প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় শত শত প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। কিন্তু প্রকল্পের পাল্লাই শুধু ভারি হচ্ছে। এর বিপরীতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন একেবারেই পিছিয়ে আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অর্থবছরে নেওয়া ৬৭৮টি উন্নয়ন প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে নেওয়া প্রকল্পগুলো ঝুলে আছে বছরের পর বছর। যথাসময়ে কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু শেষ হচ্ছে না। বছর যাচ্ছে বাড়ছে মেয়াদ, সঙ্গে ব্যয়ও। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দফায় দফায় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে নতুন নতুন প্রকল্প যুক্ত হলেও সেই তুলনায় পুরোনো প্রকল্প সমাপ্ত না হওয়ায় ভারী হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার। এ সমস্যা সমাধানে প্রায় প্রতি অর্থবছরই কিছু প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্দেশনা দেয় সরকার। কখনো কঠোর নির্দেশনাও সরকার দিয়ে থাকে। তার পরও সেসব প্রকল্প সমাপ্ত করা হয় না। এতে উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের যে চ্যালেঞ্জ সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তা মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। ফলে বড় আকারের অর্থ গচ্চা দিয়েও প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। দুর্নীতি আর অপচয় যে অতিরিক্ত এই ব্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ তা এখন সর্বজনবিদিত।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা খুবই করুণ। এর মধ্যে ১৬৮টি প্রকল্প আছে পাঁচ থেকে ১২ বছরের বেশি সময় আগে নেওয়া। যেগুলোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে এক যুগ ধরে চলছে তিনটি, ১১ বছর ধরে চলছে পাঁচটি এবং ১০ বছর ধরে চলছে সাতটি। আট থেকে নয় বছর ধরে চলছে ২৯টি, ছয় থেকে সাত বছর ধরে চলছে ৫৮টি। ৫ বছর ধরে চলছে ৬৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। বাকি পাঁচ শতাধিক প্রকল্পের কাজও বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। এগুলোর মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গত মঙ্গলবার নতুন অর্থবছরে ১ হাজার ৫১৫টি প্রকল্পের জন্য দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। অথচ, গত ২ মার্চ ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদনের সময় অনুষ্ঠিত এনইসি সভার ৫.৩ নম্বর সিদ্ধান্তে ৪৪২টি প্রকল্প ২০২১ সালের জুনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে ৪৪২টির মধ্যে ৫৭টি প্রকল্প এবারের অর্থবছরের এডিপিতে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে চলা প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে দ্বিগুন-তিনগুন-চারগুন পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। এবারের অর্থবছরে পদ্মা সেতুসহ বড় ১০ মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ৪৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫০৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বরাদ্দ বাড়ছে ১২ হাজার ৩৭৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে, কোনো প্রকল্প একবার এডিপিতে ঢুকে গেলে বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়ে গেলে, যতই নির্দেশনা দেয়া হোক না কেন তা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, যেসব প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয় তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোড়ায় গলদ থাকে। অর্থাৎ ‘প্রজেক্ট’ তৈরির সময়ই সম্ভাব্যতা যাচাই হয় না, ডিজাইন ঠিকমতো হয় না, সঠিক রেট শিডিউল ধরে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় না। বাস্তবায়ন পর্যায় গিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। সেই সঙ্গে কোনো পর্যায় থেকেই সঠিক তদারকি থাকে না। অনেক সময় মন্ত্রণালয়গুলো বিমাতাসুলভ আচরণ করে। অনেক সময় মন্ত্রণালয় এগুলো ওন’ করতে চায় না, ফলে দেখা যায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এতে মেয়াদ বাড়ে, সেইসঙ্গে বাড়ে ব্যয়ও।
পাশাপাশি, এসব ভুরিভুরি এসব মেগাপ্রকল্প গ্রহণের কারণে দেশ বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। কিন্তু ৪০ বছরে দেশের যে বৈদেশিক দায়দেনা হয়েছে, গত ১০ বছরে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশী ঋণের স্থিতি ছিল ২৫.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৭০.৭ বিলিয়ন ডলারে। ১১ বছরে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ১৮০%।
প্রসঙ্গত, এসব মেগা প্রকল্প শুধুই মেগা দুর্নীতির উৎসব নয়, পাশাপাশি এটা সাংবিধানিকভাবেও শুদ্ধ নয়। কারণ সংবিধানে ৫টি মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ আছে। কাজেই সে ৫টি মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্যই সবার আগে সরকারকে পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকার তা করেনি। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গৃহ শুধু পেপার পত্রিকায়ই কিছু দেখা যায় বাস্তবে তা ১% পূরন হয়নি। অপরদিকে সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র এমনকি খাদ্যের সমাধানও নিশ্চিত হয়নি।
বর্তমানে রাজধানীতে ৬০ লাখ বস্তিবাসী রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি লোক গৃহহীন রয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ পথশিশু রয়েছে। সর্বোপরি দেশের ৩০ কোটি জনগণের প্রায় ১২ কোটিই দরিদ্র। কিন্তু তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রকল্প গ্রহণ না করে সরকার প্রতি বছর নানা ধরনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। যার ব্যয় বহুগুণ বেড়েই যাচ্ছে। এতে লাখ লাখ কোটি টাকা অপচয়, অনিয়ম ও লুটপাট করা হচ্ছে। অথচ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারই এখনো ৩০ কোটি জনগণের মধ্যে অধিকাংশের জন্যই পূরণ করতে পারেনি সরকার। কিন্তু সে সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সরকারের নজর নেই।
এটা বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত সোনার বাংলার গড়ার অন্তরায়। বঙ্গবন্ধু বলেছে, ‘আমরা শোষিতের পক্ষে’। সেটা প্রধানমন্ত্রীও বলেছে। তাই শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে উচিত- এ মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলো বাদ দেয়া। বরং বঞ্চিত জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের প্রতি আগে দৃষ্টি দেয়া। সেই সাথে প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আল ওয়াসীলাতু ইলাল্লাহ, আল ওয়াসীলাতু ইলা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুলত্বানীন নাছীর, আর ক্ববিউল আউওয়াল, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বইয়্যুমুয যামান, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০