছে আবূ তালিবের ঘটনা যা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, উনার শাস্তি লাঘব করা হয়েছে। অর্থাৎ কঠিনতর শাস্তি পরিবর্তন করে অল্প শাস্তি দেয়া হয়েছে।”
আপনারা বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের করা অর্থটি দেখুন আর আমাদের করা অর্থটিও দেখুন তাহলেই তাদের জালিয়াতী স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। এখানে তাদের সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হচ্ছে উক্ত ইবারতে উল্লেখিত-
وَثَانِيًا عَلٰى تَقْدِيْرِ الْقُبُوْلِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَّكُوْنَ مَا يُتَعَلَّقُ بِالنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا مِّنْ ذَالِكَ بِدَلِيْلٍ قِصَّةَ أَبِـىْ طَالِبٍ كَمَا تَقَدَّمَ أَنَّه خُفِّفَ عَنْهُ
অর্থ: আর দ্বিতীয় জাওয়াব হচ্ছে, উক্ত হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে যেহেতু তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে দলীল হচ্ছে আবূ তালিবের ঘটনা যা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, উনার শাস্তি লাঘব করা হয়েছে। অর্থাৎ কঠিনতর শাস্তি পরিবর্তন করে অল্প শাস্তি দেয়া হয়েছে।”
এ অংশটুকুর কোনো অর্থই তারা করেনি। অথচ এ অংশটুকু দ্বারা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, কাফিররা তাদের ভালো কাজের বদলা পরকালে পাবে না একথা ঠিক। তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার সাথে সংশ্লিষ্ট আমলের বদলা কাফির হলেও পাবে। সুবহানাল্লাহ! বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা এ বিষয়টিই চাতুরতার সাথে গোপন করে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!
বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের দ্বিতীয় জালিয়াতি হচ্ছে, ‘ফাতহুল বারী’ থেকে যে ইবারতটি তারা উল্লেখ করেছে ঠিক তার উপরের ইবারতেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবূ লাহাব পবিত্র বিলাদত শরীফের সুসংবাদ শুনে সাথে সাথে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করেছিল। নি¤েœ উক্ত ইবারতটি উল্লেখ করা হলো-
وَذَكَرَ السُّهَيْلِىُّ رَحْمَةُ اللهُ عَلَيْهِ اَنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُوْ لَـهَبٍ رَاَيْتُه فِيْ مَنَامِيْ بَعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَقَالَ مَا لَقِيْتَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـى كُلَّ يَوْمِ اِثْنَيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْتَقَهَا.
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত (কঠিন) দুরাবস্থায় রয়েছে। সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম!) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোনো শান্তির মুখ দেখিনি। তবে হ্যাঁ, প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার যখন আগমন করেন তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি।
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারণ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার দিন ছিলো ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। সেই দিনেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ নিয়ে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব উক্ত পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার খুশির সংবাদ শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয়।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হলো যে, হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আবূ লাহাব তখনই আযাদ করে দেয়, যখন হযরত ছুওয়াইবাহ আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুসংবাদ প্রদান করেন। এমতটিই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক। আর হিজরতের পর আযাদ করার মতটি দূর্বল ও পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়তঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে কাফিরের শাস্তি লাঘব হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছ উনারা কেউ আপত্তি করেননি। কাজেই বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও জিহালতপূর্ণ।
এ বিষয়ে তাদের প্রতি প্রকাশ্য বাহাছের আহ্বান রইলো। তাদের যদি দলীল এবং সাহস থাকে, তাহলে তারা তারতীব অনুযায়ী বাহাছে বসুক। আমরা বাহাছে বসতে প্রস্তুত রয়েছি।
তাছাড়া প্রয়োজনে আরো বিস্তারিত এবং বৃহত্তর কলেবরে এ বিষয়ে পত্রস্থ করা হবে।
মহান আল্লাহ পাক সকলকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং জাহিলদের জিহালতী হতে হিফাযত করুন। আমীন।
-মুফতী মুহম্মদ আবুল খায়ের।