তাই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন অথবা ভঙ্গের ক্ষেত্রেঅন্য সব প্রতিশ্রুতির পূর্বে ‘কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- এ ওয়াদা পালন অথবা ভঙ্গের বিষয়েই সর্বাধিক জনগুরুত্বসম্পন্ন। যেহেতু এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান।ইসলাম তাদের কাছে সর্বাগ্রে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার সমার্থক অথবা বিরোধী মহল কেউই সে বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন সফলতার দিক তুলে ধরলেও বিরোধীদল সমালোচক মহল তথা পর্যবেক্ষক মহল বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের হাজারো ব্যর্থতার ফিরিস্তি দিয়েছেন।
তাদের বক্তব্যে এসেছে, অতীতের দুর্নীতির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে সরকার। সংসদকে করা হয়েছে অকার্যকর ও ‘সার্বভৌমহীন’। সংসদ হয়ে পড়েছে একদলীয়। বাজেট ও আইন সবকিছুই একদলীয়ভাবে পাস হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কাগুজে কমিশনে পরিণত হয়েছে।
খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি দাবি করে
সমালোচক মহল বলেছেন, সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে জনগণের কাছে মিথ্যাচার করছে। গত ৬ মাসে সরকার বিদেশ থেকে ২৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে।
সমালোচক মহল আরো মন্তব্য করেছেন: প্রশাসনে দলীয়করণ অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে সরকারি দলের ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সরকার দেশে একদলীয় শাসনের মাধ্যমে অতীতের সব দুঃশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে। গত একবছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, সাংবাদিক নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে। একদিকে নির্যাতন, হত্যা, গুম চলছে।
বিএনপির পক্ষ বলা হয়েছে, সরকারের সফলতার মধ্যে রয়েছে, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে দায়ের করা ৮ হাজার মামলা প্রত্যাহার এবং বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা সচল রাখা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও মানুষ গুম অব্যাহত রাখা।
বিএনপির পক্ষ থেকে আরো মন্তব্য করা হয়েছে: সরকারের দুই বছরের শাসনামল ছিলো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের। দিনবদলের শ্লোগান আজ হাস্যকর। জনগণ হতাশ।
দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে সরকার। নতুন কল-কারখানা তৈরি না হওয়ায় কোনো কর্মসংস্থান হচ্ছে না। শেয়ার বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনগণের পুঁজি ধ্বংস করছে সরকার। বর্তমান সরকার ব্যর্থতার পাল্লা ভারি করতে গিয়ে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সীমান্তকে অরক্ষিত করে ভারত থেকে মাদক আমদানি করছে। ধ্বংস করছে যুব ও ছাত্র সমাজকে। এদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট আরো তীব্র করা, অবৈধভাবে শেভরনকে ৩৭০ কোটি টাকার কাজ দেয়া, বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মূল্যায়নে বাংলাদেশকে বাজীকরদের হাতে তুলে দেয়া, বিচারবিভাগকে কলুষিত করা, ভারতের ব্যাংক থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ওই টাকায় তাদেরই উন্নয়ন ঘটানোর প্রকল্প তৈরিসহ আরো অনেক কিছুই তীব্র সমালোচনা করেছেন পর্যবেক্ষক মহল।
পর্যবেক্ষক মহল আরো মন্তব্য করেছেন, ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট ও করিডোর সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশা করেছিল জাতি। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর ও অন্যান্য অঞ্চলে তেল গ্যাস অনুসন্ধান এবং এ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে তিনি কিছু বলবেন- এমনটিই প্রত্যাশা ছিলো সকলের। এ বিষয়ে সম্প্রতি উইকিলিকস-এর উদঘাটন জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এছাড়া ফুলবাড়ীয়া-বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি ছিলেন নীরব। ভারতের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের বৈদেশিক নীতি গত দু’বছরে আবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও ছিল নানারকম কূটনৈতিক ব্যর্থতার বিষয়। কিন্তু গোটা পররাষ্ট্র বিষয়ই উপেক্ষিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। মাত্র চারটি বাক্য জুটেছে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে। যা গোটা জাতির সামনে ধোয়াশা হয়েই রইলো।
পাশাপাশি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তার দলের এবং মহাজোটের ব্যাপারে কোনো কিছুই উল্লেখ করেননি প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিকলীগ গত দু’বছরে কি ভূমিকা পালন করেছে তা দেশবাসী কারোও অজানা নয়। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কিভাবে বারবার তছনছ করেছে তা জাতি লক্ষ্য করেছে গভীর বেদনার সঙ্গে। এতে প্রাণহানি ঘটেছে অনেক। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়ক ও যান দুর্ঘটনা, রেল ও অগ্নিদুর্ঘটনায় ঘটেছে অনেক প্রাণহানি। সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নিরেট নীরবতা গোটা দেশবাসীকে দারুণ মর্মাহত করেছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোথায় কোথায় ব্যর্থতা ঘটেছে সে সবের উল্লেখ ছিলো বাঞ্ছিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, সমালোচক অথবা পর্যবেক্ষক মহল প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে সরকারের ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক তুলেছেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথাও বলেছেন। কিন্তু ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানগণের ধর্মীয় অনুভূতির আলোকে কথা বলেনি কেউই।
বলাবাহুল্য, এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের কাছে সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো ‘দ্বীন ইসলাম’ তথা ‘ঈমান’।
ক্ষমতাসীন দল তথা প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়টি সম্যক অবগত। তাই তারা নির্বাচনের পূর্বে প্রতিশ্রুতি তথা ওয়াদা দিয়েছিলেন, ‘কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’। বলার অপেক্ষা রাখেনা, কেবলমাত্র এই একটি কারণেই দেশবাসী ৯৭ ভাগ মুসলমান বিশেষভাবে অভিভূত ও আলোড়িত হয়েছিলেন। তার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিশ্রুতির ইসলামী সমার্থক শব্দ হলো ওয়াদা। আর ওয়াদা রক্ষার্থে ইসলাম যে চরম চেতনা ও কঠোর দায়বোধ স্ফুরিত করেছে তা অন্য কোন ধর্ম বা গোত্র আজ পর্যন্ত বিন্দুমাত্র প্রতিফলিত বা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। পাশাপাশি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ ওয়াদা খিলাফকারীদের সম্পর্কে যে মহা ভয়ঙ্কর ও ভীতিমূলক পরিণতির কথা ব্যক্ত করেছে; কোন ঈমানদার মুসলমান তাতে শঙ্কাগ্রস্ত না হয়ে পারেনি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ঈমানী এই শঙ্কায় বর্তমান সরকার কতটুকু শঙ্কাগ্রস্ত হয়েছে? তা আজ চরম ও জ্বলন্ত প্রশ্ন। ৯৭ ভাগ মুসলমান দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে মহা ক্ষোভ ও মর্মান্তিক জ্বালার সাথে প্রত্যক্ষ করেছেন, বর্তমান সরকার কীভাবে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী শিক্ষানীতি সংসদে পাস করেছে, সংবিধানে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী- ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস তথা ইনশাআল্লাহ-এর অন্তর্ভুক্তির অন্তর্ধান করেছে। নাউযুবিল্লাহ!
পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলেই ‘পর্দা পালন করতে বাধ্য করা যাবে না’- এ মহা অনৈসলামী রায় হাইকোর্ট থেকে উচ্চারিত হয়েছে। অপরদিকে ভারতের ব্যবসায়িক স্বার্থই কেবল সমুন্নত হয়নি, পাশাপাশি ভারতীয় শিল্পীর নগ্ন ও উদ্বাহু নৃত্য এ সরকারের আমলেই প্রকাশ্যে মঞ্চস্থ করা হলো। যা এ সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় অনৈসলামীপনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। আর এসব কিছুই সরকারের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি- ‘কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’ এর চরম খিলাফ।
বলাবাহুল্য, এটা শুভ লক্ষণ নয়। কারণ, এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। তারা ওয়াদা খিলাপকারী বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের ভালোবাসেন না। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ আলোকে ভালোবাসতে পারেন না।
মূলত এসব দায়বোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত ও রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র তা হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে উনার উসীলায় তা দান করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আরিফুল্লাহ
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১