প্রসঙ্গ: চরম দারিদ্র্য ও গর্ভ ভাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের এ কী হাল? ভারত অনুকরণকারীদের বোধোদয় হবে কী? ভারত তার মুসলমান নাগরিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করবে কী?

সংখ্যা: ২১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

সন্তান জন্মদানের জন্যে গর্ভ ভাড়ার ব্যবসা চলছে ভারতের বিভিন্ন শহরে। কেবলমাত্র অর্থের বিনিময়ে একশ্রেণীর নারী নিজের গর্ভে ধারণ করেণ অন্যের সন্তান। বিশ্বব্যাপী ভারতে এই গর্ভধারণের ব্যবসাটি নিয়ে এখন সমালোচনা চলছে।

স্রেফ দারিদ্র্যের কারণে ভারতে এ ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে।

অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুরে নিঃসন্তান দম্পতিরা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, গর্ভ মা ভাড়া চাইছে তারা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহু মহিলা এগিয়ে আসছে এ ব্যবসায়। গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা এখন তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছে উপকূলের জেলা গুন্টুরে। নিজেদের সমস্যা মেটানোর আশায় না থেকে শেষ পর্যন্ত এ ‘সারোগেট’ মায়েদের পেছনে ছুটতে হচ্ছে নিঃসন্তান দম্পতিদের।

বিজ্ঞাপনের পাতায়, ওয়েবসাইটে এমনকি অটোরিকশার পেছনেও এই বিজ্ঞাপন জ্বলজ্বল করছে অন্ধ্রের এই প্রান্তে।

সাধারণ ক্লিনিকগুলো বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে এভাবে গর্ভধারণ করানোর একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। নিঃসন্তান কোনো মহিলাকে সন্তান পাইয়ে দিতে নিজের গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা বেড়ে উঠেছে আকর্ষণীয়ভাবে। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই দালালদের খপ্পরে পড়ে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর একাংশ এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে। গরিব মহিলারা শুধু টাকার জন্যই দালালদের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে সারোগেসি কথাটার সহজ অর্থ করা যেতে পারে অন্য মায়ের গর্ভ ব্যবহার করে সন্তান জন্মদান।

যে মা গর্ভধারণে অক্ষম, এক্ষেত্রে তার ভ্রুণ অন্য মায়ের গর্ভে স্থাপন করা হয়, সেখানেই বেড়ে উঠে তার সন্তান, কিন্তু জন্মের পর পর গর্ভধারিণী মায়ের কাছ থেকে শিশু চলে আসে ভ্রুণ যার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল ওই মায়ের কাছে। ধনী দেশগুলোর নিঃসন্তান দম্পতিরা এভাবে সন্তান নেওয়ার জন্য এখন দলে দলে ভিড় করছে ভারতে। কারণ সেখানে এ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিরাট ব্যবসা।

দিল্লির উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের একটি বর্ণনা দেয়া যায়। সেখানে একটি গলির মধ্যে অপরিচ্ছন্ন বাড়িটাতে ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে ছয়-সাতজন নারী থাকে। এদের বেশির ভাগই গর্ভবতী। বাকিরাও খুব তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করবে। মূলত সন্তান জন্মদানের জন্যই তাদের এই বাড়িটাতে রাখা হয়েছে। ধনী সন্তানহীন দম্পতি অথবা পশ্চিমা বিশ্বের সমকামী দম্পতিদের জন্য এরা অর্থের বিনিময়ে বাচ্চা উৎপাদন করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনা করা হয় বাচ্চা দেখতে কেমন হবে। সেভাবেই গঠন করা হয় সন্তানের জিন। সেজন্য ‘ভাড়াটে জন্মদাত্রীদের’ জরায়ুতে নীল চোখের পশ্চিমা পুরুষদের ‘শুক্রাণু’ স্থাপনে আগ্রহী এসব ক্রেতা ‘বাবা-মায়েরা’। পছন্দমতো সন্তান তৈরির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো দিল্লির ওয়াইজেক্স সারোগেসি কনসালটেন্সি ফার্মটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম কাজ হলো ভারত ও বাইরের দেশের, বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে ‘সন্তান’ কিনতে আগ্রহী এমন দম্পতির খোঁজ করা। শুরুতে একটু কষ্ট স্বীকার করে এমন দম্পতিদের খুঁজে নিতে পারলে পরে তারাই ‘বাচ্চা ব্যবসায়ীদের’ খুঁজে নেয়। এর পরের কাজটি আরও সহজ। ভারতের কোটি কোটি দরিদ্র নারীদের মধ্য থেকে কাউকে ‘গর্ভ ভাড়া দেওয়ার’ জন্য রাজি করানো। যে দেশে এক প্লেট ভাতের জন্য হররোজ শত শত নারী যে কারও সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে যেতে বাধ্য হয়, সে দেশে মোটা অর্থের বিনিময়ে শুধু কোনো পুরুষের শুক্রাণু স্থাপন করে সন্তান উৎপাদনে রাজি হওয়ার মতো নিরুপায় নারীদের অঢেল পাওয়া যায়।

সার্বিক খরচ মিলিয়ে তারা প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড (১২ লাখ ৯৩ হাজার রুপি) নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ কাজের জন্য এর থেকে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ নেওয়া হয়। তাই পশ্চিমা বাজারে এ কাজের জন্য ভারতের কদরও বেশ। অপরদিকে মায়েদের জনপ্রতি দেওয়া হয় চার হাজার পাউন্ড (৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৭ রুপি)। যা তারা ১০ বছর ভারতে কারও বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেও এত অর্থ জোগাড় করতে পারে না।

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশটির দারিদ্র্য সম্পর্কে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ সবাই অজ্ঞ। ভারতে দারিদ্র্যতা যে কত তীব্র তা বিভিন্ন পরিসংখ্যানই প্রকাশ করে।

আফ্রিকার চেয়েও ভারতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের (এমপিআই) ভিত্তিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দাবি করা হয়, বিহার, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের আট রাজ্যে যে পরিমাণ দরিদ্র মানুষ আছে তা আফ্রিকার ২৬ দেশের চেয়েও বেশি।

এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে সূচক অনুযায়ী আফ্রিকার ২৬টি দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪১ কোটি। আর ভারতের বিহার, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, রাজস্থান ও ঝাড়খণ্ডে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪২ কোটি ১০ লাখ।

ভারতের ৬০ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ দৈনিক ৩৫ টাকারও কমে দিন গুজরান করে। আর শহরাঞ্চলের ৬০ শতাংশ মানুষের দৈনিক ক্রয়ক্ষমতা মাত্র ৬৬ টাকা!

এনএসএসও-র তথ্য বলছে, আর্থ-সামাজিকভাবে একেবারে পিছনের সারিতে থাকা ১০ শতাংশ গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মাসে ৪৫৩ টাকা বা দিনে মাত্র ১৫ টাকা। শহরে এই পরিমাণ মাসিক ৫৯৯ টাকা বা দৈনিক ২০ টাকা।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ভিত্তিতেই দারিদ্র্যসীমার নতুন মাপকাঠি নির্ধারণ করে যোজনা কমিশন। কমিশনের নতুন মানদণ্ডে বলা হয়, ২০০৯-১০ আর্থিক বছরের ভিত্তিতে শহরে কেউ দৈনিক ২৮ টাকা ৬৫ পয়সা ও গ্রামে দৈনিক ২২ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে পারলেই তাকে আর গরিব বলা যাবে না। যোজনা কমিশনের নতুন মাপকাঠিতে দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৭ শতাংশ কমে যায়। এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, গরিব মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের মাপকাঠিকেই নামিয়ে এনেছে যোজনা কমিশন।

অপরদিকে ভারতের ধনকুবেররা গরিব হয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে দেশটির শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদের পরিমাণ ২০ শতাংশ কমেছে। আর শীর্ষ ১০ ধনীর কমেছে ২৫ শতাংশ। তা ছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর বিলিয়নিয়ারের সংখ্যাও কমেছে।

প্রসঙ্গত আমাদের বলার বিষয় হলো- ভারতে চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে এবং দিন দিন দরিদ্র্যসীমা বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে মাতৃত্বের মতো একটা অমূল্য জিনিসকেও মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে এটা বিশ্বজনীন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ভারত সরকারের উচিত যুগপৎভাবে দারিদ্র্য দূর করা এবং মাতৃত্বের তথা নারীর মূল্যায়ন করা।

বলাবাহুল্য, আমাদের দেশের একটা মহল আছে যারা সবকিছুতেই ভারতের অনুকরণপ্রিয়। ভারতের বিবস্ত্র সংস্কৃতির দারুণ ভক্ত। (নাঊযুবিল্লাহ!) সেক্ষেত্রে ভারতের বিবস্ত্র সংস্কৃতি আজ তাদের কোথায় নিয়ে গেছে এটাই এখন বিচার্য ও বিবেচ্য।

মূলত ভারত তার মুসলমান নাগরিকদের উপর অত্যাচার করার কারণেই চরম দরিদ্রতাসহ বিভিন্ন আযাব-গযবে নিপতিত হচ্ছে।

আর ইসলামী প্রজ্ঞার অভাবে ভারতের কোন সরকারই এ সত্যটি আদৌ উপলদ্ধি করতে পারেনি। সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, সরকারেরও প্রয়োজন রয়েছে নেক পরামর্শ তথা নেক ছোহবত, রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ আলম মৃধা

 

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৩৩

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪

চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮