ভারতীয় টিভি চ্যানেল তথা অপসংস্কৃতির প্রভাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে দেশের বৃহৎ গোষ্ঠী। পরকীয়ার পরিণতি হিসেবে নিত্যনতুন বাড়ছে লাশের সারি। ভেঙ্গে যাচ্ছে সংসারজীবনসহ সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা। পরকীয়ায় মত্ত হয়ে আপন মা তার শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করছে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে পরকীয়ায় হত্যার পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। পরকীয়ার কারণে ঘটা সাম্প্রতিক কিছু হত্যাকান্ডের হেডিং-
-যশোর শার্শায় পরকীয়ার জেরে মনিরুল নামের এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা। (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)
-রাজধানীতে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করলো স্বামী। (৩১ আগষ্ট ২০২১)
-চাঁদপুরে পরকীয়ার জেরে নিজের সন্তানকে হত্যা করলো মা। (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)
উপরের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়- মানুষ এখন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, তার আপন মানুষটির কাছেও নিরাপদ নয়। সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের অবহেলায় সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার ব্যক্তিদের প্রাণহানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে কোনো রকম উদ্যোগ এখনো নেয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু বিচারের অভাবে অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্যরাও এরকম অপরাধ করতে উৎসাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বছরে মোট হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৪০% হয় পারিবারিক কলহের কারণে। মানুষ ঘর বাঁধে এক বুক আশা নিয়ে। কিন্তু চলার পথে অসম মানসিকতার কারণে কখন যেন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে এই পরকীয়ার কারণে। এ সমস্যা প্রভাব ফেলে চাকরিতে ও পেশায়। এমনকি নিরপরাধ শিশুরাও স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের কারণ হত্যার শিকার হয়।
মূলত, অর্থের প্রতি প্রবল দুর্বলতা, দাম্পত্য কলহ ও স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা, দ্বীনি মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক অস্থিরতা, নাস্তিক্যবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসন, বিদেশি অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার আকাঙ্খা, সম্মানিত ইসলামি অনুশাসনের আলোকে সামাজিক উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না থাকা, শিক্ষা সিলেবাসে সম্মানিত ইসলামী জ্ঞান অন্তর্ভূক্ত না থাকা, বিষণœতা ও মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে এ ধরণের খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে খুন হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ জন। আর এর অধিকাংশই পারিবারিক ও সামাজিক কারণে হচ্ছে।
মানুষের দ্বীনি মূল্যবোধের অবক্ষয়, সহনশীলতা কমে যাওয়া ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক নৃশংসতার প্রবণতা বাড়ছে। হতাশা, মানসিক বিষণœতা ও আর্থিক দৈন্যতা থেকে মানুষ মাদকের দিকেও ঝুঁকছে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিংবা প্রতিহিংসা মেটাতেও হত্যাকা- ঘটছে। হারাম, অনৈতিক ও আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এজন্য আকাশপথে বিদেশী অপসংস্কৃতির আমদানি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার অনেকাংশে দায়ী। অন্যদিকে শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামী জ্ঞান অন্তর্ভূক্ত না থাকায় মানুষ আত্মকেন্দ্রিক ও চরম স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা ও চাকরির পাশাপাশি মোবাইলফোন, ফেসবুক ও টুইটার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের কেউ কারোর সঙ্গে সময় দিতে পারছে না। ফলে পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পরকীয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা মনগড়া কর্মসূচি গ্রহণ করে সেগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কোনো কার্যক্রমই কাজে আসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি পারিবারিক জীবন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে বাস্তবায়িত না হবে। পারিবারিক কলহ দূর করার জন্য প্রতিটি পরিবার হতে হবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চর্চাকেন্দ্র। পারিবারিক কলহ ও বিবাদ দূর করতে সর্বপ্রথম প্রতিটি পরিবারে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনচর্চার দিকে নজর দিতে হবে। সমাজ ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সম্মানিত ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা পবিত্র দ্বীন ইসলামই একমাত্র এ বিষয়টির দিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দিয়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা ও এর স্থিতিশীলতায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পারিবারিক বন্ধন যেন অটুট থাকে সে ব্যাপারে অসংখ্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার পরিবার-পরিজনের রক্ষক এবং সে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। এবং স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ীর আহল বা অধিনস্থদের রক্ষীতা এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিতা হবে।
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।”
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ।” মূলতঃ এসব সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ আজ আমাদের পরিবারগুলোতে নেই।
বিপরীতে রয়েছে, কাফিরদের অপসংস্কৃতির ঘৃণ্য আগ্রাসন; এটা দূর করতে হবে। রোধ করতে হবে অপসংস্কৃতির বিস্তার। বিজাতীয় ভিনদেশী অপসংস্কৃতি, অশ্লীল সংস্কৃতির কুপ্রভাবেই মূলত বর্তমানে ভয়ঙ্করভাবে পারিবারিক কলহ ও সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। খুন, গুম, আত্মহত্যা ও পরকীয়া দিন দিন রেড়েই চলেছে। দ্বীনচর্চা ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন থেকে বিরত থাকতে পরকিয়া ইন্ধন যোগায়। আক্বীদা বিশ্বাসে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পারিবারিক সম্পর্কের ভিত নাড়িয়ে দেয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বিরোধ ও সমস্যা তৈরি করে। অতএব, সমাজ-দেশকে বাঁচাতে, বিশেষত পরিবারগুলোকে কলহমুক্ত রাখতে বিধর্মীদের অপসংস্কৃতি রোধ করতে হবে। জাতীয়ভাবে সরকারের জন্য আর প্রতিটি পরিবারের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য এটা অপরিহার্য কর্তব্য। তাহলেই সন্তান ও পরিবার এর কুপ্রভাব থেকে বাঁচতে পারবে। ইনশাআল্লাহ!
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০