যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের করা এক তালিকা অনুযায়ী কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র। ম্যাগাজিনটি বলছে, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবাদে ১৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটি মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে ধনী দেশ।
বর্তমানে কাতারের মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ১ লাখ ২৯ হাজার ডলার নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে ৭ম এবং ৭২ হাজার মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে কুয়েত রয়েছে ৫ম স্থানে। আগামী ২০২২ সালের হারাম বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক কাতার ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, হারাম খেলাধুলায় কাতারসহ আরব দেশগুলো দুই হাতে খরচ করে কিন্তু মুসলিম ভাইয়েরা না খেয়ে অকাতরে মারা যাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টি নেই। অপরদিকে শুধু কাতারই নয় ধনী মুসলিম দেশ আছে আরো বহু এবং তাদের সংগঠনও আছে। প্রসঙ্গত উন্নয়নশীল-৮ বা ডি-৮ এর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। এসবগুলোই উল্লেখযোগ্য মুসলিম দেশ। কিন্তু এরাও কেউই সোমালিয়ার পেছনে দাঁড়ায়নি এবং এখনও দাঁড়াচ্ছে না।
মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নয়নশীল আটটি দেশের অর্থনৈতিক জোট ডি-৮ এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ৫শত বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অনেক বেশি।
জানা গেছে, মুসলিম অধ্যুষিত আটটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮ এর আওতায় বিশাল মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সম্মিলিত উদ্যোগে এ সম্পদ কাজে লাগিয়ে ডি-৮ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাড়ে ৩০০ কোটি এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৬৫-এরও অধিক।
পৃথিবীতে মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, কয়লার ৬০ ভাগ, স্বর্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ এবং খেজুরের ১০০ ভাগ মুসলমান দেশের। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর মোট দেশের আয়তনের তিনভাগের একভাগ এখনো মুসলমানদের দেশসমূহ। পৃথিবীর মোট ৩ কোটি সৈন্যের এক কোটিই মুসলমান। সুবহানাল্লাহ! অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলমানের সাথে। অর্থাৎ মুসলমান চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে সারাবিশ্ব দখল করে নিতে পারে এবং অমুসলিম বিশ্ব তথা লুটেরা কাফিররা মুসলমান বিশ্বের তথা মুসলমানদের সম্পদ হরণ করেই বা নির্ভর করেই বেঁচে আছে। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মুসলমান সে বিষয়ে বড়ই বেখবর।
তারপরেও মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পশ্চিমা পরাশক্তির আগ্রাসনের শিকার। তাদের সামরিক অস্ত্রের দাপটে নিজেদের সম্পদ তাদের হস্তান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মুসলমানরা তাদের গোলামী করছে। মুসলিম বিশ্ব বিশাল সম্পদের সমারোহে সমৃদ্ধ। তার মধ্যে তেল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ছাড়া ইউরোপ আমেরিকার অর্থনীতিতে চরম ধ্বস নেমে আসবে। এ আশংকায় তারা বিভিন্ন খোড়া অজুহাত দাঁড় করে পর্যায়ক্রমে ইরাকে সামরিক হামলা চালিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে এনেছে। এরপর তারা নতুন ইস্যু দাড় করিয়ে ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করেছে। লেবাননেও মার্কিন মদদপুষ্ট, ইসরাইলী বাহিনী আক্রমন চালাচ্ছে। দীর্ঘ ১৯৪৮ থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ সংগ্রাম তো চলছেই। আজ ফিলিস্তিনের মা-বোনেরা অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সবকিছু মিলে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে। কবে এ সমস্যা দূর করে শান্তি ফিরে আসবে তা-ই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
মুসলিম বিশ্বে যে বিশাল সম্পদের ভান্ডার রয়েছে যা দ্বারা মুসলিম বিশ্ব সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর সর্বাধিক অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে সক্ষম। সে ধারনা স্পষ্ট হওয়ার জন্য নিম্নে মাত্র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
মুসলিম বিশ্বে অপরিশোধিত পেট্রোল ও গ্যাস মজুদের পরিমাণ-
দেশের নাম | পেট্রোল
( বিলিয়ন ব্যারেল) |
গ্যাস
(ট্রিলিয়ন ঘনফুট) |
ইরান | ৮৮.২ | ৭৪১.৬ |
ইরাক | ১০০.০ | ১০৯.৫ |
কুয়েত | ৯৫.৫ | ৫২.৯ |
ওমান | ৫.১ | ২৫.২ |
কাতার | ৩.৭ | ২৫০.০ |
সৌদি আরব | ২৬১.২ | ১৮৫.৯ |
সিরিয়া | ২.৫ | ৭.০ |
আমিরাত | ৯৮.১ | ২০৪.৬ |
ইয়ামেন | ৪.০ | ১৫.০ |
মিসর | ৩.৯ | ২১.৩ |
নাইজেরিয়া | ২০.৮ | ০.৪ |
তিউনিসিয়া | ০.৪ | ০.৪ |
ইন্দোনেশিয়া | ৫.২ | ৫.৯ |
মালেশিয়া | ৪.৩ | ৫.২ |
বিশ্ব ও মুসলিম বিশ্বে খনিজ সম্পদ ও শস্য সম্পদের তুলনামূলক অবস্থান:
খনিজ সম্পদ | শস্য সম্পদ | ||||
খনিজ সম্পদ | বিশ্ব
শতকরা |
মুসলিম বিশ্ব শতকরা | শস্য সম্পদ | বিশ্ব
শতকরা |
মুসলিম বিশ্ব শতকরা |
তেল | ২৫% | ৭৫% | রাবার | ২৫% | ৭৫% |
গ্যাস | ২৫% | ৭৫% | পাট | ২৫% | ৮৫% |
কয়লা | ৪৫% | ৫৫% | খেজুর | ০০% | ১০০% |
লোহা | ৪২% | ৫৮% | ধান | ১৪% | ৮৫% |
সীসা | ৫০% | ৫০% | |||
চম্বুক | ২৫% | ৭৫% | |||
স্বর্ণ | ২৫% | ৭৫% | |||
রৌপ্য | ৩৫% | ৬৫% |
প্রসঙ্গত পবিত্র বিদায় হজ্জ উনার মশহুর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তা আঁকড়িয়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত সাফল্যের শীর্ষে থাকবে। আর যখন তা থেকে বিচ্যুত হবে তখনই লাঞ্ছিত, পদদলিত হবে।” বলার অপেক্ষা রাখেনা মুসলমান আজ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে বঞ্চিত বলেই এরূপ লাঞ্ছিত পদদলিত হচ্ছে। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। এর থেকে মুক্তি লাভ পেতে হলে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুসরণ ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।
উপরোক্ত মুসলিম বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য দেখে একথা বলা যায় যে গোটা বিশ্ববাসীই মুসলিম বিশ্বের কাছে ঋণী। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব তার জ্বালানী তেল বহিঃবিশ্বে রপ্তানি না করলে ইউরোপ, আমেরিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রযুক্তি, শিল্প-বাণিজ্য সবকিছুতে ধ্বস নেমে আসবে। কিন্তু বিপরীত দিকে মুসলিম বিশ্বই আজ তাদের থেকে চরম নিম্নমানে পতিত হয়েছে।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০