গত ৭ জানুয়ারি (২০১৫) ফ্রান্সের শার্লি হেবডো পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিরোধী নেতাকর্মীরা কে কার আগে নিন্দা জানাতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। ফ্রান্সসহ খ্রিস্টানবিশ্বকে খুশি করতে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান সহমর্মিতার নামে সরাসরি প্যারিসের সমাবেশে যোগও দিয়েছিল।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ‘শার্লি হেবডো’ পত্রিকা অফিসে হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়া আফখাম বলেছে, এক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীন উগ্রবাদের বিস্তার ঘটেছে, এ জাতীয় আচরণ সেই দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহিংসতা এবং উগ্রবাদের ধারাবাহিকতা।”
প্যালেস্টাইন লিবার্টি অর্গানাইজেশনের পরিচালনা পরিষদের সহকারী সচিব ইয়াসির আবেদ রাব্বো হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনিরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বরোধী। আমরা সবার কাছে এ বার্তা দিতে চাই যে- স্বাধীনতা, ন্যায়নীতি এবং মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা সংগ্রাম করছি।
ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলাকে সভ্যতার বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে আখ্যায়িত করে ফিলিস্তিনের ফাতাহ আন্দোলনের সিনিয়র নেতা আব্বাস জাকি বলেছে, ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই সন্ত্রাসবাদের শিকার। এ কারণে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার।
কায়রোর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ইসলাম কখনো এধরনের হামলাকে সমর্থন করে না।
ফ্রান্সের ড্রান্সি মসজিদের ইমাম এবং ফ্রেঞ্চ ইমাম এসোসিয়েশনের সভাপতি হাসেন শাঘৌমি নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে শার্লি হেবডো অফিসের সামনে এসেছে।
ফ্রান্সের গণমাধ্যমের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ফ্রান্সের জনগণ ও সরকারের প্রতি তার সংহতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বলেছে, সন্ত্রাসীরা যে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের হোক না কেন, এই সন্ত্রাসীদের সভ্য সমাজে কোনো স্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী হিতদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবদেনা জানায়। সে নিহতদের আত্মার মাগফিরাতও কামনা করে। (নাউযুবিল্লাহ!)
একইভাবে হামলায় নিহতের ঘটনায় নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেছে, প্যারিসের পত্রিকা অফিসে হামলাকারীরা মানবতার শত্রু। একইসঙ্গে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে সে। (নাউযুবিল্লাহ!)
হামলার নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুদ্ধাপরাধী দল জামাতও। এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নিহতদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং ফ্রান্স সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করে জামাত। (নাউযুবিল্লাহ!)
শুধু বিবৃতি আর নিন্দা নয়; বরং তুরস্ক, ফিলিস্তিন, মালিসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা হাজির হয়েছিল সহমর্মিতা জানাতে!
এদিকে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, নেতা-নেত্রী ও ধর্মব্যবসায়ী স্কলাররা শার্লি হেবডো পত্রিকায় হামলার ঘটনায় নিন্দা জানালেও এই কুখ্যাত শার্লি হেবডো যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবমাননাকর কার্টুন ছাপিয়ে লাখ লাখ কপি বিলি করছে তখন তারা নিন্দা বা প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। কেউ কেউ জানালেও তা দায়সারাভাবে করছে। নাউযুবিল্লাহ!
কোনো প্রতিবাদ না জানিয়ে শার্লি হেবডোর ব্যঙ্গচিত্র নিজ দেশে পুনঃপ্রকাশকারী মিশরীয় পত্রিকা আর যাতে না ছাপতে পারে তার বিরুদ্ধে একটি ডিক্রি জারি করেছে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
তুরস্কও বড় বড় বুলি আওড়ালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং নিজ প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে তাদেরকে খুশি করতে। বিদেশী কোনো প্রকাশনা নতুন করে প্রকাশ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু দাবিদার ইহুদী বংশোদ্ভূত সউদী ওহাবী সরকার কোনো প্রতিবাদের চিন্তাও করেনি। বরং এই সউদী ওহাবীরাই বিশ্বের সব ইহুদী-খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলোকে শত শত কোটি ডলার দিয়ে জিইয়ে রেখেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এ ন্যক্কারজনক জঘন্য অবমাননা বন্ধে সব মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে জরুরী অধিবেশনও আহবান করেনি। এর মহাপরিচালক শুধু বলেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে অন্যকে আঘাত করা নয়। যেকোনো মতের মানুষ এমনটা মেনে নিতে পারে না। যা লৌকিকতার নামান্তর।
ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদে এ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের মধ্যে শুধুমাত্র পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সর্বসম্মত ভোটে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। অথচ গাজায় ইসরাইলী হামলার নিন্দা জানিয়ে ২০১৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি অবমাননার এবং চরম প্রতিবাদ ও প্রতিহতের বিষয় হলেও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো প্রািতবাদ করা হয়নি। যা সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান উনাদের ধর্মীয় অনুভূতির মর্মমূলে আঘাত দেয়ায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার উদ্রেক হয়েছে।
মুসলমান শাসকদের মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বতের চেয়ে কাফিরদের প্রতি মুহব্বত বেশি থাকার ফলেই তারা কাফিরদের প্রতি ঝুঁকে রয়েছে। কাফিরদের গোলামী ও তাদেরকে খুশি করতে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ কাফিররা মুসলমানদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ধ্বংসে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
সুতরাং মুসলমান নামধারী শাসকদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বিশ্বের সাড়ে তিনশ কোটি মুসলমানকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যঙ্গচিত্রের বিরুদ্ধে যথাযথ ঈমানী জজবায় ঝঁপিয়ে পড়তে হবে। এবং সে লক্ষ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে হবে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত জীবনী মুবারক আলোচনা ও অনুসরণ করতে হবে। কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতনতা সম্বলিত সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং উনার শিক্ষা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০