কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর ফযল বা নিয়ামত, আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।”
ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে আল্লাহ পাক বর্তমান পনের শতকের ‘মুজাদ্দিদ’ তথা ‘মুজাদ্দিদে আ’যম হিসেবে কবুল করেছেন।
কিন্তু জামাতী, ওহাবী, খারিজীদের তা মানতে বড়ই অনীহা। দুরূহ কষ্ট। অথচ ‘আবু দাউদ শরীফের’ হাদীছ শরীফে, আখিরী রসূল, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে এই উম্মতের মাঝে একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন। তিনি উম্মাহ্্র মাঝে জমে থাকা সব বেশরা, বিদ্্য়াত দূর করবেন।”
উদ্ধৃত হাদীছ শরীফের আলোকে দেখা যায়, বর্তমান তো বটেই বিগত শতকেরও অনেক মশহুর ওলীআল্লাহ নামি দামী মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ তারাও মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদের ভীষণ মুহতাজ। ঘুরিয়ে বললে, মুজাদ্দিদে আ’যমের তাজদীদের প্রেক্ষিতে তাদের অজ্ঞতা, অবিমৃষ্যকারীতা, যুগের প্রেক্ষিতে উদ্ভাবিত মতবাদ সম্পর্কে তাদের দুঃখজনক বিভ্রান্তি আমাদেরকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে। করুণভাবে শিহরিত করে। নিদারুণ দুঃখে ভারাক্রান্ত করে। অনুভূতিতে বিষাদ জন্মায় যে, তাদের গলদের সূচনা ও ধারাবাহিকতায়ই আজকে উম্মাহর এ করুণ পরিণতি।
প্রসঙ্গতঃ “জাতীয়তাবাদী ও ইসলাম পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই”- এ শ্লোগানধারী জামাতীরা যে কুফরী করেছে তা এ নিবন্ধে ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি জামাতীদের পূর্বে ওহাবী, দেওবন্দী, খারিজীরাও যে জাতীয়তাবাদ তত্ত্ব গ্রহণ করে মহা ভুল করেছিলো তা গত সংখ্যায় পত্রস্থ হয়েছে।
বিশেষতঃ দেওবন্দীদের পরম গুরু, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রিন্সিপাল তথাকথিত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী ছাহেবও মুসলমানদেরকে সবৃভারতীয় জাতীয়তাবাদের আহবান করে মহা ভুল করেছিলেন তা গত সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক যার হিদায়েত চান সে হিদায়েত হয়। কিন্তু যে গোমরাহীর উপর দৃঢ় থাকে সে কখনও হিদায়েত হয়না।
হোসাইন আহমদ মাদানী ছাহেবের অবস্থা হয়েছিলো তদ্রুপ। সবৃভারতীয় জাতীয়তাবাদ তত্ত্বে তিনি এমনই মশগুল ছিলেন যে, সমসাময়িক অনেকে তাকে হিদায়েতের দিকে ডাকলেও তিনি উল্টো গোমরাহীর উপরই মহা দৃঢ় ছিলেন। থাকতে পছন্দ করেছেন। এ মর্মে গত সংখ্যায়ও বেশ কিছু দলীল উল্লেখ করা হয়েছিলো।
হোসাইন আহমদ মাদানী সাহেব তার “এক জাতি তত্ত্ব ও ইসলাম” নামক পুস্তকে মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতে তৎকালীন ইসলামিক ঐক্য ও সংহতি ব্রিটিশদের স্বার্থের অনুকূল। কারণ তার মতে, মুসলমানরা তখন যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি সবার সাথে না মিলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করে, তাহলে এককভাবে মুসলমান জাতি ক্ষুদ্র হয়ে পড়বে এবং এ ক্ষুদ্র জাতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবে না।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, হোসাইন আহমদ মাদানী কুরআন শরীফ বিশ্বাস করতেন কিনা, কুরআন শরীফে তার ঈমান ছিল কিনা অথবা তিনিমুসলমান ছিলেন কিনা?
গত চৌদ্দর্শ বৎসর যাবত যে আয়াত শরীফ মুসলমানদের প্রাণে সব সময় জজবা তৈরী করে কামিয়াবী লাভে সক্ষম করিয়েছে, মুসলমান দাবী করে সে আয়াত শরীফ তিনি কি করে ভুলতে পারলেন?
মুসলমান শিশুও যে আয়াত শরীফ জজবাভরে তিলাওয়াত করে, “নিশ্চয়ই বহুক্ষেত্রে কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে।” এ ধরনের আয়াত শরীফ রয়েছে আরো বহু। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই কাফিরদের মোকাবিলায় মু’মিনদের একজন, দশজন কাফিরের সমান।
তথাকথিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্্রাসার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীছ দাবী করে হোসাইন আহমদ মাদানী কুরআন শরীফের এই চিরন্তন শিক্ষা কি করে ভুলে থাকলেন তা মহা আশ্চর্যাবোধক বিষয়। হয়তো বা কংগ্রেসের নির্লজ্জ দালালী প্রবণতাই তার বোধশক্তিকে অবলুপ্ত করে দিয়েছিল।
হোসাইন আহমদ মাদানী মন্তব্য করেছিলেন, ‘স্বাদেশিকতা বা সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ বিরোধী প্রতিটি মানুষই ব্রিটিশভক্ত। যারা সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বলে, তারা ব্রিটিশের দালাল। ব্রিটিশ যাদুই তাদের মুখ দিয়ে এরূপ কথা বলাচ্ছে।’
মাদানী সাহেব আরো মন্তব্য করেছেন, ‘বর্তমান সময়ে জাতি আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে গঠিত হয়।’ এজন্য তিনি ভারতে মুসলিম জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য না দিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি অন্য সব বিধর্মীর সাথে ভারতে বসবাসকারী হিসেবে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা সেজেছিলেন।
উল্লেখ্য, মাদানী সাহেব বর্তমান সময়ের কথা বলেছেন। তার অর্থ তিনি ইসলামকে সব সময়ের জন্য বা কিয়ামত পর্যন্ত মানতেন না এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আখিরী রসূল হিসেবে মানতেন না। এদিক থেকে কাদিয়ানী আর তার মধ্যে পার্থক্য কি তা খুঁজে বের করা দুষ্কর।
চরম পরিতাপের বিষয় হলো- বর্তমান সময়ের কথা বলে মাদানী সাহেব যে আঞ্চলিকতা, জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন বর্তমান সময়েও তার ঐ ধারণা ভুল। যেমন- আমেরিকা নিগ্রো, রেড ইন্ডিয়ান ও হোয়াইট; তারা কি আমেরিকায় বসবাস করে বলে একই জাতি বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে আফ্রিকার নিগ্রোকে নিগ্রো বলা যাবে না। আমেরিকান নিগ্রো আর আফ্রিকান কি নিগ্রো হিসেবে বিবেচিত হবে না। ওদিকে জামার্নীর ইহুদী ও জার্মানী কি আলাদা জাতি নয়।
মূলতঃ এরূপ উদাহরণ বহু বহু। বিশেষ স্পর্শকাতর ও মর্মদায়ক উদাহরণ হলো- একই ভূমিতে অবস্থান করার জন্যই যদি এক জাতিতে পরিণত হওয়া হয়, তবে ফিলিস্তিনীরা নিজ ভূমে পরবাসী হল কেন? কেন ইহুদীদের সাথে তাদের চিরন্তন সংঘাত?
সবচেয়ে বড় কথা, আলাদা জাতি হিসেবে মুসলমানদের আত্মোপলব্ধির ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলীল কি কমক?
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
لا تتخذوا اباء کم واخوا نکم اولیاء ان استحبوا الکفر علی الایمان ومن یتولهم منکم فاولئک هم الظلمون.
অর্থ: “তোমাদের পিতা-মাতা এবং ভাইও যদি আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনার পরিবর্তে কুফরকে পছন্দ করে ও ভালবাসে তবে তোমরা তাদেরকেও নিজেদের আপন লোক মনে করবে না।” তোমাদের কোন লোক যদি তাদেরকে বন্ধু বলে মনে করে, তবে সে নিশ্চয় জাহান্নামের মধ্যে গণ্য হবে।” (সূরা তওবা-২৩)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ان من ازواجکم واولادکم عدو الکم فاحذروهم.ان من ازواجکم واولادکم عدو الکم فاحذروهم.
অর্থ: “তোমাদের ন্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা (তোমাদের মুসলমান হওয়ার দিক দিয়ে) তোমাদের দুশমন। তাদের সম্পর্কে সাবধান হও।” (আত তাগাবুন/১৪)
উল্লিখিত আয়াত শরীফে দেখা যায়, একই ভূমিতে বসবাসকারী তো দূরের কথা, একই পরিবারে জন্মগ্রহণকারী, ইসলাম না মানলে এক জাতি হতে পারে না। কিন্তু তারপরও তথাকথিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্্রাসার প্রিন্সিপাল, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা দাবীকারী হোসাইন আহমদ মাদানী সাহেব কি করে একই পরিবার নয়; বিশাল ভূ-খ- ভারতে বসবাসকারী সব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ জৈন ইত্যাদি বিধর্মীদের কাতারে শামিল হয়ে, মুসলমানিত্ব বিসর্জন দিয়ে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রচারই তার প্রমাণ।
এদিক থেকে বলতে হয়, আজকের দেওবন্দী ধর্মব্যবসায়ী কমিনী, শাইখুল হদছ, উবাই, মাহিউদ্দিন, এদেরকে তাদের পথিকৃৎ তথাকথিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্্রাসার প্রিন্সিপাল হোসাইন আহমদ মাদানীই দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাছিলের নিকৃষ্ট সবক, তালীম এবং উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২