[সাধারণ মুসলমানের মনে খ্রিস্টান হিন্দু সম্পর্কে একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা রয়েছে যে- খ্রিস্টান মাত্রই মদ খায়, চরিত্রহীন। হিন্দুরাও অবাধে অশ্লীলতায় ভাসে। কিন্তু এর পেছনে মূলত কারণটা কি?
সাধারণ মানুষ সে প্রশ্নেও জর্জরিত হয়নি। উত্তরও খুঁজে নেয়নি।
জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে খ্রিস্টানরা যীশু খ্রিস্ট বলে। যীশুর নামে তারা বুকে ক্রুশ রাখে। কিন্তু এই যীশুরই প্রচুর নগ্ন ছবি তারা এঁকেছে। প্রকাশ করেছে। তাদের অনেকের রচনায়ই শুধু অশ্লীলভাবে প্রকাশ নয় এমনকি যীশুকে সমকামী বানিয়ে তারা অনেক সিনেমাও তৈরি করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
এবং আশ্চর্য হলেও সত্যি তাতে খ্রিস্টান দেশে দেশে কোনো প্রতিবাদ উঠেনি। সমালোচনার ঝড় উঠেনি। বিস্ফোরণ হয়নি।
এমনকি খোদ পোপরাও কোনো উচ্চ-বাচ্চ করেনি। আর এখানেই খ্রিস্টান মাত্রই চরিত্রহীন ও মাতাল হওয়ার কারণটা খুঁজে বের করা সহজ হয়।
অর্থাৎ কিনা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে খ্রিস্টানদের আক্বীদা খুবই খারাপ। আর যেহেতু নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে তাদের আক্বীদা খারাপ সেহেতু তাদেরও আমল অনিবার্যভাবে খারাপ অর্থাৎ তারা যখন বিশ্বাস করে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল করেছেন নাঊযুবিল্লাহ! পাপ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
তখন তারাও আর পাপ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। দ্বিধা করে না, ভয় করে না। পাপ থেকে বিরত থাকার উৎসাহ পায় না।
বলাবাহুল্য, বাইবেলে নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সম্পর্কে চরিত্রহীনতা মাতলামিসহ বহু অপবাদ দেয়া হয়েছে। আর মূলত সে কারণেই খ্রিস্টানরা জš§গতভাবে এসব পাপাচারে মগ্ন থাকে। নাঊযুবিল্লাহ। এবং এটা এখন এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে খোদ পোপরা পর্যন্ত একে একে সবাই শুধু ব্যভিচার নয় সমকামিতার মত জঘন্য পাপাচারে রীতিমত ভয়াবহ আসক্ত ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে চার্চের শিশুদের উপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নতুন কোনো ঘটনা নয়। যদিও চার্চের যাজকদের এসব কুকর্মের খতিয়ান ইহুদী-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় খুব কমই প্রকাশ হয়ে থাকে।
পাদ্রিদের পাপাচারে পিষ্ট পৃথিবী
যাজকদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় চাপের মুখে পড়েছেন ক্যাথলিকদের প্রধান যাজক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। গত ১৫ এপ্রিলের পর থেকে অস্ট্রিয়া, ইতালি, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে যাজকদের বিরুদ্ধে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন চালানোর বেশ কিছু অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। এ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চার্চের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ভ্যাটিকানের বিরুদ্ধেও মামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব নিপীড়ন বন্ধ করতে ব্যর্থতার জন্য পোপকে অভিযুক্ত করে তার পদত্যাগও দাবি করছে অনেকে। লন্ডনে এ দাবিতে মিছিলও বের করে ক্যাথলিকদের একটি দল। অবশ্য পোপ বলেছেন, এসব অভিযোগের কোনো প্রভাব পড়বে না ভ্যাটিকানের উপর।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সামাল দিতে না পারায় আয়ারল্যান্ডের একজন বিশপ পদত্যাগ করেছেন। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতিও দিয়েছে ভ্যাটিকান। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তোলপাড় চলছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব নিপীড়নের বিষয়ে জানলেও ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ভ্যাটিকান। এমনকি অনেক নিপীড়ক যাজককে সাজা না দেওয়ায় বর্তমান পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টকেও সরাসরি অভিযুক্ত করা হচ্ছে। যাজকদের নিপীড়নের তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় চাপের মধ্যে থাকার বিষয়টি ভ্যাটিকানও স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্যাথলিক পত্রিকা মন্তব্য করেছে, এখন সম্ভবত চার্চ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সঙ্কটজনক অবস্থা চলছে।
চার্চে কিংবা ধর্মীয় স্কুলে কিছু বিপথগ্রস্ত যাজকের হাতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। এসব ঘটনায় দোষী যাজকের বিচারের জন্য ভ্যাটিকানের একটি সংস্থাও রয়েছে। ডকট্রিনাল অফিস নামের এ সংস্থার কাছে যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের তিন হাজার অভিযোগ এসেছে গত ১০ বছরে। ২০০৫ সালে পোপের দায়িত্ব গ্রহণের আগে কার্ডিনাল জোসেফ রাৎজিঙ্গার (বর্তমান পোপের নাম) দীর্ঘ ২৪ বছর এ সংস্থার প্রধান ছিলো।
অভিযোগ উঠেছে, তখন অনেক যাজকের অপকর্মের কথা জানলেও কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তিনি।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে আর্চবিশপ থাকা অবস্থায় মিউনিখের ফাদার পিটার হুলারম্যানের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতেন বর্তমান পোপ। কিন্তু তাকে বহিষ্কার না করে বদলি করে দেয় সে। সম্প্রতি আদালতে ওই ফাদার অভিযুক্ত হন এবং মিউনিখের চার্চ তাকে বহিষ্কার করে। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর স্বয়ং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার জন্য ভ্যাটিকানের প্রতি অনুরোধ জানায়।
গত বছর আয়ারল্যান্ডের সংস্থা ‘ন্যাশনাল বোর্ড ফর সেইফগার্ডিং চিলড্রেন’ দেশটিতে ক্যাথলিক চার্চের পরিচালিত ইয়াতীমখানাগুলোতে শিশুদের উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করে। এসব অভিযোগ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে গত সপ্তাহেই পদত্যাগ করেন আয়ারল্যান্ডের বিশপ জন ম্যাগি। তার পদত্যাগের পর এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান বলে, আইরিশ যাজকদের অনাচারের জন্য আমরা লজ্জিত ও অনুতপ্ত।
সর্বশেষ ফাদার মার্সিয়া মারসিয়েল দেগোলাদোর অবৈধ যৌনাচারের কথা স্বীকার করে তারই প্রতিষ্ঠিত চার্চ। চার্চটি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানায়, কেবল শিশুদের
সঙ্গেই নয়, একাধিক নারীর সঙ্গেও তার যৌন সম্পর্ক ছিল। একাধিক অবৈধ সন্তানের জন্মও দিয়েছেন সে। (নাউযুবিল্লাহ)
তবে ভ্যাটিকান সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে রেভারেন্ড লরেন্স সি. মারফির যৌন নিপীড়নের ঘটনায়। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৫০ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ২৪ বছর একটি বধির স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় এ যাজক অন্তত ২০০ শিশুর উপর যৌন নিপীড়ন চালায়।
নিউইয়র্ক টাইমস ভ্যাটিকানের গোপন কিছু দলিল প্রকাশ করে দাবি করে, রেভারেন্ড মারফির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গেলেও ভ্যাটিকান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কয়েকজন বিশপের অনুরোধের পরও শাস্তি থেকে রেহাই পান মারফি।
পত্রিকাটি দাবি করে, ডকট্রিনাল অফিসের দায়িত্বে থাকা বর্তমান পোপ বিষয়টি গোপন রেখে মারফিকে রক্ষা করে। ফলে ১৯৯৮ সালে যাজকের মর্যাদা নিয়েই মৃত্যু হয় মারফির।
নিউইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করেছে, মারফিকে তার অপকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়ার চেয়ে চার্চকে কেলেঙ্কারি থেকে মুক্ত রাখতেই বেশি মনোযোগী ছিল ভ্যাটিকান। ওই যাজকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী পাঁচজন চারটি মামলা করেছে। এসব মামলার আইনজীবীরাই মারফির বিষয়ে ভ্যাটিকানের গোপন দলিল সংগ্রহ করেছেন। ভ্যাটিকান মারফিকে রক্ষার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র রেভারেন্ড ফেদেরিকো লমবার্দি বলেন, বধির শিশুদের যৌন নিপীড়নের মাধ্যমে ফাদার মারফি আইন লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ শিশুরা তার উপর যে পবিত্র বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, এর অবমূল্যায়ন করেছেন তিনি। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ আলম মৃধা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০