ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে

সংখ্যা: ২১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

ইফতারির শরবত, বেগুনী, পিঁয়াজো, আলুর চপ, খেজুর থেকে শুরু করে সাহরীর দুধ-কলা, মাছ সবকিছুতেই এখন ভেজাল। রমজানের শুরুতে ভেজালবিরোধী অভিযানের নানা উদ্যোগ-আয়োজন নিয়ে বিএসটিআইয়ের হম্বিতম্বি আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া ঘোষণায়ও ফল শূন্য।

প্রতি বছর রমজান মাসজুড়ে প্রতিটি সেক্টরের স্বাস্থ্য বিভাগ ভেজাল খাদ্যপণ্যবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করলেও এবার কোনো কার্যক্রম নেই। বিএসটিআই বরাবরের মতো রুটিন মাফিক কাজ চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে।

র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এখনো ভেজালবিরোধী অভিযানে নামেনি। কিন্তু নাগরিকরা ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য পাচ্ছে না কোথাও।

ফরমালিন, কার্বাইড, ইউরিয়া সার, হাইড্রোজসহ নানা ক্ষতিকর ও রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে খাদ্যে ভেজাল দেয়াসহ বিষ মেশানো চলছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর আসে। কালেভদ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চলে। কিন্তু অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।

খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে দেশের প্রচলিত আইনেই। অথচ অজ্ঞাত কারণে ওই আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে না। খাদ্যে ভেজালকারীদের আইনে নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার কোনো নজির এ দেশে নেই। অথচ উন্নত বিশ্বে বা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধে যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ওই সব দেশে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর হার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে।

খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধের শাস্তি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাবজ্জীবন, চীনে মৃত্যুদণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এসব দেশে বর্তমানে এসব কঠোর আইনেই ভেজাল মেশানোর অপরাধের বিচার হচ্ছে। পাকিস্তানেও ভেজাল খাদ্য বিক্রিকারীদের দ্বিতীয়বার অপরাধ করার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

উল্লেখ্য, এ উপমহাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮৬০ সালে প্রণীত হয় দণ্ডবিধি। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশেও দণ্ডবিধির প্রচলন বলবৎ থাকে। দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৭২ ধারায় বিক্রির জন্য খাদ্য বা পানীয়তে ভেজাল মেশানোর দায়ে কোনো ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৭৩ ধারায় ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় বিক্রির অপরাধেও ছয় মাসের শাস্তির বিধান রয়েছে। ওষুধে ভেজাল মেশানো বা ভেজাল মেশানো ওষুধ বিক্রির জন্য দণ্ডবিধির ২৭৪ ও ২৭৫ ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের শাস্তির বিধান রয়েছে। এরই মধ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা বাড়তে থাকায় ১৯৫৯ সালে মানুষের ভোগের জন্য খাদ্য প্রস্তুত ও বিক্রি অধিকতর নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের ৬ ধারা থেকে ৩৭ ধারা পর্যন্ত খাদ্যে ভেজাল মেশানো, ভেজাল খাদ্য বিক্রি, ভেজাল খাদ্যবিরোধী অভিযানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বাধা দেওয়ার জন্য শাস্তির বিধান করা হয়। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের এসব ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর আর সর্বনিম্ন শাস্তি ছয় মাস কারাদণ্ড করা হয়। একই সঙ্গে পাঁচ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়। কিন্তু এই আইন কার্যকর থাকলেও খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল মেশানো বা ভেজাল মেশানো খাদ্য বিক্রির পরিমাণ আরো বাড়তে থাকে, বিশেষ করে স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভেজাল খাদ্য ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির হার বেড়ে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। এ আইনের ২৫(গ) এর ১(ঙ) ধারায় খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল মেশালে বা ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ বিক্রি করলে বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করলে অপরাধী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছর কারাদ দণ্ডনীয় হবে বলে বিধান করা হয়। এ ছাড়া ক্ষতিকর প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন (যা মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর) করলে অপরাধীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বা যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান করা হয়। কিন্তু এমন আইন প্রয়োগের বা এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত এ দেশে নেই।

খাদ্যের মান বজায় রাখাসহ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালের ২০ জুন রায় দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ওই রায়ে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠন এবং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খাদ্যের মান ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য খাদ্য পরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই রায় দেয়। ওই রায় আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আবার একটি আদেশ দিয়ে প্রশাসনকে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই আদেশও কার্যকর হচ্ছে না।

মূলত: খাদ্যে ভেজাল মেশানো এমন একটি অপরাধ, যা খুনের চেয়ে জঘন্য। এক ব্যক্তি একজন বা দুজনকে খুন করে। আর খাদ্যে ভেজাল যারা মেশায়, তারা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের অনেক মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এ কারণেই অপরাধ বিশেষজ্ঞরা ভেজালকারীদের খুনিদের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধী বলে মনে করে।

বর্তমানে নামকা ওয়াস্তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। আটক করা হয় খাদ্যে ভেজাল, ফল ও শাকসবজিতে রাসায়নিক দ্রব্য, মাছে ফরমালিনসহ ভেজালকারীদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু জরিমানা করেই অপরাধীদের ছেড়ে দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারাদণ্ড দেয়া হলেও তা হয় নামমাত্র। দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিল করে জামিন পেয়ে যায়। একই সঙ্গে আপিলে বেশির ভাগ আসামি খালাস পেয়ে যায়। এ কারণে ভেজালকারীরা ফিরে এসে আবার একই অপরাধ করে থাকে।

জানা যায়, দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা হলেও বিচারে কী হয়, তা দেশের মানুষ জানতে পারে না। ভেজাল ওষুধ বিক্রির অপরাধে কিছু ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মামলা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ আসামি খালাস পেয়ে গেছে। এখনো দু-একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিচার চলছে। কিন্তু বিচারের ধীরগতির কারণে এখন সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গতঃ আমরা মনে করি যে, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধায় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের সৃষ্টিকর্তা, খালিক্ব ও মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “সবচেয়ে গরীব কে? অতঃপর তিনি বললেন, সবচেয়ে গরীব ওই ব্যক্তি- যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকী নিয়ে উঠবে। মানুষ মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকী দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।” হাদীছ শরীফ-এ এ ব্যক্তিকেই সবচেয়ে গরীব বলা হয়েছে।

মূলতঃ আজকের যুগে ধর্মব্যবসায়ী তথা উলামায়ে ‘সূ’দের প্রাদুর্ভাব থাকায় এহেন ইসলামী চেতনা কারো মাঝে নেই বললেই চলে। বরং উলামায়ে ‘সূ’রাও যেভাবে অসততায় আর দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে তা দেখেই ভেজালকারী ও দুর্নীতিবাজরা আরো সাহসী ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার পরিণতিতেই সারাদেশব্যাপী এত ভেজাল আর দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

এক্ষেত্রে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতে শামিল হওয়া সবার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তাহলে শরীরী খাদ্যের ভেজাল প্রবণতা ও প্রক্রিয়াই শুধু দূর হবে না পাশাপাশি অন্তরের ভেজালও দূর হবে তথা বিশুদ্ধ রূহানী খাদ্যের প্রাচুর্যে রূহানী স্বাস্থ্যও সমৃদ্ধ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সে মহান নিয়ামত নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।