গণতন্ত্রের পাদপীঠ বলে কথিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কোনো রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। এতে সবার জন্য ধর্ম নির্বাচনের বা সব ধর্মের সমান স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রের চটকদার কথা, আমেরিকান সংবিধানে আক্ষরিকভাবে ঠিকই লেখা রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটা কি তা ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে হিলারী এবং ওবামার মনোনয়ন যুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে।
কেবলমাত্র বরাক ওবামার মধ নামে হোসেন থাকায় শুধু আমাদের দেশের অজ্ঞ ও হুজুগে মাতা ধর্মব্যবসায়ীরা নয় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরো কিছুসংখ্যক মানুষ দৃশ্যত মনে করে, (মার্কিন নির্বাচনে) ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বারাক হোসেন ওবামা একজন মুসলিম। কয়লা খনির রাজ্য ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ‘প্রাইমারি’র প্রাক্কালে লস এঞ্জেলস টাইমসের এক ভীষণ বিরক্তিকর রিপোর্টে ভোটারদের এ রকম মনোভাব উল্লেখ করা হয়েছে- ‘সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমাদের কোনো মুসলিমের প্রয়োজন নেই।’ বেশ কিছু মার্কিনির মনোভাব এমন যে, ‘হোসেইন’ শব্দটি মুসলিম হওয়ার আলামত যা তার প্রার্থীতাকে অবৈধ করে দেয়। অর্থাৎ কথিত গণতন্ত্রের মোড়ল আমেরিকার কথিত গণতন্ত্রে, আমেরিকার সংবিধানে ধর্মীয় সাম্য প্রচার করা হলেও কার্যতঃ যে তারা কতটুকু ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী তা- “ওবামা মুসলমান হলে আমেরিকায় তার প্রার্থীতাই অবৈধ”- মার্কিনীদের এ মনোভাব পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত করে।
পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোও নারী স্বাধীনতা নামে অরাজকতা চাপিয়ে দেয়ার কথিত গণতন্ত্রের মোড়ল আমেরিকায় নারী স্বাধীনতা যে কেবলই শ্লোগান সর্বস্ব তা বারাক ওমাবার কাছে বারবার হিলারির নাস্তানাবুদ হওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়।
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, জনপ্রিয় ভোট ছাড়াও সুপার ডেলিগেট সমর্থনের দিক থেকেও হিলারি ক্লিনটনকে ছাড়িয়ে গেছেন বারাক ওবামা।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষ ও বিভক্তির রাজনীতির অপরিণামদর্শীতার জন্য হিলারি ক্লিনটনের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, বুশের আট বছরের জঞ্জাল সাফ করতে যখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন তখন বর্ণ ও বিভক্তির রাজনীতিকে অবলম্বন করে এগোতে চাচ্ছেন হিলারি। এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক টাইমস।
এদিকে নিজের পরাজয় জেনে হিলারিও খেলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মতই সুবিধা আদায়ের দরকষাকষির খেলা। অর্থাৎ তথাকথিত আদর্শবোধের ও জনকল্যাণের নিবেদিত রাজনীতি থেকে সরে এসে গণতন্ত্রের অনুসারী রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলই এখন হিলারির চরিত্রেও বড় খোলামেলাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
আমেরিকানদের ৫৮ শতাংশ এখন বলছেন, হিলারি সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য নন। দুই বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণাপূর্ব এক জরিপে হিলারি ১৬ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন। ‘এবিসি’ জানায়, ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি, ইরাক যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে হিলারির সদিচ্ছার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, হিলারি তার ক্যাম্পেইনে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার ঋণ করেছেন নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে। মনে করা হচ্ছে এটা ফেরত পাওয়ার কৌশল হিসেবেই তিনি ওবামার বিরুদ্ধে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। এই অবস্থায় ওবামা শিবির থেকে ঋণ লাঘবে সাহায্যের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
এদিকে হিলারি ক্লিনটনের ব্যাপারে বারাক ওমাবা এখন বেশ নমনীয়। এমনকি প্রচারণা ঋণ শোধতেও হিলারিকে সহায়তা করতে চান তিনি।
অর্থাৎ বাংলাদেশের নির্বাচনে হঠাৎ টাকাওয়ালা প্রার্থী যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নেতাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এক্ষেত্রে ওবামা ও হিলারিকে টাকা দিয়ে নমনীয় করার গণতান্ত্রিক কৌশলের চর্চা করছেন।
নির্বাচন টাকার খেলা এখন শুধু বাংলাদেশেই নয় খোদ আমেরিকায়ও একই হাওয়া বইছে। আবার শুধু টাকা খাওয়ার আশ্বাসেই পরিতৃপ্ত নয় হিলারি।
এবিসি টেলিভিশন ভাষ্যকার জর্জ স্টেফনাপোলিস বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার রানিংমেট হতে এখন দরকষাকষির কৌশল হিসেবে হিলারি প্রচারণা থেকে সরছেন না। ওবামা কর্তৃক ভাইস প্রেসিডেন্ট করার নিশ্চয়তা পেলে তিনি হয়তো সরে পথ খোলাসা করে দেবেন ওমাবাকে।
স্পষ্ট প্রতিভাত হচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে আসলে গণমানুষের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয় না আদৌ। বরং বেশ পরিষ্কারভাবেই সেখানে অনুশীলন হয় ক্ষমতাধরদের অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার লড়াইয়ের কোন্দল ও কৌশল। আর জনগণ হয় তাদের বলির পাঠা মাত্র। তবে গণতন্ত্রের মোড়ল দাবীদার মার্কির্নীদের নির্বাচনে কে কত বড় ইসলাম বিদ্বেষী ও ইসরাইল দরদী সেটা প্রমাণই যে ওদের নির্বাচনী লড়াইয়ের বড় কৌশল; শুধু হিলারির মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য ও আগ্রাসী মনোভাবই নয় যুগপৎভাবে ওবামার বক্তব্যেও তা আরো জোরদারভাবে প্রতিভাত করে।
ইসরাইল প্রসঙ্গে মার্কিন নীতির ব্যত্যয় ঘটাতে চান না ওবামা। ওবামা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সম্পর্কে অগ্রগতি ঘটাতে আগ্রহী হলেও মধ্যপ্রাচ্যে তার মূল অভীষ্টই হচ্ছে ইসরাইলের নিরাপত্তা । তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরাইলকে দূরে ঠেলে দেবে না। এ ছাড়াও ন্যাটোকে জোরদার, এশিয়ার সাথে আরো সরাসরি ও প্রাণবন্ত সম্পর্ক স্থাপন পরামণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার পক্ষে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন তিনি।
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা
রাজাকারদের গডফাদার গোআযমের চুরি করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তত্ত্ব ও মইত্যা রাজাকারের গ্রেফতার প্রসঙ্গঃ