হযরত ছাহাবে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বাধিক বেশী মুহব্বত করতেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার একটা ওয়াকেয়া মুবারকে বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যাঁরা ঈমানদার, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব বেশি মহব্বত করেন।”
পবিত্র সুরা বাকারা শরীফ উনার ১৬৫ নং এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়- সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন খলীফাতুল মুসলিমীন, তখন মিসর বিজয় করেছেন হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মিসর বিজয় করেছেন। উনি সেখানকার গভর্ণর। সেখানকার উনি আমীর। আমীরে শোবা। মিসরে নীল নদ নামে একটা নদ আছে। সেই নীল নদের পানি দিয়ে মানুষ তাদের পানির প্রয়োজন বা চাহিদা মিটাতো। হঠাৎ দেখা গেল, নীল নদ শুকিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর আস্তে আস্তে নীল নদ শুকিয়ে গেল।
যখন নীল নদ শুকিয়ে গেল, তখন এলাকার লোকেরা এসে বললো, হে হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনারা নতুন এসেছেন, আপনারা মুসলমান। আপনাদের আইন-কানুন ব্যতিক্রম। আমাদের সাথে মিলেনা। কিন্তু আমাদের একটা নিয়ম ছিল, এখানে প্রত্যেক বৎসর একটা নির্ধারিত সময়ে আমরা একজন খুবছূরত কুমারী মেয়েকে বলি দিয়ে থাকি, যার কারণে নীল নদের পানি প্রবাহিত থাকে সারা বৎসর। সেহেতু আপনারা যদি বলি না দেন, নীল নদ শুকিয়ে যাবে।
হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, হে মিসরবাসী, এটাতো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ, বদ্ রসম, কুফরী-শেরেকী, এটা নাজায়িয হারাম। এটা করা যাবেনা। উনি করলেন না। দেখা গেল সত্যিই পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেল। এত শুকাল যে, নীল নদের যমিন পর্যন্ত ফেটে চৌচির হয়ে গেল, ফেটে গেল। যার কারণে এলাকার লোকেরা পানির অভাবে বাড়ী-ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। উনি তখন চিন্তা করলেন, কি করা যায়? এলাকার লোকেরা বললো যে, হুযূর আপনি একটা ফায়সালা করেন। তখন উনি একটা চিঠি লিখলেন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে। হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, মিসরের অবস্থা খুব করুণ। নীল নদ শুকিয়ে গেছে, পানি নেই। তাদের একটা বদ্ রসম রয়েছে, আমি সেটা করি নাই। এখন আমি কি করবো? আমাকে উপদেশ দেন, নসীহত করেন।
যখন চিঠি পেলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, তখন উনি চিঠি লিখলেন যে, হে হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনি উত্তম কাজ করেছেন, আপনি বদ্ রসম, বদ্ প্রথা কুফরী-শেরেকীর পথ অবলম্বন করেননি। এটা আমাদের সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।
এরপর উনি লিখলেন যে, আপনি সব সময় হক্বের উপরে অর্থাৎ মহাপবিত্র মহাসম্মানিত কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ্ উনাদের উপরে কায়িম থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার উপরে রহ্মত-বরকত নাযিল করবেন। আমি নীল নদের প্রতি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি।
উনি লিখলেন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে নীল নদের প্রতি ফরমান, “হে নীল নদ! যদি তুমি তোমার শক্তির দ্বারা প্রবাহিত হয়ে থাক, তোমার পানির আমাদের কোন জরুরত নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে ছাড়াও আমাদেরকে পানি দান করতে পারেন। আর যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে প্রবাহিত করান, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন। আমাদের পানির জরুরত রয়েছে।
চিঠি লিখে উনি হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আরেকটা চিঠি লিখে, তার মধ্যে ভরে দিলেন এবং লিখলেন, হে হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এই চিঠিটা পাওয়ার পরে আপনি কিছু এলাকাবাসীকে নিয়ে নীল নদে গিয়ে আমার চিঠিটা নীল নদে নিক্ষেপ করবেন। তারপর কি হয় সেটা লক্ষ্য করবেন।
উনি যখন চিঠি পেলেন, তখন বাদ আছর। উনি কিছু এলাকাবাসীকে নিয়ে চিঠিটা নীল নদে নিক্ষেপ করলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত, উনি যখন চিঠিটা নিয়ে নিক্ষেপ করলেন নীল নদের মধ্যে, চিঠিটা যখন নীল নদের মাটি স্পর্শ করলো, স্পর্শ করার সাথে সাথে কুদরতীভাবে ওখানে আপসে আপ গায়েব থেকে পানি এসে বিকট গর্জন করে এক লাফে পানি ষোল হাত হয়ে গিয়েছিল। সুবহানাল্লাহ্।
এখন চিন্তা ফিকিরের বিষয়, উনারাই তো সম্মানিত মুসলমান ছিলেন। উনারাই মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ উনাদের উপর কায়েম ছিলেন। সেই জন্য উনারা কামিয়াব হয়েছেন সর্বক্ষেত্রে। উনারা যেদিকে গেছেন, সেদিকেই বিজয় ও সফলতা উনাদের পবিত্র কদম মুবারক চুম্বন করেছে।
বর্তমান যুগের মুসলমানরা তো মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ উনাদের উপর নেই, তাহলে কামিয়াবী আসবে কোথা থেকে। কাজেই আমাদের প্রত্যেকেরই মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত প্রতিটি অবস্থায় মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ, মহাপবিত্র ইজমা শরীফ এবং মহাপবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের উপর কায়েম থাকতে হবে। আমীন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
-আহমদ মাশুক মারজান
ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানের সুন্দর শরীয়ত সম্মত নাম রাখা
ক্বদরে বাবা নাদানী, গারতু বাবা নাশাবী, ক্বদরে মাদর নাদানী, গারতু মাদর নাশাবী