সকল প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।
ফেলানীর রক্ত এখনও শুকায়নি। কাঁটাতারের বেড়া দিন দিন জগদ্দল পাথরের মতো গেড়ে বসছে। বিএসএফ-এর হত্যাকা- গুণে শেষ করা যাচ্ছে না। বিদেশী ভারতের এহেন বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্বদেশী হিন্দুদের অবিশ্বাস এখনও দূর হচ্ছে না। আজও উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় ব্যবসায়ী হিন্দুরা এদেশে বাড়ি করছে না। আজও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এদেশের পিতল, কাঁসা বিভিন্ন কায়দায় দিব্যি ভারতে পাচার হচ্ছে। ঢাবির অধ্যাপক পর্যন্ত রিটায়ার্ড করে ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করছে। এদেশে দুহাতে টাকা কামাই করে ভারতে টাকা পাচারসহ বাড়ি গড়ে তুলছে অনেক হিন্দু। অপরদিকে বৈধপথে ভারতের সাথে এদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশকে কেবল শুষে শুষে খাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখী বাঁধ, ট্রানজিট, তিতাস নদীতে বাঁধ, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ধ্বংস করে একচেটিয়া বেনিফেসিয়ারী ভারত। অর্থনৈতিকভাবে ভারতের শোষণ জালেম পাকীদেরও হার মানিয়েছে। কিন্তু ভারতের এই জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে সরকার সচেতন ও সক্রিয় নয়। জনমত সুসংগঠিত নয়।
উল্লেখ্য, ভারতের মতো বাংলাদেশের জন্য একটি চিরস্থায়ী শত্রু সংস্থা হলো বিশ্বব্যাংক। এই দু’শত্রুর কথা যখন মিলে যায় তখন বুঝতে অসুবিধা থাকে না যে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য গভীর ক্ষতিকারক বিষয়।
অনেকদিন ধরে ঋণ ও অনুদানের ক্ষেত্রে একক মুদ্রা চালু করতে চাপ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বিষয়টি ২০১৪ সালের মে মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা বেধে দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু একক মুদ্রায় লেনদেন করলে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
কিন্তু তার পরেও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে একক মুদ্রা ব্যবহারে ভারতীয় ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নয়াদিল্লিতে সফররত অর্থমন্ত্রী এক মতবিনিময় সভায় জানায় যে, সার্কের ৮ দেশে না হলেও অন্তত ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যে একক মুদ্রা ব্যবহার সম্ভব।
সার্কভুক্ত সকল দেশে একক মুদ্রা চালু না করে শুধু বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন মুদ্রা চালু করা হবে সরকারের হঠকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ৪২ বছর পর মানুষ কখনই হুট করে টাকা ছেড়ে রূপিকে গ্রহণ করতে চাইবে না।
সীমান্ত উন্মুক্ত না করে, সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা বন্ধ না করে, নদী বিষয় ইস্যুগুলো নিষ্পত্তি না করে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য যেকোন সুবিধাজনক নীতি ভারত গ্রহণ করবেই।
তারপরেও ভারতীয় অশ্লীল সংস্কৃতি অবাধে গ্রহণ করে আমরা বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ভারতকে দিই, শুধু পে-চ্যানেলগুলোর জন্য।
স্বাধীনতাত্তোর ভারত আমাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে শুধু লাভবানই হয়েছে, সে কথা সর্বজনবিদিত। সুতরাং অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নিলে, বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে, শক্তিশালী হবে ভারত বিরোধী রাজনীতি। প্রসঙ্গত একক মুদ্রা যে সুফলদায়ক নয় বর্তমানে সে দৃষ্টান্ত উন্মোচিত হয়েছে। খোদ ইউরো নিয়েই একথা বলা যায়।
জার্মানি, ফ্রান্স স্পেন, ইতালিসহ ২০০০ সালে ১২টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো। পরে ইউরোপের আরো ৫টি দেশ ইউরোর অংশীদার হয়।
২০০০ সালে ইউরোজোন গঠিত পর ২০০৪ সালে গ্রিসে অলিম্পিক আয়োজন জন্য কাজ শুরু করে। এই বিশাল অংকের টাকার কাজে গ্রিসের টাকা জোগাড় করতে ইউরোজোনের তহবিল ও আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অনেক টাকা ঋণ করে। এই ঋণ গ্রিসের জন্য পরে কাল হয়ে দাঁড়ায়। এই ঋণ ও দেশটির বাজেটের ঘাটতি পূরণে ইউরোজোনের কাছ থেকে আরো ঋণ করে। ঋণের বোঝা চাপতে চাপতে তা পাহাড় সমান হয়ে পড়ে। ঋণ বেশি করার কারণে মুদ্রা বা টাকার মান নেমে যায়। মানে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়। একই সাথে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চরম সঙ্কট শুরু হয়ে পড়ে।
এভাবে চলতে থাকায় গিসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে এগিয়ে গেল। ঋণের টাকার পরিমাণ এতই দাঁড়ালো যে, এই ঋণ ফেরত দেয়ার মতো অবস্থা হারালো গ্রিস। গ্রিসকে বাঁচাতে ইউরোজোনের অন্যান্য দেশগুলো টাকা দিল ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের তহবিলে। ওই টাকা দিয়ে গ্রিসকে সাময়িক রক্ষা করা গেলেও পরবর্তীতে দেশটি ঋণের টাকা ফেরেত দিতে ব্যর্থ হলো।
ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের টাকাতো ইউরোজোনের সবার ছিল। আস্তে আস্তে ইউরোজোনের মাঝারি আকারের অর্থনীতির দেশগুলো একটু একটু করে আর্থিক সঙ্কটে পড়তে থাকে। কারণ ইউরোজোনের অন্যান্য দেশগুলো টাকা ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের তহবিল থেকে ফেরত পেল না। এ কারণে প্রত্যেক দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের রির্জাভ টাকার সঙ্কটে পড়ে। এই সঙ্কট কাটাতে কাটাতে হিমসিম খেতে হয়েছে ইউরোজোনের দেশগুলোর।
আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরো মুদ্রা প্রকাশের কয়েক মাস আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল একক মুদ্রার ফলে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ইউরোপের কয়েকটি দেশ ব্যাপক বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হবে। দিনে দিনে ওই দেশগুলোর অর্থনীতি সঙ্কুচিত হবে এবং এক পর্যায় বিপর্যস্ত হবে। আর যখন ইউরোজোনের কোন দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে তখন ওই দেশ তার সার্বভৌমত্ব হারানোর ঝুঁকিতে থাকবে।
বর্তমানে ওই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হতে চলছে। ২০০৯ সালের শেষ দিকে গ্রিসের দেউলিয়াত্বের মধ্য দিয়ে ইউরো ধসের যাত্রা শুরু হয়েছে। গ্রিসের সীমানা অতিক্রম করে ওই ধস ধেয়ে আসে আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই বলার পরও দেশটি তখন বেইল আউট প্যাকেজ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। আয়ারল্যান্ডের শঙ্কা কাটতে না কাটতেই পর্তুগালের অর্থনীতিতেও একই দশা। আর পর্তুগালের উদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণের আগেই অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে স্পেন। স্পেনের অবস্থা পরিষ্কার হওয়ার আগেই ওই ফাঁদে পা রাখে ইতালি।
কাজেই বর্তমান বিশ্বের এই জ্বলন্ত উদাহরণ থেকেও বাংলাদেশের শিক্ষা নেয়া জরুরী। বাংলাদেশ-ভারত একক মুদ্রা কোনো অবস্থায়ই সমর্থনযোগ্য নয়। বিশেষ করে ভারতের মতো শোষক এবং হিন্দুদের মতো পাচারকারী জনগোষ্ঠী থাকায় তা কোনো অবস্থায় কল্পনাই করা যায় না। এতে করে বাংলাদেশ শূন্য হতে হতে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আশরাফুল মাহবূবে রব্বানী
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১