সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে উগ্র ইহুদীবাদের ভিত্তিতে যায়নবাদী আন্দোলন বিশ্বব্যাপী মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ১৮৯৭ ঈসায়ী সনে ইহুদী নেতা ও দার্শনিক থিওডোর হার্জ্জল এক আন্তর্জাতিক ইহুদী সম্মেলন আহ্বান করে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫০ জন ইহুদী কথিত প-িত, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ অংশ নেয়। সুইজারল্যান্ডের বেলসে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ইহুদীদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী ইহুদীরা ফরাসী সেনাপতি নেপোলিয়ান বোনাপোর্টের মাধ্যমে প্রথমে সাইপ্রাস, ল্যাটিন আমেরিকা, উগান্ডা কিংবা দক্ষিণ সুদানে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। তারা তুর্কী সুলত্বান আব্দুল হামিদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনে ভূমি কেনার প্রস্তাব দিলে সুলত্বান নাকচ করে দেন। অবশেষে তারা ব্রিটেনের দ্বারস্থ হলে ব্রিটেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইহুদীদের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর নিজে খ্রিস্টান হলেও যায়নবাদী ছিল। সে নিজে পুণ্যের কাজ মনে করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সহায়তায় ১৯৪৮ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনী ভূখ-ে ইসরাইল রাষ্ট্রের সূচনা হয়। ১৮৯৭ সালে থিউডোর হার্জ্জলের দেয়া নকশা অনুযায়ী মিসরের নীলনদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যায়নবাদী অপতৎপরতা আজো পরিচালিত হচ্ছে। ওদের নীলনকশা বাস্তবায়ন এবং দখলদার অবৈধ রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব রক্ষায় যুগের পর যুগ ধরে তারা মানবতার বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, উচ্ছেদসহ হাজারো অপরাধ নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছে।
চলতি ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে গাজায় ইসরাইলের হিংস্র আক্রমণের শিকার হচ্ছে, শহীদ হচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুসহ হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ।
আর এ নির্মম ও সকরুণ দৃশ্য দেখার পরও বিশ্ব নেতারা বোবা হয়ে আছে। তাদের বিবেক একটি বারের জন্যও প্রশ্ন তোলেনি ইসরাইলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি মুসলিম জাহানের নেতৃবৃন্দরাও। আরবলীগ ও ওআইসি এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোও পুতুলের মতো বসে আছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও তেমন কোনো কথা বলছে না। কেউই মুখ খুলছে না আগ্রাসনবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা, মানুষ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে জাতিসংঘের আলাদা কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ফিলিস্তিনে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের কথা বলা হবে, এমন আশা করা হলেও এখন পর্যন্ত চুপ মেরে আছে এই বিশ্বসংস্থা (তথা ইহুদী সংস্থা)। একক কোনো হামলার ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। কিন্তু এ নিয়ে জাতিসংঘ সোচ্চার নেই কেন? মানবাধিকারের ফেরীওয়ালা বলে চিহ্নিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নই বা কোথায়? কারো মুখে কোনো কথা নেই। এর একমাত্র কারণ কী এই যে, ফিলিস্তিনীরা মুসলমান? অন্য কোনো ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের উপর এরকম হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্য কি এভাবে নীরব থাকতে পারতো? জাতিসংঘকে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের প্রধান অভিভাবক সংস্থা বলা হলেও তা বরাবরই ইসরাইলী হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ। এর প্রধান কারণ, বিশ্বের ইহুদী শক্তিচক্র সংস্থাটি নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ এটি একটি ইহুদীসংস্থা। তাদের ইচ্ছা-অভিপ্রায়ের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা এর নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো যেখানে শুরু থেকে ইসরাইল ও ইহুদীবাদ সুরক্ষায় নিয়োজিত, সেখানে তাদের কাছ থেকে ন্যায্য প্রতিকার ও ন্যায়বিচার আশা করা যায় না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য করতে হয় যে, অনেক বছর ধরে চলমান ফিলিস্তিন সমস্যার জন্য যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলের আগ্রাসী নীতি দায়ী, ঠিক তেমনিভাবে আরব দেশগুলোর গাছাড়া ভাব ও অনৈক্য কম দায়ী নয়। অন্যদিকে হামাস ও ফাতাহর অনৈক্য ও হানাহানি প্যালেস্টাইন সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করেছে। হামাস ও ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর ও গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের হানাহানি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা গোটা প্যালেস্টাইনের সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। হামাস-ফাতাহ দ্বন্দ্ব ও প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর স্বার্থপর ভূমিকা প্যালেস্টাইনিদের স্বাধিকার অর্জনের পথে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে আছে।
স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই প্যালেস্টাইনের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী আরব দেশগুলোকে পশ্চিমাদের স্বার্থের ক্রীড়নক না হয়ে প্যালেস্টাইনের পক্ষে নৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
মূলত, ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইনের মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তাদের নিপীড়িত হওয়ার মূল কারণ। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি তোমাদের কাছে দুটি নিয়ামত রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ামত দুটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে না। একটি হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ ও অন্যটি হচ্ছে পবিত্র সুন্নাহ শরীফ।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
বলাবাহুল্য, আজ ফিলিস্তিনসহ গোটা মুসলিম বিশ্ব¦ই সম্মানিত ইসলাম উনার আদর্শ ছেড়ে দিয়েছে। তাই তাদের প্রতি এত লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা তথা নির্যাতন ও নিপীড়ন। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে ঈমানদার ও আমলদার মুসলমান তথা মুত্তাকী হওয়ার বিকল্প নেই। আর বর্তমান পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আমাদের মুত্তাকী হওয়ারই শিক্ষা দেয়।
বলাবাহুল্য, এসব অনুভূতি জাগরুক ও জোরদারের জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক উনার।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত মুবারক হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০