সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।
বিষয় তো সাধারণ। সাধারণ মুসলমান সবাই বিশ্বাস করেন ‘যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে অথবা কুকুর থাকে সেখানে রহমত উনার ফেরেশতা প্রবেশ করেনা।’ সেখানে নামায মাকরূহ। সেখানে নামায পড়তে দাঁড়ালে নামাযী ব্যক্তি তাই ছবি ঢেকে রাখেন। কুকুর তাড়িয়ে দেন। আবহমানকাল ধরে মুসলিম সন্তানরা মুরুব্বী-নামাযীদের ক্ষেত্রে এ দৃশ্যই দেখে আসছেন। তথা ছবি তোলা হারাম এ বিশ্বাসই লালন করে আসছেন।
কিন্তু এ চিরায়ত বিশ্বাস বা বিষয়ই কেন নতুন করে সংবাদপত্রের হেডিং হলো? টাইমস অব ইন্ডিয়া ফলাও করে প্রচার করলো। গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ঈসায়ী তারিখ বুধবার তথাকথিত দারুল উলুম দেওবন্দের কথিত মুহতামিম বললো, “ছবি তোলা নাজায়িয।”
বলাবাহুল্য, নতুন করে এ কথা বলার দরকার হলো কেন? মিডিয়াও তা লুফে নিলো কেন? তার মানে যে এই দেওবন্দীরা মাঝখানে বিরাট একটা সময় এই হক্ব ফতওয়া থেকে দূরে ছিল এই দেওবন্দীরা তাদের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে ভারতের মহিলা প্রধানমন্ত্রী, কট্টর ইসলাম ও মুসলমান বিদ্বেষী গান্ধীকে নিয়ে প্রধান অতিথির আসনে বসিয়েছে এবং সব দেওবন্দী মৌলানারা তার দিকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তাকিয়েছে। সে ছবিও উঠানো হয়েছে এবং তা পত্রিকায় ছাপানোও হয়েছে। এরপর সেই মহিলা গান্ধীর পুত্রবধূ বর্তমান কংগ্রেস নেত্রী ও সভাপতি আরেক মহিলা গান্ধীকেও দেওবন্দী উলামাদের সমাবেশে মঞ্চে ঠিক নিজের পাশে বসিয়েছে দেওবন্দীদের প্রখ্যাত গুরু আসাদ মাদানী। বলাবাহুল্য, ভারতীয় দেওবন্দীদের ছবি তোলার এই ঢেউ এসে আছড়িয়েছিল বাংলাদেশের দেওবন্দীদেরও। তারাও তাই নির্বিচারে প্রচার করতো ‘বর্তমান যুগে ছবি তোলা জায়িয।’ (নাঊযুবিল্লাহ) মৃত শাইখুল হাদীছ নামধারী শাইখুল হদস, মুফতি আমিনী নামধারী কমিনী, নামধারী খতীব ওবায়দুল হকসহ এদেশের সব দেওবন্দীরাই তখন ছবি তোলা জায়িয ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে এবং ঢালাওভাবে ছবি তুলেছে। এমনকি মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে তাদের লেখা কিতাব থেকে দলীল দিলেও তারা তখন তা মত্ত মাতালের মতো অস¦ীকার করেছে।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে ছবি তোলার বিরুদ্ধে হাজার হাজার দলীল দিলেও তারা তা মানেনি। স্মর্তব্য মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনি দলীল বলতে নিজস¦ দলীল দেননি। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দলীল দিয়েছেন। অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল দিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় এবং এদেশীয় দেওবন্দীরা তখন মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বিরোধিতা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরই বিরোধিতা করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
প্রণিধানযোগ্য যে, তখন এবং এখনও একমাত্র মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনিই হক্ব মত-পথে দায়িম-কায়িম ছিলেন। উনি না থাকলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মতো করে প্রকাশ ও প্রচার করার মতো আর কেউ ছিল না। সত্যিই উনি যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ। সত্যিই উনি হুজ্জাতুল ইসলাম। উনার দেয়া দলীলেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম সঠিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। উনার দেয়া দলীল স¦ীকার করেই আজ তথাকথিত দেওবন্দীরা পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সঠিকভাবে বলতে পেরেছে। তারা আজ উচ্চারণ করেছে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ছবি তোলা হারাম। গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক আল ইহসানে বিষয়টি প্রথম লীড নিউজ হয়েছে। হেডিং হয়েছে, “মুজাদ্দিদে আ’যম উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘ছবি তোলা হারাম’- এ ফতওয়া অবশেষে মেনে নিলো নামধারী উলামায়ে দেওবন্দ।
পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে সউদী ওহাবী সরকার নাজায়িয কাজ করছে।
দৈনিক আল ইহসানে বলা হয়, ভারতের নামধারী উলামায়ে দেওবন্দ এ যাবৎকাল ‘প্রাণীর ছবি তোলা হারাম’ ফতওয়াটি অস¦ীকার করে আসলেও অবশেষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিবরণ দিতে গিয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তাজদীদই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। ছবি তোলাকে ‘হারাম’ মেনে নিয়েছে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা। মাদরাসার উপাচার্য (মুহতামিম) মুফতি আবদুল কাসিম নোমানি এই ফতওয়া মেনে নিয়ে বলেছেন, ইসলাম কোনভাবে ভিডিও বা চিত্রধারণকে স¦ীকৃতি দেয় না।
আল ইহসান প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘সউদী ওহাবী সরকার পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে সারা বছর ধরে ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করছে’ এই বিষয়টি সম্পর্কে তুলতে নোমানি বলেছেন: “তাদের এটা কে করতে দিল? আমরা এটা সমর্থন করিনা। তারা (সউদী ওহাবী সরকার) যা করে তাদের সব কাজ জায়িয নয়।”
‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম ল পার্সোনাল বোর্ড’ সদস্য মুফতি আবুল ইরফান কাদরী রাজ্জাকি একই সাথে বলেছেন, “পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রাণী ও মানুষের ছবি তুলতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে, যে এটা করবে তাকে পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।”
‘সউদী ওহাবী সরকার ছবি তুলছে’ এমন প্রশ্নের জাওয়াবে রাজ্জাকি বলেছেন, “এটার কারণ তারা আমাদের থেকে ধনী হতে পারে, কিন্তু এটার মানে এই নয় যে, তারা সঠিক। যদি তারা ছবি তোলাকে জায়িয করতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই পরকালে বিচারের দিনে মহান আল্লাহ পাক উনার কাঠগড়ায় এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাদের এসব বক্তব্য দ্বারা রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনি যে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তা আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। কারণ শুধু উলামায়ে ‘সূ’ তথা ভারতীয় ও এদেশীয় নামধারী উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধেই উনি সর্বপ্রথম কথা বলেননি; উনিই সর্বপ্রথম সউদী ওহাবী সরকারের বিরুদ্ধেও বলেছেন। তারা যে পাসপোর্টে ছবি, সিসি টিভিতে ছবি তুলে মানুষের হজ্জ নষ্ট করছে তাও তিনিই সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছেন এবং করছেন। সুবহানাল্লাহ। তবে নামধারী উলামায়ে দেওবন্দরা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সব তাজদীদ এখনও বুঝেনি, মানেনি। সউদী ওহাবী সরকার যে চাঁদের তারিখ হেরফের করে পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র শবে কদর, পবিত্র ঈদ ও পবিত্র হজ্জ নষ্ট করছে- এ সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র বোঝার ক্ষমতা এখনও তাদের হয়নি।
অপরদিকে ছবি তোলা হারাম মানলেও নারী নেতৃত্ব যে নাজায়িয সে কথা তারা এখনও মানেনি। যে কারণে ওপারে দেওবন্দীরা এখনও মমতা-সোনিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর এপারের দেওবন্দীরা এখনও হাসিনা-খালেদাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অতি শীঘ্র এমন দিন আসবে যখন মুসলিম জনতার সামনে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উচ্চারণ করতে গেলে তাদেরকে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সব তাজদীদ মুবারকই উচ্চারণ করতে হবে। উনাকেই মানতে হবে। প্রবাদ রয়েছে, ‘গাধা পানি খায় কিন্তু ঘোলা করে খায়।’ দেওবন্দীদের অবস্থা হয়েছে তদ্রƒপ। তাদের উচিত- শুধু মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদ আংশিক স¦ীকার না করে পুরোটা মেনে এবং উনার কাছে তওবা করে পূর্ণ ও প্রকৃত মুসলমান হওয়া। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১