اَنْـعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصَّدِّقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِـحِيْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন নাবিয়্যীন, ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছালিহীন উনাদেরকে। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের প্রথম স্তর হচ্ছেন নাবিয়্যীন তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা। আর দ্বিতীয় স্তর হচ্ছেন ছিদ্দীক্বীন, তৃতীয় স্তর হচ্ছেন শুহাদা, চতুর্থ স্তর হচ্ছেন ছালিহীন অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের শান মুবারকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اَوْلِيَاءَ اللهِ لَا يَمُوْتُـوْنَ بَلْ يَـنْـتَقِلُوْنَ مِنْ دَارِ الْفَنَاۤءِ اِلٰى دَارِ الْبَـقَاءِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমার ওলীগন উনারা ইন্তেকাল করেন না। বরং উনারা অস্থায়ী নিবাস থেকে স্থায়ী নিবাস প্রত্যাবর্তন করেন। সুবহানাল্লাহ! (মিরকাত শরীফ ৩য় খণ্ড ২৪১ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে আবার তিনটি স্তর- (এক) ছিদ্দীক্বীন (দুই) শুহাদা (তিন) ছালিহীন। উক্ত দুই নং স্তর অর্থাৎ শুহাদা বা শহীদগন উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَـقُوْلُوْا لِمَنْ يُّـقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ بَلْ اَحْيَآءٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছেন উনাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং উনারা হায়াতপ্রাপ্ত বা জীবিত। কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারছো না। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًا بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُـرْزَقُـوْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছেন উনাদেরকে মৃত (বলা তো দূরের কথা) ধারণাও তোমরা করো না। বরং উনারা জীবিত এবং উনাদের খ¦লিক মালিক রব তায়ালা উনার তরফ থেকে উনারা রিযিকপ্রপ্ত। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৯)
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের দ্বিতীয় স্তর হযরত শুহাদায়ে কিরাম উনাদেরকে যেখানে হায়াতপ্রাপ্ত বা জীবিত বলা হয়েছে, রিযিকপ্রাপ্ত বলা হয়েছে এবং মৃত বলতে ও মৃত ধারণা পর্যন্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে যারা আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে প্রথম স্তর হযরত ছিদ্দীক্বীনে কিরাম অত:পর হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কি শান? উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারকে কি ফায়ছালা হবে? অবশ্যই উক্ত ফায়ছালা অপেক্ষা উন্নত ফায়ছালা হবে।
তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক কেমন? তাহলে অবশ্যই উনার আযীমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক সকলেরই কল্পনারও উর্দ্ধে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُـؤْذُوْا رَسُوْلَ اللهِ وَلَا اَنْ تَـنْكِحُوْا اَزْوَاجَهٗ مِنْ بَعْدِهٖ اَبَدًا ۚ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এটা গুরুতর অপরাধ। (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহযাব শরীফ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে বলা হয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হায়াত মুবারকে (জীবিত) রয়েছেন। এজন্যই উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সম্পত্তি মুবারক বণ্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই উনার মহাসম্মনিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কোন নারীদের মতো নন।”
হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানি পথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে লিখেছেন-
بَلْ حَيَاةُ الْاَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَقْـوٰى مِنْـهُمْ وَاَشَدُّ ظُهُوْرِ اَثَارِهَا فِى الْخَارِجِ حَتّٰى لَا يَجُوْزُ النِّكَاحُ اَزْوَاجَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخِلَافِ الشُّهَدَاءِ
অর্থ: বরং হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হায়াত মুবারক শহীদগণ উনাদের হায়াত মুবারক হতেও বহু বেশি শক্তিশালী এবং অত্যধিক তড়িৎ গতিতে প্রকাশিত হওয়াতে শ্রেষ্ঠতর। আর এ কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা জায়িয নেই। পক্ষান্তরে শহীদগণ উনাদের আহলিয়াগণকে বিবাহ করা জায়িয রয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী ১৫২)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
لَاعِدَّةَ لِاَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَىٌّ فِىْ قَـبْرِهٖ وَ كَذَالِكَ سَائِرُ الْاَنْبِيَاءِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের উপর কোন ইদ্দত নেই। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওজা শরীফে জীবিত। আর উনার ন্যায় অন্যান্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনাদের মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র রওজা মুবারকে যিন্দা আছেন। (শরহুশ শিফা ১ম খণ্ড ১৫২পৃষ্ঠা)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْـقَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ كُنْتُ اَدْخُلُ بَـيْتِى الَّذِىْ فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنِّىْ وَاضِعٌ ثَـوْبِىْ وَاَقُـوْلُ اِنَّمَا هُوَ زَوْجِىْ وَاَبِىْ فَـلَمَّا دُفِنَ حَضْرَتْ عُمَرُ الْفَارُوْقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَعَهُمْ فَـوَاللهِ مَا دَخَلْتُهٗ اِلَّا وَاَنَا مَشْدُوْدَةٌ عَلَىَّ ثِيَابِىْ حَيَاءٌ مِّنْ حَضْرَتْ عُمَرَ الْفَارُوْقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফে প্রবেশ করতে পর্দার প্রস্তুতি নিতাম না, যেহেতু সেখানে শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে¦ আকবার আলাইহিস সালাম উনারা দুজন অবস্থানরত ছিলেন। আর উনারা আমার মাহরাম হওয়ায় পর্দার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম উনাকে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফে দাফন মুবারক করা হলো, তখন থেকে আমি উনাকে লজ্জা করতঃ খাছ শর’য়ী পর্দা ব্যতীত তথায় গমন করতাম না। কারণ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন গাইরে মাহরাম। (মিশকাত শরীফ-১৫৪ পৃ.)
অত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আক্বীদা মুবারক ছিল এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম উনারা উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফে শুধু যিন্দাই নন বরং উনারা সবকিছু দেখেন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ اللهَ تَـعَالٰى حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَاْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ فَـنَبِىُّ اللهِ حَىٌّ يُـرْزَقُ
অর্থ: হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম মুবারক যমীনের জন্য ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃ:)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে –
قَالَ حَضْرَتْ فَضَلُ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اِذَا رَاَيْتُ شَفَتَـيْهِ يَـتَحَرَّكُ فَاَدْنَـيْتُ اُذُنِىْ عِنْدَهَا فَسَمِعْتُ وَهُوَ يَـقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِاُمَّتِىْ فَاَخْبَـرْتُـهُمْ بِهٰذَا بِشَفَقَتِهٖ عَلٰى اُمَّتِهٖ
অর্থ: হযরত ফযল বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তখন আমি শেষ বারের মত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুর রহমাহ মুবারক (চেহারা) মুবারক যিয়ারত করত: দেখতে পেলাম যে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হাম্রা মুবারক (ঠোট) মুবারক নড়ছে, তখন আমি আমার কর্ণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হাম্রা মুবারক (ঠোট) মুবারকের নিকটস্থ করে শুনতে পেলাম যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন, ইয়া আল্লাহ পাক! আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের প্রতি দয়ালু এই শুভ সংবাদ উপস্থিত সবাইকে শুনিয়েছি। (মাদারিজুন নুবুওয়াত ২য় খণ্ড, ৪৪২ পৃ.)
উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখার পরও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হাম্রা মুবারক (ঠোট) মুবারকের কম্পন ছাবিত হলো। আর কম্পন মুবারক দেয়া “হায়াত” মুবারক ব্যতীত সম্ভব নয়।
অন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
قَالَ حَضْرَتْ زُبَـيْـرُ بْنُ بَـقَاءٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ فِىْ اَخْبَارِ الْمَدِيْـنَةِ لَمْ اَزَلْ اَسْمَعُ الْاٰذَانَ وَالْاِقَامَةَ مِنْ قَـبْرِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيَّامَ حَرَّةٍ حَتّٰى عَادَ النَّاسُ
অর্থ: হযরত যুবাইর ইবনে বাক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আইয়্যামে হাররার সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ মুবারক থেকে আযান ও ইক্বামতের ধ্বনি অনবরত শ্রবণ করতে থাকি যতক্ষণ না জনগণ প্রত্যাবর্তন করেছে। (মিশকাত শরীফ)
আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আপনার নিকটবর্তী, দূরবর্তী এবং পরবর্তীতে আগন্তকদের পবিত্র দুরূদ শরীফসমূহের অবস্থা কি হবে? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَسْمَعُ صَلٰوةَ اَهْلِ مَـحَبَّتِىْ وَاَعْرِفُـهُمْ
অর্থ: আমাকে যারা মুহব্বত করে আমি স্বয়ং নিজে সরাসরি তাদের পাঠকৃত পবিত্র দুরূদ শরীফ শুনি এবং আমি তাদেরকে চিনি। সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুল খায়রাত, মাতালিউল মুসাররাত)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ قَـبْرِهٖ حَىٌّ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিশকাত শরীফ ২য় খণ্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা মুবারকে স্বীয় উম্মতের দুরূদ ও সালাম শুনতে পান। যদি তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না-ই হন তবে কি করে তা শুনতে পান? অবশ্যই তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সায়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দিকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার সম্মানিত পিতা মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহন করেন, তখন তিনি ওছিয়ত মুবারক করলেন যে আমার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা মুবারক উনার নিকটে নিয়ে গিয়ে অনুমতি মুবারক প্রার্থনা করতঃ একথা বলবেন যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে অন্তকাল থাকতে ইচ্ছুক। আর তিনি আমাদেরকে ওছিয়ত মুবারক করেছেন যে, যদি আপনি আমাদেরকে অনুমতি মুবারক প্রদান করেন তবে আমরা প্রবেশ করবো। নতুবা আমরা ফিরে যাবো। এরূপ করার পর আমাদেরকে শুনানো হলো যে, আপনারা উনাকে প্রবেশ করিয়ে দিন অর্থাৎ দাফন মুবারক করুন। আমরা এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালাম শরীফ শুনলাম কিন্তু কেউকে আর দেখলাম না। অন্য এক রিওয়ায়েতে সাইয়্যিদুনা হযরত কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি দেখলাম দরজা মুবারক এমনিভাবেই খুলে গেছে। আর আমি একথা বলতে শুনলাম যে, বন্ধুকে বন্ধু উনার সঙ্গে মিলিয়ে দিন। একথা নিশ্চিত যে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলনের আশিক হন। সুবহানাল্লাহ! (আল খাছাইছুল কুবরা ২য় খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা)
উপরে উল্লেখিত রিওয়ায়েত দ্বারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বিশ্বাস স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাই উনার দরবার শরীফে গিয়ে আরয করার পর যে হুকুম মুবারক হবে তার উপর আমল করবেন।
প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হিজরী ৫৫৫ সনে সম্মানিত রেফায়িয়া তরীক্বার ইমাম হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফে গেলেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকট গিয়ে সালাম মুবারক পেশ করলেন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا جَدِّىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: আসসালামু আলাইকা হে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ হতে তৎক্ষনাৎ জবাব আসলো
وَعَلَيْكَ السَّلَامُ يَا وَلَدِىْ
অর্থ: ওয়া আলাইকাস সালাম হে আমার দৌহিত্র!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ হতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি জাওয়াব মুবারক শুনে হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ হাল পয়দা হলো। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বাছিদাহ শরীফ পাঠ করতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন-
فِىْ حَالَةِ الْبُـعْدِ رُوْحِىْ كُنْتُ اُرْسِلُهَا
تَـقَبَّلَ الْاَرْضَ عَنِّىْ وَهِىَ نَائِبَتِىْ
وَهٰذِهِ دَوْلَةُ الْاَسْبَاحِ قَدْ حَضَرْتُ
فَامْدُدْ يَمِيْنِكَ كَىْ كَخَطِىِّ بِهَا شَفَتِىْ
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুরে অবস্থানকালে আমি আমার রূহকে আপনার মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে প্রেরণ করতাম, যেন তা আমার পক্ষ হতে আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদমবুছী মুবারক করে যায়। এখন তো আমি সরাসরি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং আপনি যদি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ (হাত) মুবারক জাহির করে দিতেন, তাহলে তা আমি চুম্বন মুবারক করে আমি ধন্য হতাম।
হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত আরজি শেষ হওয়া মাত্রই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ হতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ডান নূরুল মাগফিরাহ (হাত) মুবারক জাহির করে দেন। তৎক্ষনাৎ হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সেই সময়ে পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থানকারী ৯০ হাজার লোক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ (হাত) মুবারক চুম্বন করে নিজেদেরকে চিরদিনের জন্য ধন্য করে নেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বুনিয়ানুল মুশাইয়াদ)
উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা অকাট্যভাবেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হলো। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ হতে উচ্চস্বরে সালাম উনার জবাব দেয়া এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক বের করে দেয়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হায়াত মুবারকে থাকার পূর্ণ নিদর্শন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হায়াত মুবারকে না হলে সালামের জবাব দেয়া এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ (হাত) মুবারক বের করা সম্ভব নয়।
মূলতঃ যারা ‘হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ শান মুবারক অস্বীকার করে, তারা ইহুদীদের চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ, সুলতান নূরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কালে ইহুদীরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ হতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম মুবারক চুরির জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। তারা যদি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান মুবারক বিশ্বাস না করতো, তাহলে জিসিম মুবারক চুরির জন্য কখনোই লোক পাঠাতো না।
উল্লেখ্য- আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত উনাদের আক্বীদা হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার উছিলায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ আবুল খায়ের