বঙ্গোপসাগরে রয়েছে অঢেল ও মহামূল্যবান সম্পদ। রয়েছে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর বছরে ৬ লাখ টন প্রাণিজ সম্পদ ১০ লাখ টন খনিজ বালুসহ অন্যান্য মূল্যবান খনিজ আহরণ সম্ভব। এর সুষ্ঠু ব্যবহারে দেশ হতে পারে অকল্পনীয় সমৃদ্ধশালী

সংখ্যা: ২৩৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

যে দেশ সমুদ্রকে যত বেশি ব্যবহার করতে পেরেছে, সে দেশ অর্থনীতিকে তত বেশি এগিয়ে নিতে পেরেছে।

বাংলাদেশের সামুদ্রিক পানি সীমার অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা দেশের মূল ভূখ-ের আয়তনের চেয়েও বিশাল। জানা গেছে, মোচাকৃতির এ উপসাগরের প্রায় ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় তটরেখা এবং প্রায় ৩২০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা এদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত স্থান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভূ-তাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত গ্যাস ব্লকগুলোতে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাসব্লকের ১০টি ভারত ও ১৮টি মিয়ানমার দাবি করে আসছিল। এসব ব্লকে বিভিন্ন সময় দেশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালাতে গেলেও সম্ভব হয়নি। ভারত ও মিয়ানমারের বাধার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের সমুদ্রবিষয়ক রায়ে এ বাধার অবসান ঘটেছে। ভারতের সঙ্গে আটটি ও মিয়ানমারের সঙ্গে ১৩টি তেল-গ্যাস ব্লক জিতেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্জিত সমুদ্রসীমায় আনুমানিক ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) আর ভূ-সীমায় মজুদ রয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে প্রতি বছর দেশে এক টিসিএফ গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ১২ বছর পর দেশে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেবে। সমুদ্রসীমায় নতুন গ্যাস ব্লক অর্জিত হওয়ায় সে গ্যাসের সঙ্কট অনেক ক্ষেত্রেই কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ দেশগুলো তাদের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদেরও দেশের সমুদ্রসীমার তেল-গ্যাস আহরণে শীঘ্রই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরী।  বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রে মূলত দুই ধরনের সম্পদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রাণিজ (লিভিং) ও  অপ্রাণিজ (নন-লিভিং) সম্পদ। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, চুনাপাথর প্রভৃতি। খনিজের মধ্যে আরো রয়েছে ১৭ ধরনের খনিজ বালু। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট, লিকোক্সিন উল্লেখযোগ্য। এ আটটি খনিজ বালু বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলোর দামও বেশি। বঙ্গোপসাগরের অর্জিত সমুদ্রসীমা থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন এসব খনিজ বালু আহরণ করা সম্ভব। এছাড়াও সাগরের তলদেশে ক্লেসার ডেপোজিট, ফসফরাস ডেপোজিট, এভাপোরাইট, পলিমেটালিক সালফাইড, ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ম্যাগনেসিয়াম নডিউল নামক খনিজ পদার্থ আকরিক অবস্থায় পাওয়া যাবে। এদের নিষ্কাশন করে লেড, জিংক, কপার, কোবাল্ট, মলিবডেনামের মতো দুষ্কর ধাতুগুলো আহরণ করা সম্ভব হবে। এসব দুষ্কর ধাতু উড়োজাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক কাজে এবং বিভিন্ন কলকারখানার কাজে ব্যবহার করা যাবে।  তবে তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথরসহ এসব ধাতু অনবায়নযোগ্য। এসব থেকে প্রাপ্ত শক্তি একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিও পাওয়া সম্ভব। বঙ্গোপসাগরের সি-বেডে রয়েছে অসংখ্য উদ্ভিদকুল (ফ্লোরা)। এ উদ্ভিদকুলকে ব্যবহার করে ওষুধ শিল্পে অনেক জীবনবিনাশী রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার ওষুধ আবিষ্কার করা যাবে। এছাড়াও অর্জিত সমুদ্রসীমায় গ্রিন এনার্জিও মিলবে। এর মধ্যে উইন্ড এনার্জি, ওয়েভ এনার্জি, টাইডাল এনার্জি, ওশীন কারেন্ট উল্লেখযোগ্য। সাগরের বাতাসকে কাজে লাগিয়ে উইন্ড এনার্জি, তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে ওয়েভ এনার্জি, জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে টাইডাল এনার্জি তৈরি করা যাবে। এসব এনার্জি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব।

দেশে বছরে মোট ৩৩ লাখ টন মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ টনই আসে সমুদ্র থেকে। ট্রলার ও নৌকা ব্যবহার করে আমাদের দেশের জেলেরা শুধু অগভীর সমুদ্র থেকে এসব মৎস্য সম্পদ আহরণ করে থাকে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ থাকায় গভীর সমুদ্রে গিয়ে মৎস্য আহরণ সম্ভব হয়নি। সমুদ্রজয়ের ফলে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় এখন আরো ১৫০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমা যোগ হওয়ায় এসব এলাকায়ও প্রাণিজ সম্পদ আহরণ সম্ভব হবে। দেশের  মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ করে জীবিকানির্বাহ করে। সমুদ্রসীমা বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদ আহরণের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটি দেশের জনগোষ্ঠীকে বেকারত্বের হাত থেকেও রক্ষা করবে।

খনিজ সম্পদ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে কী হচ্ছে তা আমাদের জানতে হবে। খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিয়ে নাইজেরিয়া, মিয়ানমার একধরনের মডেল। এই দেশগুলোতে স্থলভাগ ও সমুদ্রে খনিজ সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

কার্যতঃ এক সমুদ্র সম্পদই যে গোটা বাংলাদেশবাসীর অবস্থা ঘুরিয়ে দিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথার্থ গবেষণা, ডাটা সংগ্রহ, তথ্যানুসন্ধানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ ও উদ্যমের পাশাপাশি প্রয়োজন পবিত্র ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত অনুভূতি ও জজবা মুবারক।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যতক্ষণ তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ উন্নতির শীর্ষে থাকবে। আর যখনই তা থেকে বিচ্যুত হবে, তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে।”

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সীমারেখা সংরক্ষণ, বৃদ্ধি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সমৃদ্ধি সবই এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমলের উপর নির্ভর করে।

বলাবাহুল্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল উনার জন্য চাই খাছ রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ তা হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান।

সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিরোধী ‘আদিবাসী’ প্রচারণা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে।

‘প্রথম আলো’র মতো ইসলামবিরোধী মিডিয়া এবং নাস্তিক ঘরানার জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল গং এবং বিকৃত বামপন্থী ইনু, মেনন গং রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরোধিতা করে ‘আদিবাসী’ ষড়যন্ত্র বিস্তার করে চলেছে।

‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ মেনে নিতে হবে। আর তা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী এবং সার্বভৌমত্ব ও সম্পদ ধ্বংসকারী।

দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ উপজাতিরা দেশের এক দশমাংশ ভূমির অধিকারী হয়ে পার্বত্য ভূমিকে পৃথিবীর দ্বিতীয় ইসরাইল তথা পূর্ব-তিমুর ও দ. সুদানের মতো আলাদা খ্রিস্টান রাজ্য বানাতে চাচ্ছে।

‘আদিবাসী’ দাবিদারদের নেতা ত্রিদিব রায় পশ্চিম পাকিস্তানের মন্ত্রী ও রাজাকার ছিল। সে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং এখনো তথাকথিত ‘আদিবাসী’রা তথা উপজাতিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।

এ জন্য সচেতন হতে হবে গোটা দেশবাসীকে, সক্রিয় হতে হবে তথা দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানকে।

গত দুই বছর আগে ২০১২ সালে ‘৯ আগস্ট’কে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ হিসেবে পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত শনিবার (৯ আগস্ট ২০১৪) দিবসটি পালনের ব্যর্থ কোশেশ করেছে উপজাতিরা।

দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে উপজাতিদের বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠন।

এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী জনতার সেতুবন্ধন’।

জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি তুলেছে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (ওরফে সন্তু লারমা)। সে বলেছে, সংবিধানে আদিবাসীদেরকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদিবাসী জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত, আমরা পর্যালোচনা করবো দেশবিরোধী, দেশবিদ্রোহী, সংবিধান বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্তু লারমার উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক। এক্ষেত্রে তথাকথিত ‘আদিবাসী’ সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংজ্ঞাটা বলা যায়।

জাতিসংঘের ‘আদিবাসী’ ডেফিনিশন-

ওহফরমবহড়ঁং পড়সসঁহরঃরবং, ঢ়বড়ঢ়ষবং ধহফ হধঃরড়হং ধৎব ঃযড়ংব যিরপয, যধারহম ধ যরংঃড়ৎরপধষ পড়হঃরহঁরঃু রিঃয ঢ়ৎব-রহাধংরড়হ ধহফ ঢ়ৎব-পড়ষড়হরধষ ংড়পরবঃরবং ঃযধঃ ফবাবষড়ঢ়বফ ড়হ ঃযবরৎ ঃবৎৎরঃড়ৎরবং, পড়হংরফবৎ ঃযবসংবষাবং ফরংঃরহপঃ ভৎড়স ড়ঃযবৎ ংবপঃড়ৎং ড়ভ ঃযব ংড়পরবঃরবং হড়ি ঢ়ৎবাধরষরহম ড়হ ঃযড়ংব ঃবৎৎরঃড়ৎরবং, ড়ৎ ঢ়ধৎঃং ড়ভ ঃযবস. ঞযবু ভড়ৎস ধঃ ঢ়ৎবংবহঃ হড়হ-ফড়সরহধহঃ ংবপঃড়ৎং ড়ভ ংড়পরবঃুৃ

অর্থাৎ জাতিসংঘ বলছে, বৃহৎ জাতিগোষ্ঠির আগমনের আগে যারা নিজেদের ভূমিতে ঐতিহাসিক সূত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে ঐ এলাকায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা হলো ‘আদিবাসী’ গোষ্ঠি।

এখানে উল্লেখ করার বিষয় কিন্তু বৃহৎ জাতিগোষ্ঠি অর্থাৎ বাঙালিরা তো এখানে কোথাও থেকে আগমন করে নাই, এরা হাজার হাজার বছর ধরে ঐতিহাসিকভাবে এখানেই ছিল, আছে। মানে হলো, এই ডেফিনিশন বাংলাদেশে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনোভাবেই খাটে না। বস্তুত, এটা সেটেলার্সদের দেশ যেমন- অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; যেখানে বৃহৎ জনগোষ্ঠি অন্য কোথাও থেকে মাইগ্রেট করে এসেছে।

কিন্তু বাংলাদেশে চাকমারা (বৃহত্তর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বিধায় প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠি হিসাবে চাকমাদের গণ্য করা হলো) এই ডেফিনিশনে কতটুকু আদিবাসী হওয়ার যোগ্যতা রাখে? চাকমারা কী ঐতিহাসিক সূত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করতো? না, করতো না। চাকমারা এসেছে ঈসায়ী ১৬ শতকে আরাকান থেকে (মতান্তরে চম্পকনগর থেকে) পরাজিত হয়ে তাড়া খেয়ে। আর আরাকানেও তারা অন্যত্র থেকে এসে মাত্র ১০০ বছরের মতো বসবাস করতে পেরেছিল। তারা ছিল যাযাবর কৃযিজীবী সম্প্রদায়।

আবার দেখা যাক, ঐ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম কাদের ছিল? পার্বত্য চট্টগ্রাম তখন মুঘলদের অধীনে সুবে বাংলার অংশ ছিল। এই সুবে বাংলা হলো আজকের বাংলাদেশ। আর তাই সুবে বাংলার বাঙালিদের উত্তরপুরুষ আজকের বাংলাদেশের বাঙালিরা নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাস সূত্রে এই পার্বত্য ভূখ-ের মূল মালিক।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত, দেশের ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’, ‘নৃ-গোষ্ঠি’ ও ‘সম্প্রদায়’-এর জন্য সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কোটা সুবিধা রয়েছে। এসব সুবিধাভোগীরা প্রতি বছর ‘আদিবাসী ফোরাম’ সংগঠন থেকে ৯ আগস্ট ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ পালনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। চলতি ২০১৪ সালের ৫ আগস্টও ওই দাবি জানানো হয়েছে। পক্ষান্তরে কয়েক বছর ধরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি না থাকায় বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে কথিত ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ উদযাপনে সরকারের কোনোও পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ২০১৩ সালের মতো এবারও বিভিন্ন বক্তব্য ও মন্তব্যে অসহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করেছে। সন্তু লারমা সম্ভবত আইএলও কনভেনশন ১০৭-এর অনুচ্ছেদ ১-এর উপ-অনুচ্ছেদ ১ (খ)-এ বর্ণিত ‘আদিবাসী’ সংজ্ঞাটি মনোযোগসহ পাঠ করেনি। সেখানে বলা হয়েছে, “স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখ-ে দেশটি অবস্থিত, সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আদিবাসী’ বলে পরিগণিত এবং যারা তাদের আইনসঙ্গত মর্যাদা নির্বিশেষ নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার-ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।”

অন্যদিকে ‘উপজাতি’ সম্পর্কে আইএলও কনভেনশন ১০৭-এর অনুচ্ছেদ ১-এর উপ-অনুচ্ছেদ ১ (ক) অংশে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বেলায়, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে, তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতি-নীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।”

অর্থাৎ ‘আদিবাসী’ হলো- ‘সন অব দ্য সয়েল’। আর ‘উপজাতি’ হলো- প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি।

‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র-২০০৭’ অনুসারে তাদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ওই ঘোষণাপত্রে ‘আদিবাসী’ জাতিগোষ্ঠির সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি বা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। তাছাড়া ঘোষণাপত্রের উপর সব সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই। এ কারণে বাংলাদেশ ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্র’-এর উপর ভোট গ্রহণের সময় তারা ভোটদানে বিরত ছিল। তবে যে কোনোও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠির অধিকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে সরকারের। সংবিধান অনুসারে সরকারপ্রধান মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত এবং উপজাতিদের অধিকার সমর্থন করে আসছে। উল্লেখ্য, ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ মেনে নিতে হবে। আর তা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। কারণ ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ ৪-এ আছে, “আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারচর্চার বেলায় তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে ও তাদের স্বশাসনের কার্যাবলীর জন্য অর্থায়নের পন্থা এবং উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে।”

অর্থাৎ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলে ও পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়ির গ্যাস উত্তোলন করে অন্য জেলায় আনতে পারতো না। কারণ সেখানকার স্বশাসিত আদিবাসী শাসক নিজেদের অর্থায়নের উৎস হিসেবে সেই খনিজ, বনজ ও অন্যান্য সম্পদ নিজেদের বলে চিন্তা করতো।

আবার অনুচ্ছেদ ৩৬-এ আছে, “আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির, বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে, তাদের অন্যপ্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠির সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রমসহ যোগাযোগ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখা ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।”

অর্থাৎ রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকর সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ঘোষণাপত্রের এই নির্দেশ কোনোও সরকারই মেনে নিতে পারবে না। কারণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাছাড়া বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। তা ক্রমেই সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত করবে।

মনে রাখা দরকার, এই ঘোষণাপত্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশে বিপুলসংখ্যক নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া, ভুটান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইউক্রেন, কলম্বিয়াসহ অনেক দেশ। অনুপস্থিত ছিল আরো অনেক দেশ।

উল্লেখ্য, ভারতে বসবাসকারী একই সম্প্রদায়ভুক্ত উপজাতিদের সেখানকার সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। বলা হয়েছে, ঝপযবফঁষবফ ঈধংঃব ধহফ ঝপযবফঁষবফ ঞৎরনবং. সংবিধানে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামকে উপজাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।