মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী পশ্চিমারা মুসলিম বিশ্বে মানবাধিকারের ত্রাণকর্তা সেজে বসে। যা মূলত ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, শঠতা ও ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং মানবাধিকারের বুলি কপচানোর নামে মুসলিম দেশ দখলের চরম দুরভিসন্ধি ও গভীর ষড়যন্ত্র বিদ্যমান (২)

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

বর্তমানে দুনিয়াব্যাপী যুদ্ধ বিগ্রহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার একমাত্র কারণ হলো আমেরিকার অস্ত্র উৎপাদন। প্রচারিত হিসেব মতে, আমেরিকার সৌজন্যে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী তিনশ’ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনা-বেচা হয়। গত শতাব্দীর আশির দশকে আমেরিকা অস্ত্র উৎপাদনের জন্য পঁচিশ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে। কোনো দেশের ইতিহাসে যুদ্ধের সময়েও এই পরিমাণ অর্থ অস্ত্র উৎপাদনের পেছনে ব্যয় করার নজির নেই, অথচ আমেরিকায় সেটা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ঘটেছে। আর ওই আশির দশকে পঁচিশ হাজার কোটি ডলার ছিল আমেরিকার বাজেট ঘাটতি। আমেরিকায় বাজেটের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় সামরিক খাতে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, করদাতাদের প্রতি ডলার করের তিপ্পান্ন পারসেন্ট যায় সামরিক খাতে। কারণ দেখানো হয় যে, দেশ বিপদের সম্মুখীন। বিপদটি অবশ্যই উদ্ভাবিত। বিগত দুশ বছরে দুশটির অধিক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে যেখানে উদ্ভাবিত বিপদের সৃষ্টি করে আমেরিকা সাম্রাজ্য বিস্তার অথবা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত হয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৮৪৬-এর মেক্সিকো যুদ্ধ দিয়ে প্রথমে প্রতিরক্ষা বিভাগ স্বেচ্ছাসৈনিক নিয়োগের জন্য দু’ডলার প্রদানের ঘোষণা করে। তাতে কেউ এগিয়ে না আসাতে পুরস্কারের পরিমাণ বাড়াতে বাড়াতে শেষে মাথা পিছু একশ’ একর জমি প্রদানের ঘোষণা করা হলো। তাতেও যখন যথেষ্ট সংখ্যক স্বেচ্ছাসৈনিক পাওয়া গেল না, তখন জ্যাকরি টেলরের সেনাপতিত্বে কিছু সংখ্যক আমেরিকান সৈন্যকে মেক্সিকো সীমান্তে প্রেরণ করা হলো নানারকম বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মতলবে। এই ঘটনাটি কিন্তু আমেরিকানদের জানতে দেয়া হয়নি।

তারপর যখন মেক্সিকান সীমান্তবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করল তখন ফলাও করে প্রচার করা হলো যে, মেক্সিকানরা নির্দোষ-নিরপরাধ আমেরিকানদের হত্যা করছে। সৈন্য শব্দটি ব্যবহৃত হলো না। গোটা জাতি ক্ষোভে ফেটে পড়ল। শুরু হলো পুরোদমে আক্রমণ। এরই ফলে অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়া এবং কলোরাডোর কিছু অংশ আমেরিকার মানচিত্রে সামিল হলো।

রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান স্বতন্ত্রতা ভঙ্গ করে ব্রিটিশদের পদে যোগদানের জন্য যা করেছিল সেটা পরে ঐতিহাসিকদের চমকে দেয়। এটা সবারই জানা যে, পার্ল হার্বারে জাপানি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা যুদ্ধে যোগদান করেছিল। তবে যুদ্ধে যোগ দিয়েই সবার আগে উত্তর-আফ্রিকায় জার্মানদের হাত থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশ বাঁচাতে এক অতিকায় সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে। এই ঘটনা থেকে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ-প্রীতি মনোভাবটা স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রসঙ্গে আসি, ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগ এবং উচ্চপদসহ মার্কিন সামরিক অফিসাররা জাপানের আক্রমণ করার অভিসন্ধি সম্বন্ধে ভালো মতন অনুমান করতে পারছিল।

সেই সময়ে লুফ্তওয়াফা (নাৎসী বিমানবাহিনী) প্রতি রাতে লন্ডন শহরে বোমাবর্ষণ করছে। তিপ্পান্ন দিনের এই লাগাতার বোমাবর্ষণকে পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকদের সমসাময়িক ইতিহাস রচনায় প্রভূত সমবেদনার সঙ্গে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। অবশ্য উপেক্ষিত দশ লক্ষাধিক পরাধীন ভারতের সৈনিকেরা ইতিহাসের পাতাতেও উপেক্ষিতই থেকে গেছেন।

লন্ডন ব্লিৎসের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদী এবং বর্ণবৈষম্যবাদী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ক্ষণে ক্ষণে রুজভেল্টের দ্বারস্থ হচ্ছে। চার্চিলের মামা বাড়ি আমেরিকায় বলে সে আধা-আমেরিকান। ওর লেখা ইংরেজিভাষীদের ইতিহাস (History of English-Speaking People) বইটিতে আমেরিকানদের প্রতি যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে তা পড়ে বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, ব্রিটিশদেরকে খেদানোর ঘটনায় বাহবা দেয়ার লোক সে নয়।

চার্চিল এবং রুজভেল্টের মধ্যে রাতের পর রাত হোয়াইট হাউসে মদ্যপ অবস্থায় যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলত। রুজভেল্টের শরীর তখন একদমই ভালো যাচ্ছিল না। তার স্ত্রী এলেনা স্বামীর সুরাপানের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী কাটানোর ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। কিন্তু আধা-আমেরিকান এবং বর্ণবৈষম্যবাদী চার্চিলর সকাতর আবেদন-নিবেদনে রুজভেল্ট ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে নাৎসী আক্রমণের চাপে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রুজভেল্ট বড়ই বিচলিত হয়ে পড়ে। সুতরাং রুজভেল্টের অ্যাংলো-স্যাকসন সাম্রাজ্যবাদকে চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সব রকম সাহায্য করাটাই স্বাভাবিক। যাই হোক, গুপ্তচর বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জাপানী আক্রমণের সমস্ত আঁচ পাওয়া সত্ত্বেও পার্ল হার্বারে নৌ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়নি।

৭ই ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে পার্ল হার্বারে জাপানী বিমানের হানায় দু’হাজার মানুষ মারা গেলে রুজভেল্ট হর্ষিত হয়ে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। পরে নৌ সেনাধ্যক্ষ এবং অন্যান্য সেনাপতিরা একজোট হয়ে রুজভেল্টকে জাপানী আক্রমণের গুপ্তচর তথ্য ব্যক্ত না করার জন্য তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে পত্র লেখে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধটি ছিল রাষ্ট্রপতি লিনডন জনসনের অনুগ্রহ! গল্পটি তৈরি করা হয়েছিল যে, টনকিন উপসাগরে আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। এইভাবে নতুন নতুন গল্প সৃষ্টি করে ১৯৮৬তে লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ; ১৯৮৩ সালে গ্র্যানাডাতে আক্রমণ করা থেকে নিয়ে ২০০৩-এ ইরাক আগ্রাসন আমেরিকার সুদীর্ঘ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পর একমেরু বিশ্বব্যবস্থা বহাল রাখতে আমেরিকার দ্বারা যুদ্ধ বাঁধানোর ঘটনা যত বাড়ছে, জনসমক্ষে আমেরিকার প্রতারণার ঘটনা আরো অবিশ্বাস্য হয়ে উঠছে।

আজ সমস্ত পৃথিবী বিরোধিতা করলেও আমেরিকা বিনা কৈফিয়তে, সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে যুদ্ধ বাঁধায়। এই অনধিকার যুদ্ধকেই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বলে। কারণগুলি অবশ্য খুবই গালভরা, যেমন মানবাধিকার রায় হস্তক্ষেপ, নারীমুক্তির দাবি, নীতিবিবর্জিত অস্ত্র ব্যবহারের আশু বিপদ প্রতিহত করা ইত্যাদি। যেমন, এক সময় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যগুলি বলত, শ্বেতাঙ্গ মানুষের দায়, সভ্যতার দায়, সভ্য করার দায়, উন্নত করার দায়, ইত্যাদি।

সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধগুলো চালিয়ে যাবার জন্য আমেরিকার বিশ্বব্যাপী সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলির উৎপত্তি ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময় থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েতেও কয়েকটি ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সোভিয়েতেরও শিবির ছিল, তবে আমেরিকার শিবির সংখ্যা মোট একশটি দেশে সতের হাজার, যেটা সোভিয়েত শিবির সংখ্যা থেকে অনেক বেশি। ১৯৮৯ সালের পর সোভিয়েতের বিদেশী ঘাঁটিগুলি উঠে গেল, কিন্তু আমেরিকার ঘাঁটিগুলি উঠে যাওয়ার বদলে বেড়ে গেল।

আসলে একবার যদি পৃথিবীর কোনো দেশে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির স্থাপন করা হয় তাহলে সেখান থেকে তাকে সরানো যায় না। নিত্যনতুন উদ্ভাবিত বিপদের সৃষ্টি করে ঘাঁটিগুলোকে তুলতে দেয়া হয় না। যেমন ১৯৫৩ সালে আমেরিকা মাত্র চারদিনের নোটিশে গ্রীনল্যান্ডে দু’লক্ষ তিরিশ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। এই জায়গাটি আমেরিকা থেকে সোভিয়েটের বিপক্ষে বিমানে জ্বালানি নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো।

আজ পঞ্চাশ বছরের উপর হয়ে গেল এবং সোভিয়েত ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে গেলেও মার্কিন বায়ুসেনা এখনো সেখানে অনড়। আবার প্রশান্ত মহাসাগরে ওকিনাওয়া দ্বীপটিতে আমেরিকার ঘাঁটি স্থাপনের কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের মূল ভূখ-ে হানা দেয়ার জন্য। এই উদ্দেশ্য পূরণের আগেই অবশ্য অ্যাটম বোমার প্রহারে জাপান আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু আমেরিকা ওই ওকিনাওয়ার ঘাঁটি এখনো ধরে রেখেছে। কোরিয়ান যুদ্ধের সময়ে আমেরিকা চীনে হানা দেয়ার মতলবে ছিল। তারপর ভিয়েতনাম যুদ্ধে বি-৫২ বোমারু বিমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে সেখানে সৈন্যদের জঙ্গলে লড়াই করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং বলা হয় যে, পূর্ব প্রাচ্যের কোথাও প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করা হবে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-মুহম্মদ জিসান আরীফ

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৩৩

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪

চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮

কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা