গত ১৫ নভেম্বর ইয়াওমুছ ছুলাছা বা মঙ্গলবার পাকিস্তানের ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি অফিস, ঋণ, আগাম সুবিধাসহ বিভিন্ন খাতে ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব-পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের যে অর্থ পাওনা ছিল চলতি (২০১৬ সালের) বছরের জুন পর্যন্ত বর্তমান মূল্যে তা ৬৯২ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার বাংলাদেশের কাছে এ অর্থ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু দৈনিক আল ইহসান শরীফের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাকিস্তানের এ দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং মনগড়া। বরং আমরাই ওদের কাছে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা পাই। পাকিস্তানের যত রাস্তাঘাট, দালাকোঠা রয়েছে তার বেশিরভাগই আমাদের টাকায় তৈরি। অ্যাসেট শেয়ারিংয়ের হিসাবে পাকিস্তানের কাছে আমাদের পাওনা ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আমাদের পাওনা সম্পূর্ণ যৌক্তিক। অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি উল্টো। যাকে বলে ‘চোরের মার বড় গলা’। তারা যদি কোনো দাবি করেই থাকে তাহলে আগে আমাদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার অ্যাসেট শেয়ারিংয়ের দাবি জানালেও পরবর্তী সরকারগুলো এ দাবি থেকে দূরে সরে আসে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তারা পাওনা আদায়ের পরিবর্তে উল্টো পাকিস্তনের পক্ষে কাজ করেছে। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্যস্ত থেকেছে। অ্যাসেট শেয়ারিংয়ের ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেক্ষেত্রেও বিপুল পরিমাণ টাকা আমাদের প্রাপ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিকটিমদের জার্মান সরকার ৭০ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, জাপান সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তাহলে পাকিস্তান কেন দেবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় অখ- পাকিস্তানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সে সম্পদের আইনি অংশীদার। ১৯৭১ সালের আগে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ এবং সমতার নীতি অনুসরণ করলে ৫০ শতাংশের দাবিদার বাংলাদেশ।
এছাড়া ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। নষ্ট হয় শতকোটি টাকার সম্পদ। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তখন কোনো সহায়তা দেয়নি পূর্ব-পাকিস্তানকে। ঘূর্ণিঝড়ের পর পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য আসে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিদেশী মুদ্রাগুলো তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকার শাখায় রক্ষিত ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ বৈদেশিক মুদ্রাগুলো স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বর্তমান বাজার অনুযায়ী তার পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এ অর্থ সরাসরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু অদ্যাবধি সে ব্যাপারে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
অথচ এখন পাকিস্তানই উল্টো বাংলাদেশের কাছে ৭০০ কোটি টাকা দাবি করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিয়েই তারা তাদের দেশের উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট রফতানীর টাকায় লাহোর ও রাওয়াল পিন্ডি শহরের জৌলুশ গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে বাংলাদেশের টাকা দিয়ে। পাকিস্তানের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছিলো এই বাংলাদেশরই অর্থ দিয়ে।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের দাবি করে থাকে। যদি তাই হয়, তাহলে রুটিন ওয়ার্ক বা নরম সুরে হবে না। বাংলাদেশকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে শক্ত কূটনৈতিক অবস্থান দরকার। মৃদু প্রতিবাদে কাজ হবে না। কারণ তারা কূটনৈতিক নিয়ম-কানুন মানছে না। সুতরাং আমরা কেন তার জবাব দিবো না। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা যালিমও হয়ো না, মজলুমও হয়ো না।”
প্রসঙ্গত, তাই পবিত্র দ্বীন ইসলামের আলোকেই পাকিস্তান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ; বাংলাদেশও তাই। আমরা চাই না, কোনো দেশের মুসলমানই দেনা-পাওনায় জর্জরিত থাকুক। বা উভয় দেশের রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকেই দেনা-পাওনা মিটিয়ে ফেলা উচিত। এটাকে ঝুলিয়ে রাখা রাষ্ট্রীয় দেনার পর্যায়ে পড়বে। তথা জনগণের দেনার অন্তর্ভুক্ত হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০