বাতিল ফিরক্বা ওহাবী, খারিজী ও লা মাযহাবীরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার দলীল খুঁজে পায়না। তাই তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাকে বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ তারা যে বুখারীফ শরীফের নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে খোদ সেই বুখারী শরীফেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার দলীল রয়ে গেছে। তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। কারণ বুখারী শরীফের উক্ত দলীল খণ্ডন করার মত মুরাদ তাদের কারোই নাই। নিম্নে এ সম্পর্কিত দলীল আদিল্লাসমূহ পেশ করা হলো-
যেমন এ প্রসঙ্গে ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-উনার দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قَالَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُـوْ لَهَبٍ أَعْتَـقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْـبَةٍ قَالَ لَهٗ مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُـوْ لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَـعْدَكُمْ غَيْـرَ أَنِّيْ سُقِيْتُ فِيْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِيْ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ.
অর্থ: “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কিসের সাক্ষাত লাভ করেছ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, আপনাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত লাভ করিনি। তবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।” সুবহানাল্লাহ!
উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ছহীহ বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী’ কিতাবের ৯ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
وَذَكَرَ السُّهَيْلِىُّ رَحْمَةُ اللهُ عَلَيْهِ اَنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ رَاَيْـتُهٗ فِيْ مَنَامِيْ بَـعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَـقَالَ مَا لَقِيْتَ بَـعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـى كُلَّ يَـوْمِ اِثْـنَـيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَـوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَكَانَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْتَـقَهَا
অর্থ: “হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত (কঠিন) দুরাবস্থায় রয়েছে। সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম!) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোনো শান্তির মুখ দেখিনি। তবে হঁ্যা, প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার যখন আগমন করেন তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। (হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,) আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারণ হচ্ছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার দিন ছিলো ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। সেই দিনেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ নিয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার খুশির সংবাদ শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয়।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ বর্ণনা, আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী’-উনার ২০তম খণ্ড ৯৫ পৃষ্ঠা ও কিরমানী ছহীহ আল বুখারীতেও উল্লেখ আছে।
দেওবন্দী মৌলবী ইদরীস কাসেমী রচিত “কাশফুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী” এর ২০তম খণ্ড ১৩৮-১৪০ পৃষ্ঠার বর্ণনাটি নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো।
“পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের পূর্বেকার ঘটনা:
حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّاَبِـىْ لَـهَبٍ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুধ মাতা। আবূ লাহাবের বাঁদী। উনার পুত্র ছিলেন হযরত মাসরূহ আলাইহিস সালাম। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গে পবিত্র দুধ মুবারক পান করেছিলেন। এটা সে সময়ের কথা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হালিমা আলাইহাস সালাম উনার কাছে যাননি। হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত হামযা আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দুজনকেও পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। যার দ্বারা উনারা উভয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুধ ভাই হলেন। সুবহানাল্লাহ! (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এটাই ছহীহ মত)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বড়ই সম্মান করতেন। পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর উনার জন্য উপঢৌকানাদি পবিত্র মক্কা শরীফে পাঠাতেন। …
وَكَانَ اَبُـوْ لَـهَبٍ اَعْتَـقَهَا فَاَرْضَعَتِ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এ বাক্য দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, আবূ লাহাব প্রথমে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করলো। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র দুধ পান করান। কিন্তু সীরাতের কিতাবগুলোতে এর বিপরীত রয়েছে। অবশ্য আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, উনার মুক্তি পাওয়াটা ছিল পবিত্র দুধ মুবারক পানের পূর্বে।
اُرِىَ: اُرِيَهٗ بَعْضُ اَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْـبَةٍ
এটি হচ্ছে কর্মবাচ্যের শব্দরূপ। দু’টি কর্মপদ যোগে সকর্মক ক্রিয়া।
اَىْ رَاٰي اَبَا لَـهَبٍ بَعْضُ اَهْلِهٖ فِـى الْـمَنَامِ
এখানে দর্শন দ্বারা স্বপ্নযোগে দর্শন উদ্দেশ্য। حِيْـبَةٍ (হায়ে যের আর ইয়া সুকুনযোগে পঠিত) অবস্থা, অভাব ও নিঃস্বতাকে বলে। بَابُ الرَّجُلِ بِـحِيْـبَةِ سُوْءٍ অর্থাৎ মানুষ খারাপভাবে সময় অতিবাহিত করা অবস্থা حِيْـبَةٍ আছে। আর মুস্তামিলী কপিতে بِـخِيْـبَةٍ নুকতাবিশিষ্ট খা যোগে আছে।
اَىْ فِـىْ حَالَةٍ خَائِبَةٍ مِنْ كُلِّ خَيْرٍ
মৃত্যুর পর কে আবূ লাহাবকে স্বপ্নে দেখেছিলেন? আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম এ স্বপ্ন মুবারক দেখেছিলেন। যেমন- আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
إِنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ رَاَيْـتُهٗ فِيْ مَنَامِيْ بَـعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَـقَالَ مَا لَقِيْتُ بَـعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـىْ كُلَّ يَوْمِ اِثْـنَـيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَكَانَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ فَأَعْتَـقَهَا. لَـمْ اَلْقَ بَـعْدَكُمْ غَيْرِ أَنِّـىْ
বর্ণনাটিতে لَـمْ اَلْقَ এর উল্লেখ করেননি। ইবনে বাত্তাল বলেন, বুখারী শরীফ উনার বর্ণনায় مَفْعُوْلٌ بِهٖ কে উল্লেখ করেননি। অথচ এতদ্ব্যতীত অর্থ শুদ্ধ হয় না। ইসমাঈলীর বর্ণনায় আছে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً হযরত আব্দুর রযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً অর্থাৎ আপনাদের পরে আমি কোন শান্তি পাইনি। কাস্তালানীর কপিতে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً আছে।
غَيْـرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ فِـىْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِـىْ ثُـوَيْـبَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ
سُقِيْتُ : এটি ضَرَبَ বাব থেকে একবচন উত্তমপুরুষ কর্তৃবাচ্যের শব্দরূপ فِـىْ هٰذِهٖ উনার অঙ্কৃত বিষয়টি এখানে উল্লেখ নেই।
হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে-
وَاَشَارَ اِلَى النُّـقْرَةِ الَّتِـىْ بَيْنَ الْاِبْـهَامِ الَّتِـىْ تَلِيْـهَا مِنَ الْاَصَابِعِ
এবং ইসমাঈলী উনার রেওয়ায়েত দ্বারা জানা গেল যে, هٰذِهٖ এর ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে نُـقْرَةٌ অর্থাৎ, ইবহাম ও শাহাদাত আঙ্গুলের মধ্যবর্তী যে ছোট ধরনের গর্ত থাকে, সেদিকে ইঙ্গিত ছিল। অর্থ হচ্ছে এই যে, এই দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে যে নগণ্য ধরনের স্থান শুন্য আছে, এতটুকু পরিমাণ সামান্যটুকু পানি আমাকে পান করানো হয়। এর কারণ হচ্ছে এই যে, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করেছিলাম। আবূ লাহাব সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ শোনানোর প্রেক্ষিতে আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করেছিলো। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে আঙ্গুলের মাঝের শূন্যস্থানের পরিমাণ পানি পান করিয়ে শান্তি পৌছালেন।
অত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফেই যার উল্লেখ আছে। এর বর্ণনা اَلرُّؤْيَا পর্বে পূনরায় বিস্তারিতভাবে আসছে। ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে এটাকে নানাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি প্রশ্ন ও তার জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, আখিরাতে কাফিরকেও তার সৎকর্ম উপকার দেবে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنْـثُـوْرًا
এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, কাফিরদের আমল তাদের পরকালে কোনো উপকারে আসবেনা। (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ ২৩) দৃশ্যত উভয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
১। তার একটা জাওয়াব এই যে, বর্ণনাটিতে غَيْـرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ এর অংশটি উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসালরূপে উদ্ধৃত করেছেন। মাওসূলরূপে উদ্ধৃত করেননি। সুতরাং এর গুরুত্ব নেই। আর সঠিক কথা হচ্ছে সেটিই, যার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফখানি নির্দেশ করছে। তাহলো এই যে, কাফিরদের সৎকর্ম তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
২। যদি এটাকে মাওসুল হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তখনো এটি একটি স্বপ্ন যা প্রামান্য বস্তু নয়।
৩। এটাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র আখ্যাও দেয়া যেতে পারে। কেননা এ ঘটনাটির সম্পর্ক ছিল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যার প্রেক্ষিতে আবূ লাহাবের সাথে এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিবেচনা করা হলো। যেমন আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
“…. وَقَالَ الْقَاضِىْ عِيَاضٍ اِنْـعَقَدَ الْاِجْمَاعُ عَلٰى اَنَّ الْكُفَّارَ لَاتَـنْـفَعُهُمْ اَعْمَالَـهُمْ وَلَا يُـثَابُـوْنَ عَلَيْـهَا بِنَعِيْمٍ وَلَا تَـخْفِيْفِ عَذَابٍ وَلٰكِنَّ بَعْضَهُمْ اَشَدُّ عَذَابًا بِـحَسْبِ جَرَائِمِهِمْ وَقَالَ الْكِرْمَانِـىْ لَا يَـنْـفَعُ الْكَافِرُ الْعَمَلَ الصَّالِحَ اِذِ الرُّؤْيَا لَيْسَتْ بِدَلِيْلٍ وَعَلٰى تَـقْدِيْرِ التَّسْلِيْمِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَّكُوْنَ الْعَمَلُ الصَّالِحُ وَالْـخَيْـرُ الَّذِيْ يَـتَـعَلَّقُ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا كَمَا أَنَّ أَبَا طَالِبٍ أَيْضًا يَـنْـتَفِعُ بِتَخْفِيْفِ الْعَذَابِ
অর্থ: “… হযরত ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ ব্যপারে ইজমা হয়েছে যে, কাফিররা তাদের আমলের ফায়দা ও ছাওয়াব লাভ করবে না। আর তাদের আযাবও লাঘব করা হবে না। বরং কারো কারো আযাব গুনাহ অনুযায়ী তীব্রতর করা হবে। হযরত কিরমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাফিররা নেক আমলের ফায়দা পাবে না। যদি স্বপ্ন দলীল না হয় তবুও গ্রহনযোগ্য মত এই যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত নেক ও উত্তম আমলের বদলা অবশ্যই পাবে। যেমন আবূ তালিবের আযাব লাঘব করা হয়।” (কাশফুল বারী)
আল্লামা হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
زَادَ الْبُخَارِىْ قَالَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُـوْ لَهَبٍ أَعْتَـقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْـبَةٍ قَالَ لَهٗ مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُـوْ لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ خَيْـرًا غَيْـرَ أَنِّيْ سُقِيْتُ فِيْ هَذِهٖ بِعَتَاقَتِيْ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وَاَشَارَ اِلَى النُّـقْرَةِ الَّتِـىْ بَيْنَ الْاِبْـهَامِ الَّتِـىْ تَلِيْـهَا مِنَ الْاَصَابِعِ. وَذَكَرَ السُّهَيْلِىْ وَغَيْـرُهٗ اَنَّ الرَّائِىَ لَهٗ هُوَ اَخُوْهُ الْعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ. وَكَانَ ذٰلِكَ بَـعْدَ سَنَةٍ مِّنْ وَفَاةِ اَبِـىْ لَـهَبِ بَعْدَ وَقْـعَةِ بَدْرٍ وَفِيْهِ اَنَّ اَبَا لَـهَبٍ قَالَ لِلْعَبَّاسِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ لَيُخَفَّفُ عَلَىَّ فِـىْ مَثَلِ يَـوْمِ الْاِثْـنَـيْنِ قَالُوْا لِاَنَّهٗ لَـمَّا بَشَّرَتْهُ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ بِـمِيْلَادِ ابْنِ اَخِيْهِ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْتَـقَهَا مِنْ سَاعَتِهٖ فَجُوْزِىَ بِذٰلِكَ لِذٰلِكَ
অর্থ: “ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কিসের সাক্ষাত লাভ করেছ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, আপনাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত লাভ করিনি। তবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।” সুবহানাল্লাহ!
আর আবূ লাহাব তার বৃদ্ধাঙ্গুলীর মধ্যবর্তী গর্তের দিকে ইশারা করলো। হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্যান্য মুহাদ্দিছ উনারা উল্লেখ করেন, নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি হচ্ছেন আবূ লাহাবের ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি। আর সময়টা ছিল বদরের জিহাদের ঘটনার পর আবূ লাহাবের মৃত্যুর ১ বছর পর। নিশ্চয়ই আবূ লাহাব স্বপ্নে হযরত আব্বাস আলাইহাস সালাম উনাকে বললো, ‘(হে ভাই!) অবশ্যই এ কঠিন আযাব ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার উনার দিন লাঘব করা হয়, আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যরা বলেন, হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে তার ভাতিজা হযরত খাজা যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার “নূরী আওলাদ” মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ দেন তৎক্ষণাৎ সে খুশিতে উনাকে মুক্ত করে দেয়। এই কারণেই আযাব লাঘব হয়ে থাকে।” সুবহানাল্লাহ!
বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা আহমদ ইবনে আবী ইয়া’কুব ইবনে জা’ফর ইবনে ওহাব ইবনে ওয়াদ্বিহিলি কাতিবিল আব্বাসী আল মা’রূফ বিল ইয়া’কূবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তারিখুল ইয়াকুবী’ নামক গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠায় লিখেন-
فَكَانَ اَوَّلُ لَبَنٍ شَرِبَهٗ بعْدَ اُمِّهٖ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ مَوْلَاةُ اَبِـىْ لَـهَبٍ وَشَدَّ اَرْضَعَتْ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ هٰذِهٖ حَمْزَةَ بْنَ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَجَعْفَرَ بْنَ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَأَبَا سَلَمَةَ بْنَ عَبْدِ الْأَسَدِ الْـمَخْزُوْمِىَّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَـعْدَ مَا بَـعْثَهُ اللهَ رَأَيْتُ اَبَا لَـهَبٍ فِيْ النَّارِ يَصِيْحُ الْعَطَشَ الْعَطَشَ فَـيُسْقٰي مِنَ الْـمَاءِ فِيْ نُـقْرِ إِبْـهَامِهٖ فَـقُلْتُ بِـمَ هٰذَا فَـقَالَ بِعَتَقِىْ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ لِأَنَّـهَا أَرْضَعَتْكَ
অর্থ: “উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর যিনি সর্বপ্রথম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র দুধ মুবারক পান করান তিনি হলেন, আবূ লাহাবের বাঁদি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে, হযরত জা’ফর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত আবূ সালামা ইবনে আব্দুল আসাদ আল মাখযূমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে পবিত্র দুধ পান করিয়েছেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও! পানি দাও!! অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে তাকে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারণে এ পানি পাচ্ছো? আবু লাহাব বললো, (আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে মুক্ত করার কারণে এই ফায়দা পাচ্ছি। কেননা তিনি আপনাকে পবিত্র দুধ মুবারক পান করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে ‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া’ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ ‘শরহুয্ যারকানী’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَدْ رُوِىَ أَبُـوْ لَـهَبٍ بَـعْدَ مَوْتِهٖ فِي النَّـوْمِ فَقِيْلَ لَهٗ مَا حَالُكَ؟ قَالَ: فِي النَّارِ. اِلَّا أَنَّهٗ خُفِّفَ عَنِّـىْ كُلَّ لَيْـلَةِ اثْـنَـيْنِ وَأَمْصِ مِنْ بَـيْنِ اِصْبَعِيْ هَاتَـيْنِ مَاءً. وَأَشَارَ بِرَأْسِ اِصْبَعِهٖ وَاَنَّ ذَالِكَ بِاِعْتَاقِىْ لِثُـوَيْـبَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ عِنْدَ مَا بَشَّرَتْنِيْ بِوِلَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِإِرْضَاعِهَا لَهٗ قَالَ اِبْنُ الْـجَزْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَإِذَا كَانَ هٰذَا الْكَافِرُ الَّذِيْ نُزِلَ الْقُرْانُ بِذَمِّهٖ جُوْزِيَ فِي النَّارِ بِفَرْحِهٖ لَيْـلَةَ مَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهٖ فَمَا حَالُ الْـمُسْلِمِ الْـمُوَحِّدِ مِنْ أُمَّتِهٖ عَلَيْهِ السَلَامُ يَسُرُّ بِـمَوْلِدِهٖ وَيَـبْذُلُ مَا تَصِلُ إِلَيْهِ قُدْرَتُهٗ فِيْ مُـحَبَّتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِىَّ اَنَّـمَا يَكُوْنُ جَزَاؤُهٗ مِنَ اللهِ الْكَرِيـْمِ أَنْ يَّدْخُلَ بِفَضْلِهِ الْعَمِيْمِ جَنَّاتِ النَّعِيْمٍ
অর্থ: “বর্ণিত আছে যে, আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর কেউ তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার কি অবস্থা? আবূ লাহাব বলে, জাহান্নামে আছি, তবে প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) আমার আযাব লাঘব করা হয়। আমার দু আঙ্গুলীর মাঝখান থেকে সুমিষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। আবূ লাহাব তার আঙ্গুলের অগ্রভাগের দিকে ইশারা করে (আবূ লাহাব বলে) আর এটা মূলত যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে দিয়েছেন তখন উনাকে আযাদ করে দেয়ার কারণে। কেননা তিনি উনাকে পবিত্র দুধ পান করান। সুবহানাল্লাহ!
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইবনুল জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির যার নিন্দায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা শরীফ পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার রাত্রিতে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারণে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোনো মুসলমান ব্যক্তি যদি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ফযল ও করমে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ বর্ণনা রঈসুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা শাইখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘মা-ছাবাতা-বিস সুন্নাহ ৩২ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে।
আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া উনার উর্দূ তরজমা ‘সীরতে মুহম্মদিয়া উনার ১ম খণ্ড ১৫৮ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ আছে-
رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کو ابولہب کی آزاد کی ہوئی لونڈی ثویبہ علیہا السلام نے دودھ پلایا ہے جس وقت ثویبہ علیہا السلام نے آپکی ولادت کی بشارت ابو لہب کو دی تھی ابولہب نے اس خوشی میں ثویبہ علیہا السلام کو آزاد کر دیا تھا. ابو لہب کو مرنے بعد کسی نے خواب میں دیکھا. اس سے پوچھا تیرا کیا حال ہے. حضرت عباس علیہ السلام نے ابولہب کو خواب میں دیکھا یہ خواب جنگ بدر کی بعد واقع ہوا، ابو لہب سے پوچھا تیرا کیا حال ہے اس نے کہا دوزخ میں ہوں، مگر دوشنبہ کی ہر رات کو مجھ سے عذاب کی تخفیف کردی جاتی ہے، اور میں اپنی دو انگلیوں کی گھڑے کی مقدار سے پانی پیتا ہوں (دو انگلییں ایک سبابہ دوسری ابہام جب ان کو کشادہ کیا جائے تو ان کے درمیان ایک گرھا پیدا ہو جاتا ہے وہ مقدار مراد ہے) اور ابو لہب نے اپنی انگلی کے سرے سے اس گڑھے کی طرف اشارہ کر کے مقدار بتائی اور کہا کہ اتنا پانی اس لئے پلایا جاتا ہے کہ ثویبہ علیہا السلام نے آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی ولادت کی مجھ کو بشارت دی تھی میں نے آپ کی ولادت کی خوشی سے ثویبہ کو آزاد کردیا تھا اور اس وجہ سے مجھ کو اتنا پانی پلایا جاتا ہے کہ ثویبہ علیہا السلام نے آپ کو دودھ پیلایا ہے.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবূ লাহাব কর্তৃক আযাদকৃত হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। যে সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ আবূ লাহাবকে দেন তখন আবূ লাহাব সেই খুশিতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়। আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করেন তোমার কি অবস্থা? আর এ স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন বদর জিহাদ উনার পরে। আবূ লাহাব বলে জাহান্নামে আছি। তবে প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতে আমার দু আঙ্গুলীর গভীরতা পরিমাণ পানি পান করি। (শাহাদাত আঙ্গুলী ও বৃদ্ধাঙ্গুলী যখন প্রশস্থ করা হয় তখন যে পরিমাণ গভীরতা সৃষ্টি হয় সে পরিমাণই উদ্দেশ্য) আবূ লাহাব তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা ইশারা করে সেই গভীরতার পরিমাপ বর্ণনা করে। সে আরো বলে যে, হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ যখন আমাকে দেন তখন আমি সেই খুশিতে উনাকে আযাদ করে দেই। আর একারণেই আমাকে এতটুকু পানি পান করানো হয়। যতটুকু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র দুধ পান করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এছাড়া ‘তবাক্বাতুল কুবরা লি ইবনে সা’দ’, সীরাতুল হালবীয়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আদদিমিয়াত্বিসহ অসংখ্য নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে উল্লিখিত বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ সমূহের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, কাট্টা কাফির আবূ জাহিল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে খুশি প্রকাশ করার কারণেই তাকে জাহান্নামের মধ্যেও নিয়ামত দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে ঈমানদার বা মু’মিন, মুসলমান উনারা যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, তাহলে উনারা কি লাভ করবেন? তা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
কাজেই, বাতিল ফিরক্বা, ওহাবী, খারিজী, লা-মাযহাবীরা পবিত্র বুখারী শরীফের উক্ত দলীল অস্বীকার করবে কিভাবে?
-মুফতী আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ।