বিদেশী বিনিয়োগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হচ্ছে অর্থপাচার। ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার করে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। গণতন্ত্রের নামে বর্তমান দুর্নীতি নির্ভর শাসনকাঠামোর সুযোগে অর্থপাচার চরমভাবে বেড়েছে। গরিব জনগণ তিলে তিলে নিষ্পেষিত হচ্ছে। জনগণকে গণতন্ত্র পরিহার করে খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ গ্রহণে অগ্রণী হতে হবে।

সংখ্যা: ২৪৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

বৈদেশিক লেনদেনের ফাঁকফোকর দিয়ে দেশ থেকে অর্থপাচারের হিড়িক পড়েছে। রফতানির পর মূল্য প্রত্যাবাসিত না হওয়া, পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ইট, বালু তথা ফাঁকা কন্টেইনার আনা, অনলাইনে অবৈধ ডলার বাণিজ্য ও চিরাচরিত হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। দেশের কিছু ব্যাংক ও মানিচেঞ্জার কোম্পানি কমিশন খেয়ে কালো টাকার মালিকদের অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দিতে সহযোগিতা করছে। এরই মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য উদারীকরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপিয়ে দেয়া রোডম্যাপের সুযোগ নিচ্ছে দেশের অসৎ ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, প্রতিবছর গড়ে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। দেশের অর্থনীতিতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে উচ্চ ব্যবধানও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই দুইয়ের পার্থক্য দেশ থেকে পুঁজি পাচারকে নির্দেশ করে। তার উপর ভিত্তি করে দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ বের করা হয়েছে।

দেশে-বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাতে কয়েক বছর ধরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আনতে সমর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বিনিয়োগ যে হারে আসছে, তার চেয়ে বেশি হারে অর্থপাচার হচ্ছে দেশ থেকে।

গত এক দশকে এফডিআইয়ের দেড়গুণের বেশি অর্থপাচার হয়েছে দেশ থেকে। আর স্বাধীনতার পর থেকে হিসাব করলে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ এফডিআইয়ের তিনগুণ।

সম্প্রতি সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক পর্যটন মেলায় মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম প্রকল্পের ফরম বিক্রি করা হয়। এর আগে হোটেল ওয়েস্টিনে দুবাইভিত্তিক দামাক প্রপার্টিজ তাদের আবাসন প্রকল্প নিয়ে মেলার আয়োজন করে। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এজেন্টদের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং, দুবাই, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এ অর্থ।

মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা নেয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এক দশকে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশী এ সুযোগ নিয়েছে। এছাড়া ব্যাংককের প্রপার্টি মার্কেটের বড় ক্রেতাও বাংলাদেশীরা। এর মাধ্যমে দেশ থেকে চলে গেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশে এফডিআই এসেছে ৮২৪ কোটি ডলার। আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) হিসাবে ওই সময়ে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ দেশে আসা এফডিআইয়ের তুলনায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৬০ শতাংশ।

এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে চার দশকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্বাধীনতার পর চার দশকে দেশে মোট এফডিআই এসেছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করলেও দেশের বাইরে অর্থ পাচার রোধে তেমন ভূমিকা নেই সংস্থাটির।

জিএফআইয়ের ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোস ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৩-১২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন বা মিস ইনভয়েসিং, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়। আলোচ্য এক দশকে ব্যালান্স অব পেমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত রফতানির ক্ষেত্রে এ মিস ইনভয়েসিং হয়। এর মধ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৬৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে বলে সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে। এবার পাওয়া গেল অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ার চিত্র। এ দুটি আসলে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া সম্প্রতি আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারিও বেড়েছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা লোকজনই সাধারণত দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদিতে জড়িত থাকে। নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের আগে এগুলো সরিয়ে নেয়া হয়, যার চিত্র জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে দেশে বিদেশী বিনিয়োগপ্রবাহ ছিল ৩৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, একই সময়ে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থপ্রবাহ ছিল ৮৩ কোটি ডলার। এর পর নিয়মিতই অর্থপাচার বাড়তে থাকে। এর পাঁচ বছর পর ২০০৮ সালে বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে যায়। যদিও এর দুই বছর আগে ২০০৫ সালে বাইরে যাওয়া অর্থপ্রবাহ ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

আর ২০০৬ সালেই অবৈধ পাচার ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে, সে বছর অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার পরিমাণ ছিল ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০০৭ সালে বেরিয়ে যাওয়া অর্থপ্রবাহ কমলেও এর পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০০৮ সালে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আশঙ্কা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারই এর মূল কারণ।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে যে পরিমাণ রেমিটেন্স আসে তার প্রায় ৪০ শতাংশই হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে ওই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

দেশ থেকে বর্তমানে মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ব্যাপকভাবে টাকা পাচার হয়েছে। ২০১৩ সালে দেশে তেমন একটা বিনিয়োগ হয়নি। শিল্প উৎপাদন বাড়েনি, তারপরও শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি বেড়েছে। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। টাকা পাচার রোধ করা না গেলে দেশের উন্নয়ন হবে না। বরং সমাজে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে; যা দেশকে বড় ধরনের সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে। অর্থপাচারের ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে দেশের বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়। এই প্রবণতার ফলে তুলনামূলকভাবে সরকার দরিদ্র হয়ে যায়। সরকারের চেয়ে ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা সমাজে বড় ধরনের ভারসাম্যহীতার সৃষ্টি করে। অর্থপাচারের ফলে দারিদ্র্যবিমোচন বা জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে সরকারের অবদান কমে যায়। জনগণ দরিদ্রতায় ভোগে। দেশী বিনিয়োগ কমে যায়। কর্মসংস্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেকারের সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে যায়। পাচার হওয়ার কারণে দেশী বিনিয়োগ কমে যায়। একই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। যা দেশের শাসন ব্যবস্থাকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ভেঙে পড়ে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো। ধনী আরো ধনী হয়। আর গরিবের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ে। গরিব তিলে তিলে নিষ্পেষিত হয়। এর প্রভাবে একদিকে সমাজে যেমন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যায়; অন্যদিকে চোর, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী তৈরি হয়।

অপরদিকে টাকা পাচারের ফলে সৎভাবে জীবনযাপন যারা করতে চান, তারা বেশি করে চাপের মুখে পড়েন। কেননা তারা সম্পদ গোপন করতে চান না। ফলে তাদেরকে বেশি করে কর দিতে হয়। আর যারা টাকা পাচার করে বা সম্পদ গোপন করে কালো টাকার সৃষ্টি করে তাদেরকে কর কম দিতে হয়। ফলে সমাজে সুষম কর কাঠামোও গড়ে উঠে না। এছাড়া পাচার করা অর্থ সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থপাচারের নেপথ্যে রয়েছে মূলত দুর্নীতি, অনিয়ম ও আইন প্রয়োগে শিথিলতা তথা গণতান্ত্রিক রাজনীতি তথা দলীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতা ও ক্ষমতা অপব্যবহারের ধারাবাহিকতা। গণতান্ত্রিক শাসন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা এসব খাতে প্রভাব খাটিয়ে টাকা পাচার করে। টাকা পাচার হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে, এই টাকা অর্জনও হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমেই। তাই সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে টাকা পাচার বন্ধ হবে না। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ‘দুর্নীতির মা’ ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ বা ‘গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’ পরিহার করে ‘সম্মানিত ইসলামী অনুশাসন’ বা ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ’ গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রের কুফল সম্পর্কে সবাইকে সম্যক সচেতন হতে হবে। গণতন্ত্র পরিহারে সক্রিয় হতে হবে।

-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ।

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।