পৃথিবীতে যত মুহাদ্দিছ ছিলেন উনাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর একজন মুহাদ্দিছ এবং চিশতিয়া খান্দানের বিখ্যাত ওলীআল্লাহ ও অষ্টম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ভাত খাওয়া সুন্নত এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন এবং সে পবিত্র হাদীছ শরীফকে বিশুদ্ধ বা ছহীহও বলেছেন।
হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মালফুজাত সংকলিত একটি কিতাব হচ্ছে “ফাওয়ায়েদুল ফাওয়াদ”। উক্ত কিতাবের ৪র্থ খণ্ডে ৫৬ তম মজলিসে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে,
روز شنبہ تاریخ ۱۱ ماہ ذ الحجہ ۷۱۸ ہجری
کو دولت قدم بوسی میسر ہوئی ۔ بندہ نے عرض کیا کہ اس ماہ کی ۱۳ تاریخ تک روزه نہیں رکھ سکتے۔ اس سے ایام بیض کے روزوں میں ایک دن کی کمی آتی ہے۔ آپ نے ارشاد فرمایاکہ اس ماہ میں بجائے سترھویں کے سو لہویں کو روزہ رکھا کرتے ہیں۔
اس کے بعد ارشاد فرمایا کہ روزے ایام بیض کے بنزد امام شافعی رحمۃ اللہ علیہ چودہ پندرہ وسولہ تاریخ کو رکھنا چاہئے۔ اس وقت کھانا سامنے لایا گیا جس میں چاول بھی تھے ۔ میں نے عرض کیا کہ الارز منی حدیث شریف ہے۔ آپ نے ارشادفرمایا ہاں صحیح ہے۔
اس کے بعد اس بار ہ میں یہ حکایت بیان فرمائی کہ ایک مرتبہ دسترخوان پر آ نحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے کئی کھانے موجود تھے اور صحابہ رضی اللہ عنہ کھانے میں شر ک تھے ہر شخص ایک کھانے کو اپنی جانب منسوب کرتا تھا ۔ کوئی اللحم منی کو ٹی کچھ اور کوئی کچھ کہتا تھا۔ آخر میں آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا کہ الارز منی
অর্থ: ৫৬ তম মজলিস, ইয়াওমুস সাবতি, পবিত্র ১১ই জিলহজ্জ শরীফ, ৭১৮ হিজরী। কদমবুছি হাছিল হলো। আমি আরয করলাম, এ মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আইয়্যামে তাশরীকের কারণে রোযা রাখা যাবে না, কিন্তু আইয়্যামে বীজের রোযা তো রাখা যেতে পারে, কেননা তা আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যে পড়ে না। তিনি বললেন, ১৬ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখবে। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে আইয়্যামে বেজের রোযা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে রাখা হয়। এ সময়কাল আইয়্যামে বেজের হুকুম প্রদান করে। ১৪ ও ১৫ তারিখ কিন্তু এ মাসে ১৬ তারিখেও রোযা রাখবে। এ সময় দরবার শরীফে খাবার আনা হলো যার মধ্যে ভাতও ছিলো। আমি বললাম যে, اَلْاَرُزُّ مِنِّيْ এটা কি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ? তিনি বললেন এটা বিশুদ্ধ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ।
তিনি এরপর বললেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দস্তরখানা মুবারকে কয়েক রকম খাবারের আয়োজন ছিলো এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। যে যার পছন্দের খাবার নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছিলেন। কেউ বলেছিলেন, اَللَّحْمُ مِنِّيْ অর্থাৎ আমাকে গোশত দিন। কেউ বলছিলেন, اَلْـحَوَائِجُ مِنِّيْ। এমনি প্রত্যেকেই কিছু কিছু বলছিলেন, অবশেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, اَلْاَرُزُّ مِنِّيْ অর্থ: আমাকে ভাত দিন।”
সুতরাং দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো ভাত একটি সুন্নতী খাবার।
মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বেশুমার শুকরিয়া যে আমাদের বাঙালী জাতির জাতীয় খাবার হচ্ছে ভাত। আমাদের বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালী। মাছ খাওয়াও যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত সেভাবে ভাত খাওয়াও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক। অর্থাৎ আমরা ৩ বেলা একটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের জীবন অতিবাহিত করে আসছি। সুবহানাল্লাহ।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভাত খেয়েছেন। শুধুমাত্র ভাত খেয়েছেন তাই নয় বরং ভাতের ফযিলতও বর্ণনা করেছেন।
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ইউছূফ ছলেহ আশ শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯৪২ হিজরী) উনার বিখ্যাত কিতাব “সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সীরাতে খাইরুল ইবাদ” গ্রন্থের ১২তম খণ্ডের ২২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الشُّعَبِ وَأَبُـوْ نُـعَيْمٍ فِي الطِّبِّ وَعَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهٗ قَالَ: سَيِّدُ الْاِدَامِ فِـي الدُّنْيـَا وَالاٰخِرَةِ اَللَّحْمُ وَعَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَيِّدُ طَعَامِ الدُّنْيـَا وَالْاٰخِرَةِ اَللَّحْمُ ثُـمَّ الْـأَرُزُّ
অর্থ : ইমাম হযরত বায়হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শুয়াবুল ঈমান কিতাবে এবং ইমাম হযরত আবু নুয়াইম আসবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবুত ত্বীবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত এরপর ভাত।”
সুতরাং দেখা গেলো গোশতের পর ভাতের ফযীলতও বর্ণিত আছে। এবং এই ফযীলত মুবারক আরো বিস্তারিতভাবে বিখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুস সালাম ছাফুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৮৯৪ হিজরী) তিনি উনার ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবের ১ম খণ্ড ২৮৪ পৃষ্ঠা বর্ণনা করেছেন,
رَأَيْتُ فِـيْ كِتَابِ شَرِعَةِ الْاِسْلَامِ يَسْتَحِبُّ اَكْثَارُ الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ أَكْلِ الْـأَرُزِّ لِـأَنَّهٗ كَانَ جَوْهَرًا فِـي الْـجَنَّةِ أَوْدَعَ اللهُ فِيْهِ نُـوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَمَّا خَرَجَ مِنْهُ النُّـوْرُ تَـفَتَّتْ فَصَارَ حَبًّا
অর্থ : “আমি শারিয়াতুল ইসলাম নামক কিতাবে দেখেছি যে, মুস্তাহাব হচ্ছে ভাত খাওয়ার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারকে বেশি পরিমাণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা। কেননা, এই ভাত বা ধান পবিত্র জান্নাতের মধ্যে মুক্তা আকারে ছিল। অতপর খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেখানে স্থাপন করলেন। অতপর সেখান থেকে সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক যখন বেরিয়ে আসলেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক অন্যত্র সরিয়ে আনলেন, তখন মুক্তা কণায় কণায় ছড়িয়ে পড়লো এবং তা শস্য দানায় পরিণত হলো।”
উক্ত কিতাবের ১ম খণ্ড ২৮৪ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণনা আছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَـامُ عَنِ النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ شَيْءٍ أَخْرَجَتْهُ الْـأَرْضُ دَاءً وَشِفَاءً إِلَّـا الْـأَرُزَّ فَإِنَّهٗ شِفَاءٌ لَا دَاءٌ فِيْهِ
অর্থ: হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, পৃথিবীর যমীনে যা কিছু উৎপন্ন হয় তার মধ্যে রোগও আছে সুস্থতাও আছে, একমাত্র ভাত ব্যতীত। ভাতের মধ্যে শুধুই শিফা রয়েছে কোন রোগ নেই।
উক্ত কিতাবের ১ম খণ্ড ২৮৪ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণনা আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَـامُ فِـي قَوْلِهٖ تَعـَـالٰى لِيَـنْظُرْ اَيُّهَا اَزْكٰى طَعَامًا أَنَّهُ الْأَرُزُّ
অর্থ: হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সে (আছহাবে কাহাফের একজন) যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯) আর তা ছিলো ভাত।”
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
فِـيْ كِتَابِ الْبَـرَكَةِ عَنِ النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُوا الْـأَرُزَّ فَإِنَّهٗ بَـرَكَةٌ
‘কিতাবুল বারাকাতে’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তোমরা ভাত খাও নিশ্চয়ই এতে বরকত রয়েছে। (নুজহাতুল মাজালিস ১ম খণ্ড ২৮৪ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯০২ হিজরী) উনার ‘আল মাকাসিদুল হাসানা’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
وَلَهٗ شَوَاهِدٌ، مِّنْهَا عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَـامُ رَفَعَهٗ بِلَفْظٍ : سَيِّدُ طَعَامِ الدُّنْـيَا اَللَّحْمُ ، ثُـمَّ الْأَرُزُّ، أَخْرَجَهٗ أَبُوْ نُـعَيْمٍ فِـي الطِّبِّ النَّـبَوِّيِّ، وَعَنْ صُهَيْبٍ بِلَفْظٍ : سَيِّدُ الطَّعَامِ فِـي الدَّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ اَللَّحْمُ، ثُمَّ الْأَرُزُّ، وَسَيِّدُ الشَّرَابِ فِي الدُّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ اَلْـمَاءُ، أَخْرَجَهُ الدَّيْلَمِيُّ مِنْ جِهَةِ الْـحِكَمِ، ثُـمَّ مِنْ طَرِيْقِ هَشِيْمٍ عَنْ عَبْدِ الْـحُمَيْدِ بْنِ صَيْفِي بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ بِهٖ مَرْفُـوْعًا
অর্থ : এর শাওয়াহেদ বা সমর্থিত আরেকটি বর্ণনা যা হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ধিত শব্দে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত, অতঃপর ভাত। এটা ইমাম আবু ন্য়ুাইম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ত্বীব্বে নববী কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হযরত ছুহাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই শব্দে বর্ণনা এসেছে, দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত এরপর ভাত। দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ পানীয় হচ্ছে পানি। ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা হিকামের ছূরতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তা হিশামের সনদে তিনি আব্দুল হুমাইদ ইবনে ছাইফি ইবনে ছুহাইব থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে তিনি উনার দাদা থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন। (মাকাসিদুল হাসানা ২৮৬ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বাইরুত- লেবানন)
বাতিল ফিরকার লোক ভাত খাওয়া সুন্নত এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ আছে কিনা প্রশ্ন করে। আমরা দেখেছি, ‘মাকাসিদুল হাসানা’ কিতাবে ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও হাফিজে হাদীছ আল্লামা আবু নুয়াইম আছবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তীব্বে নববী’ কিতাবে পূর্ণ মারফূ সনদে ভাত খাওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বংশ পরম্পরায় ৭ জন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের মাধ্যমে বর্ণিত। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-
ثَـنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُـحَمَّدِ بْنُ عُثْمَانَ، ثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنُ عَامِرِ بْنُ الطَّائِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِيْ أَبِيْ، قَالَ: حَدَّثَنِيْ عليُّ بْنُ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنْ أَبِيْهِ مُوْسَى بْنِ جَعْفَرَ، عَنْ أَبِيْهِ جَعْفَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيْهِ مُحَمَّدِ بْنِ عليٍّ، عَنْ أَبِيْهِ علِيِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ، عَنْ أَبِيْهِ الْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنْ أَبِيْهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ رِضْوَانُ اللهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِيْنَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: سَيِّدُ طَعَامِ الدُّنْـيَا اَللَّحْمُ ثُمَّ الْأَرُزُّ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ ইবনে উছমান তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে আমের ইবনে ত্বয়ী থেকে তিনি উনার পিতা থেকে তিনি হযরত সাইয়্যিদুনা আলী ইবনে মুসা আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত সাইয়্যিদুনা মুসা ইবনে জাফর আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত সাইয়্যিদুনা জাফর ইবনে মুহম্মদ আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ইবনে আলী আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত সাইয়্যিদুনা আলী ইবনে হুসাইন আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার পিতা হযরত সাইয়্যিদুনা হুসাইন ইবনে আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি হযরত সাইয়্যিদুনা আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত এরপর ভাত। (তিব্বুন নববী ৭৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৮৪৯, লেখক: হাফিজুল হাদীছ আবু নুয়াইম আছবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪৩০ হিজরী); প্রকাশনা: দারু ইবনে হাজম, বাইরূত- লেবানন)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে ভিত্তি করে ভাত খাওয়ার ফযিলত সম্পর্কে আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও ইমাম মুজতাহিদগণ আলোচনা করেছেন। হাফিজুল হাদীছ হযরত আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইবনে আলী ইবনে আছিম ইবনে যাজান আছবাহানী মাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২৮১ হিজরী) তিনি উনার কিতাবে ভাত খাওয়ার ফযীলত বর্ণনা করেন-
حَدَّثَـنَا عُتَابُ بْنُ مُـحَمّدٍ اَلرَّازِيْ، ثَـنَا مُـحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ السِّرَاجُ، ثَـنَا قُـتَـيْـبَةُ قَالَ قَالَ لِيْ شَقِيْقُ بْنُ إِبْـرَاهِيْمَ الْبَـلْخِيُّ عَلَيْكَ بِأَكْلِ الْأَرُزِّ فَإِنَّهٗ يـَمْرِئُ
অর্থ: হযরত উতাব উবনে মুহম্মদ রাযী তিনি মুহম্মদ ইবনু ইসহাক আসসিরাজ থেকে তিনি হযরত কুতাইবা থেকে, তিনি বলেন, হযরত শাকীক ইবনে ইব্রাহীম বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে বলেন, ভাত খাওয়া আবশ্যক করে নিন, নিশ্চয়ই তা খুবই স্বাস্থকর। (মু’জামু ইবনুল মাকরী ২য় খণ্ড ২৩২ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৭৭১; প্রকাশনা: মাকতাবাতুর রূশদ, রিয়াদ)
ভাত সংশ্লিষ্ট পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ ও বিভিন্ন দলীল আদিল্লা থেকে যে বিষয় সমূহ প্রমাণিত হলো,
১) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে ভাত খেয়েছেন।
২) হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুয়ার ফলে আসমান থেকে যে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল হয়েছিলো সেখানেও ভাত ছিলো।
৩) আছহাবে কাহাফের জন্য যে খাবার আনতে বলা হয়েছিলো সেখানেও ভাত ছিলো।
৪) হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ভাত খেয়েছেন এবং তা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক বলে প্রচার করেছেন।
৫) দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার গোশত এরপরেই ভাত।
৬) ভাতের মধ্যে কোন রোগ নেই বরং শিফা রয়েছে।
৭) ভাতের মধ্যে বরকত রয়েছে।
৮) ভাত খাওয়ার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব। সুবহানাল্লাহ!
বিস্তারিত দলীল আদিল্লার মাধ্যমে প্রমাণ হলো ভাত একটি সুন্নতী খাবার। কাজেই, ভাত যখন আমরা খাবো, তখন অবশ্যই পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার নিয়ত করে খাবো। তাহলে ইহকাল ও পরকালে চূড়ান্ত কামিয়াবী হাছিল করা সহজ ও সম্ভব হবে।
বেশুমার শুকরিয়া খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দয়া করে দুনিয়াবাসীকে প্রতিটি দুর্লভ পবিত্র সুন্নতী বিষয় সমূহের পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন, যাতে সৃষ্টিকূলের সকলেই হাক্কীকী কামিয়াবী হাছিল করতে পারে এবং হাক্কীকী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে পারে। সুবহানাল্লাহ!
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূরুদ্দীন।