দেশের নাগরিকদের করোনার অজুহাত তুলে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে সরকার। দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতাটি আরোপ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে গত ৮ নভেম্বর, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মন্ত্রণালয়। জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে- মসজিদে সব মুসল্লির মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরে প্রবেশের জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি এ বিষয়ে মসজিদের ফটকে ব্যানার প্রদর্শন মসজিদ কমিটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
তবে সরকারি এই নির্দেশনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দীর্ঘসময় মাস্ক ব্যবহারে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে জনস্বাস্থ্য। দেশের কতিপয় মহল মাস্ক পরা নিয়ে অনেক লম্ফঝম্ফ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, মাস্ক বেশির ভাগই চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে মোট আমদানি করা ও উৎপাদিত মাস্কের সিংহভাগ হচ্ছে প্রচলিত নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক শপিং ব্যাগের কাপড় দিয়ে। নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক কাপড় হচ্ছে বর্তমান বাজারের সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিক।
এ জাতীয় কাপড়কে বলা হয় পিপি-ফেব্রিক্স, অর্থাৎ এটি প্রোপিলিনের পলিমার দিয়ে তৈরি। পলিথিন যেমন ইথিলিনের পলিমার, পিপি-ফেব্রিক্স তেমন প্রোপিলিনের পলিমার দ্বারা তৈরি। ফলে নন-উভেন কাপড় তৈরিতে কোনো সুতা ব্যবহার করা হয় না; এটি সরাসরি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়। এ জাতীয় কাপড়ের তৈরি মাস্কে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে কাপড়টির উভয় পাশে (ওপরে ও নিচে) প্রচুর পরিমাণ ফ্লটিং ফাইবার বা আলগা তন্তু (আঁশ-আঁশ) থাকে; এই আলগা তন্তুগুলোকে বলা হয় মাইক্রো-প্লাস্টিক। এ ধরনের কাপড়ে তৈরি একটি মাস্ক কয়েক মিনিট নাকে-মুখে রাখা মানে অসংখ্য মাইক্রো-প্লাস্টিক ফুসফুসে পুরে নেয়া।
অতিক্ষুদ্র এসব পার্টিক্যালের কিছু ফুসফুসের অত্যন্ত গভীরের টিস্যুতে আটকে যেতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সবচেয়ে ছোট কিছু উপাদান সরাসরি রক্তনালিতে চলে যেতে পারে, যা পরিণতিতে স্নায়ুরোগ, ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের কারন হয়। মানব শরীরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই, যার মাধ্যমে শরীর এসব উপাদান বের করে দিতে পারে অথবা নিঃশেষ করে দিতে পারে। ফলে এ জাতীয় মাস্ক পরিহার ও বর্জন করাই শ্রেয়।
প্রসঙ্গত, মাস্ক যদি শপিং ব্যাগের কাপড়ের বদলে ভালো মানের নন-উভেন কাপড়েও বানানো হয়, তবুও তা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা অনুচিত। প্লাস্টিক নিজে মানবস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর আর প্লাস্টিক প্রসেসিংয়ে যুক্ত থাকা অন্যান্য রাসায়নিক, যেমন থ্যালেট, বিপিএ সমমাত্রায় ক্ষতিকর। সরাসরি নাকে সংযুক্ত থাকায় এ জাতীয় কাপড়ে তৈরি মাস্ক থেকে উচ্চমাত্রায় থ্যালেট, লিড, মারকারি, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতব এবং বিপিএ উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে এসব রাসায়নিক উপাদান মানবশরীরে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, লিভার ও চর্মরোগ, স্থূলতা, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, হরমোনের তারতম্য, স্তন ক্যানসার, হাঁপানি, নারী-পুরুষের উর্বরতা হ্রাস, পুরুষের শক্তি হ্রাস, শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা হ্রাসসহ বহুবিধ রোগের সঙ্গে যুক্ত। সত্যিকারের ফিল্টার না থাকার কারণে শ্বাস নেয়ার সময় ফুসফুসের নেগেটিভ প্রেশারে তুলনামূলক অতিমাত্রায় মাইক্রো-প্লাস্টিক ব্যবহারকারীদের ফুসফুসে ঢুকে পড়ছে। অর্থাৎ মাস্ক মানুষকে মারাত্বক স্বাস্থ্য হুমকীর দিকে ফেলে দিচ্ছে। অথচ সে মাস্ক পরিধান করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে! প্রশাসন বলছে মাস্ক পরতেই হবে। অথচ এ সংক্রান্ত যারা কথিত বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ পরতেই হবে তা বলছেনা।
যেমন বলা হচ্ছে- ‘ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্টই সংশয়ে আছে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা, যাদেরকে বলা হয় ভাইরোলজিস্ট। তাদের মতে, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়”।
উল্টো চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মাস্ক ব্যবহারের কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। তার মানে বর্তমানে গণহারে যেভাবে মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং হয়রানী করা হচ্ছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত নয়। বরং এ সকল মাস্ক পরে মানুষ ক্যান্সারের মত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’
ধূলাবালি থেকে রক্ষা পেতে, অপারেশনের ক্ষেত্রে, হেলথ ও রিসার্চ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে স্বীকৃত এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই এমন মাস্ক (যা সবার জন্য নয়) পরিধান করা ভিন্ন কথা। কিন্তু করোনার অজুহাত দিয়ে বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ্য করে জনস্বাস্থ্যকে যেভাবে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে তা কিছুতেই কাম্য নয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রদ্বীন সম্মানিত ইসলাম। আর একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে মাস্ক বাধ্যতামূলক করার যে নির্দেশনা জারি করেছে তা সম্মানিত দ্বীন ইসলামসম্মত নয়। কারণ এই মাস্ক পরিধান করতে বাধ্য করা হচ্ছে তথাকথিত ‘ছোঁয়াচে রোগের’ দোহাই দিয়ে। আর দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই।
আর ছোঁয়াচে বিশ্বাস করাও কাট্টা কুফরী। তাই স্বাস্থ্যগত দিকের পাশাপাশি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ অনুসারেও মাস্ক পরিধানে বাধ্যবাধকতা সরকার করতে পারেনা। আর যদি সরকার তা করেও তাহলে তা হবে দেশের ৯৮ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর সরকারের স্পষ্ট জুলুম। তাই সরকারের উচিত হবে দেশবান্ধব দাবী এবং দ্বীন ইসলাম উনার সরকার দাবীতে পরিপ্রেক্ষিত এই মাস্ক পরিধানের যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তা রদ করা এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শকে আকড়ে ধরা।
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০