মূলত যুগে যুগে মিথ্যাবাদী আর মুনাফিকরাই হক্বের বিরোধিতা করেছে, হক্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। তাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফ-এ মুনাফিকদেরকে ‘কাযযাব’ বা মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æআল্লাহ পাক সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুন-১)
উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা মুনাফিক তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আবার যারা মিথ্যাবাদী তারাই মুনাফিক। কেননা হাদীছ শরীফ-এ মুনাফিকের যে আলামত বা লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে একটি হলো মিথ্যা কথা বলা।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার যারা বিরোধিতাকারী তারা উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরই পূর্ণ মিছদাক। অর্থাৎ তারা একই সাথে মুনাফিক ও কাট্টা মিথ্যাবাদী, তাই তারা মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে স্মরনিকা-বার্ষিকী, পত্র-পত্রিকা ও বক্তৃতার মাধ্যমে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যার কিছু নমুনা আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১২৪তম সংখ্যা থেকে ১৯৪তম সংখ্যার অত্র মতামতের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন।
পরিশিষ্ট
পূর্ব প্রকাশিতের পর
ইহা ব্যতীত এই পত্রে ইহাও লিখিত আছে যে, æএই মাকামের প্রতিবিম্বের দরুন আমি নিজকে স্বয়ং রঙিন পাইলাম। সূর্যের আলো এবং ইহা হইতে আলোকপ্রাপ্ত হওয়াকে উদারহণস্বরূপ পেশ করা যাইতে পারে। সূর্য সূর্যই থাকে যমিনের উপর উহার আলোক পতিত হইলে যমিন আলোকিত হয়। কিন্তু যমিন কি ইহার কারণে সূর্যের সমকক্ষতার দাবি করিতে পারে?”
এইরূপ দলীল ও প্রমাণের দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাদশাহকে বুঝাইবার পর বাদশাহ শান্ত হইলেন এবং শাস্তি দান করিবার পরিবর্তে উনাকে সসম্মানে বিদায় দান করিলেন। বিরোধীদলের জন্য এই পরাজয় বরদাশত যোগ্য ছিল না। তাহারা তখন অন্য ব্যবস্থা করিল।
বাদশাহর উজীর আছফজাহের সহিত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মনোমালিন্য হওয়ায় উক্ত উজীর বাদশাহকে পরামর্শ দান করিলেন, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরফ হইতে আপনার সাবধান থাকা উচিত। কেননা উনার প্রভাব কেবল হিন্দুস্থানে সীমাবদ্ধ নহে বরং ইরান, তুরান, বদখশান প্রভৃতি স্থানেও বিদ্যমান। তিনি হাজার হাজার জীবন উৎসর্গকারী মুরীদ নিজের চতুর্দিকে একত্র করিয়াছেন। ভয় হয় পাছে সা¤্রাজ্যের মধ্যে উনারা কোন ফিতনার সৃষ্টি করেন কিনা। তিনি একজন অহংকারী ব্যক্তি। শাহ ইছমাইল ছফবী রহমতুল্লাহি আলাইহি কেবল মুরীদগণের সহায়তায় ইরানের রাজত্ব আয়ত্তে আনয়ন করিয়াছিলেন। এমতাবস্থায় আপনার উচিত হইবে উনার খলীফা শায়খ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট সৈন্যদের গমনাগমন বন্ধ করিয়া দেওয়া এবং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করিলে উনাকে কয়েদ করা। ইহার পর শায়খ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট সৈন্যদের গমনাগমনের শাহী নিষেধাজ্ঞা জারি করা। হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও শাহী সন্দেহের নেত্রে পতিত হইলেন। শায়খ সাহেব সৈন্যদের হইতে পৃথক হইতে চাহিলে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইজাযত দান করিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাদশাহর তরফ হইতে গুপ্তচর নিয়োগ করা হইল এবং শায়খ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মধ্যে পত্রালাপ বন্ধ হইলো। শায়খ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি পেরেশান হইয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার খিদমতে হাজির হইলেন বটে। কিন্তু তিনি ইহাতে নারায হইলেন। কাজেই শায়খ সাহেব পুনঃ স্বস্থানে প্রত্যাবর্তন করিলেন। ইহাতে বিরোধীদল সুযোগ লাভ করিল এবং বাদশাহকে বুঝাইয়া দিল যে, শায়খ সাহেব হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট লশকরের পয়গাম লইয়া গমন করিয়াছিলেন। ফল কথা, উজীর নিপুণভাবে বাদশাহর র্কণকূহরে বিষবাণী ঢালিতে লাগিল এবং শাহী দরবারে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনাকে শহীদ, জ্বালা-যন্ত্রণা, দেশান্তরিত করণ অথবা কয়েদ করণের পরামর্শ দিতে লাগিল।
এই পক্ষ বাদশাহকে আরো বুঝাইয়া দিল যে, হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিয়ত যে খারাপ (নাঊযুবিল্লাহ!) তার প্রমাণ এই যে, বাদশাহ সালামতের জন্য জায়িয বলিয়া মান্যকৃত সিজদায়ে তাযীমী পালন করিতে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি পূর্বেও বাদশাহকে সম্মান প্রদশণ করেন নাই। আপনি পরীক্ষা করিলে দেখিতে পাইবেন যে, তিনি শাহী দরবারে হাজির হইয়াও সিজদা অথবা মস্তক অবনত করিবেন না।
ধর্মীয় বিপদ অপেক্ষা রাজত্ব সম্পর্কীয় বিপদ বাদশাহের নিকট অধিকতর চিন্তার কারণ স্বরূপ হইয়াছিল। বিরোধীদল ইহার সহিত তাহাদের নিকট দুর্বোধ্য বলিয়া বিবেচিত কতিপয় মকতুবের অনুচ্ছেদ হেরফের করিয়া বাদশাহের নিকট পেশ করিল এবং কতিপয় উলামার ফতওয়াও বাদশাহর নজরে পড়িয়াছিল।
যাহার মধ্যে হযরত মাওলানা আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও কতিপয় পাল্টা আক্রমণাত্তক প্রবন্ধ ছিল।
যাহা হউক, উল্লিখিত অবস্থাবলির প্রেক্ষিতে বাদশাহ জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার বিরোধীদের চক্রান্তে পড়িয়া যায় এবং শেষ পর্যন্ত উনাকে কয়েদ করিবার ইচ্ছা করে। বাদশাহ তদীয় মতলব হাসিল করিবার নিরাপত্তা নিবন্ধন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার হালকাভুক্ত সমুদয় উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে রাজধানী হইতে সরাইয়া দেন। বাদশাহ খান খানানকে দাক্ষিনাত্যে, সৈয়দ সদরে জাহানকে পূর্বদিকে, খান জাহান লোদীকে মালব দেশে, খান আযমকে গুজরাটে এবং মহাব্বত খানকে কাবুলের গভর্নর নিযুক্ত করিয়া প্রেরণ করেন। ইহার পর পত্র মারফত পত্র মারফত দ্বিতীয়বার হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সিরহিন্দ হইতে শাহী দরবারে তলব করা হয়, উদ্দেশ্য ছিল সিজদা করান তথা শাহী আনুগত্যের যাচাই করা। কেননা ধর্মীয় বিপদ অপেক্ষা রাজত্ব সম্পর্কীয় বিপদ বাদশাহর নিকট অধিকতর চিন্তার কারণ হইয়াছিল।
-মুফতী মুহম্মদ ইবনে ইসহাক, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা