সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।
সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আক্বল হলো রিযিকের অর্ধেক।” রিযিক তালাশের ব্যাপারে তাই আক্বল খাটানো আবশ্যক। প্রসঙ্গত: ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। এই ভাত যে ধান থেকে উৎপন্ন হয় সে ধানের ক্ষেত্রেও আক্বল খাটিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলে নানাদিক থেকে অত্যধিক সুফল পাওয়া সম্ভব।
ধান চাষে ‘ট্রে-নার্সারি’ নামে একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন প্রায় দেড়গুণ বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এ প্রযুক্তিতে বড় ট্রেতে চারা উৎপাদন করে তা যান্ত্রিকভাবে ক্ষেতে রোপণ করা হয়। বিএডিসির টাঙ্গাইল মধুপুর খামারের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, খামারে পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন গড়ে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক সারমিশ্রিত বিশেষ ধরনের মাটি ব্যবহার করে একটি বিশেষ পদ্ধতির ট্রের উপরে চারা উৎপাদন করা হয়। এ চারা মাত্র ১৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মাটিতে রোপণের যোগ্য হয়।
কৃষি শ্রমিকের সংকট এবং সাধারণ পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় আমাদের দেশে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরীক্ষামূলক চাষাবাদে ট্রে পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। অধিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই সময়োপযোগী। এতে কম খরচে, অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।
অপরদিকে এপ্রিল-মে মাসের প্রথম দিকে বোরো ধান কাটার সাথে সাথে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে যদি স্বল্প মেয়াদি আউশ ধানের চাষ করা যায় তাহলে এই সময়ে দেশে ৩৫ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এতে দেশের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়বে।
বন্যা-খরা সহিষ্ণু ও আউশ মৌসুমে চাষ উপযোগী উন্নত জাতের আউশ ধান চাষে সারাদেশে ১৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অতিরিক্ত ১ কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে ইরির কর্মকর্তারা।
এদিকে কুষ্টিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জাতের এরাইজ গোল্ড ধান উৎপাদন করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। যেখানে অন্য ধানের উৎপাদন হয় বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১৫ মণ, সেখানে নতুন জাতের এ ধানের উৎপাদন হয় বিঘা প্রতি প্রায় ২৪ থেকে ২৫ মণ। যা দেশে প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৭-৮ মণ বেশি। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এ ধান উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়ায় স্থানীয় চাষীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উৎফুল্ল।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধানের চাষাবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য উৎপাদন সম্ভব।
এদিকে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কৃষকের ঘরের অভাব দূর করতে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। এই জাতের ধান ফলন করে তারা অভাবের সময় একদিকে নতুন ফসল ঘরে তুলতে পারবেন এবং অন্যদিকে কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। ব্রি’র সুপারিশকৃত চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করলে দেশে প্রতিবছর ৯০ লাখ টন বাড়তি ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এতে করে চাষি পর্যায়ে এই ধানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
বিশেষ করে উদ্ভাবিত নতুন ধানের জাত রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গত বছর উদ্ভাবিত আমন মওসুমের আগাম এবং খরা সহিষ্ণু দুটি ধানের জাত হচ্ছে ব্রি ধান ৫৬ এবং ব্রি ধান ৫৭। এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ব্রি উদ্ভাবিত অন্য একটি আগাম জাত ব্রি ধান ৩৩-এর ব্যাপক চাষাবাদ বৃহত্তর রংপুর জেলায় সাময়িক কাজ ও খাদ্যাভাবজনিত সমস্যা মঙ্গা দূরীকরণে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, রুক্ষ আবহাওয়া, অসময়ে বৃষ্টি, খরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের বারবার। এ পরিবেশে এ যমজ ধান উৎপাদনে সফলতা আসলে ধানের জগতে একটি মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
যমজ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো একটি ধান থেকে ২ বা ৩টি চাল পাওয়া যায়। এই যমজ ধানটি ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে আলোড়ন তুলেছে। ধানের বীজটি কোথা থেকে পাওয়া গেছে সঠিক জানা না গেলেও দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক কাছিম উদ্দিন প্রথম যমজ ধান জমিতে আবাদ করেন। পরবর্তিতে কৃষি বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে নুতন জাতের এ যমজ ধান আবাদ শুরু করেছে। এখন যমজ ধানের মাঠ সবুজের সমারোহ।
অপরদিকে কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবনেও দেশের বিজ্ঞানীরা পিছিয়ে নেই। কৃষিশ্রম সাশ্রয়ী গুটি ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্র ‘অ্যাপ্লিকেটর’ ও ধানের চারা রোপণযন্ত্র ‘রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার’ নামের দু’টি আধুনিক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। এ যন্ত্র দুটি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদনের খরচ হেক্টরে পাঁচ হাজার টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে। ব্রির বিজ্ঞানীরা জানান, দেশের ৪৮ লাখ হেক্টরে জমিতে বোরো মওসুমে ধানের আবাদ হয়ে থাকে। একই সাথে আমনের আবাদ হয় ৫৪ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। অর্থাৎ দেশে এক কোটি দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো ও আমনের আবাদ হয়ে থাকে। এই মোট জমির অন্তত অর্ধেক জমিতে অর্থাৎ ৫১ লাখ হেক্টর জমিতেও যদি এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় তাহলেও কৃষকের শ্রম সাশ্রয়ের পাশাপাশি আর্থিক সাশ্রয় হবে দুই হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ধানের উৎপাদন হয় প্রায় ৫ কোটি টনের মতো। এটা প্রচলিত পদ্ধতিতে। কিন্তু গবেষণামূলক পদ্ধতিতে যদি চাষাবাদ করা হয় এবং প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া যদি অবলম্বন করা হয় তাহলে এই দেশেই প্রতি বছর ১৫ কোটি টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ এবং দেশের মানুষকে সত্যিকার অর্থেই দশ টাকা সেরে চাল খাওয়ানো সম্ভব ইনশাআল্লাহ। সঙ্গতকারণেই সরকারকে সে বিষয়ে আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে।
মূলত সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ মুবারক তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা পাওয়া সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০