وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى
“হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথাই বলেন না।” (সূরা নজম- ৩, ৪)
প্রদত্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত অত্যন্ত সুস্পষ্টরূপেই ঘোষণা করেছেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মহান আল্লাহ পাক-উনার পাক ইজাযত ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথাও বলেননি, কোন কাজও করেননি। এরপরও যুগে যুগে কিছু উলামায়ে ‘ছূ’, জাহিল, গোমরাহ, বিদয়াতী ব্যক্তিরা মুসলিম শরীফে বর্ণিত খেজুর গাছের তাবীর সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানার ভুল এবং বিকৃত ব্যাখ্যা করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যিন্দিগী মুবারককে নুবুওয়াতী এবং ব্যক্তিগত দু’ভাগে বিভক্ত করে থাকে এবং বলে থাকে যে, উনার কোন কোন কথা ও কাজ মনগড়া হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সর্বাবস্থায় যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মত ও পথে থেকেই সমস্ত কথা এবং কাজ করেছেন নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা গভীরভাবে ফিকির করলেই বিষয়টি পরিস্কারভাবে উপলদ্ধি করা সম্ভব হবে। হাদীছ শরীফের বিশ্বখ্যাত কিতাব- আবূ দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সুনানে দারেমী, মুস্তাদরিকে হাকিমে বর্ণিত রয়েছে। যা বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উদ্দেশ্যে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মরূপে লিখে রাখতাম। আমার এ বিষয়টি লক্ষ্য করে কেউ কেউ আমাকে এই বলে নিষেধ করেন যে, আপনি কি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার যবান মুবারকে যখন যা শুনতে পান তাই কি লিখে রাখেন? যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন বাশারও বটে। তিনি কখনো জামালী আবার কখনো জালালী শানে থেকেও তো কথা বলেন। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- এরপর আমি হাদীছ শরীফ লিখা বন্ধ করে দিই এবং একদা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কথা শ্রবণের সাথে সাথে নিজের দুই পবিত্র ওষ্ঠ মুবারক এর দিকে ইশারা করে বললেন তুমি লিখতে থাক। মহান আল্লাহ পাক-উনার হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক উনার শপথ করে বলছি, আমার এই জবাব মুবারক হতে প্রকৃত সত্য তথা হক্ব কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয়না। সুবহানাল্লাহ!
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদেশ শ্রবণের পর আমি পুনরায় আরজ করলাম- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট হতে আমি সর্বাবস্থায় যা কিছু শুনতে পাই তার সবই কি লিখে রাখব? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় দ্ব্যর্থহীনভাবে চুড়ান্তরূপে ইরশাদ করলেন, যার হাতে আমার প্রাণ মুবারক উনার শপথ করে বলছি, আমার যবান মুবারক থেকে হক্ব ছাড়া কিছুই প্রকাশিত হয় না। অতএব, তুমি লিখতে থাক। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার পবিত্র যবান মুবারক থেকে কখনো কোন অবস্থাতেই সত্যের বিপরীত কোন কথা প্রকাশিত কিংবা উচ্চারিত হয়নি।
এরপরও কোন নাফরমান, গোমরাহ যদি কোন বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বলার কোশেশ করে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনগড়া কোন কথা বা কাজ করেছেন তাহলে সে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ!
মুলতঃ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় ছিলেন ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি যিনি আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার কায়িম-মাকাম তথা খাছ ওয়ারিছ, খাছ লক্ষ্যস্থল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার খাছ নায়িব তথা হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ তিনিও যিনি আল্লাহ পাক-উনার ইজাজত তথা ইলহাম-ইলকা এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার দিক-নির্দেশনা ব্যতীত কোন কথা বা কাজ করেন না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা-বিশ্বাস। এইরূপ আক্বীদা পোষাণ করা প্রত্যেক ঈমানদার, মু’মিন-মুসলমান, নর-নারীর জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক যামানার লক্ষ্যস্থল ইমাম, আওলাদে রসূল, আমাদের মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মুবারক ওসীলায় আমাদের সর্বাবস্থায় ছহীহ আক্বীদা পোষণ করার তাওফীক দান করুন। পাশাপাশি বাতিল-গোমরাহদের এলামোলো বিভ্রান্তিমূলক আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে আমাদেরকে তথা গোটা মুসলিম উম্মাহকে খাছভাবে হিফাযত করুন। আমীন।
আল্লামা মুহম্মদ সালামাতুল্লাহ