মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّـهَا النَّاسُ كُلُوْا مِـمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّــبًا
অর্থ: হে মানুষেরা তোমরা হালাল ও পবিত্র খাবারসমূহ খাও। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন-
يَـا أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا كُلُوْا مِنْ طَيِّــبَاتِ مَا رَزَقْـنَاكُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের যা রিযিক হিসাবে দেয়া হয়েছে সেসব পবিত্র খাবার সমূহ গ্রহণ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭২)
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত পবিত্র ও সুন্নতী খাবার হচ্ছে ‘ভাত’। আমরা বাঙালী জাতী জন্মের পর থেকে ভাত খেয়ে আসছি। কিন্তু আমরা হয়তো জানিই না ভাত এমন একটা খাবার যা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে খেয়েছেন এবং ভাত খাওয়ার ফযিলত বর্ণনা করেছেন। আরবীতে رُزٌّ (রুয্যু) শব্দের অর্থ হচ্ছে ভাত, চাল। বিভিন্ন আরবী বাংলা অভিধানে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- ‘আল মুনীর’ ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, رُزّ – أرُزّ : চাউল, ধান, ভাত। ‘আল মুনীরে’ ৩৬১ পৃষ্ঠায় আরো লিখা আছে, أرْز ، أرُزّ ، رُزّ : চাউল। বিখ্যাত লুগাত ‘কামুসুল জাদীদ’ এর ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, أَرُزّ : চাউল, চাল। ‘কামুসুল জাদীদ’ এর ৪৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, رُزّ : চাউল, ভাত, পোলাও। অনেক পরিচিত একটি লুগাত ‘আল মুজামুল ওয়াফী’ ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, أَرُزّ ، أَرْز : চাউল, চাল, ধান, ভাত। ‘আল মুজামুল ওয়াফী’ ৫০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, رُزّ : চাউল, ধান, ভাত, পোলাও, ৎরপব.
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘আরবী বাংলা অভিধান’ ১ম খ- ১২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, أَرُزٌّ : ধান, ধান গাছ, চাল, ভাত। ‘আরবী বাংলা অভিধান’ ১ম খ- ১০২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, رُزٌّ : চাউল, ভাত। ‘মিছবাহুল লুগাতের’ ৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, الأَرُزُ و الارُزُ و الأرُزُّ و الرُّزُّ : ধান গাছ, ধান, চাউল।
এ শব্দের ব্যবহার ফিক্বহ বিশেষজ্ঞ বা মাযহাব উনার ইমামগণও করেছেন। শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وَيَـجْزِئُ فِـيْ كَفَّارَةِ الْيَمِيْـنِ مُدٌّ بِـمُدِّ النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حِنْطَةٍ، وَإِنْ كَانَ أَهْلُ بَلَدٍ يُقْتَاتُوْنَ الذُّرَّةُ أَوِ الْأَرُزَّ ، أَوِ التَّمَرَ أَوِ الزَّبِيْبَ أُجْزًأ مِنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِّنْ ذَا مُدٍّ
অর্থ: এক মুদ দ্বারা কসমের কাফফারা দেয়া জায়িয রয়েছে। সেই মুদ ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে পরিমাণ মুদের কথা বলেছেন সেটা। আর যেসব শহরবাসীরা জীবিকা নির্বাহ করে যেসব শস্য দ্বারা যেমন, ভূট্টা, চাল, খেজুর, কিছমিছ দ্বারা তাদের প্রতিটির এক মুদ যথেষ্ট হবে। (মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার-১৪/১৮১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুয়ার প্রেক্ষিতে যখন আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন সেই খাঞ্চার মধ্যে اُرْزً ভাতও ছিলো। সুবহানাল্লাহ। তিনি দোয়া করেছিলেন-
اللّٰهُمَّ رَبَّـنَا أَنزِلْ عَلَيْـنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّأَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ
অর্থ: হে মহান রব আল্লাহ পাক! আপনি আসমান থেকে আমাদের জন্য খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন যেন সেই দিনটা আমাদের পূর্ববর্তী পরবর্তী সকলের জন্য ঈদের দিন হয় এবং আপনার তরফ থেকে সেটা একটা নিদর্শন হবে। (পবিত্র সূরা মা’য়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়-
أَنزِلْ عَلَيْـنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ قَالَ ……… اِنَّهٗ كَانَ خُبْـزًا وَاُرْزً
অর্থ : আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন…. সেখানে রুটি ও ভাত ছিলো। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম ৪/১২৪৬)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসিরে বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে ইবনে ‘আবি হাতিমে’ সনদসহ একটি বর্ণনা উল্লেখ আছে-
……. عَنْ عِكْرِمَةَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَهُ: أَنَّ الْـخُبْزَ الَّذِيْ أُنْزِلَ مَعَ الْمَائِدَةِ كَانَ مِنْ أُرْزٍ
অর্থ : …….হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, দস্তরখানায় যে রুটি নাযিল হয়েছিলো তা ছিলো চালের রুটি। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম ৪/১২৪৬: হাদীছ শরীফ ৭০২৮)
সূতরাং বোঝা গেলো মহান আল্লাহ পাক আসমান থেকে যে খাবার পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে চালের রুটি, ভাতও ছিলো। رُزٌّ (রুয্যু) শব্দের অর্থ হচ্ছে ভাত। এই ভাত স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে গ্রহণ করেছেন। (চলবে)
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূরুদ্দীন।
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১