মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্ত এবং তা থেকে বাঁচার উপায়

সংখ্যা: ২৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্ত এবং তা থেকে বাঁচার উপায়


হক্ব এবং না-হক্বের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির শুরু থেকেই। মুসলমানগণ উনারা যেহেতু হক্বপন্থী, তাই না-হক্বপন্থী ইবলিস শয়তান ও তার দোসর কাফির-মুশরিকরা সর্বদা মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “নিশ্চয়ই মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী, অতঃপর মুশরিক”। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)

সেটাই দেখা যায়, কাফির-মুশরিকরা প্রতিনিয়ত নানান উপায়ে, নানাভাবে মুসলমান উনাদের ক্ষতি করতে বদ্ধ পরিকর। এজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের চক্রান্তও করে থাকে। ত্রয়োদশ ঈসায়ী শতাব্দীতে শেষ ক্রুসেড যুদ্ধে কাফিররা যখন হযরত সালাহুদ্দিন আইয়ূবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট চরমভাবে পরাজিত হয়, তখন তারা বুঝতে সক্ষম  হয়, তারা আর কখনই সম্মুখযুদ্ধে মুসলমান উনাদের সাথে পেরে উঠবে না। কারণ মুসলমান উনাদের নিকট রয়েছে এমন এক কুদরতি শক্তি, যাকে বলা হয় ঈমানী কুওওয়াত। এই শক্তি যতক্ষণ মুসলমান উনাদের নিকট থাকবে ততক্ষণ হাজার চেষ্টা করেও মুসলমান উনাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না।  তবে যদি মুসলমান উনাদের থেকে সেই কুদরতি শক্তিখানা সরিয়ে দেয়া যায়, তবেই মুসলমান উনাদের পরাজিত করা সম্ভব, তখন মুসলমান উনারা সংখ্যায় যত বেশি হওক, সেটা সমস্যা হবে না।

সেই থেকে কাফির-মুশরিকরা মুসলমান উনাদের সম্মুখযুদ্ধে হারানোর চিন্তা বাদ দেয়, গ্রহণ করে ভিন্ন চক্রান্ত অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় মুসলমান উনাদের ঈমানী কুওওয়াত নষ্ট তথা নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় সৃষ্টিকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে আমেরিকা, ইসরাইল, ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপান, বার্মা, ব্রিটেন অর্থাৎ ইউরোপসহ তাবৎ কাফিররা যে মুসলমান উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করে যাচ্ছে তার পেছনে রয়েছে কাফিরদের সেই দীর্ঘ মেয়াদী প্ল্যানের বাস্তবায়ন।

আমার এ লেখায় কাফিরদের বিভিন্ন চক্রান্ত, তার বাস্তবায়ন ও তার থেকে কি করে উদ্ধার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা  করা হয়েছে।

মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্তের কিছু রূপ

ইহুদীদের প্রটোকল

“দ্য প্রটোকল” একটি ঐতিহাসিক পুস্তক, যেখানে সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে কুচক্রী ইহুদীদের দীর্ঘ মেয়াদি (প্রায় ৩০০ বছর)  পরিকল্পনা বা নীল নকশা লিপিবদ্ধ আছে। দুনিয়ার মানুষকে সর্বপ্রথম এ বইটি সম্পর্কে অবহিত করেছিলো অধ্যাপক ‘সারকিল এ নাইলাস’ নামক জনৈক রুশীয় পাদ্রী। ১৯০৫ সালে অধ্যাপক নাইলাস নিজে উদ্যোগী হয়ে বইটি প্রকাশ করে। ফ্রান্সের একটি ফ্রি-ম্যাসন লজ  থেকে জনৈক মহিলা (সম্ভবত হিব্রু ভাষায় লিখিত) মূল বইটি চুরি করে এনে তাকে উপহার দিয়েছিল। নাইলাস ধর্মে খ্রিস্টান ছিল। সে স্বীয় ধর্মকে ইহুদী ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই এ বইটি বিশ্ববাসীর কাছে পেশ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল।

বতর্মান সময়ে ইহুদীরা যেভাবে অর্থনীতি, মিডিয়া, শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে সমগ্র বিশ্বকে করায়াত্ব করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ নীল নকশায় সেই ধরনেরই বিশ্ব রাষ্ট্রেরই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, পৃথিবীতে যে কয়টি বড় ধরনের ঘটনা বা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার সবগুলোই প্রটোকল বইয়ে পূর্ব থেকেই তার পরিকল্পনা ভবিষ্যদ্বাণীর মতো লিপিবদ্ধ ছিল।

মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ

কাফির মুশরিকরা মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অস্ত্র সফলভাবে ব্যবহার করেছে তার মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে মিডিয়া। বর্তমান যুগে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেই কাফির-মুশরিকরা মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে একচেটিয়া কাজ করে থাকে।  এ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে অপপ্রচার করা হয়, সকল খবর প্রচার করা হয় কাফিরদের পক্ষে এবং মুসলমান উনাদের বিপক্ষে। ফলে সারা বিশ্বের জনমত চলে যায় কাফিরদের পক্ষে।

উল্লেখ্য বর্তমান সময়ে যে সকল মিডিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে ইহুদীরা, তন্মধ্যে ২০০টি রেডিও স্টেশন, ১৭০০ টিভি চ্যানেল এবং দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য প্রায় ২২ হাজার ম্যাগাজিন এগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

বেপর্দা-বেহায়াপনার প্রচার

কাফিররা মুসলমানগণ উনাদের ঈমানী কুওওয়াত (শক্তি) ধ্বংস করার জন্য ছড়িয়ে দিয়েছে চরম বেপর্দা-বেহায়াপনার বিষ। আর সেই বিষ ছড়ানোর সহজ মাধ্যম হচ্ছে- ছবি, টিভি, ডিশ এন্টেনা, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমেই ধ্বংস করা হচ্ছে মুসলমান উনাদের নৈতিক চরিত্র, ধ্বংস হচ্ছে ঈমানী কুওওয়াত। দেখা যাচ্ছে, মুসলিম দেশগুলো বেপর্দা-বেহায়াপনার প্রচারের লক্ষ্যে কাফিররা এ মাধ্যমগুলোকে খুবই সহজলভ্য করে দিয়েছে। যেমন- কাফিরদের দেশে প্রত্যেকটি টিভি চ্যানেল দেখতে আলাদা অর্থ দিতে হয়, অথচ বাংলাদেশে মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়েই সব চ্যানেল দেখা সম্ভব।

গুপ্তচরবৃত্তি

মুসলমান উনাদের ক্ষতি করার জন্য কাফির-মুশরিকদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যেমন- ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স, চীনের এমএসএস, রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ইত্যাদি। উল্লেখ্য ১৮ শতাব্দীতে মুসলমান উনাদের প্রাণকেন্দ্র আরবে মুসলমান উনাদের ক্ষতি করার জন্য ব্রিটেন প্রায় ৩ লক্ষ গোয়েন্দা প্রেরণ করেছিল। এর মধ্যে শুধু হ্যামপার নামক এক গোয়েন্দা সফল হয়ে বাতিল ফিরকা ওহাবী মতবাদের জন্ম দিতে সক্ষম হয়। পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীতে ইহুদী বংশধর সউদ পরিবারকে আরবের ক্ষমতায় স্থান করে দিতে অপর ব্রিটিশ গোয়েন্দা লরেন্স সফলতার সাথে কার্যক্রম চালায়।

মুসলমান উনাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চুরি

বর্তমানে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান বলতে যেটা বোঝায়, তার জনক হচ্ছে মুসলমানগণ। শুরু থেকেই মুসলমানগণ ছিলেন জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ও প্রাচুর্যময়, অপরদিকে কাফিররা ছিলো মূর্খ, অজ্ঞ ও বর্বর। উল্লেখ্য, ১২৫৮ সালে হালাগু খান মুসলিম জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু বাগদাদ নগরীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ধ্বংস করে মুসলিম জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র বাইতুল হিকমাহ লাইব্রেরী। এই লাইব্রেরী থেকে মুসলমান উনাদের অনেক জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা বই চুরি যায়, যা পরবর্তীতে ইহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি করায়ত্ব করে ফেলে। একইভাবে  ১৪৯২ সালে অবসান ঘটে স্পেনে মুসলিম শাসনের। ঐ সময় স্পেন ছিলো মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, যেখানে বিশাল লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত ছিলো মুসলিম বিজ্ঞানীদের গবেষণাধর্মী বইসমূহ। স্পেন দখলের পর খ্রিস্টানরা স্পেনের লাইব্রেরীগুলো দখল করে, তারা অনেক বই সরিয়ে ফেলে, অনেক বই নদীতে ফেলে দেয়, আবার অনেকগুলো আগুনে ধ্বংস করে ফেলে। ১৫শ’ শতাব্দীর শেষ দিকে মুসলিম বিজ্ঞানীদের থেকে চুরি করা বইগুলো নিয়েই ১৭শ’ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের মধ্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের সূচনা ঘটে। তারা মুসলমান উনাদের থেকে  চুরি করা বইগুলো অনুবাদ করতো এবং নিজেদের নামে প্রচার করতো। তবে মুসলমান উনাদের লিখিত অধিকাংশ বই ছিলো আরবী ভাষায়, খ্রিস্টানরা আরবী খুব একটা বুঝতো না, কিন্তু ইহুদীরা বুঝতো। তাই খ্রিস্টানরা মুসলমান উনাদের বইগুলো ইহুদীদের কাছে দিয়েছিলো অনুবাদের জন্য। ইহুদীরা ছিলো ধূর্ত।

তারা বলতো- ‘একটা একটা বই দিলে হবে না, সব দাও, আমরা ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করে দিবো’। ইহুদীদের এ কথা শুনে খ্রিস্টানরা তাদেরকে অধিকাংশ বই দেয়, যেখান থেকে ইহুদীরা বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা নিজেদের কাছে রেখে দেয়। এই কারণে বর্তমানে ইহুদীদের মধ্যে বেশিরভাগ কথিত বিজ্ঞানীর দেখা মিলে।

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন এবং

সিলেবাসে কুফরী’র প্রবেশ

ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশে ক্ষমতা দখল করার পর এদেশে প্রায় ৮০ হাজার মক্তব বন্ধ করে দেয়, চালু করে তাদের প্রবর্তিত সিলেবাস অনুয়ায়ী কলকাতা আলিয়া মাদরাসা (১৭৮০ সালে ওয়ারেন হেস্টিং)। এরপর ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা (প্রতিষ্ঠা সাল : ১৮৬৬) তৈরির জন্য জমি দেয় ব্রিটিশরা। পরবর্তীতে ব্রিটিশ অনুচর এই দেওবন্দীদের মাধ্যমেই ছড়ানো হয় বিভিন্ন কুফরী আক্বীদা। নাউযুবিল্লাহ!

বর্তমান সময়ে একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষানীতি তথা পাঠ্যসূচি থেকে হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক তুলে দেয়া হয়েছে এবং প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে কাফিরদের জীবনী। একই সাথে মুসলমান উনাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে দিয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রবেশ করানো হয়েছে বিভিন্ন কুফরী তথা বেদ্বীনী-বদ্বীনী কালচার। এ শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে একটি শিশুর মন-মস্তিষ্কে ছোটবেলা থেকেই হারাম ও কুফরী প্রবেশ করানো হচ্ছে, ফলে শিশুটি ছোট বেলা থেকেই কুফরীপন্থায় বেড়ে উঠছে। নাউযুবিল্লাহ!

সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি চালু

“মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন, সুদকে হারাম করেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : আয়াত শরীফ ২৭৫) “যে ব্যক্তি এক পয়সা হারাম খায়, তার ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না।” (পবিত্র হাদীছ শরীফ)

অথচ দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে মুসলমান দেশগুলোতেও ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, বীমা, সমিতি সর্বত্রই সুদের কারবার। হারাম সুদ ছাড়া আর্থিক ব্যবস্থা বর্তমানে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।

দুঃখজনক হলেও সত্য কাফির রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাংকে সুদের হার যেখানে মাত্র ১ শতাংশ, সেখানে মুসলমানগণ উনাদের দেশে সুদের হার প্রায় ১৫ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব। উপরন্তু ইহুদী এজেন্ট উলামায়ে সূ’রা ইসলামী ব্যংকিং-এর নামে সুদ ভিত্তিক হারাম লেনদেন করে যাচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর নামান্তর।

মুসলমান উনাদের কেন্দ্রস্থলে ইহুদী বংশোদ্ভূত সউদ পরিবারকে শাসকরূপে বসানো:

বর্তমানে কাফির মুশরিকদের অন্যতম সফলতা হচ্ছে মুসলমান উনাদের কেন্দ্রস্থল তথা পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের দেশ তথা সউদী আরবের ক্ষমতায় ইহুদী বংশোদ্ভূত সউদ পরিবারকে বসানো। দেখা যাচ্ছে বর্তমানে মুসলিম বিরোধী সমস্ত অরাজকতার মূল হচ্ছে এই সউদ পরিবার। তারা একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে ঈমানবিধ্বংসী ওহাবী-সালাফি আক্বীদা প্রচার-প্রসার করে যাচ্ছে, অন্যদিকে আমেরিকাসহ তাবৎ কাফিরদের মুসলমান উনাদের উপর যুলুম চালানোর জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

ইহুদী এজেন্ট উলামায়ে সূ

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সৃষ্টির নিকৃষ্ট হচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী মালানা তথা উলামায়ে সূ।” বর্তমান সময়ে উলামায়ে সূ তথা ধর্মব্যবসায়ী মালানা গোষ্ঠী ইহুদী এজেন্ট রূপে কাজ করে যাচ্ছে। কাফির-মুশরিকদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে এই ভ- মালানা গোষ্ঠী সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম বিষয়সমূসহ (যেমন- ছবি, টেলিভিশন, টিভিতে প্রোগাম, গান-বাজনা, খেলাধুলা, গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি) কে হালাল বলে ভুল ফতওয়া প্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ।  এরাই পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ, পবিত্র লাইলাতুল বরাত, পবিত্র লাইলাতুল মেরাজসহ সকল ইসলামী দিবসগুলোর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিচ্ছে, কিন্তু কাফিরদের বিভিন্ন দিবস (যেমন- পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাস্ট নাইট, মে দিবস, ১লা এপ্রিল) ইত্যাদির পক্ষে ফতওয়া প্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ। মূলতঃ এই উলামায়ে ছু’দের থেকেই বাতিল ৭২ ফেরকার সূচনা, এদের বিভ্রান্তির কারণেই আজকে মুসলমানগণ ঈমান নষ্ট করে কাফির-মুশরিকদের পথ বেছে নিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

মুসলমান উনাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

বর্তমানে কাফিররা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে বিনা মূল্যে জন্মনিরোধক দিয়ে যাচ্ছে। কাফিররা মুসলমান উনাদের খাওয়া-পরার ভয় দেখিয়ে হারাম জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে প্রলুব্ধ করে। তারা এদেশে শ্লোগান চালু করেছে, “দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়।” এরা মুসলিম দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণকে উৎসাহিত করতে পুরস্কার ঘোষণা করছে।

অথচ কাফির রাষ্ট্রগুলোতে উল্টো বেশি সন্তান গ্রহণ করলে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

মুসলিম দেশগুলোর সম্পদ লুণ্ঠন

কাফির-মুশরিকরা মুসলিম দেশগুলো থেকে নানান উপায়ে সম্পদ চুরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে,  কাফিররা ইরাক থেকে তেল, আফগানিস্তান থেকে খনিজ সম্পদ, আফ্রিকান মুসলিম দেশগুলো থেকে মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটেপুটে নিয়ে যাচ্ছে।

দেশে দেশে কূটনীতির ছদ্মাবরণে

মুনাফিক তৈরি

কাফিররা বিভিন্ন কূটনৈতিক ছদ্মাবরণে মুসলিম দেশগুলোতে মুনাফিক বা বিশ্বাসঘাতক তৈরীর কার্যক্রম চালায়। এই মুনাফিকরা মুসলিমদেশগুলোর শাসন ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে। তারা শুধু নামে মুসলমান হয়, কিন্তু সর্বদা কাফিরদের পক্ষ কাজ করে থাকে। এরাই মুসলিম দেশে     কাফিরদের এজেন্ডাসমূহ বাস্তবায়ন করে থাকে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুসলমান উনাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করে:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে, যখন পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিরা একে অপরকে মুসলমান উনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পরস্পরকে আহবান করবে, যেভাবে একজন অপরজনকে খাবারের জন্য আহ্বান করে থাকে ঠিক তদ্রূপ।” কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, “সেই সময় কি আমরা সংখ্যায় কম থাকবো?” উত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “না, সে সময় সংখ্যায় তোমরা হবে অগণিত। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার পানিতে ভেসে আসা খড়কুটোর মতো (অর্থাৎ শক্তিহীন)। শত্রুদের অন্তরে তোমাদের সম্পর্কে যে ভয় আছে আল্লাহ তা উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে তিনি ‘ওহান’ নিক্ষেপ করবেন।” একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন,“ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ওহান’ কি?”

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আর মৃত্যুর প্রতি ঘৃণা।” (আবু দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ)

বর্তমান সময়ে সকল পরিস্থিতির সাথে উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হুবুহু মিলে যায়।

কাফিরদের ষড়যন্ত্র ও যুলুম থেকে বাঁচতে হলে

কি করতে হবে?

১) শত্রু চিনতে হবে:

কাফিরদের নানান কায়দায় চক্রান্ত থেকে বাঁচতে মুসলমান উনাদের প্রথমে শত্রু চিনতে হবে। আর এজন্য শত্রু সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ভালোভাবে পাঠ করতে হবে এবং সেখান থেকে দৃঢ় আক্বীদা পোষণ করতে হবে কাফির-মুশরিকরা হচ্ছে মুসলমান উনাদের সবেচেয়ে বড় শত্রু। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মানুষের মধ্যে তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদী ও মুশরিকদেরকে অর্থাৎ সমস্ত বিধর্মীদেরকে। আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত: চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহুদী-নাছারারা তথা কাফির-মুশরিকরা কখনও তোমাদের (মুসলমানগণ উনাদের) প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত  তোমরা তাদের ধর্ম গ্রহণ না করবে বা অনুগত না হবে।”  (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)

২) শত্রু তথা কাফির-মুশরিককে বন্ধু রূপে গ্রহণ করা যাবে না:

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)

“মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে এরূপ করবে তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোন সম্পর্ক থাকবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

৩) শত্রু তথা কাফির-মুশরিকদের কিছুতেই অনুসরণ করা যাবে না:

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরাশাদ মুবারক করেন, “তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।” (পবিত্র সূরা আন নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯)

যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ)

মুসলমান উনাদের এখন করণীয় কি ?

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –

وَاِن تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا

অর্থ: “যদি তোমরা  ধৈর্য্যধারণ করো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করো অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপর ইস্তিক্বামত থাক তবে কাফির মুশরিকদের কোন ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)

আর এ জন্য প্রয়োজন একজন হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করা, ছোহবত ইখতিয়ার করা, যিকির-আযকার করা।  কেননা এটা ব্যতীত কেউ ইহুদী-খ্রিস্টান তথা কাফির মুশরিকদের চক্রান্ত বুঝতে সক্ষম হবে না এবং তাদের চক্রান্ত থেকে বাঁচতেও পারবে না। কারণ হক্কানী ওলী আল্লাহগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইলমে গায়িব উনার অধিকারী হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “তোমরা যারা জানো না, যাঁরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ার মুহব্বত ত্যাগ করে পরকালের আমল না করবে অর্থাৎ হাক্বীক্বী মু’মিন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফির-মুশরিকের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। হক্কানী ওলী আল্লাহগণ খাছ করে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, গাউছুল আ’যম, হাবীবুল্লাহ রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবতে এসে ক্বলব ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করে ঈমানী বলে বলীয়ান হলেই কাফির-মুশরিকদের সকল চক্রান্ত থেকে হিফাযত হওয়া সম্ভব। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এ যামানার মহান মুজাদ্দিদ মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক উসিলায় সকল মুসলমানকে কাফির-মুশরিকদের সকল চক্রান্ত ও যুলুম নির্যাতন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।


-মুহম্মদ আমিনুর রহমান।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আব্বাজান আলাইহিস সালাস ও আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনারা ফিতরাত যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ও উনারা দ্বীনে হানীফার উপর কায়িম ছিলেন।

আল হাদ্বির ওয়ান নাযির, ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা ক্বাওসাইনি আও আদনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব

সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ উনার শানে নুযূলকে কেন্দ্র করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ কুফরী বক্তব্য ও তার খণ্ডনমূলক জবাব

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমস্ত উম্মতের জন্য ফরযে আইন

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খরচ করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক