-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করেছিলো শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে- ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর- হেমপার। সে মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদের উপর তুর্কি ভাষায় রচিত মুহম্মদ আইয়ূব সাবরি পাশার “মিরাত আল হারামাইন” কিতাবের ইংরেজী অনুবাদ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ।
ধারাবাহিক
মুশরিক এবং কাফিররা মনে করে, মূর্তিগুলো হচ্ছে তাদের প্রভু এবং উপাস্য। এই মূর্তিগুলোর কোন কিছু সৃষ্টি করার যোগ্যতা নেই জেনেও তাদের উপাসনা করে। মুশরিকদের কেউ কেউ এই মূর্তিগুলোকে উপাসনার উপযুক্ত মনে করে উপাসনা করে। আর কেউ কেউ এগুলোকে প্রভু মনে করে উপাসনা করে। তারা এ কারণে মুশরিক নয় যে, তারা মনে করে এ মূর্তিগুলো তাদের সুপারিশ করবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়ে যাবে; বরং এ কারণেই মুশরিক যেহেতু মূর্তিগুলোকে তারা মা’বুদ মনে করে এবং এগুলোর উপাসনা করে।
নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেছেন, “ এমন একটি সময় আসবে যখন কাফিরদের প্রতি নাযিলকৃত আয়াতসমূহ মুসলমানদের মানহানি করার দলীল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।” তিনি আরও ইরশাদ করেন, “আমি একটি বিষয়ে বেশী শঙ্কিত যে, কিছু লোক এই আয়াত শরীফসমূহ ব্যবহার করতে চাবে সেই বিষয়ে, যে বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক আদেশ প্রদান করেননি।” এই দুটি হাদীছ শরীফ যা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “লা মাযহাবীদের আগমন ঘটবে, যারা কাফিরদের বিষয়ে নাযিলকৃত আয়াত শরীফসমূহ মুসলমানদের উপর আরোপ করবে এবং কুরআনুল কারীম-এর তা’যীমের খিলাফ করবে।”
মুসলমানগণ তাদেরই মাযার শরীফ জিয়ারত করেন, যাদের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট রয়েছেন বলে বিশ্বাস করেন। মুসলমানগণ সে সকল মাহবুব বান্দাগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করেন। নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে দুয়া শিখিয়েছেন। তিনি মুনাজাতের মধ্যে বলতেন, “হে আমার রব! আপনি যাদের দুয়া এবং ইচ্ছাগুলো পূরণ করেছেন তাদের ওসীলা দিয়ে আপনার কাছে দুয়া করছি।” নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবা আজমাঈনগণকে এভাবে দুয়া করতে শিখিয়েছেন, যাতে পরবর্তী মুসলমানগণ তা অনুসরণ করতে পারেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাতা হযরত ফাতিমা বিন আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর দেহ মুবারক কবরে রাখা হয় তখন তিনি দুয়া করেছিলেন, “হে আমার রব! আপনি ফাতিমা বিন আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে ক্ষমা করুন। উনার প্রতি অনুকম্পা করুন আপনার হাবীব-এর মুহব্বতের কারণে এবং আমার পূর্বে যে সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এসেছিলেন উনাদের মুহব্বতের কারণে।”
নবীদের নবী, রসুলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন অন্ধ ছাহাবীকে শিখিয়েছিলেন যিনি তাঁর দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে চেয়েছিলেন। দুই রাকায়াত নামায আদায় করে দুয়া করতে বলেছিলেন, “হে আমার রব! আমি আরজু করছি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়ে, মুহব্বত করে যাঁকে আপনি দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আমি বিনীত নিবেদন পেশ করছি “হে আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে ওসীলা করে মহান আল্লাহ পাক-এর কাছে আমি আরজু করছি মহান আল্লাহ পাক যেন আমার দুয়াগুলো কবুল করেন।”
যমীনে তাশরীফ আনার পর হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম দুয়া করেছিলেন, “হে আমার রব! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় আমার দুয়া কবুল করুন।” মহান আল্লাহ পাক বলেন, “হে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম! যদি আপনি যমীন ও আসমানের সকল বিষয়ের জন্য আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়ে দুয়া করতেন তবে আমি আপনার দুয়া কবুল করতাম।”
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বৃষ্টির জন্য দুয়া করার ওসীলা হিসেবে হযরত আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়েছিলেন এবং উনাদের দুয়া কবুল হয়েছিল। সেই অন্ধ ছাহাবীকে শেখানো দুয়া থেকে প্রমাণিত হয় যে, আওলিয়ায়ে কিরামগণের নাম মুবারক নিয়ে উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শরীয়তে জায়িয। ছাহাবা আজমাঈন এবং তাবিয়ীনগণের জীবনীতে অসংখ্য প্রমাণ আছে যে, মাযার শরীফ জিয়ারত করে, নাম মুবারক উচ্চারণ করে উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শরীয়তে জায়িয। (চলবে)
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৭
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভুমিকা-৪৮