সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
ইয়াবা এমন একটি মাদক, যা মানুষকে শুধু মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেয় না মৃত্যুর আগে ওই ইয়াবাসেবীকে পাগলে পরিণত করে ফেলে। প্রাথমিকভাবে ইয়াবার এই ভয়ঙ্কর রূপ কেউ বুঝতে পারে না। এমনকি সেবনকারী নিজেও বুঝতে পারে না যে, তার শরীর ও মন কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু একপর্যায়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, শুধু সেবনকারী নয়, তার পুরো পরিবার ইয়াবার যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে ওঠে। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর এমন প্রমাণ পেয়েছেন মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বলার অপেক্ষা রাখেনা, প্রাথমিকভাবে ইয়াবা শরীরে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে দেয়, যার কারণে সে বুঝতে পারে না কী করবে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এক সময় ভয়ঙ্কর কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব সব থেকে বেশি থাকে। একটি কাজ করলে পরে তার ফল কী হবে সেটা ভাবে না। সেবনের একপর্যায়ে সে ধীরে ধীরে তার পাশে একটি অবাস্তব জগৎ তৈরি করতে থাকে। কল্পনায় সে তার চার পাশের মানুষদের শত্রু ভাবতে শুরু করে। আত্মীয়-স¦জন, ভাইবোন, স্ত্রী, স¦ামী-সন্তান বাবা-মা সবাইকে শত্রু ভাবতে শুরু করে। একপর্যায়ে গিয়ে ইয়াবা সেবনকারী নিজেকেই শত্রু ভাবতে শুরু করে। সে তখন অদৃশ্য শব্দ শুনতে পায় এবং অদৃশ্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তু দেখতে পায়। তার কাছে মনে হয় তার নিজের ছবিই তাকে হত্যা করবে। কাউকেই বিশ্বাস করতে পারে না। এমনকি নিজেকেও না। এসব ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে সে পাগল হয়ে যায়। যেকোনো মাদকই মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, যার কারণে স¦াভাবিক চিন্তা করতে পারে না। তবে এটি হয় যখন ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত থাকে। কিন্তু ইয়াবার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। ইয়াবা সেবন করতে করতে একপর্যায়ে সব সময়ের জন্য মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। হেরোইন ও ইয়াবা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী মাদক। হেরোইন শরীরকে নিস্তেজ করে দেয়। আর ইয়াবা শরীরে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। মাদক দু’টি বিরোধমুখী হলেও ভেজাল হওয়ায় হেরোইন সেবনকারীরা ইয়াবাকেই বেছে নিচ্ছে। কারণ দুই মেরুর হলেও একপর্যায়ে দু’টিই শরীরকে নিস্তেজ করে দেয়। প্রথমে ইয়াবা ট্যাবলেট ভালো পাওয়া গেলেও বর্তমানে ইয়াবাতেও মারাত্মকহারে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। মাদকাসক্ত রোগীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, ধরন ও প্রকৃতি দেখে বোঝা যায় তারা ভেজাল মাদক গ্রহণ করে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে ইয়াবায় আসক্তরা শুধু সেবনকারী নয় দ্রুত ইয়াবা ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। অন্য ধরনের মাদকসেবীদের ক্ষেত্রে অতীতে যা এত ব্যাপকতা লাভ করেনি। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র সব শ্রেণীর ইয়াবা সেবনকারীরা এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
মিয়ানমারের সীমান্তে ৩৭টি ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ওই এলাকা খুবই কাছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় চোরাচালানিদের মাধ্যমে জীবনঘাতী এই মাদক ইয়াবা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে। ইয়াবার ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে এদেশের যুব সমাজ। বাড়ছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সংবাদে এসেছে, কারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে খোদ এমপি থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। তাদের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে এ সর্বনাশা ব্যবসা।
মিয়ানমার সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গোপন প্রতিবেদনেও এ তথ্য রয়েছে।
এদিকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ শাখার একাধিক গোপন প্রতিবেদনে ইয়াবা ব্যবসার জন্য টেকনাফের (কক্সবাজার-৪) সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রহমান বদিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাংসদের পাঁচ ভাই ও তার স¦জনেরা ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। তাঁদের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাংসদের দুই ভাই আবদুল আমিন ও আবদুস শুক্কুর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট কিনে সপরিবারে বসবাস করে। বাকি তিন ভাই থাকে টেকনাফে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডিলার জাহিদ হোসেন ওরফে জাকু বদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। জাহিদ হোসেনের ছেলে রাফচানের নামও তালিকায় আছে।
স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় আরও আছে পৌর কাউন্সিলর ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়ার জামাতা নূর হোসেনের নাম।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটারই অরক্ষিত। সম্প্রতি সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী মোকাবেলায় বিজিবি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। যাচ্ছে ওষুধ, সার ও জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। অবৈধ পথে আসা এসব মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের সর্বত্র। সীমান্তে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৪০ গডফাদার। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ লোকজনসহ একাধিক জনপ্রতিনিধিও গডফাদারদের তালিকায় রয়েছে। শুধু টেকনাফে রয়েছে ২০টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। একই সাথে সীমান্তরক্ষী ও স্থানীয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সিন্ডিকেট সদস্যরা ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ মাদক পাচার করছে পানিপথে। কক্সবাজার ও টেকনাফসহ সীমান্ত এলাকায় রয়েছে তাদের বেশকিছু নকল ইয়াবা তৈরির কারখানাও। দেশের অভ্যন্তরে অবাধে মাদক প্রবেশ করায় প্রশ্ন উঠেছে বিজিবির ভূমিকা ও দক্ষতা নিয়ে। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সম্পর্কে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।
মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক প্রবেশ প্রতিরোধে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্র্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর হয় না। বিভিন্ন সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার সাথে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সখ্যতা এর অন্তরায়। মূলত সরকারের গাফিলতি, সরকারের প্রতিনিধিদের লোভ এবং সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাই ইয়াবা নামক নেশা ও বিষ দিয়ে এ জাতিকে এদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
মূলত সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ মুবারক তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা পাওয়া সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করেন। (আমীন)
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০