হাদীছে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বারাই শুধুমাত্র প্রমাণিত নয় যে, নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। বরং এছাড়াও আরো অনেক ছহীহ মুত্তাছিল সনদে বর্ণিত হাদীছ শরীফ রয়েছেন যা দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন। এক শ্রেনীর লোক সমাজে প্রচার করে ও বিভিন্ন বই পুস্তকে লিখে প্রচার করে সর্বপ্রথম সম্মানিত নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সংক্রান্ত হাদীছ শরীফের কোন সনদ নাই। আপনাদের আজ এমন একখানা হাদীছ শরীফ দেখাবো যে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আজ থেকে প্রায় ১১০০ বছর আগে লিখিত কিতাব থেকে সংগৃহীত। এ কিতাবের পান্ডুলিপীর অনুলিপী ও কিতাব উভয়ই আমাদের কাছে মওজুদ আছে, সেখানে নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ পূর্ণ সনদসহ বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে সনদসহ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করা হলো-
حَدَّثَنَا الْـحَاكِمُ اَحْمَدُ بْنُ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ الْمَرْوَزِيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَدَّثَنَا اَبُوْ بَكْرٍ مُحَمَّدِبْنِ اِبْرَاهِيْمَ الْـجُرْجَانِـيٌّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا اَبُوْ بَكْرٍ عَبْدُ الصَّمَدِ بْن يَـحْيَى الْوَاسِطِيُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا الْـحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ الْمَدَنِيُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْمُبَارَكِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدٍ الصَّادِقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنْ اَبِيْهِ، عَنْ جَدٍّ، عَنْ اَبِيْهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِـيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَّامُ اَنَّه قَالَ: اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى خَلَقَ نُوْرَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ اَنْ يـَّخْلَقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَالْعَرْشَ وَالْكُرْسِيَّ وَاللَّوْحَ وَالْقَلَمَ وَالْـجَنَّةَ وَالنَّارَ وَقَبْلَ اَنْ يَّـخْلَقَ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ نُوْحًا عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِسْمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِسْحَاقَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ يَعْقُوبَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ مُوْسٰي عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ عِيْسٰي عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ دَاودَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ سُلَيْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكُلُّ
অর্থ: হযরত হাকিম আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান মারওয়াযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম জুরজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বর্ণনা করেন হযরত আবু বকর আব্দুস ছামাদ বিন ইয়াহিয়া ওয়াসিত্বী থেকে তিনি বর্ণনা করেন হাসান বিন আলী মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন, হযরত জাফর ইবনে মুহম্মদ ছাদিক আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত বাকির আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার দাদা (সাইয়্যিদুনা হযরত যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে। শুধু তাই নয়, হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম, হযরত ইয়াকূব আলাইহিস সালাম, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম, হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি মুবারক করার পূর্বে অর্থাৎ সবকিছু সৃষ্টি করার পূর্বে নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেন। (মা’য়ানিল আখবার ৩০৬-৩০৭ পৃষ্ঠা, লেখক: আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী, ওফাত: ৩৮১, প্রকাশনা: দারুল মা’রিফা, বাইরুত, লেবানন)
সূতরাং প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্ব প্রথম নূর মুবারক হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার মুবারক নূরে সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি; এটা সনদসহ ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
অথচ বাতিল ফির্কার লোকেরা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা যা মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাকে রয়েছে তা অস্বীকার করার জন্য মিথ্যার জাল বুনে যাচ্ছে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ ছাড়া যে আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ আছে সে বিষয়ে তাদের কোন খবরই নেই।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা জরুরী। এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দেখে বাতিল ফির্কার লোকেরা লাফ দিয়ে বলে উঠবে কিতাবের লেখক আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী বদ আক্বীদাহর লোক ছিলেন। আর তাদের বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী তিনি যে বিশ্বস্ত ও গ্রহনযোগ্য ছিলেন তার প্রমাণ কি?
প্রমাণ আসমাউর রেজাল বিশারদদের দৃষ্টিতে আমরা দেখবো ইনশাআল্লাহ। বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ, আসমাউর রিজাল বিশারদ হযরত হাফিয ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
رَأْسُ الإِمَامِيَّةِ، أَبُوْ جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ ابْنُ العَلاَّمَةِ عَلِيِّ بنِ الْـحُسَيْنِ بْنِ مُوْسَى بْنِ بَابَوَيْه القُمِّيُّ، صَاحِبُ التَّصَانِيْفِ السَّائِرَةِ بَيْنَ الرَّافِضَةِ.يُضْرَبُ بِحفظِهِ الـمَثَلُ.
يُقَال:لَهُ ثَلاَثُ مائَةِ مُصَنَّفٍ، مِنْهَا:كِتَابُ (دعَائِمُ الإِسْلاَمِ)، كِتَابُ (الـخواتيمِ)، كِتَابُ (الـملَاهِي)، كِتَابُ (غريبِ حَدِيْثِ الأَئِمَّةِ)، كِتَابُ (التَّوحيدِ)، كِتَابُ (دينُ الإِمَامِيَّةِ)، وَلَا…(۱)وَكَانَ أَبُوْهُ مِنْ كِبَارِهِمْ وَمُصَنِّفيهِمْ.
حَدَّثَ عَنْ أَبِيْ جَعْفَرٍ جَمَاعَةٌ مِنْهُم:ابْنُ النُّعْمَانِ المُفِيْدُ، وَالحُسَيْنُ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ الفَحَّامِ، وَجَعْفَرُ بنُ حسنكِيْه القُمِّيُّ.
অর্থ: শীরে ইমামিয়্যীন, আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আল্লামা আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী যিনি রাফিযীদের মধ্যে অগ্রগামী রচনাবলীর রচয়িতা। তার (প্রখর) স্মৃতিশক্তির দৃষ্টান্ত (বিভিন্ন স্থানে) প্রদান করা হয়। বলা হয় যে, তার (প্রায়) তিনশত রচনাবলী রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দা‘আয়িমুল ইসলাম, আল খাওয়াতীম, আল-মালাহী, গরীবু হাদীছিল আইম্মাহ, আত-তাওহীদ, দ্বীনুল ইমামিয়্যাহ (প্রভৃতি অন্যতম)। উনার পিতাও ছিলেন বড় মুছান্নিফদের (রচয়িতা) অন্তর্ভুক্ত। তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী) হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবূ জা’ফর থেকে। এছাড়াও তাদের গোত্রভূক্ত ইবনে নু’মান আল মুফীদ, হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফাহহাম, জা’ফর ইবনে হুসনাকীহ আল কুম্মী থেকেও তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারু আ’লাম আন নুবালা, ১৬/৩০৩-৩০৪৩৫৪; প্রকাশনা: মুয়াসাসাতু রিসালা, বাইরুত, লেবানন)
হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন প্রকার সমালোচনা করেননি বরং উনাকে প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী ও অনেক কিতাবের লেখক আখ্যা দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, হাফিযুল হাদীছ, রিজাল বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে বলেন-
اَلْـحُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنُ بْنُ الْـحُسَيْنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ مُوْسٰى بْنِ بَابَوَيْهِ الْقُمِّيِّ ذَكَرَهُ بْنُ بَابَوَيْهِ فِي الذَّيْلِ وَقَالَ كَانَ مِنْ بَيْتِ فَضْلٍ وَعِلْمٍ وَهُوَ وَجْهُ الشِّيعَةِ فِيْ وَقْتِهٖ
অর্থ: হুসাইন ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী। উনাকে ইবনে বাবাওয়াইহ হিসেবেও টিকায় বর্ণনা করা হয়। গ্রন্থকার বলেন, তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ আল কুম্মী) শিয়াদের দৃষ্টিতে উনার যামানায় সম্মান ও ইলমের অধিকারী ছিলেন। (লিসানুল মীযান লি ইবনে হাজার, ৩/১৫৭ : রাবী ২৪৯৬ ; প্রকাশনা : মাকতাবাতুল মাতবুয়াতুল ইসলামীয়া, বাইরুত- লেবানন)
উক্ত লিসানুল মিযানের অন্য স্থানে আবারো উনার আলোচনা করা হয়েছে-
الْـحُسَيْنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ مُوْسٰى بْنِ بَابَوَيْهِ الْقُمِّيِّ ذَكَرَهُ بْنُ النَّجَّاشِيُّ فَقَالَ كَانَ مِنْ فُقَهَاءِ الْاِمَامِيَةِ رَوَى عَنْهُ الْـحُسَيْنُ الْغَضَايريُ وَصَنَّفَ كِتَابَ نَفْيِ التَّشْبِيْهِ وَقَدَّمَه لِلصَّاحِبِ بْنِ عَبَّادٍ وَكَانَ الصَّاحِبُ يُعَظِّمُه وَيَرْفَعُ مَـجْلِسَه اِذَا حَضَرَ عِنْدَه
অর্থ: হুসাইন ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী। উনার ব্যাপারে ইবনে নাজ্জাশী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী) ছিলেন ইমামী ফক্বীহগণের অন্তর্ভুক্ত। উনার থেকে হুসাইন আল-গ¦দ্বায়িরী হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি তাশবীহ অপনোদন বিষয়ক কিতাব রচনা করেছেন। ছহিব ইবনে ইবাদ উনাকে অগ্রগামী করেছেন এবং তিনি উনাকে (ইবনে বাবাওয়াইহকে) তা’যীম করতেন। আর ইবনে বাবাওয়াইহ তার মজলিসে উপস্থিত হলে তিনি (ছহিব ইবনে ইবাদ) উনার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন। (লিসানুল মীযান লি ইবনে হাজার, ৩/১৯৯: রাবী ২৫৮৮)
হাফিজুল হাদীছ, রিজাল বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব থেকে প্রমাণ হলো উক্ত কিতাবের লেখক সম্মানিত ব্যক্তি ও ফক্বীহদের অর্ন্তভূক্ত ছিলেন। হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার কোন সমালোচনা করেন নাই। এটাও বলেন নাই উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহন করা যাবে না। বরং প্রশংসাই করেছেন।
উনার সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
اَبُوْ جَعْفَرَ مُـحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ بْنِ مُوْسٰى بْنِ بَابَوَيْهِ الْقُمِّيِّ (۳۰۶-ـ۳۸۱هـ)، يُعْرَفُ بِالشَّيْخِ الصُّدُوْقِ، مُتَكَلِّمٌ، مُـحَدِّثٌ، حَافِظٌ، مُفَسِّرٌ، مِنْ كِبَارِ فُقَهَاءِ الشِّيْعَةِ الْإِمَامِيَّةِ نَزَلَ بِالرَي، وَارْتَفَعَ شَأْنَهَ فِـيْ خُرَاسَانَ، وَحَدَّثَ بِبَغْدَادَ لَه كِتَابُ ‘التَّوْحِيْدُ’، وَكِتَابُ ‘دِيْنِ الْاِمَامِيَّةِ’، وَ’التَّفْسِيْرُ'(۲
অর্থ: আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী (৩০৬-৩৮১ হিজরী)। তিনি সত্যবাদী শায়খ, বক্তা, মুহাদ্দিছ, হাফিয, মুফাসসির, ইমামী শিয়াগণের ফক্বিহদের অন্যতম বড় ফক্বিহ হিসেবে পরিচিত। তিনি রয় নামক স্থানে আবির্ভূত হয়েছেন এবং উনার শান খোরাসানেও বুলন্দ ছিল, আর তিনি বাগদাদে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। আত-তাওহীদ, দ্বীনুল ইমামিয়্যাহ, আত-তাফসীর নামে তার কিতাব রয়েছে। (আল-ই’তিক্বাদ লি ছ‘য়িদ আন-নীসাপুরী, ১/২৭)
হযরত যারকানী রহমতুল্লাহি উনার কিতাবে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী সম্পর্কে বলেন-
مُـحَمَّدُ بْنُ عَلِيَّ بْنِ الْـحُسَيْنِ بْنِ مُوْسٰى بَابَوَيْهِ الْقُمِّيِّ، وَيُعْرَفُ بِالشَّيْخِ الصَّدُوْقِ: مُـحَدِّثٌ إمَامِيُّ كَبِيْرٌ، لَـمْ يَرَ فِي الْقُمِّيِّيْنَ مِثْلَهُ. نَزَلَ بِالرَّيِّ وَارْتَفَعَ شَأْنُه فِيْ خُرَاسَانَ، وَتُوُفَّيْ وَدُفِنَ فِي الرَّيِّ.لَه نَـحْوُ ثَلَاثـِمِئَةِ مُصَنَّفٍ، مِنْهَا (اَلْاِعْتِقَادَاتُ- ط) وَ( مَعَانِـيُ الْاَخْبَارِ- خ) وَ( الْاَمَالِـيُّ- خ) وَيُعْرَفُ بِالْمَجَالِسِ، وَلَعَلَّه ُ(مَـجَالِسُ الْمَوَاعِظِ فِي الْـحَديْثِ- خ) وَ( عُيُوْنُ أَخْبَارِ الرِّضَى- ط) وَ( الشِّعْرِ) وَ(السُّلْطَانِ) وَ( التَّارِيْخِ) وَ(الْمَصَابِيْحَ) فِـي الْـحَدِيْثِ وَرِوَاتُه، وَ(إِكْمَالُ الدِّيْنِ وَإتْـمَامُ النِّعْمَةِ- ط) جُزْءٌ مِّنْهُ، وَ(الْـخِصَالُ- ط) فِي الْاخْلَاقِ، وَ( عَلَّلُ الشَّرَائِعَ وَالْاَحْكَامِ- خ) وَ( التَّوْحِيْدَ) وَ( الْمِقْنَعِ- ط) فِقْهٌ، وَ( الْـهِدَايَةُ- ط) وَ( مَنْ لَّا يَـحْضُرُهُ الْفَقِيْهُ- ط)
অর্থ: মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী (৩০৬-৩৮১ হিজরী, ৯১৮-৯৯১ ঈসায়ী)। তিনি সত্যবাদী শায়খ, ইমামীদের বড় মুহাদ্দিছ হিসেবে পরিচিত। কুম্মিয়ীনদের মধ্যে উনার মতো কাউকে দেখা যায়নি। তিনি রায় নামক স্থানে বসবাস করেন আর তার শান-শওকাত খোরাসানেও বুলন্দ হয়েছিলো। তিনি রায় নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই উনাকে দাফন করা হয়। উনার প্রায় তিনশত রচনাবলী ছিলো। তার মধ্যে আল-ই’তিক্বাদাত, মা‘য়ানিল আখবার, আল-আমালী (যেটি মাজালিস নামে পরিচিত ছিলো, সম্ভবত: ঐটির নাম মাজালিসুল মাওয়া‘য়িয), উয়ূনু আখবারির রিদ্বা, আশ-শি’র, আস-সুলত্বন, আত-তারীখ, আল-মাছাবীহ (হাদীছ ও তার রিওয়ায়াত বিষয়ক), ইকমালুদ দ্বীন ওয়া ইতমামুন নি’মাহ, আল-খিছল (আখলাক্ব সংশ্লিষ্ট), আলালুশ শারায়ি’ ওয়াল আহকাম, আত-তাওহীদ, আল মুনক্বাহ (ফিক্বহ বিষয়ক), আল-হিদায়াহ এবং মান লা ইয়াহদ্বুরুহুল ফাক্বীহ অন্যতম। (আল-আ’লাম লিয যারকানী- ৬/২৭৪)
আসমাউর রিজাল থেকে প্রমাণ হলো তিনি অত্যান্ত বিজ্ঞ আলিম, সত্যবাদী শায়খ, হাফিজে হাদীছ, মর্যাদাবান, শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ ও অসংখ্য কিতাবেরও মুছান্নিফ ছিলেন। কাজেই, উনার কিতাব হতে হাদীছ শরীফ গ্রহণের ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন অবকাশ ও সযোগ নেই।
এরপর যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে এ হাদীছ শরীফখানা শুধু বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একাই বর্ণনা করেননি। বরং পরবর্তীতে অনেক বিখ্যাত সুন্নী মুহাদ্দিছ ও আলিম এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা গ্রহণ করে উনাদের কিতাবে উল্লেখ করে দলীল দিয়েছেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী) উনার নাম মুবারক শোনেননিএমন কেউ কি পৃথিবীতে আছে?
ইলমের এমন কোন শাখা নাই যেখানে উনার ব্যাপক বিচরণ নেই। প্রতিটি স্থানেই উনার ইলমের বহিঃপ্রকাশ। আর হাফেজ আবুল হাসান আবদুল গাফফার আল ফারেসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য হুজ্জত ও আইয়িম্মায়ে দ্বীনের ইমাম। সুবহানাল্লাহ! (তারীখে ইবনে আসাকির ৫৫/২০০)
এই মহান ইমাম উনার অসংখ্য রচনাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি কিতাবের নাম হচ্ছে ‘সুলওয়াতুল আরিফীন’। কিতাবখানা বিখ্যাত প্রকাশনা দারুল কুতুব আল ইলমিয়া থেকে দুই খন্ডে প্রকাশিত। এ কিতাবের ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠায় তিনি একটা বাব রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন
بَابُ فِـيْ ذِكْرِ خُلِقَ نُوْرُ النَّبِـيِّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ
(বাবু ফী যিকরি খুলিকা নূরুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে। উক্ত অধ্যায়ে সর্বপ্রথম যে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সে বিষয়ে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন-
خَلَقَ اللهُ تَعَالٰى نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَبْلَ اَنْ يَّـخْلُقَ الْاَشْيَاءَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত ঐ পবিত্র হাদীছ শরীফ এনেছেন-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ اَبِـيْ طَاِلِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ خَلَقَ اللهُ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَبْلَ اَنْ يَّـخْلُقَ السَّمَاوٰتِ وَالْاَرْضَ وَ الْعَرْشَ وَ الْكُرْسِيَّ وَالْـجَنَّةَ وَ النَّارَ
অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ! (সুলওয়াতুল আরেফীন ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠা, লেখক : হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী), প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই সনদের পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও গ্রহণ করেছেন। আর ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আরো ১০০ বছর আগে (অর্থাৎ এখন থেকে ১০৩৬ বছর আগে) একজন বিখ্যাত আলিম, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “শরফুল মুস্তফা” কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সনদ সহকারে বর্ণনা করেন-
رَوَي عَبْدُ اللهِ بْنِ مُبَارَكٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدِ الصَّادِقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ اَبِـيْ طَاِلِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّ اللهَ تَباَرَكَ وَتَعَالٰى خَلَقَ نُوْرَ مـُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلهٖ قَبْلَ اَنْ يَّـخْلُقَ السَّمَاوٰتِ وَالْاَرْضَ وَ الْعَرْشَ وَ الْكُرْسِيَّ وَاللَّوْحَ وَالْقَلَمَ وَالْـجَنَّةَ وَالنَّارَ
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত ইমাম জাফর ছদিক্ব আলাইহিস সালাম) উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত দাদা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ (শরফুল মুস্তফা ১ম খন্ড ৩০৫-৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৭৯; লেখক: ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত: ৪০৬ হিজরী; প্রকাশনী: দারু বাশায়িরিল ইসলামিয়া, আল মক্কাতুল মুকাররমা)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফও ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহি যে সনদে বর্ণনা করেছেন সেই ছহীহ সনদে বর্ণিত। এই সনদে রয়েছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৪ জন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক। আর সনদের শেষে রয়েছেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের আমীরুল মু’মিনীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা। আর ইমাম খারকুশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যন্ত যে বিচ্ছিন্নতা আছে তা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মা’য়ানিল আখবারে” দূর করে দিয়েছেন। সেখানে মুত্তাছিল সনদে বর্ণনা করা হয়েছে। সনদ খানা হচ্ছে-
حَدَّثَنَا الْـحَاكِمُ اَحْمَدُ بْنُ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ الْمَرْوَزِيِّ قَالَ حَدَّثَنَا اَبُوْ بَكْرٍ مُحَمَّدِبْنِ اِبْرَاهِيْمَ الْـجُرْجَانِـيٌّ، قَالَ حَدَّثَنَا اَبُوْ بَكْرٍ عَبْدُ الصَّمَدِ بْن يَـحْيَى الْوَاسِطِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا الْـحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ الْمَدَنِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْمُبَارَكِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدٍ الصَّادِقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنْ اَبِيْهِ، عَنْ جَدٍّ، عَنْ اَبِيْهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِـيْ طَالِبٍ
অর্থ: হযরত হাকিম আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান মারওয়াযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম জুরজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আবু বকর আব্দুস ছামাদ বিন ইয়াহইয়া ওয়াসিত্বী তিনি বর্ণনা করেন, হাসান বিন আলী মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন, হযরত জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত বাকির আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার দাদা (সাইয়্যিদুনা হযরত যাইনুল আবেদীন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে। আমরা এখানে মুত্তাছিল সনদখানা দেখতে পেলাম।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত “সাফীনাতুল কাদরিয়া” কিতাবের অন্তর্গত রেসালা সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আল মোল্লা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছলাতুল কুবরা ফি শরহে ছলাতি সুগরা কিতাবের ৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-
وَعَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ اَبِـيْ طَاِلِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّه قَالَ اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى خَلَقَ نُوْرَ مـُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ اَنْ يَّـخْلُقَ السَّمَاوٰتِ وَالْاَرْضَ وَ الْعَرْشَ وَ الْكُرْسِيَّ وَاللَّوْحَ وَالْقَلَمَ وَالْـجَنَّةَ وَالنَّارَ
অর্থ: খলীফতুল মুসলিমীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত। আর এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুতরাং এ বিষয়ে যারা বিরোধীতা করছে তারা যে স্পষ্ট বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেটা আবারো প্রমাণিত হলো।
নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের সবচাইতে বিরোধিতা করে যে কিতাবখানা লেখা হয়েছে সেটার নাম হচ্ছে “মজমু ফি কাশফিল হাক্বীক্বী আয যুযউল মাফকুদ মিন মুছান্নাফী আব্দির রাজ্জাক” (প্রকাশনা: দার আল মুহাদ্দিছ , রিয়াদ; প্রকাশ সন ১৪২৮ হিজরী)
উক্ত কিতাবের ২৩৭ পৃষ্ঠাতেও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লোখ করে এর টীকায় বলা হয়েছে-
اَقُوْلُ: مَنْ يُّقَارِنُ هٰذِه الرِّوَايَةُ الشِّيْعِيَّةُ بِالرِّوَايَةِ الْـمَزْعُوْمَةِ الْـمَنْسَبَةِ اِلٰـى جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يـَجِدُ بَيْنَهُمَا تَشَابَـهًا كَبِيْرًا، وَكَأنَ الرِّوَايَتَيْنِ قَدْ خَرَجَتْ مِنْ مَّصْدَرٍ وَاحِدٍ، وَمِنْ نَفْسِيْ وَاحِدٍ
অর্থ: আমি বলি: “যারা শিয়া স¤প্রদায়ের এ বর্ণনাকে হাদিছে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দিকে মিলিত করে তাদের উৎস স¤প্রদায়ের মধ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে। এবং উভয় বর্ণনায় একই মাছদার ও একই নফস থেকে বের হয়েছে”।
দেখেন বিরোধিতাকারীদের কিতাবে সর্বোচ্চ শিয়াদের বর্ণনা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানেও হযরত ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মীর বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা যাবে না, উনি হাদীছ জাল করতেন এসব কোন অভিযোগ নেই। কারণ উনার ইলিম, আমানতদারীতা, বিশ্বস্ততা হাদীছ শরীফের পারদর্শিতা নিয়ে আপত্তি করার মত কোন সুযোগই নেই। তাই বিরোধিতাকারীরাও বিরোধিতা করতে গিয়ে শুধুমাত্র শিয়াদের বর্ণনা বলেই ক্ষান্ত হয়েছে।
সুতরাং, প্রমাণ হলো যে, সর্বপ্রথম নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি এবং তা ছহীহ মুত্তাছিল সনদে প্রমাণিত আর হযরত ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মীর বর্ণনাও শতভাগ গ্রহণযোগ্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন।
-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ