-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
শয়তান যে মানুষকে নেক ছূরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করেছিলো শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে- ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর- হ্যামপার। সে মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদের উপর তুর্কি ভাষায় রচিত হযরত মুহম্মদ আইয়ূব সাবরী পাশা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “মিরাত আল হারামাইন” কিতাবের ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় ধারাবাহিকভাবে ভাষান্তর করা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
১৩৪২ (১৯২৪) সালে বৃটিশ সৈন্যরা শরীফ হুসাইন ইবনে আলি পাশাকে গ্রেফতার করে এবং সাইপ্রাসে নিয়ে যায়। পাশা ইন্তিকাল করেন একটি হোটেলে যেখানে তিনি ১৩৪৯ (১৯৩১) সালে কারাবন্দী হিসাবে প্রবেশ করেছিলেন। আবদাল আজীজ বিন আব্দুর রহমান সহজেই ১৯২৪ সালে মক্কা শরীফ এবং তায়িফ দখল করে নেয়। তারও পূর্বে ১৩৩৭ (১৯১৯) সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখে তুরস্ক স¤্রাজ্যের সৈন্যদল যারা শরীফ হুসাইন পাশার কাছ থেকে মদীনা শরীফকে পাহারা দিত, তারা হিজাজ ত্যাগ করে। সে সময় যারা তুরস্ক স¤্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলো তাদের সাথে শরীফ হুসাইন-এর সম্পর্ক ভাল ছিল না। শরীফ আব্দুল্লাহ, শরীফ হুসাইন পাশার সন্তান যে মদীনা শরীফে বসবাস করছিলো তাকে বৃটিশ বাহিনী মদীনা শরীফ থেকে আম্মান (জর্দান) পাঠিয়ে দেয় তার বাবার ইন্তিকালের পর। সে ১৩৬৫ (১৯৪৬) সালে জর্দান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বৃটিশ ঘাতক দ্বারা নিহত হন, যখন ১৩৭০ (১৯৫১) সালে মসজিদুল আকসাতে নামাযরত অবস্থায় ছিলেন। উনার পুত্র তালাল উনার পর ক্ষমতায় আসেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে শীঘ্রই উনার সন্তান মালিক হুসাইনের নিকট হস্তান্তর করেন।
শরীফ হুসাইন পাশার দ্বিতীয় পুত্র শরীফ ফয়সাল ইরাক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ১৩৩৯ (১৯২১) সালে এবং ইন্তিকাল করেন ১৩৫১ (১৯৩৩) সালে। উনার পর ক্ষমতায় আসেন উনার সন্তান গাজী যিনি ১৯৩৯ সালে ২১ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। পরবর্তী ইরাকের শাসক হন দ্বিতীয় ফয়সাল যিনি নিহত হন জেনারেল কাসিম-এর একটি ক্যু এর মাধ্যমে, ১৯৫৪ সালের ১৪ই আগস্ট। তখন তার বয়স মাত্র ২৩ বছর। জেনারেল কাসিম আবার দ্বিতীয় একটি ক্যুতে নিহত হয়। ইরাক এবং সিরিয়াতে সোশালিস্ট বার্থ পার্টি ক্ষমতায় আসে অনেক ক্যু এর পর এবং রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
আবদাল আজিজ বিন আবদার রহমান অনেকবার মদীনা শরীফ আক্রমণ করে। এই বেয়াদব ১৯২৬ সালে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ এর নিকটও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু সেই বছর সে শহর দখল করতে পারেনি। এ খবর ১৯২৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ইস্তাম্বুলের সন-সাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই বোমাবর্ষণের ঘটনায় ভারতের মুসলমানগণের মাঝে ভীষণ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলো। ইন্ডিয়া টাইমস তখন যেভাবে খবর ছাপিয়েছিল তা নিম্নরূপ-
সম্প্রতি খবর এসেছে যে মদীনা শরীফ এ আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং সেখানে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে এবং এই তথ্য সমগ্র ভারতের মুসলমানগণের মধ্যে যেভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে ইতিপূর্বে আর কোন ঘটনা এরকমটি করেনি। সমগ্র ভারতে বাস করা মুসলমানগণ প্রদর্শন করেছেন যে তারা কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করেন এই পবিত্রভূমিকে। এই হৃদয় কাঁপানো ঘটনা অবশ্যই ভারত এবং ইরানকে প্রভাবিত করবে বিন সউদ-এর এরকম মারাত্মক বেয়াদবীমূলক কাজকে প্রতিহত করার জন্য যাতে সমগ্র বিশ্বমুসলিমের রোষাণলে না পরে। ভারতের মুসলমানগণ প্রকাশ্যে বিন সউদকে তা জানিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১