আমেরিকা যখন সভ্যতার সব নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করলো তখনই মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, “অচিরেই আমেরিকা- রাশিয়ার মত নিস্তেজ, দুর্বল হয়ে পড়বে। তার অর্থনীতিতে ধস নামবে। ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হবে।“
তারপর থেকেই অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীবাসী দেখতে পেলো, আমেরিকা একের পর এক ঘূর্ণিঝড়, ক্যাটরিনা, দাবানল, তুষারপাত ও বন্যা হচ্ছে। যে তৃতীয়বিশ্বের মানুষ আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকতো সে আমেরিকার নাগরিক না খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে, সাহায্যের আশায় কাকুতি জানাচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে মানবতা চরমভাবে বিপর্যিত হচ্ছে। সাহায্যকারী দল মেয়েদেরকে বিবস্ত্র হতে বলছে। না হলে সাহায্য নিয়ে চলে যাচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
আমেরিকার শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা এই প্রথমবারের মত ক্যাটরিনা, দাবানল আর তুষারপাতের আক্রমনের প্রেক্ষিতে পৃথিবীবাসী প্রতক্ষ্য করলো না, পাশাপাশি আমেরিকানদের মানবিকতাবোধ যে কতদূর নিকৃষ্ট দানবিকতা বা পাশবিকতায় পর্যবসিত অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীবাসী তারও প্রমাণ পেলো।
যে মার্কিন ডলার কিছুদিন আগেও ছিলো বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে কর্তৃত্ববান মুদ্রা, সেই ডলার আজ কানাডীয় ডলারেরও নীচে পড়ে গেছে। অস্ট্রেলীয় ডলারও এখন মার্কিন ডলারকে ছুঁই ছুঁই করছে। এখন একটি কানাডীয় ডলারের মূল্য বাংলাদেশী ৭০/৭১ টাকা, আর মার্কিন ডলার ৬৯ টাকারও নীচে। একটি অস্ট্রেলীয় ডলারের দাম এখন ৬৫ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ তিন বছর আগেও অস্ট্রেলীয় ডলারের মূল্যবান ছিলো ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। একই বিনিময় হার ছিলো কানাডীয় ডলারের। পাউন্ড এবং ইউরো তো কত আগেই মার্কিন ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় মার্কিন অর্থনীতি জর্জরিত। এখন এই ইন্টারনেটের যুগে আমেরিকার সব তথ্য দ্রুত ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে।
আগামী ৪ঠা নভেম্বর আমেরিকায় সাধারণ নির্বাচন হবে। এটি হলো আমেরিকার ৫৬তম নির্বাচন। প্রতি ৪ বছর পরপর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
যখন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখন প্রায় একই সময় অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকার ৩৩টি অঙ্গরাজ্যের সিনেট নির্বাচন, ১১টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচন, সবক’টি অঙ্গরাজ্যের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন।
এটি হতে যাচ্ছে প্রথম নির্বাচন, যেখানে ১৯২৮ সালের পর থেকে এই ৮০ বছরে ক্ষমতাসীনদলের কোনো প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট দলীয় মনোনয়ন চাননি। যেখানে ১৯৫২ সালের পর থেকে বিগত ৫০ বছরে ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ায়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট বুশ তার দুটি মেয়াদ পূর্ণ করছে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। এই নির্বাচনে বারাক ওবামা জয়লাভ করবে বলে আন্তর্জাতিক সমীক্ষকরা মনে করছে।
এই ওবামাকে নিয়ে সহজ-সরল মুসলমান অনেক স্বপ্ন দেখছে। তার পিছনে কারণ হলো, ওবামার দাদা ছিলেন একজন মুসলমান। এবং তার নামের সাথে হোসেন শব্দের যোগ রয়েছে।
কিন্তু এই শব্দটিই ওবামার মনোনয়ন হারানোর একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। অর্থাৎ মার্কিনীদের মাঝে মুসলমান বিরোধী এ্যালার্জি এত বেশি যে কারো মধ্যে মুসলমানের গন্ধ থাকলেও তাকে মার্কিনীরা গ্রহণ করতে নারাজ।
মার্কিনীরা প্রকাশ্যে বলেছিলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাসনের জন্য কোন মুসলমানের প্রয়োজন নেই।” (নাঊযুবিল্লাহ) এর দ্বারা মার্কিনীদের মুসলমান বিরোধি মনোভাব কত তীব্র তা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। পাশাপাশি ওবামাও তার নির্বাচনী পালে মুসলমান বিরোধি হাওয়া তুঙ্গে তুলেছিলো।
ওবামা বলেছে যে, জেরুজালেম অখ- থাকবে এবং অখ- জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হবে। আরো ঘোষণা করেছে যে, ইসরাইলের নিরাপত্তার উপর সর্বোচ্চ অগ্রধিকার দেয়া হবে এ ব্যাপারে সে কোন আপোষ করবে না।
ওবামা আরো ঘোষণা করেছে, ইরাক থেকে পর্যায়ক্রমে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে অতিরিক্ত সৈন্য আফগানিস্তানে পাঠানো হবে। তাহলে কি দাঁড়ালো? আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারিত্ব রয়েই গেলো। এটা কোনো ডেমোক্রাটের কথা হলো না। এরও কয়েকদিন আগে ওবামা বলেছে, পাকিস্তানের জঙ্গি তৎপরতা দমন করার জন্য প্রয়োজন হলে পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়াই মার্কিন বিমান পাকিস্তানে হামলা চালাবে।
বলাবাহুল্য, মুসলমান এই সব কথা খুব একটা শোনে না, পড়ে না, খবর নেয়না। জানলেও ফিকির করে না, উপলব্ধি করে না, বুঝে না। ফিকির করে না। প্রতিক্রিয়া জানায় না, দেখায় না।
করলে ওবামারা এত সাহস পেত না। স্পর্ধা পেত না। সুযোগ পেত না। ওবামারা এখন খালি মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে। তাই মুসলিম বিশ্বের তরফ থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠ জোরদার হচ্ছে না যে, “নারী স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে তৃতীয় বিশ্বে তোমরা চাপ প্রয়োগ কর, বড় বড় কথা বল কিন্তু তোমাদের দেশেই তো নারী স্বাধীনতা, নিরাপত্তা নেই।
তোমাদের দেশে মিনিটে হাজার হাজার নারী ধর্ষিতা হয়। তোমাদের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তার স্ত্রী হিলারীকে বঞ্চিত করে অন্য নারী নিয়ে ঘোরাফিরা করে।
আর সারা মুসলিম বিশ্বে নারী নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়ার জন্য তোমরা যে ভেতর বাহিরে হাজারো ষড়যন্ত্র কর। তোমাদের দেশেই তো নারী নেতৃত্বকে তোমরা অস্বীকার করা।
কাজেই তোমাদের নারী স্বাধীনতা, মানবতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ক্ষমা, মুসলমানদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন- সবই মেকী, ভুয়া, অসত্য, মিথ্যা ও শঠতায় ভরা”
তাই এখনই চরম সময় এই বিশ্ববেহায়া আমেরিকার ভন্ডামির মুখোশ খুলে দিতে পৃথিবীর দুশ’ কোটি মুসলমানের এগিয়ে আসা। আল্লাহ পাক কবুল করুন, গায়েবী মদদ করুন। (আমীন)
মুহম্মদ তারীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০