হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আরাইহিম উনারা উনাদের অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় বিষয় বা বস্তুগুলো কুরবান বা বিসর্জন দেয়ার জন্য জীবন মরণ রিয়াজত-মাশাক্কাত, চেষ্টা-কোশেশ করে থাকেন। উনারা রিয়াজত-মাশাক্কাতের দ্বারা প্রিয় বিষয়বস্তুগুলো পরিত্যাগ করতে করতে এমনই এক তবকা বা স্তরে পৌঁছেন যে, পার্থিব জীবনের কোন কিছুর প্রতি উনাদের কোন আকর্ষন থাকেনা। ফলে উনাদের দৃষ্টিপথে, মানষপটে মহান আল্লাহ পাক তিনিই আসেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সবকিছুকে ভুলে যান। উনাদের স্মৃতি থেকে মুছে যায়। আর তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িমী দিদার মুবারক বা দায়িমী হুযূরী লাভ হয়। যাকে ইলমে তাছাওউফ উনার পরিভাষায় ইহসান বলা হয়।
শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত হাকিম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন এক্ষেত্রে উজ্জল দলীল। তিনি প্রিয় ও পছন্দনীয় বিষয়বস্তু পরিত্যাগ করার জন্য জীবন-মরণ কোশেশে লিপ্ত ছিলেন।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এজন্য আমি নিজ নফসকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে নিযুক্ত করতে বহু চেষ্টা করেও সফল হতে পারলাম না। তখন আমার মনে এ কথা জেগে উঠল যে, মহান আল্লাহ পাক আমাকে মনে হয় দোযখের জন্যই পয়দা করেছেন। তবে দোযখীকে বাঁচিয়ে রেখে কি হবে এই ভেবে আমি জাইহুন নদীর তীরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেখানে একটি লোক পেয়ে আমি তাকে বললাম, ভাই! তুমি আমার হাত-পাগুলো একটু বেঁধে দাও। সে আমার কথামত তাই করে সেখান থেকে চলে গেল। আমি তখন সেই বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে নদীর তীরে চলে গেলাম। তারপর কোনরূপ গড়িয়ে আমি জাইহুন নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ভাবলাম এবার মরতে পারবো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। হঠাৎ আপনা হতেই আমার হাত পায়ের বাধন খুলে গেল। আর সহসা পানির একটি ঝলক এসে আমাকে ছিটকে নদীর উপকূলে উঠিয়ে দিল। এভাবে আমি আমার নিজের প্রাণ ত্যাগের ব্যাপারে বিফল হয়ে পড়লাম। তখন আমার ভিতরে এমন ইলিম-হিকমত ও মা’রিফাত-মুহব্বতের গুপ্ত এক রহস্য প্রবেশ করলো যে, তা আর আমার বলার সাধ্য নেই। তবে যা দেখলাম তাতেই আমি ফানার দরজায় পৌঁছে গেলাম।
হযরত মুহাম্মদ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম জীবনে অত্যন্ত সুশ্রী এবং রূপবান ছিলেন। যার ফলে অনেক যুবতী উনার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে পড়তো। কিন্তু তিনি তাদের দিকে একবার ফিরেও তাকাতেন না। একদা একজন খুব ছূরত মেয়ে অত্যন্ত সুন্দর পোশাক ও অলঙ্কারে ভূষিত হয়ে হযরত মুহাম্মদ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে উপস্থিত হলো। তিনি তখন একটি নির্জন বাগিচায় একাকী ভ্রমণ করছিলেন। এ অবস্থায় তিনি মহিলাটিকে দেখামাত্র উর্ধশ্বাসে সেখান থেকে ছুটে পালালেন। কিন্তু ইশকের আগুনে উষ্ণ মেয়েটিও উনার পিছনে ছুটতে লাগলো। কিন্তু সে উনার নাগাল পেলনা। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পার হওয়ার পর চরম বার্ধক্যে এসে হঠাৎ সেই ঘটনাটি উনার অন্তরপটে ভেসে উঠল। এ সময় উনার অন্তরের মধ্যে এমন একটি খেয়াল হল, যা না হওয়াই সঙ্গত ছিল। উনার মন বলে উঠল, কেন সেদিন আমি অত কঠিন হতে গেলাম, বেচারির মনের আশা পুরা করে দিয়ে তারপর না হয় তওবা করে নিতাম।
মনের মধ্যে এরূপ ধারণাটি জাগার পরক্ষণেই উনার হুঁশ হল। তিনি হঠাৎ কেঁপে উঠলেন, ইসতিগফার পড়তে লাগলেন। আমার মন এ কি বলছে? মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে তিনি তখন কান্না-কাটি শুরু করলেন এবং একাধারে তিন দিন পর্যন্ত উনার তা জারি থাকলো। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এই দোয়া করতে লাগলেন, হে খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমার মনের এই পাপ খেয়াল থেকে আমাকে নাজাত দান করুন। আর এর অপরাধ ক্ষমা করে দিন।
এভাবে রোনাজারী করতে করতে তৃতীয় দিন রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে ব্যক্তি! তুমি পেরেশান হয়ো না। কেননা আমার রিসালাতের যামানা যত দুরবর্তী হয়ে চলছে, অবস্থা ততই দ্রƒত মন্দের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অতএব, এ যামানায় বেগুনাহ ও পবিত্র থাকার গুরুত্ব যথেষ্ট।
হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)
-ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার- মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩০)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩১)