ব্রিটিশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রমেশ মজুমদার (আর.সি. মজুমদার) তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছে যে-
(১) ঢাকা শহরের হিন্দু অধিবাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করতো;
(২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে এদেশীয় হিন্দু শিক্ষামন্ত্রী, ক্ষমতা পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন অনেক কমিয়ে দিয়েছিল;
(৩) এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের (গভর্নিং বডির) সদস্য হয়েও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় হিন্দুরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পিছপা হতো না।
১৯০৬ সালের বঙ্গভঙ্গ ও তদপরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে আমাদের দেশের গতানুগতিক ইতিহাসগুলোতে বর্ণিত রয়েছে যে, কলকাতার হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল। আসলে কথাটা আরেকটু খোলাসা করে বললে বলা যায়, বাংলার সমস্ত হিন্দুরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল, হোক তার জন্ম পশ্চিমবঙ্গে কিংবা এদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট কিংবা অন্য যেকোনো শহরে।
কারণ ব্রিটিশ আমল পরবর্তী সময়ে গোটা বাংলার হিন্দুদের কেন্দ্র ছিল কলকাতা। কলকাতা মূলত একটি কৃত্রিম শহর, যে শহরটি ব্রিটিশ খ্রিস্টান আর তাদের সহযোগী বঙ্গীয় হিন্দুরা মিলে কতগুলো গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল। এর কারণ হিন্দু ও খ্রিস্টানরা ক্ষমতা পেয়ে মুসলিম শাসনের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিল। এ লক্ষ্যে তারা প্রথমে ব্রিটিশ আমল পূর্ববর্তী মুসলিম আমলের মূল সমৃদ্ধ শহরসমূহ; যথা ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, চট্টগ্রাম এগুলোকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে গ্রামে পরিণত করে। এর সাথে সাথে হিন্দু আর খ্রিস্টানরা মিলে সম্পূর্ণ নতুন করে নিজেদের একটি কৃত্রিম শহর ‘কলকাতা’ তৈরি করে।
মুসলিম বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ডে একাত্মতা পোষণ করেছিল গোটা বাংলার হিন্দুরাই। ফলশ্রুতিতে যখন ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দিলো; তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে জন্মগ্রহণকারী হিন্দুরা প্রত্যেকে ঘোষণা দিলো- তারা বঙ্গভঙ্গ চায় না, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চায় না। মোটকথা, হিন্দুরা তাদের জন্মস্থানের উন্নতি চায় না।
বাংলাদেশ ও ঢাকা শহরের স্থানীয় হিন্দুরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কতোটা বিরোধী ছিল, তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কর্মরত রমেশ মজুমদারের (আর.সি. মজুমদার নামে পরিচিত) ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’ নামক আত্মজীবনীতে।
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া দেশদ্রোহী হিন্দুদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার একটি মূল কারণ ছিল, তৎকালীন সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ছিল না, তা শিক্ষাবোর্ডের দায়িত্বও পালন করতো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসের উপর ভিত্তি করেই সমগ্র বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি নির্ধারিত হতো। এমতাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে, এটি কিছুতেই দেশদ্রোহী সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা মেনে নিতে চাইছিল না। এ প্রসঙ্গে রমেশ মজুমদার তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছে-
“বড়লাট হার্ডিঞ্জ হিন্দুদের এই বলে আশ্বাস দিলো যে, তাদের এমন আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। কারণ ঢাকার যে বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার ক্ষমতা এবং অধিকার ঢাকা শহরের দশ মাইল পরিধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই সংকীর্ণ পরিধির বাইরে সমগ্র পূর্ব-বাংলা (অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ) পূর্বের মতোই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে।” (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে: রমেশ মজুমদার, জেনারেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিকেশন্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশকাল ৯ ডিসেম্বর ১৯৫৯, পৃষ্ঠা ৪২)
অর্থাৎ বাংলাদেশে জন্ম নেয়া দেশদ্রোহী হিন্দুদের বিরোধিতার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জন্মলগ্নেই বিকলাঙ্গ ও ক্ষমতাহীন করে দেয়া হলো। কিন্তু তারপরও এসব দেশদ্রোহী হিন্দুরা সন্তুষ্ট হতে পারলো না; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও তারা একে ব্যর্থ করে দিতে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতো।
রমেশ মজুমদার প্রথমে ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সে-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিল। এর পেছনে মূল কারণ ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি।
এখন উপযুক্ত শিক্ষক পেতে চাইলে বেশি বেতন দেয়াটাই প্রধান শর্ত, আর উপযুক্ত শিক্ষক না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমও মানসম্মত হতে পারবে না। যার ফলে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষামন্ত্রী ক্ষমতায় বসেই হিংসাবশত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনও অনেক কমে যায়। এ প্রসঙ্গে রমেশ মজুমদার উল্লেখ করেছে-
“প্রথমেই এক দুর্দৈব ঘটলো। ১৯১৯ সনের নতুন আইন অনুসারে বাংলাদেশের শিক্ষার ভার ন্যস্ত হয় একজন এ-দেশীয় মন্ত্রীর উপর। প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হলো প্রভাসচন্দ্র মিত্র। সে মন্ত্রী হয়েই আদেশ দিলো যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে বেতনে নিযুক্ত করা হয়েছে, বাংলা সরকার তা বহন করতে অক্ষম। সুতরাং এ বেতন কমিয়ে দেয়া হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব হওয়ার পর ভারত সরকার প্রতি বছর এর জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রাখতো। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় দেখা গেল যে- এর রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকা জমেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই টাকার দাবি করা হয়। বাংলা সরকার বললো যে, বিশ্ববিদ্যালয়কে যেসব বাড়ি দেয়া হয়েছে, সে ঐ পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার বিনিময়ে। হার্টগ (পি. জে. হার্টগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর) ভারত সরকারকে এ বিষয়ে জানালো। কারণ ভারত সরকারের অনুমতি নিয়েই শিক্ষকদের বেতন স্থির করা হয়েছিল। ভারত সরকার জানালো যে, এ বিষয়ে তারা নিরুপায়। নতুন শাসনবিধি অনুসারে বাংলা সরকারকে তারা কোনো রকম আদেশ দিতে পারে না। এরপর বাংলা সরকার বললো যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতি বছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা দেয়া হবে এবং তার মধ্যেই সব খরচ চালাতে হবে। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হলো। অধ্যাপকদের বেতন ছিল ১০০০-১৮০০। সেটি কমিয়ে করা হলো ১০০০। এভাবে সকল শ্রেণীর শিক্ষকদের বেতন অনেক কমে গেল। …ইউরোপের ইতিহাসের অধ্যাপক পদে একজন ইংরেজ নিযুক্ত হবে, এমন ধারণা ছিল। অধ্যাপকের মাইনে কমে ১০০০ স্থির হওয়ায় ইংরেজ অধ্যাপক আসার আর কোনো সম্ভাবনা রইলো না। (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে, পৃষ্ঠা ৫১-৫২)
অর্থাৎ প্রথমেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন কমিয়ে দিয়ে হিন্দুরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। এতোকিছুর পরও এদেশে জন্ম নেয়া, এদেশের আলো-বাতাসে বড়ো হওয়া দেশদ্রোহী হিন্দুদের চক্রান্ত থেমে থাকেনি। ঢাকা শহরের স্থানীয় হিন্দুরা কতোটা বিদ্বেষ পোষণ করতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে, সে প্রসঙ্গে রমেশ মজুমদার তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছে-
“আশ্চর্যের বিষয় এত বড় বড় অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও ঢাকা শহরের হিন্দু অধিবাসীরা সাধারণতঃ বিশ্ববিদ্যালয়কে আদৌ ভালো চোখে দেখতো না। প্রথম থেকেই তাদের মনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খুব বিদ্বেষভাব ছিল। তার একটি কারণ যে- হিন্দুরা কোনোদিনই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করাটা পছন্দ করেনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাটাই তাদের ইচ্ছা ছিল।” (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে, পৃষ্ঠা ১১৭)
পাঠকগণ কী কখনো শুনেছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে? এই চরম নীচ পর্যায়ের কাজটিও করেছিল ঢাকা শহরে জন্ম নেয়া, এদেশের আলো-বাতাসে বড় হওয়া দেশদ্রোহী হিন্দুরাÑ
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের (গভর্নিং বডির) সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কানুন তৈরি, বাজেট পাস এবং সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্ত বিষয়ের আলোচনা এবং বিতর্ক হতো। এই কোর্টে স্থানীয় হিন্দুদের একটি বড় দল ছিল। কোর্টের মিটিংয়ে প্রায় সব বিষয়েই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতো এবং নানা প্রস্তাব আনতো।” (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে, পৃষ্ঠা ১১৮)
একটু পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষামন্ত্রী ক্ষমতা পেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের হিন্দু সদস্যরাও হিংসাবশত চেষ্টা করছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া বাসাগুলো কেড়ে নিতে। সৌভাগ্যের ব্যাপার এই যে, কোর্টের মুসলমান সভ্যদের প্রতিরোধের কারণে দেশদ্রোহী ও সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের এসব হীন অপচেষ্টা সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। এ প্রসঙ্গে রমেশ মজুমদার তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছে-
“রমনায় যেসব বড় বড় বাড়ি দখল করে আমরা শিক্ষকেরা বসবাস করছিলাম এটাতেই তাদের (হিন্দুদের) ঘোর আপত্তি ছিল। একবার তাদের বলেছিলাম যে- আমরা না এলে এ বাড়ি তো আপনাদের দিতো না। সুতরাং হিংসা করেন কেন? কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত এ মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেনি। কোর্টের অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনেক প্রস্তাব ও বক্তৃতা হতো। ভাইস চ্যান্সেলার হার্টগ সভাপতি থাকতো। আমাদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ সমর্থন করার জন্য বাকযুদ্ধে নামতে হতো। অবশ্য ভোটের সময় জয়লাভের ব্যাপারে আমরা অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলাম। কারণ মুসলমান সভ্যেরা আমাদের পক্ষেই থাকতেন। মুসলমান এবং শিক্ষক সদস্যেরা একত্রে হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি ছিলেন।” (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে, পৃষ্ঠা ৫৩)
উল্লেখ্য, বর্তমানে এদেশের আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র দোহাই দিয়ে মুশরিকদের ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। হিন্দুদেরকে বলা হচ্ছে ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি’। যারা এরূপ দাবি করছে তাদের নিকট প্রশ্ন, পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতার স্বপক্ষে যতোগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার কোনোটিই কী এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ব্যতীত সম্ভব হতো? ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কী সম্ভব হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ব্যতীত?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত এই ভূ-খ-ের কোনো স্বাধীন অস্তিত্বই সম্ভব হতো না। সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের প্রবল শত্রু এই দেশদ্রোহী মুশরিকরা কী করে ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি’ হতে পারে? রমেশ মজুমদারের বর্ণিত যেসব হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো, গভর্নিং বডির সদস্য হয়ে যেসব হিন্দুরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার পাঁয়তারা করতো তারা কেউই কলকাতার হিন্দু নয়। তারা এদেশেই জন্ম নেয়া, এদেশেরই আলো-বাতাসে বড় হওয়া দেশদ্রোহী হিন্দু সম্প্রদায়। তাদেরই বংশধর হচ্ছে এদেশের বর্তমান হিন্দু জনগোষ্ঠী, যাদেরকে আজ প্রশাসন-পুলিশ-শিক্ষাক্ষেত্রসহ সর্বক্ষেত্রে গণহারে ক্ষমতায়িত করছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।
বাপ-দাদা বংশপরম্পরায় এই সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা যে দেশদ্রোহী ও ভারতের দালাল, তা প্রমাণিত ঐতিহাসিক সত্য। কথিত ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র ফাঁপা বুলি দিয়ে এই মহাসত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। সুতরাং এই হিন্দুদেরকে যদি এদেশের আমলা-সচিব ও নীতিনির্ধারক পদগুলোতে ক্ষমতায়িত করা হয়, তাহলে তারাও তাদের বাপ-দাদাদের দেশদ্রোহিতার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এদেশের বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দেবে। এদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা যোগ্য লোকের নিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে। সরকারকে কানপড়া দিয়ে আমলা-সচিব পদে নিয়োগকৃত এসব হিন্দুরা এমনসব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে, যা হবে দেশের জন্য ক্ষতিকর ও আত্মঘাতী।
হিন্দুকরণের বদৌলতেই কিন্তু সোনালী ব্যাংক আজ ব্যর্থ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা মুসলমান পরিবারের সন্তানেরা পরিণত হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী ও আধা হিন্দু আধা নাস্তিকে। মানুষ আজ ভীত-সন্ত্রস্ত এই ভেবে যে, তাদের দেশের স্বাধীনতা থাকবে কিনা? তাদের সন্তানেরা মুসলমান থাকবে কিনা? ইতিহাসের শিক্ষা অনুযায়ী-ই সাম্প্রদায়িক হিন্দুদেরকে এদেশে ক্ষমতায়িত করাটা অসাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং তা দেশবিরোধিতা ও নির্বুদ্ধিতার নামান্তর। এই নির্বুদ্ধিতা থেকে বাঙালি মুসলমানকে জাগতে হবে, তাদেরকে বুঝতে হবে- এসব দেশদ্রোহী হিন্দুদের জায়গা এই বাংলাদেশ নয়। সুতরাং আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক হিন্দুদেরকে বিতাড়িত করাটাই হবে আমাদের এই দেশ ও জাতিকে বাঁচাবার একমাত্র উপায়।
-গোলাম মুর্শিদ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০