সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ।
বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার ৩০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। অথচ জাপানে ২৫০, থাইল্যান্ডে ২৬০, মালয়েশিয়ায় ২৭০, পাকিস্তানে ৫৫০ আর ভারতে প্রতি ৭৩০ জনের জন্য একজন করে পুলিশ সদস্য আছেন। এসব বিবেচনায় পুলিশ বাহিনীতে আরো সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে ৫৬ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
‘পুলিশের টার্গেট দুই লাখ ১০ হাজার সদস্য করা। সেই টার্গেট পূরণ হলে প্রতি ৭৬১ জনের জন্য দেশে একজন পুলিশ সদস্য পাওয়া যাবে। পুলিশ সদস্য দুই লাখ ১০ হাজার হলেও তা ভারত ও পাকিস্তানের সমপর্যায়ে হবে না।’
সারা দেশে পুলিশের সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। মানুষকে পর্যাপ্ত সেবা দিতে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ পুলিশ দরকার। অথচ আছেন মাত্র ২৬ হাজার ৫০০ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ, থানার জনবল, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) সদস্যরাও।
এ ছাড়া অপরাধ দমনে নতুন করে ৩৫৯টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) চেয়েছে পুলিশ বাহিনী। দুটি ছাড়া অন্য সব মেট্রোপলিটন এলাকায় এপিসি থাকলেও জেলা পর্যায়ে একটিও নেই। এবার ৬৪ জেলার জন্য ১৯৩টি এপিসি দেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব গেছে। মেট্রোপলিটন, হাইওয়ে, জেলা ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ মিলিয়ে মোট ৩৫৯টি এপিসি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১০টি চাওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। আর নতুন করে গত সপ্তাহে ২৪৯টি চেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সংখ্যা দিয়ে নয়, দক্ষতা দিয়ে অপরাধ দমন করতে হবে পুলিশকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে। তবে অপরাধ দমনে পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। নতুন নতুন অপরাধ হচ্ছে। এসব মোকাবিলায় দক্ষতা, নৈপুণ্য ও আধুনিক মানের পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশের জনগণ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে জন্যই সভ্যতা সৃষ্টির লগ্ন থেকেই রাষ্ট্র আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরী হয়েছে। এই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিক অবস্থার সূত্রপাত ঘটান আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। যে শব্দগুলি নিয়ে পুলিশ শব্দটি গঠিত হয়েছে সেগুলি হলো-পি-পোলাইট, ও-ওবিডিয়েন্ট, এল-লেবার, আই-ইনটেলিজেন্স, সি-কোয়ারেজ এবং ই-এডুকেশন। এই গুণাবলীগুলি যার মধ্যে থাকে তাকেই বলা হয় পুলিশ। কিন্তু আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মাঝে এই গুণাবলী কতটুকু লক্ষ্য করা যায়। সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার।
সম্মানিত ইসলাম উনার আদর্শ ধার নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলিতে পুলিশ জনগণের বন্ধু, কখনও সেবক হিসেবে কাজ করছে। পুলিশ শব্দের অক্ষরগুলির যে শাব্দিক অর্থ তার সাথে তাদের চরিত্রের মিল দেখতে পাওয়া যায়। জনগণ পুলিশকে বন্ধু মনে করে, কোন সমস্যা হলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। পুলিশও তাদের সাধ্য অনুযায়ী উপকার করতে চেষ্টা করে। তারা জনগণের উপকার করার একটা মন নিয়েই অপেক্ষা করে। কোথায় কে সমস্যায় আছে, তাকে কিভাবে সাহায্য করা যায়- এটাই থাকে তাদের মনোবৃত্তি।
অথচ বাংলাদেশের পুলিশ আর পশ্চাত্যের পুলিশের মধ্যে রাত আর দিন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশে একটা কথা চালু আছে- ‘বাঘে ধরলে এক ঘা, আর পুলিশে ধরলে আঠার ঘা।’ বর্তমানে অধিকাংশ পুলিশের কাছ থেকে আমরা এরূপ আচরণই পাচ্ছি। পুলিশের এ ধরনের চরিত্র দেশের জনগণের কাম্য নয়। জনগণ চায় এমন পুলিশ যারা জনগণের জান-মাল রক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। সাধারণ মানুষ কিভাবে শান্তিতে বসবাস করতে পারে- সেটাই হবে পুলিশের কাজ। কিন্তু এ ধরনের চরিত্র আমরা পুলিশের নিকট থেকে পাচ্ছি না কেন? কোথায় গলদ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ খুঁজে বের করে পুলিশকে জনগনের বন্ধু হিসেবে তৈরি করতে হবে।
উন্নত দেশে পুলিশে নিয়োগ পাওয়া খুব কঠিন বিষয়। পুলিশ সদস্য নিয়োগ দিতে শুধু ওই পুলিশ সদস্যের স¦ভাব চরিত্রই দেখা হয় না,তার পূর্ব পুরুষের খোঁজ পর্যন্ত নেয়া হয়। তার বাবা-দাদা, নানার বংশ কে কি ছিল। তাদের স¦ভাব কি ধরনের ছিল। পূর্ব পুরুষের কারো স¦ভাবে খারাপ কোন রিপোর্ট থাকলে তাকে আর পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে টাকার বিনিময়ে চোর ডাকাতকেও পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়। পূর্ব পুরুষের চরিত্র দেখাতো দূরের কথা- ওই পুলিশ সদস্যর স¦ভাব চরিত্রের খবর নেয়াই হয় না। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও টাকার বিনিময়ে আমাদের দেশের পুলিশ সদস্যরা নিয়োগ পায়। তাই পুলিশ ঘুষ-নীতিবাজ, দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিবাজ, সম্ভ্রমহরণ লুণ্ঠনবাজ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। এই যদি হয় পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ পদ্ধতি, তাহলে এদের কাছ থেকে তো আর আমরা ভাল কিছু আশা করতে পারি না।
ব্যক্তিগতভাবে যে কোন নাগরিকের রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। চাকরি পাওয়ার পর সেই বিশ্বাসকে মনে পুষে রেখে সেইমতে সরকারী কাজ করা সমীচীন নয়। পুলিশ রাজনৈতিক আজ্ঞাবহ হয়ে আইন শৃংখলা রক্ষা করতে গেলে কখনই জনগণের সাথে ভাল আচরন করতে পারবে না। তাই পুলিশে নিয়োগ দেয়ার আগে প্রার্থীর অতীত কর্মকা-, মানসিক প্রবণতা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়া কর্তৃপক্ষের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও অরিয়েন্টেশন এমনভাবে হওয়া উচিত, যাতে মানবিক ও নৈতিক গুণাবলীর যথাযথ বিকাশ ঘটে।
বলাবাহুল্য সত্যিকার নৈতিক গুণাবলীর উন্মেষ ঘটাতে হলে পুলিশ বাহিনীর ট্রেনিং ও কারিকুলামে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০