মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها النبى اذا طلقتم النساء فطلقوهن لعدتهن واحصوا العدة واتقوا الله ربكم.
অর্থ: হে নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতকে বলুন) যখন তোমরা আহলিয়াদেরকে (স্ত্রীদেরকে) তালাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে তালাক দিবে। আর ইদ্দত গণনা করবে। এ ব্যাপারে তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে।” (পবিত্র সূরা তালাক শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
কাজেই, আহলিয়াকে যখন তখন তালাক দেয়া, সামান্য মনোমালিন্য হলেই তালাক দেয়া, আগে পরে কোন চিন্তা না করে রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়া কিংবা একেবারে তিন তালাক দিয়ে দেয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তালাক দেয়া প্রয়োজনবোধ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তালাক দেয়ার যে পন্থা বা পদ্ধতি বা সীমা রেখা নির্ধারণ করেছেন সেই পন্থা-পদ্ধতি, নিয়ম-কানুন মত তালাক দেয়া উচিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وتلك حدود الله ومن يتعد حدود الله فقد ظلمه نفسه
অর্থ: উহা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত সীমা রেখা। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সীমারেখা লঙ্ঘণ করবে সে মূলত: নিজের উপারই জুলুম বা অত্যাচার করবে। অর্থাৎ নিজের ক্ষতিসাধন নিজেই করবে।” (পবিত্র সূরা তালাক শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
কাজেই, তালাকের নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা মুয়াফিক তহূরের মধ্যে তালাক দিবে। মনগড়াভাবে কোন কিছু করবে না।
উল্লেখ্য যে, তহূর শব্দের অর্থ পবিত্রতা, স্বাভাবিক মাজুরতার পর গোসল করা। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় প্রাপ্তা বয়ষ্কা মহিলারা এক স্বাভাবিক মাজুরতার পর থেকে পরবর্তী স্বাভাবিক মাজুরতা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়কালকে তহূর বলা হয়। হানাফী মাযহাব মতে তহূরের সর্বনিম্ন সময়কাল ১৫ দিন। আর উর্ধ্বতম কোন সময়সীমা নেই।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه انه طلق امرأة له وهى حائض فذكر حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام لرسول الله صلى الله عليه وسلم فتغيظ فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال ليراجعها ثم يمسكها حتى تطهر ثم تحيض فتطهر فان بدا له ان يطلقها فليطلقها طاهرا قبل ان يمسها فتلك العدة التى امر الله ان تطلق لها النساء
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি একবার উনার একজন আহলিয়াকে স্বাভাবিক মাজুরতা অবস্থায় তালাক দিলেন। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইহা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে জানালেন। ইহা শুনে তিনি অপছন্দ করলেন এবং বললেন, উনি যেন উনার আহলিয়াকে ‘রাজায়াত’ করে নেন। অতঃপর রেখে দেন যতদিন না তিনি পবিত্রা হন। অতঃপর স্বাভাবিক মাজুরতার সম্মুখীন হন অতঃপর তা হতে পবিত্রা হন।
তারপর যদি তিনি উনাকে তালাক দিতে চান তাহলে তালাক দিবেন পবিত্রাবস্থায় নিরিবিলি অবস্থান করার পূর্বে। ইহাই হলো তালাকের ইদ্দত। যে ইদ্দত অনুযায়ী মহান আল্লাহ পাক তালাক দেয়ার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
عن حضرت محمود بن لبيد رضى الله تعالى عنه قال اخبر رسول الله صلى الله عليه وسلم عن رجل طلق امراته ثلاث تطليقات جميعا فقام غضبان ثم قال ايلعب بكتاب الله عز وجل وانا بين اظهركم
অর্থ: হযরত মাহমুদ ইবনে লাবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে আরয করা হলো যে, “তিনি উনার আহলিয়াকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছেন।” ইহা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসন্তুষ্টির সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর বললেন, আমি আপনাদের মধ্যে থাকতেই কি মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব নিয়ে খেলা আরম্ভ হলো? (নাসায়ী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ابغض الحلال الى الله الطلاق.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে তালাক। (আবু দাউদ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عن حضرت ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما امرأة سألت زوجها طلاقا فى غير ما باس فحرام عليها رائحة الجنة.
অর্থ: হযরত সাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে নারী নিরূপায় হওয়া ব্যতীত আপন স্বামীর নিকট তালাক চায় সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা।” নাউযুবিল্লাহ! (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ ও দারেমী শরীফ)
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে একান্ত প্রয়োজনে শান্তি, শৃঙ্খলা, ফিতনা-ফ্যাসাদমুক্ত জীবন যাপনের জন্য তালাকের বিধান রাখা হয়েছে। মনগড়াভাবে কোন কিছু করার সুযোগ নেই।
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত সাবিত ইবনে কায়িস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন। বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত সাবিত ইবনে কায়েস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দ্বীনদারী ও ব্যবহার সম্পর্কে আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি সম্মানিত ইসলামে থেকে স্বামীর অবাধ্যতাকে পছন্দ করি না।
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তাহলে কি আপনি উনার বাগান উনাকে ফেরত দিবেন, যা তিনি আপনাকে দেন মোহররূপে দিয়েছেন? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাবিত ইবনে কায়িস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি আপনার বাগান গ্রহন করুন আর উনাকে এক তালাক দিয়ে দিন।”
কথায় কথায় তালাক দেয়া, একই সঙ্গে তিন তালাক দেয়া ইত্যাদি শয়তানী কাজ। তাতে অনুশোচনার সৃষ্টি হয়। পরিণতির কথা চিন্তা করার সুযোগ থাকেনা। এরূপ কাজে তালাকদাতা গোনাহগার হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির রোষানলে পড়ে যায়। তালাকদাতা ও প্রার্থী উভয়ই অশান্তিতে জীবন যাপন করে। কখনো বা লা’নতগ্রস্থ হয়। এমনকি ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণের সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, ইমাম-মুজতাহিদ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার কেউ উক্তরূপ তালাক প্রদান করেননি।
তাছাড়া মুখে তালাক উচ্চারণ না করলেও এমন কতিপয় গোনাহের কাজ রয়েছে, মু’মিন-মু’মিনাগণ যদি তা হালাল বা জায়িয মনে করে তাহলে তাদের অজান্তেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তখন স্বীয় স্ত্রীর সাথে অবস্থান করা জায়িয থাকে না। সেক্ষেত্রে সে প্রতি সেকেন্ডে সেকন্ডে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। সন্তান হলে সে সন্তানের বৈধতা থাকবে না। এরূপ সন্তানই পিতা-মাতার অবাধ্য হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী করে। বিরূদ্ধাচরণ করে। নাউযুবিল্লাহ!
তারাই বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী-নাছারা, মজুসী, মুশরিকদের অনুসরণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। নাউযুবিল্লাহ! এরাই মুসলমান নাম দিয়ে, মুসলমানদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেও ইহুদী, নাছারা, মজুসী, মুশরিক, হিন্দু, বৌদ্ধদের দালালী করে। নাউযুবিল্লাহ!
অতএব, তালাক এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান হাছিল করা সকলেরই দায়িত্ব কর্তব্য তথা ফরযে আইন উনার অন্তর্ভুক্ত।
طلاق (তালাক) – এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
طلاق এর আভিধানিক অর্থ: খুলে দেয়া, ছেড়ে দেয়া, বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা।
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় নির্ধারিত শব্দাবলী দ্বারা হালান (সাথে সাথে) অথবা মালান (মাল-সম্পদের মাধ্যমে) বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করাকে তালাক বলা হয়। (বাহরুর রায়িক, আলমগীরী)
طلاق – এর হুকুম-আহকাম: যদি রাজঈ তালাক হয় তাহলে ইদ্দত (তিন স্বাভাবিক মাজুরতা) খতম বা শেষ হওয়ার পর পরস্পর জুদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আর যদি তালাকে বাইন হয়, তখন ইদ্দত খতম বা শেষ হওয়া ব্যতীতই সাথে সাথেই জুদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর, আলমগীরী)
আর যদি তিন তালাক পূর্ণ হয়ে যায়, তখন এই স্ত্রীকে হিলা (অন্য কারো সাথে বিবাহ দেয়ার পর তার থেকে বিচ্ছিন্ন) না হওয়া পর্যন্ত কখনো সে বিবাহ করতে পারবে না। (আল বাহরুল মুহীত লিচ্ছুরুখসী, আলমগীরী)
উল্লেখ্য যে, তিন তালাক রাজঈ হয় না। এমনকি “তালাকে রাজঈ” নাম উচ্চারণ করা সত্ত্বেও তিন তালাক হয়ে গেলে আর স্বামীর কোন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব থাকে না। তা তালাকে মুগাল্লাযা হয়ে যায়। এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে তিনি তালাক দেয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ, তালাক এতই নিকৃষ্ট কাজ যে, যদি কেউ এক তালাক দিয়ে রাজায়াত বা পূনরায় ফিরিয়ে নেয় কিংবা বিবাহ দোহরাইয়া ২/৩ বছর পর পূনরায় এক তালাক দেয় এবং তারপর ২/৩ বছর পর আবার এক তালাক দেয় তাহলে সব মিলে যোগ হয়ে তালাকে মুগাল্লাযায় পরিণত হয়ে সম্পূর্ণভাবে তালাক হয়ে যায়। একজন পুরুষ একজন স্ত্রীর উপর তিন তালাক দেয়ার অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
طلاق -এর প্রকারভেদ: ফক্বীহ বা ফিক্বাহ শাস্ত্রবিদগণের মতে হুকুমের দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকার:
১। তালাকে রাজঈ- এমন তালাক যা প্রদান করলে স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থেকে যায়। স্বামী ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে সাথে সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত পূনরায় নিজের বন্ধনে ফিরিয়ে আনতে পারে। অর্থাৎ উক্ত স্ত্রীর সাথে নিরিবিলি অবস্থান করা কিংবা নিরিবিলি অবস্থানের দিকে আকর্ষনকারী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া, অথবা খাহেশাতের সাথে স্পর্শ বা বুছা দেয়া কিংবা আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিলাম বললেও রাজায়াত বা ফিরিয়ে আসে। উল্লেখ্য যে, সরীহ বা সুস্পষ্ট তালাক (তালাক শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে) এভাবে বলা যে, “তুমি তালাক” কিংবা “আমি তোমাকে তালাক দিলাম।” এ সকল শব্দ দ্বারা তালাক দিলে তালাকে রাজঈ পতিত হয়।
২। তালাকে বায়িন: এমন তালাক যা প্রদান করলে স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থাকে না। বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিক্রমে (হিলা ব্যতীত) নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, তালাকের সাথে যদি কোন প্রকার অতিরিক্ততা বা কঠোরতার গুণ যুক্ত করা হয় তাহলে তালাকে বায়িন হয়। যেমন- কেউ বললো, তোমার প্রতি তালাকে বায়িন কিংবা তোমাকে অকাট্য তালাক। তবে তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাকই পতিত হবে। অন্যথায় এক তালাকে বায়িন হবে।
৩। তালাকে মুগাল্লাযা: এমন তালাক যার কারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এ স্ত্রী অপর কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, অতঃপর ঐ স্বামী তার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করার পর তালাক দিলে অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে পুনরায় উক্ত স্ত্রী প্রথম স্বামীর সাথে উভয়ের সম্মতিক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
ছিফতের দিক দিয়ে তালাক দুই প্রকার:
১. সুন্নী তালাক। ২. বিদয়ী তালাক।
আবার সুন্নী তালাক দুই প্রকার: (ক) احسن (আহসান তালাক) (খ) حسن (হাসান তালাক)
(ক) আহসান তালাক- এমন তালাককে বলা হয়, যে নিজের স্ত্রীকে এমন তহুরে এক রাজঈ তালাক দিবে, যে তহূরে তার সাথে অতী করেনি। তারপর তাকে এই অবস্থার উপরই ছেড়ে দিবে এবং তার ইদ্দত শেষ হবে তথা তিন স্বাভাবিক মাজুরতা শেষ হয়ে যাবে। আর হামেলা হলে সন্তান জন্মগ্রহন করবে। ইদ্দত অতিবাহিত হলে সে আপনা আপনিই বায়িন হয়ে যাবে।
(খ) হাসান তালাক- স্ত্রীকে এমন তহূরে তালাক দিবে যে তহূরে তার সাথে অতী করেনি। প্রথম তহূরে তাকে এক তালাক দিবে। তারপর দ্বিতীয় তহূরে দ্বিতীয় তালাক দিবে। আর তৃতীয় তহুরে তৃতীয় তালাক দিবে। (মুহীতে ছুরুখসী, আলমগীরী)
(২) আর একই তহূরে তিন তালাক অথবা একসাথে তিন তালাক কিংবা যে তহূরে অতী করা হয়েছে সেই তহূরে এক তালাক দেয়া। যার সাথে অতী করা হয়েছে তাকে স্বাভাবিক মাজুরতার সময় এক তালাক দেয়াকে তালাকে বিদয়ী বলা হয়। এরূপ তালাক কার্যকর হবে তবে তালাকদাতা কঠিন গুনাহগার হবে।
শব্দগত দিক দিয়ে তালাকের প্রকারভেদ:
তালাক দেয়ার জন্য যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয় তা দুই প্রকার:
১. পরিষ্কার অর্থ প্রকাশক এবং একার্থবোধক, যাকে তালাকে সরীহ বলা হয়। যেমন- কেউ তার আহলিয়াকে বললো, “আমি তোমাকে তালাক দিলাম” কিংবা “আমি আমার আহলিয়াকে তালাক দিলাম।”
২. যার অর্থ পরিষ্কার নয়। একাধিক অর্থের সম্ভাবনা থাকে। তালাকের অর্থ ও হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে। যেমন- কেউ তার আহলিয়াকে বললো, “আমি তাকে দুর করে দিলাম।” এই কথার অর্থ তালাক হতে পারে, আবার এই অর্থও হতে পারে যে, তালাক দেইনি। বর্তমানে আমার আহলিয়াকে আমার কাছে আসতে নিষেধ করেছি।” এরূপ শব্দকে কিনায়া বলে। কিনায়ার আরো অনেক শব্দ আছে। যেমন- কেউ তার আহলিয়াকে বললো, তুমি তোমার বাবার বাড়ীতে গিয়ে থাক, আমি তোমার খবর নিতে পারবো না, আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার বাড়ী থেকে চলে যাও, দূর হয়ে যাও ইত্যাদি। এই সব শব্দের দুই দুই অর্থ হতে পারে। তালাকের অর্থও হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে।
সরীহ বা সুস্পষ্ট ও একার্থবোধক শব্দ দ্বারা তালাক দিলে তালাক দেয়ার নিয়ত করুক আর না করুক তাতে তালাক পতিত হবে। এমন কি হাসি বা ঠাট্টার ছলে বললেও তালাক হয়ে যাবে। আর “এক তালাক” বললে বা শুধু “তুমি তালাক” বললেও এক তালাকে রাজঈ পতিত হবে। আর দুই তালাক বললে কিংবা দুই তালাকের নিয়তে দুই বার তালাক শব্দ (তালাক, তালাক) বললে, দুই তালাকে রাজঈ হবে। কিন্তু তিন তালাক বললে কিংবা তিন তালাকের নিয়তে তালাক শব্দ তিন বার উচ্চারণ করলে (তালাক, তালাক, তালাক) তিন তালাকে মুগাল্লাযা হয়ে যাবে। তবে যদি এক তালাকের নিয়ত করতঃ তাকিদ বা দৃঢ়তার জন্য তিন বা ততোধিকবার তালাক শব্দ উচ্চারণ করে তাহলে এক তালাকই পতিত হবে। বাকীগুলো তাকিদ বলে গন্য হবে। তিন তালাক একই সাথে দিলে তালাকদাতা কঠিন গোনাহগার হবে।
এক তালাক দেয়ার পর যতদিন ইদ্দত শেষ না হয় (স্বাভাবিক মাজুরতা তিন বার অতিবাহিত হওয়া) ততদিন আরো দুই তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্বামীর থাকে। ইচ্ছা করলে দ্বিতীয়, তৃতীয় তালাক ও দিতে পারে। কাজেই, ইদ্দতের মধ্যে যদি এক তালাক বা দুই তালাক দেয়, তবে তাও তালাক হবে।
‘তালাক দিব’ বললে তালাক হবে না। অতীত বা বর্তমান কালের শব্দ ব্যবহার করলে তালাক হবে। কিন্তু ভবিষ্যতকালের শব্দ ব্যবহার করলে তালাক হবে না।
কাজেই, যদি কেউ তার আহলিয়াকে বলে যে, “যদি তুমি অমুক কাজ করো, তবে তোমাকে তালাক দিবো” এরূপ বললে, সেকাজ করুক বা না করুক- তালাক পতিত হবে না। অবশ্য যদি এরূপ বলে যে, “যদি তুমি অমুক কাজ করো তবে তোমাকে তালাক দিলাম।” তাহলে যখন একাজ করবে, তখনই তালাক সংঘটিত হবে।
যদি কেউ তালাক দেয়ার সাথে সাথেই ইনশাআল্লাহ বলে দেয় কিংবা এরূপ বলে যে, মহান আল্লাহ পাক চাহে তো তালাক, তাহলে তালাক কার্যকর হবে না। অবশ্য তালাক দেয়ার পর কিছুক্ষণ দেরী করে যদি ইনশাআল্লাহ বলে, তবে তালাক হয়ে যাবে।
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম