শুরু হয়েছে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ১৮ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ছয় লাখ টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ টন চাল (কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় সিদ্ধ চাল আর কেজিপ্রতি ৩৯ টাকায় আতপ চাল) কেনার খবর মিলছে। এই সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে ৩১ আগস্ট। কিন্তু এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে কৃষকরা কতটুকু উপকৃত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। কৃষকরা বলছে, সরকার থেকে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কৃষকের তেমন কোনো লাভ হবে না। কৃষকদের উৎপাদন খরচই ঠিকমতো উঠবেনা। কৃষকের মতে, সরকারের কেনা দামের সুবিধা দেশের নির্ধারিত কিছু কৃষক ছাড়া আর কেউ পাবে না। ইন্টারনেটে ফরম পূরণ করে লটারিতে অংশ নিয়ে দেশের তৃণমূলের কোন কৃষকের পক্ষে সরকারি দামে ধান বিক্রি করা সম্ভব হবে না। গুটি কয়েক দালাল ছাড়া সরকারের এই সুবিধা সত্যিকারের কোনও কৃষক পাবেনা। বিশেষজ্ঞরা বলছে, প্রতিবছর সরকারের এই ধান চাল সংগ্রহ অভিযান সঠিকভাবে পুরণ না হওয়ার মূখ্য কারণই হচ্ছে কৃষকস্বার্থ না দেখা এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল ক্রয় না করা। সরকার যদি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ধান ক্রয় কেন্দ্র চালু করে ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে তাহলে তৃণমূলের কৃষকরা সেখানে ধান দিতে পারবে। কিন্তু কোনোবছরই তা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বোরো বাংলাদেশের চালের সর্ববৃহৎ মৌসুম। চালের মোট অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ এখান থেকেই মেটে। কাজেই খাদ্য-নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় খাদ্যশস্যের মজুদ পরিস্থিতি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ মৌসুম গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনকভাবে গত দুই বছরে বোরো থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রচলিত অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় সরকার চাল সংগ্রহের জন্য চালকল মালিকদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
২০০৬ সালের জাতীয় খাদ্যনীতিতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য কেনার বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর সুযোগ নিচ্ছে চালকল মালিকরা। অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সরকারকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে তারা। গত দুই বছর বোরো মৌসুমে ধান ২৬ টাকা কেজি দরে, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা দরে এবং আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে কিনেছিল সরকার। জমি লিজ নেওয়ার খরচ বাদে চাষ, সার, সেচ, বীজ, চারা, বালাই-আগাছানাশক, শ্রমের মজুরীসহ উপকরণ বাবদ কেজি প্রতি ধান উৎপাদনে যে খরচ হয় ও চাল উৎপাদনে যে খরচ হয় সরকারি দামে ঐ ধান-চাল বিক্রি করলে কৃষকের লাভ হয় ৮০ টাকা। এই টাকা থেকে জমির লিজের টাকা বাদ দিলে কৃষকের থাকে সামান্যই। অন্যদিকে, খোলাবাজারেও সরকারি মূল্যের চেয়ে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেনি।
সমরূপভাবে, সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ার অজুহাতে মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী চাল দেয়নি সরকারকে। তাদের দাবি এতে লোকসান হবে। এ প্রেক্ষাপটে তারা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা বাড়ানোর আহ্বান জানালে সরকার নির্ধারিত দামেই অটল ছিল। ফলে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও সরকার লক্ষ্য অনুযায়ী ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হয়।
অভিজ্ঞমহলের মতে, মূল্য নিয়ে বিশৃঙ্খলাতেই মূলত ধান চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে প্রতি বছর। তাই সরকার যদি সরকারি ক্রয়ের মূল্যনির্ধারণের ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীল হয় তাহলে কৃষকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারবে। এজন্য কৃষকের পরিশ্রমের কথা বিবেচনা করে ধানের মণপ্রতি ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে কৃষক এতে লাভবান হবে এবং সরকারি দামের সাথে খোলাবাজারের দামের সামঞ্জস্য থাকার ফলে মিলাররাও সরকারকে চাল দিতে কোনো অজুহাত দেখাতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, বিদ্যমান খাদ্যশস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় মিলারদের প্রভাব অত্যধিক। নানা অজুহাতে তারা যখন চাল সরবরাহ করে না, তখন শেষ মুহূর্তে সরকারের কিছুই করার থাকে না। ফলে লক্ষ্য অনুযায়ী মজুদ বাড়ানো ব্যাহত হয়। এজন্য মিলারদের প্রতি অতিনির্ভরতার এই কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করারও সময় এসেছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ভেবে দেখা প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী তারা সরকারকে চাল সরবরাহ করতে বাধ্য। অথচ চাল সরবরাহ না করলেও তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয় না ব্যবস্থা। সরকারের উচিত হবে এবার মিলাররা কোনো টালবাহানা করলে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। চুক্তিবদ্ধ সব মিলারকে কথামতো চাল সরবরাহ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী চাল না দিলে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের মতোও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। গতবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ এবং সরকারি প্রণোদনা ঘোষণা দেয়ার পর মিলাররা সাড়া দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সরকারকে চাল সরবরাহ করেনি তারা। অতীতের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে এবার সম্ভাব্য বিকল্প দব্যবস্থা রাখা জরুরি।
বিশেষ করে, সব দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালানো হয়। তবে কিছু দেশে কার্যকর সরকারি খাদ্যশস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া বিদ্যমান। বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশগুলো তার মধ্যে অন্যতম। এসব দেশের কৃষকরা একটি গ্যারান্টিড মিনিয়াম সাপোর্ট প্রাইসে (এমএসপি) সরকারের কাছে নিজেদের পণ্য, প্রধানত ধান ও গম বিক্রি করতে পারে, পর্যায়ক্রমিকভাবে যা প্রতি বছরই নির্ধারিত হয়। এমএসপি ব্যবস্থা মূলত পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। চলমান বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে নির্ধারিত এমএসপির আওতায় কৃষক রাজ্য নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোয় ধান, চাল, গম সরবরাহ করে থাকে। ন্যায্য দাম পাওয়ায় কৃষক আগ্রহের সঙ্গে সরকারের কাছে খাদ্যশস্য বিক্রি করে। ফলে বরাবরই দেশগুলোতে মৌসুমভিত্তিক সংগ্রহ অভিযান সফল হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় প্রেক্ষাপট উপযোগী করে দেশে এমএসপি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে।
মোটকথা, সরকারি খাদ্যশস্য ক্রয়/সংগ্রহ অভিযান এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কৃষকস্বার্থ অটুট থাকে, কৃষক লাভবান হয় এবং কৃষক সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারতে পারে। মাঝখানে যাতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী না আসতে পারে। কৃষক যাতে নিজ আগ্রহেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আসে। অন্যদিকে, মিলারদেরকে কঠোর আইনের পাশাপাশি তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এতে করে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান প্রতিবছরই সফল হবে।
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আল ওয়াসীলাতু ইলাল্লাহ, আল ওয়াসীলাতু ইলা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০