নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম ইরশাদ মুবারক করেন,
رَحِـمَكِ اللهُ يَا اُمِّىْ كُنْتِ اُمِّىْ بَعْدَ اُمِّىْ وتُشْبِعِيْـنِـىْ وَتَـعْرَيْنَ وتُكْسِيْـنِـىْ وَتَـمْنَعِيْـنَ نَـفْسَكِ طَيِّبًا وَتُطْعِمِيْـنِـىْ
অর্থ: “হে আমার মহাসম্মানিত মাতা! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি সম্মানিত রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মা আলাইহাস সালাম উনার পরে আপনি ছিলেন আমার মহাসম্মানিত মাতা আলাইহাস সালাম। আপনি আমাকে পরিতৃপ্ত করতেন- আপনি না পরে আমাকে পরাতেন এবং ভালো কিছু নিজে না খেয়ে আমাকে খাওয়াতেন। (আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারনী ১৮/৮২)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর থেকে সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে বেমেছালভাবে নিয়োজিত মহান ব্যক্তিত্ব উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ্ বিনতে আসাদ আলাইহাস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি এমন বেমেছালভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে আনজাম দিয়েছেন যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ‘উম্মী বা’দা উম্মী’ বলে সম্বোধন মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! আল এ জন্যই উনাকে ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম’ বলে সম্বোধন ও স্মরণ করাই আদব।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি খাজা আবু তালিব উনার আহলিয়া। সে হিসেবে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চাচী। তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত মাতা। তাছাড়া তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আসাদ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত মেয়ে।
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় যখন নিকটবর্তী হন, তখন তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ খাজা আবূ তালিব উনাকে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ডেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান মুবারক বর্ণনা করেন। উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হওয়ার জন্য তাকীদ মুবারক দেন। খাজা আবূ ত্বালিব তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা দুজনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত মনোযোগী হন। যদিও খাজা আবু তালিব তিনি টানা ৪২ বছর পবিত্র খিদমত মুবারকে আনজাম দিয়ে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে আনজাম দেন প্রায় ৫০ বছর। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনিই সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার ৭ম বছর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শি‘আবে আবী ত্বালিবে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে তিন বছর সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন।
তখন খাদ্য পৌঁছাতে কাফির-মুশরিকদের কর্তৃক বাঁধা দেয়ার কারণে উনারা খাদ্য না পেয়ে গাছের লতা-পাতা, ছাল-বাকল পর্যন্ত খেয়েছিলেন। শি‘আবে আবী ত্বালিবের সেই কঠিন সময়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি কল্পনাতীতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হিজরত মুবারক করার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক করতেন। তিনি প্রায় সময় উনাকে দেখার জন্য উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিতেন এবং মাঝে মাঝে সেখানে দুপুরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বায়লুলা মুবারকও করতেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে বিভিন্ন বিষয় সম্মানিত হাদিয়া মুবারক পাঠাতেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বওয়া মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লেবাস মুবারক তথা একখানা মহাসম্মানিত জামা মুবারক) দিয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে কাফন মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে নেমে উনার পাশে শুয়েছেন এবং উনার নেক আমল মুবারকসমূহ উনাদের কথা উল্লেখ করে উনার প্রশংসা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
جَزَاكِ اللهُ مِنْ اُمِّ وَرَبِيْـبَةٍ خَيْـرًا فَنِعْمَ الْاُمُّ وَنِعْمَ الرَّبِيْـبَةُ كُنْتِ لِــىْ
‘আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাতা এবং প্রতিপালনকারিণী! মহান আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন! আপনি ছিলেন আমার জন্য একজন অতি উত্তম মা এবং অতি উত্তম প্রতিপালনকারিণী।’ সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল মদীনা লিইবনে শাব্বাহ্ ১/১২৪)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৪৬ খানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীগণ সংগ্রহ করতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য করতে পেরেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ছহিবে ছমাদ, ছহিবে সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, মামদূহ মুরশিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শান জানার এবং উনার প্রতি পরিপূর্ণ হুসনে যন পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।