সম্প্রতি “দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকায় খবরটি বক্স আইটেমে প্রকাশিত হয়েছিলো। হেডিং হয়েছিলো- “ওরা অপরাধ জগতে এলো যেভাবে”
খবরে বলা হয়, বিষয়টি ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। স্কুলপড়–য়া ছাত্রদের হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। আর এই অস্ত্র হাতে নিয়ে করছে খুন-খারাবি এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে এই বয়সে খুন অথবা সন্ত্রাসী কা- করার মত জ্ঞান-বুদ্ধি তাদের হওয়ার কথা নয় এবং এই বিষয় কোনভাবে নজরে আনার মত নয় বলে কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
এলাকার বড় ভাইয়ের নেশা সেবন এবং অস্ত্র ব্যবহার করা দেখে তারা এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তাদের সংস্পর্শে গিয়ে অপরাধে পা দিয়েছে। অপরদিকে টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে হিন্দি ছবি দেখে কিভাবে ভিলেন অস্ত্র হাতে অপরাধ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সে ঘটনাও তাদের মনে সে আগ্রহ জাগায়। সেই ছবি দেখে তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছে। গুলি করে হত্যা করার পর তাদের সাজা কিংবা ফাঁসি হবে সেই বিষয় তাদের জানা নেই বলে পুলিশের নিকট স্বীকার করেছে।
সাম্প্রতিককালে গুলশান পিংক সিটির নিকট চার স্কুল ছাত্র প্রাইভেট কার চালক রুবেল হায়দারকে (৩০) মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে তার কারটি ছিনিয়ে নেয়। এই হত্যাকা-ে গ্রেফতারকৃত চার স্কুল ছাত্র নূরুল আফসার ওরফে বাবু (১৫), ফাহাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (১৫), শাহরিয়ার মল্লিক ওরফে অনিক (১৪) ও আব্দুল্লাহ আল রাহিম ওরফে রকি।
গত ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে চার স্কুল ছাত্র গুলশান পিংক সিটির অদূরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কোন গাড়ি ছিনতাই করা যায় এ বিষয়ে ভাবতে থাকে এবং বিভিন্ন গাড়িকে অনুসরণ করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর নিহত প্রাইভেটকার চালক রুবেল হায়দার ঐ স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। গাড়িতে কোন আরোহী নেই। ঐ সময় বাবু, ফাহাদ ও অনিক প্রাইভেট কারটি থামানোর সিগন্যাল দেয়। ছোট ছোট ছেলে দেখে চালক রুবেল গাড়ি থামায় এবং কারণ জানতে চায়। উত্তরে তিন ছেলে বলে উঠে, ভাইয়া আমাদের আব্বু-আম্মু পিংক সিটিতে মার্কেট করছেন এবং আমাদেরকে একটু সেখানে নামিয়ে দেবেন। অনুরোধ করার পর চালক রুবেল ছোট ছোট ছেলে মনে করে তাদের গাড়িতে উঠতে বলে। পিংক সিটির নিকট ফাঁকা জায়গায় যাওয়ামাত্রই তিন ছাত্র বলে উঠে, ভাইয়া এখানে গাড়ি থামান, আমরা নেমে যাব। থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অনিক পিস্তল দিয়ে চালক রুবেলের মাথায় গুলি করে। ফাহাদ রুবেলকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। ফাহাদ কার চালায়, তারা সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চালক রুবেল ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
চার স্কুল ছাত্র ডিবির কর্মকর্তাদের জানায়, এলাকার নেশাখোর ও উঠতি বয়সের সন্ত্রাসী ভাইয়াদের সংস্পর্শে গিয়ে তারা অপরাধ করে বড় লোক হওয়ার কাহিনী শোনে।
বাসা বাড়িতে হিন্দি ছবিতে ভিলেন খুন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার দৃশ্য তারা নিয়মিত দেখতো। জানা যায়, বাবুর ভগ্নিপতি বাংলা ছবির ভিলেনের অভিনয় করেন। এই বিষয় দেখে তারা বড় লোক হওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষয়টি এলাকার পরিচিত উক্ত মিলনকে জানায়। মিলন তাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে। তারা অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে জানে না। মিলন তাদেরকে অস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় মিলন থেকে চার স্কুল ছাত্র একটি গুলিভর্তি পিস্তল আনে। ল্যাপটপ বিক্রি করে তারা মিলনকে উক্ত ২৫ হাজার টাকা দেয়। কাজ শেষ করে পিস্তলটি ফেরত দেয়ার কথা। মিলন অস্ত্রটি রামপুরা এলাকার পেশাদার কিলার শাহজাদার বাহিনীর সদস্য লিয়াকতের নিকট থেকে ভাড়ায় আনে। চার স্কুল ছাত্র গুলশানে চালক রুবেলকে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করার পর দিন অস্ত্রটি মিলনের নিকট বুঝিয়ে দেয়। মিলন সেই অস্ত্রটি লিয়াকতের নিকট ফেরত দিয়েছে বলে ডিবির কর্মকর্তাদের জানায়। ডিবির কর্মকর্তারা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি। চার স্কুল ছাত্রের উক্ত ঘটনাটি তাদের প্রথম বলে ডিবির কর্মকর্তাদের জানায়।
স্কুলের ছাত্রদের প্রতি পিতা-মাতার পাশাপাশি স্কুল শিক্ষকদের দায়িত্ব কম নয়। ছাত্ররা ঠিকমত স্কুলে আসছে কিনা এবং নিয়মিত না আসলে বিষয়টি অভিভাবককে জানানো উচিত।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে এই সকল মেধাবী ছাত্র অপরাধে জড়ানোর সুযোগ পাবে না বলে ডিবির কর্মকর্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক/০৯-১১-২০০৮)
আসলে কি তাই? মূলতঃ এখানেই শুধু আমাদের দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরাই নয় সারাবিশ্বের অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনীই ভুল করে।
ছাত্রদেরকে শিক্ষক এবং পিতামাতা যতই তদারকি করুন কিন্তু তাদেরকে যখন হিন্দি ফিল্ম বা ফিল্ম অর্থাৎ টিভি চ্যানেলে প্রদর্শিত নাটক, সিনেমা ইত্যাদি দেখানো হবে তখন তাদের মধ্যে হারামের কু-প্রভাব পড়বেই। কু-ইচ্ছা জাগবেই। কু-খেয়াল, কু-মন্ত্রণা আসবেই।
সুতরাং আজকে চরম সময় উপস্থিত মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদ অনুসরণ করা। “ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি আঁকা, রাখা, দেখা, টিভি, ভিসিআর, সিনেমা দেখা ইত্যাদি সব হারাম।” আর কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হারাম থেকে হারামই তৈরি হয়”- এ উপলব্ধির জাগরণ ঘটানো।
টিভি চ্যানেলের অবাধ ব্যবহারের কারণেই সমাজে আজ স্কুল পড়ুয়া ছাত্র শুধু সন্ত্রাসীই নয়, অপহরণকারীই নয় বরং ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর খুনি।
গত ০৬ নভেম্বর ২০০৮-এর সব পত্রিকায় এসেছে দু’সন্তানের জননী সাগরিকা পরকীয়া প্রেমে মত্ত হয়ে আপন স্বামীকে ভাড়াটে খুনি দ্বারা হত্যা করে।
মূলতঃ এসব কিছুই হচ্ছে টিভি, সিনেমার কুফল। আজকে ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের ধর্মব্যবসার স্বার্থে টিভি, সিনেমার বিরুদ্ধে না বললেও সমাজের সব মানুষকে নিজেদের সংসার, সন্তান, সমাজ রক্ষার্থেই হারাম ছবি এবং ছবি নির্ভর সব মিডিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। সমাজ থেকে এগুলো উচ্ছেদ করতে হবে।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০