সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
শক্তিশালী ১২টি চক্র হজরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত অর্থ পাচারের কাজ করছে। এসব চক্র বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে বলে জানা গেছে। এসব মুদ্রা যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। ভারতীয় মাড়োয়ারি ও এ দেশের ধনাঢ্য কতিপয় ব্যবসায়ী মুদ্রা পাচারে জড়িত। আর এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়াও ভারত এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের। বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশন, বিমান, ব্যাংক, কাস্টমস, মানি একচেঞ্জের সহায়তায় মুদ্রা পাচারের ঘটনা ঘটছে। কেবল বনিবনা না হলে কিংবা আইওয়াশের জন্য মাঝেমধ্যে দু-একটি ছোট চালান বাহকসহ ধরা হয়। এসব পাচার ঘটনার অধিকাংশ মামলাই ধামাচাপা পড়ে থাকে। ফলে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। গত এক বছরে পাচারের সময় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা আটক করা হয়। এসব ঘটনায় বাহক হিসেবে সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারী, বিমান ক্রু, মানি একচেঞ্জের মালিকও গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতার হয়েছে পাকিস্তান, ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। মুদ্রা পাচারের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য থাকছে না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পুলিশের ভাষ্যমতে, পাচারের ঘটনায় থানায় মামলা হলেও তদন্ত করতে গিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের কোনো সহায়তা করছে না। এমনকি যারা চালানগুলো আটক করেন তারাও সাক্ষ্য পর্যন্ত দেয় না। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলার তদন্ত ঝুলে থাকে। আবার তদন্ত শেষ করতে না পেরে কোনো কোনো মামলা থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসের মধ্যে আটক করা হয় বেশ কয়েকটি চালান। পুলিশ ও র্যাব এসব চালানের তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করে। তারা জানতে পেরেছে ১২টি শক্তিশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরেই মুদ্রা পাচার করছে। একেকটি চক্র প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ কোটি টাকার মুদ্রা পাচার করে। এ হিসাবে ১২টি চক্র বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
এছাড়া বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির নামে বিদেশী কোম্পানির দেশীয় এজেন্টরা প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার পাচার করছে। এতে বাড়ছে ডলারের দাম, সঙ্কটে পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। সেই সাথে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। কিন্তু বিদেশী কোম্পানির সহায়তায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে যাচ্ছে পাচারকারীদের দেশীয় এজেন্টরা।
বাংলাদেশ থেকে গত ৩৪ বছরে অন্তত দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এই অর্থ সরিয়ে নিয়ে করের সুখস্বর্গ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে গচ্ছিত রাখা হয়েছে।
প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ বা আর্থিক সম্পদ কর ফাঁকি দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এই পুঁজি পাচার ঘটেছে ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে।
এতে দেখা যায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে বাইরে পাচার করা হয়েছে, পরের ১০ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। ২০০০ সাল পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৮১০ কোটি ডলার (এক লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর পরের ১০ বছরে সরানো হয়েছে ৬৬০ কোটি ডলার (৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)।
আবার রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে এবং আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে বাইরে টাকা পাচার করা হচ্ছে। হুন্ডি করেও প্রচুর টাকা বাইরে যাচ্ছে। আর গত এক দশকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের নামে কোটি কোটি ডলার দেশ থেকে চলে গেছে, যার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব নেই। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতেও এভাবে টাকা যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর ও দুবাইতেও সচ্ছল ও ধনী বাংলাদেশিরা বিভিন্নভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
‘দ্য প্রাইস অব অফশোর রিভিজিটেড’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ব্যক্তি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কৌশলে তাদের আয় ও মুনাফা ফাঁকি দিয়ে এসব অর্থ নিজ দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে এই হিসাবে শুধু আর্থিক সম্পদকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অ-আর্থিক সম্পদ, যেমন: স্বর্ণ, জমি-বাড়ি, রেসের ঘোড়া ও ইয়টকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। যেহেতু অ-আর্থিক সম্পদ বিবেচনায় নেয়া হয়নি, সেহেতু কর ফাঁকি দিয়ে স্থানান্তর করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আমদানিকারকেরা স্থানীয় অর্থনীতিতে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে এবং অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে তাদের গ্লোবাল শেয়ারহোল্ডারদের বেশি মুনাফা দিচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্থানীয় শেয়ারহোল্ডার ও দেশের সাধারণ মানুষ। অথচ এই অর্থ দেশেই বিনিয়োগ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে দেশ আরো এগিয়ে যেত। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হলেও দেশীয় শিল্পের তেমন কোনো বিকাশ ঘটেনি। ক্ষুদ্র শিল্পে দেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেও ভারী শিল্পের দিকে যেন কারো নজর নেই।
সঙ্গতকারণেই পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ বা দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সংশ্লিষ্ট দেশকে অনুরোধ করতে হবে।
এর আগে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে। কিন্তু এমন ধীরগতি প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনা হয়েছে তা মোট পাচারকৃত অর্থের তুলনায় খুবই তুলনায় নগণ্য। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যে দেশে অর্ধেক জনগোষ্ঠী না খেয়ে থাকে সেদেশ থেকে এ রকম লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে থাকে এর চেয়ে বড় বৈষম্য ও শোষণ আর কী হতে পারে? স্বাধীন দেশে এটা কি করে কল্পনা করা যেতে পারে? তাই নির্বোধ সরকারকে সক্রিয় করতে সর্বাগ্রে জনগণকেই সম্যক সক্রিয় হতে হবে।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০